দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত জীবন। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রহিমা বেগম আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। কারন ঘরে বাজার তেমন নেই। তাছাড়া বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অসম্ভব বেশি। স্বল্পআয়ের সংসার চালাতে এখন তার হাঁসফাঁস অবস্থা। রহিমা বেগমের তিন ছেলেমেয়ে। তিনজনই ছোট। বছরখানেক আগে রহিমা বেগমের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। তখন থেকে রহিমা বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করে তার সংসার চালায়।

Polish_20220307_215906477.jpg

ব্যাপার এমন না যে এতদিন সে খুব স্বচ্ছলতার সাথে সংসার চালাচ্ছিল। টানাটানি তাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে হঠাৎ করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের মত লোকজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গতকালকে এলাকায় মাইকিং হয়েছে আজ সরকারিভাবে দরিদ্রদের জন্য স্বল্প মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে। তাই রহিমা বেগম গতকালকে যেসব বাসায় কাজ করে তাদেরকে বলে এসেছে আজকে আসতে দেরি হবে। কারণ আজ সে স্বল্পমূল্যের চাল ডাল কেনার চেষ্টা করবে।

এমন না যে গেলেই সেখানে জিনিসপত্র কিনতে পারবে। এই স্বল্প মূল্যের জিনিসপত্র কিনতে হলে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। এইজন্য রহিমা বেগম গত রাতেই চিন্তা করে রেখেছে আজ একদম ভোরে গিয়ে সে লাইনে দাঁড়াবে। যাতে গাড়ি আসার সাথে সাথেই সে জিনিসপত্র কিনে ফিরতে পারে। জিনিসপত্র কেনা হলে তাকে আবার কাজে যেতে হবে।

প্রতিটি এলাকায় একটি ট্রাকে করে মাল আসে। কিন্তু সেখান থেকে জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রচুর লোক সমাগম হয়। যার ফলে যদি লাইনের সামনে না থাকা যায় তাহলে আর জিনিস কেনা সম্ভব হয় না। কারণ কিছুক্ষণের ভেতরে সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে যায়। চারদিকে প্রচুর দরিদ্র মানুষ। সেই তুলনায় পণ্য সরবরাহ খুবই সীমিত। পন্যের এই সীমাবদ্ধতার কারণে লাইনগুলোতে রীতিমতো যুদ্ধ হতে থাকে। এই যুদ্ধে যে জয়ী হয় শেষ পর্যন্ত তারাই অল্প মূল্যে জিনিসপত্র কিনতে পারে।

ঘরে আগের রাতের কিছু ভাত ছিলো। সেই ভাতে পানি মিশিয়ে সাথে লবন মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে মাখিয়ে তার সন্তানদেরকে খেতে দিয়ে রহিমা বেগম বাড়ি থেকে বের হলো। এত সকালে পৌঁছানোর পরেও রহিমা বেগম গিয়ে দেখে তার আগে অনেক লোক সেখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এত লোক দেখে রহিমা বেগম খুবই হতাশ হলো। তার পরেও সে লাইনে দাঁড়ালো এই আশায় যে যদি কিছু পাওয়া যায় এখান থেকে। সরকারি এই ব্যবস্থায় বাজার মূল্য থেকে অনেক কম দামি জিনিসপত্র দরিদ্র মানুষেরা কিনতে পারে। কিন্তু জিনিসপত্রের সরবরাহ কম থাকায় বেশিরভাগ মানুষকেই খালি হাতে ফিরতে হয়। তাই এই সমস্ত লোকজনের একই দাবি সরকার এই জিনিসপত্র সরবরাহ যেনো বাড়ায় যাতে তারা সবাই এখান থেকে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।

সবাই এত ভোরে লাইনে এসে দাঁড়ালেও পণ্যবাহী গাড়ি আসতে প্রায় সকাল দশটা বেজে গেলো। ততক্ষনে সেখানে হাজার খানেক লোক জমে গিয়েছে জিনিসপত্র কেনার জন্য। গাড়ি এসে দাঁড়ানোর সাথে লাইনের লোক জন এক এক করে গাড়ির কাছে যাচ্ছিলো জিনিসপত্র কেনার জন্য। কিন্তু এর ভেতর সবাই খেয়াল করে দেখল কিছু লোকজন বাইরে থেকে লাইনের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। আবার কিছু লোকজন কোন লাইনের তোয়াক্কা না করেই গাড়ির কাছে গিয়ে জিনিসপত্র কিনছে। এগুলি নিয়ে সবাই অভিযোগ করলেও তাদের অভিযোগ কেউ কানে তুলছে না। এই গাড়ির দায়িত্বে যারা আছে তারা উল্টো তাদের কে হুমকি দিলো যদি বেশি ঝামেলা করো তাহলে গাড়ি নিয়ে চলে যাবো। কেউ কিছু পাবেনা। শেষ পর্যন্ত সবাই নিরুপায় হয়ে তীব্র রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলো।

কিন্তু সেই লাইন আর সহজে আগায় না। লাইনের একজনকে জিনিসপত্র দিলে বাইরের আরও দুজনকে দেয়। অবশ্য এই লাইন ছাড়া জিনিসপত্র কেনার জন্য তাদেরকে বাড়তি পয়সা দিতে হচ্ছে গাড়ি লোকজনকে। দেশের অন্য সমস্ত জায়গার মতো এখানেও দুর্নীতি। এই সমস্ত লাইনে যে শুধু হতদরিদ্র লোকজন থাকে তা নয়। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে ও দেখা গেলো লাইনে। অনেকে আবার মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে যাতে তাদেরকে কেউ চিনতে না পারে।

