প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট ভ্রমন (শেষ পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
আমি গত কিছুদিন যাবত ধারাবাহিকভাবে আমার সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি। তবে গত পর্বে আমার ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হয়েছে। কারণ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার আগে আমরা গিয়েছিলাম একটি চা বাগান ঘুরে দেখতে। কারণ সিলেটের পরিচয় হচ্ছে চায়ের এলাকা হিসেবে। সিলেট আসবো আর চা বাগানে ঘুরবো না সেটা তো হতে পারে না।
সেই জন্য আমরা আগের দিন থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম প্রথমে আমরা একটি চা বাগানে যাবো। তারপর সেখান থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আমরা প্রথমেই লাক্কাতুরা টি স্টেটে গেলাম চা বাগান দেখার জন্য। আমরা যারা সমতলের মানুষ আমাদের কাছে এই ধরনের পরিবেশ এমনিতেই ভালো লাগে।
চা-বাগানে ঢোকার পর এখানের শান্ত নিরিবিলি নিস্তব্ধ পরিবেশ আমাদের মন কেড়ে নিল। আমরা সকলেই সেই শান্ত প্রকৃতির রূপ প্রাণভরে উপভোগ করছিলাম বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই অবস্থান এই চা বাগানটির।এত বিশাল এলাকা অল্প সময়ে ঘুরে দেখা সম্ভব না। যার ফলে আমরা চা বাগানের ভেতরে কিছুদুর গিয়ে আমাদের গাড়ি থেকে নামলাম।
এর মধ্যে একটি মজার ঘটনা ঘটলো। আমাদের গাড়ি যখন আস্তে আস্তে চা বাগানের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তখন হঠাৎ করে সামনে দেখতে পেলাম দু'টো বানর। বানর দেখে সাথে থাকা আমার ভাগ্নে খুবই খুশি হলো। আমরা গাড়ী থেকে নেমে চারপাশটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। প্রকৃতির এই রূপ আমাদের কাছে আসলেই অচেনা। শহুরে কোলাহলে অভ্যস্থ আমরা কয়েকটি মানুষ এই নির্জনতা খুবই উপভোগ করছিলাম। মাঝে মাঝে শুধু পাখির ডাক ছাড়া সেখানে আর কোনো শব্দ ছিল না।
এখন চা পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকার কারণে সেখানে তেমন কোন শ্রমিক দেখতে পেলাম না। অবশ্য আমরা যখন ফিরছিলাম তখন অল্পকিছু শ্রমিককে বাগানে প্রবেশ করতে দেখলাম। আমরা বাগানের ভেতরে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর যেখানে চা প্রসেসিং করা হয় সেখানে এসে থামলাম।
চা প্রসেসিং প্লান্ট এর উল্টো দিকেই চা বাগানের অফিস। এখানে চা বাগানের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজকর্ম সম্পন্ন করা হয়। অফিসের পাশেই দেখতে পেলাম একটি গেট। গেটের ওপাশ থেকে একটি রাস্তা একটি টিলার দিকে চলে গিয়েছে। গেটের পাশে দেখলাম সাইনবোর্ডে লেখা আছে ম্যানেজারের বাংলো। বুঝতে পারলাম এখানে চা বাগানের ম্যানেজার অবস্থান করেন।
আমার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন আছে। সেটি হচ্ছে কোন এক চা বাগানে দু-তিনদিন অবস্থান করা। এবার চা বাগানের এই অপরূপ রূপ দেখে সেই ইচ্ছাটা আরো বেড়ে গিয়েছে। এমন শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাতে মোটেই খারাপ লাগবে না।সাথে যদি থাকে আপনার পছন্দের কিছু বই আর প্রিয় কোন মানুষ। তাহলে তো কথাই নেই।
এই চা বাগানটি অনেক পুরাতন। এইটা বাগানটির বয়েস ১৪৭ বছর। এটি এই অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রাচীনতম চা বাগান। এর কাছেই আছে উপমহাদেশের সবচাইতে প্রাচীন চা বাগান মালিনীছড়া টি স্টেট। এই চা বাগান থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ চা পাতা উৎপন্ন হয়। আমরা চা প্রসেসিং প্লান্ট এর পাশেই দেখতে পেলাম রাবার তৈরি করা হচ্ছে। রাবার গাছ থেকে রাবার তৈরি করার যে অংশ সংগ্রহ করা হয়। সেটাকে প্রসেসিং করে সেখান থেকে রাবার তৈরি হচ্ছে। এই চা বাগানের ভেতরে প্রচুর রাবার গাছ আমরা দেখতে পেয়েছি।
আমাদের সাথে থাকা গাড়ির ড্রাইভার আমাদেরকে বলছিলো। একসময় এই চা বাগানগুলোতে অনেক পশুপাখি থাকতো। কিন্তু আশেপাশের সব বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় আর জনবসতি বেড়ে যাওয়ায়। সে সমস্ত পশুপাখি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। চা বাগানে আমরা বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও বানর ছাড়া অন্য কোন প্রাণী আমাদের চোখে পড়েনি। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চা-বাগানে কাটানোর পর আমরা ভোলাগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
চট্টগ্রামে আমিও একবার চা বাগান দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু বাগানের চেহারা দেখে আমি খুবই হতাশ হয়েছিলাম। তোমাদের ভাগ্য ভালো বিনা টিকিটে দুইটি প্রাণী দেখতে পেয়েছিলে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক নামে একটি বড় পার্ক আছে। যেখানে সারা দিন ঘুরেও আমি একটি বানরের দেখা পাইনি। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। পরবর্তী ভ্রমণের অপেক্ষায় রইলাম
কোন প্রাণী দেখতে না পেলেও চা-বাগানের পরিবেশটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে।
ঠিক বলেছেন ভাই চা বাগানটিতে সত্যি অনেক শান্ত পরিবেশ ছিল যা আপনার ছবিগুলো দেখেই বুঝতে পারলাম। আমি আগে কখনো সিলেটে ভ্রমণ করতে যায়নি এবং এসব জায়গাতে যাওয়ার কোন অভিজ্ঞতাও আমার তেমন একটা নেই । তবে আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে ঘুরতে না যেতে পারলেও অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম এটা অনেক ভালো একটি বিষয়। আপনার পোস্টটি চমৎকার ছিল বিশেষ করে আপনার সৃজনশীল শব্দভাণ্ডার গুলো আমার অনেক আকর্ষিত করেছে ধন্যবাদ আপনাকে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনেক ভালো লাগলো আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে সিলেট এর চা বাগান থেকে ঘুরে আসার। আপনার এসব ফটোগ্রাফি দেখে আমার ইচ্ছাটা আরো দৃঢ় হলো। ধন্যবাদ ভাইয়া
চা বাগানের পরিবেশটা আসলেই চমৎকার। তবে বর্ষার সময় হলে আরো সবুজ দেখাতো চারপাশটা। সময় পেলে অবশ্যই সিলেট থেকে ঘুরে আসবেন।