রহিমা বেগম লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। সেই কোন সকালবেলায় সে এসেছে। বাড়ি থেকে বের হয়েছে কোন কিছু না খেয়েই। এখন রোদের ভেতর এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তার খুবই অস্থির লাগছিলো। সে দরদর করে ঘামছে কিন্তু কোন উপায় নেই। জিনিসপত্র কিনতে হলে তাকে এই রোদের ভেতর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এমনিতেই না খেয়ে আসার কারণে শরীর খুব দুর্বল লাগছে। তার ওপর আবার এই তীব্র রোদে মাথাটা ঘুরছে। এর ভেতরে এক মহিলা এসে রহিমা বেগমের সামনে দাঁড়াতে গেলো। কিন্তু রহিমা বেগম কিছুতেই তাকে তার সামনে দাড়াতে দেবেনা। এই নিয়ে মহিলার সাথে রহিমা বেগমের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্ত আশেপাশের লোকজনের আপত্তিতে ওই মহিলা আর সেখানে দাঁড়াতে পারল না।

কিন্তু এই ধস্তাধস্তির ফলে রহিমা বেগম আরো দুর্বল হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে দেখে রাস্তার পাশের একটি দোকানের বেঞ্চে সে শুয়ে আছে। আশেপাশে কয়েকটি মহিলা দাঁড়ানো। তারা উদ্বিগ্ন চোখে রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।

রহিমা বেগম প্রথমে বুঝতে পারলো না কি হয়েছে। পরে যখন তাঁর মনে পড়লো যে সে হঠাৎ পড়ে গিয়েছিল। সেজন্য সে এখন এখানে শুয়ে আছে। এই অবস্থার ভিতরও তার মনে পড়ল ঘরে কোন বাজার নেই। কিন্তু এই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাওয়ার কারণে আজকে সেখান থেকে আর কিছু কিনতে পারবে না। একথা মনে পড়তেই টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। আশেপাশের মহিলারা বলতে লাগলো তোমার জন্য আজকে আমাদেরও কিছু কেনা হবে না। কারণ তোমাকে নিয়ে আমরা এখানে আসার ফলে লাইনে আমাদের জায়গায় অন্য লোক ঢুকে গিয়েছে। সেই মহিলা গুলির জন্যও রহিমা বেগমের খুব খারাপ লাগলো। তার কারণে এই মহিলা গুলিকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে বুঝতে পারল। কিন্তু বুঝতে পারলেও দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত রহিমা বেগমের কিছুই করার নেই। তাদের জন্মই যেন হয়েছে ভোগান্তি পোহানোর জন্য। এভাবেই তারা বেঁচে থাকে। এভাবেই তাদের দিন চলে। (সমাপ্ত)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আপনার লেখা টা অনেক সুন্দর ছিল ভাইয়া। এইরকম মানুষ আমাদের চারপাশে রয়েছে অনেক। এদের খেয়াল বা খবর রাখার কেউ নেই এই শহরে। এইরকম লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 2 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

ভাইয়া, রহিমা বেগমের মতো হাজারো রহিমা আমাদের চারপাশে রয়েছে। কিন্তু আমরা কখনও এই রহিমার খোঁজখবর নেইনা। আমরা নিজেরাই নিজেদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকি সব সময়। তাই হয়তো রহিমাদের মত মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এতটাই আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে যে শুধু রহিমা নয় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খুবই শোচনীয় অবস্থা। এরকম অবস্থা যদি চলতেই থাকে তাহলে কোন এক সময়ে দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষে মরতে হবে রহিমা ও মধ্যবিত্ত মানুষদের। ভাইয়া, রহিমার জীবন বৃত্তান্ত পড়ে খুবই কষ্ট লাগলো। আমরা শুধু কষ্ট পেতে পারি কিন্তু এই বিষয়ে কোন সমাধান দিতে পারিনা। খুবই আফসোসের বিষয়। ভাইয়া, আপনার অতি মূল্যবান পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আসলেই ঠিক বলেছেন আমাদের চারপাশে রয়েছে এমন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে তাদের খোঁজ নেয়ার সময় কোথায়?

 2 years ago 

ভাইয়া,আপনার লেখাটি পড়ে সত্যি আমার খুব খারাপ লেগেছে।ভাইয়া, এখনের যেই পরিস্থিতি আমাদের দেশে চলছে সেই পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র আপনি আপনার পোস্টে তুলে ধরেছেন। রহিমার মতো হাজারো হতদরিদ্র মানুষ ন্যায্য মূল্যের পণ্য পাওয়ার জন্য লাইনের পর লাইন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।এতো কষ্ট করেও অনেকেই এই ন্যায্য মূল্যের পণ্য পায় আবার অনেকে খালি হাতে ফিরে যায়।তবে আমার পক্ষ থেকে আমি সরকার এবং সমাজের দায়িত্ববান মানুষদেরকে বলবো একদম হতদরিদ্র যারা তাদের জন্য সরকার যেন ন্যায্য মূল্যের পণ্য গুলো আরো বৃদ্ধি করে তারা যেন তিন বেলা খেয়ে বাঁচতে পারে। ভাইয়া, ইদানিং দ্রব্যমূল্যের যে হারে দাম বেড়ে যাচ্ছে তাতে করে প্রত্যেকটা মানুষের সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এদিকে কেউই খেয়াল করছে না। ভাইয়া, আপনার পোস্ট পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

সত্যিই ,খুবই মর্মস্পর্শী।যেখানে দুর্নীতি সেখানে নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যার সৃষ্টি ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। একদম বাস্তব জীবনের ঘটনাকে তুলে ধরেছেন।অবশ্য এই ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত দরিদ্রদের সঙ্গে।নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের।সেখানে ও দুর্নীতি ঘিরে ধরেছে।গল্পের শেষটি পড়ে খারাপ লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33