দুশ্চিন্তার কালো মেঘে আচ্ছন্ন মন।
সারারাত প্রায় ঘুমাতে পারিনি। রাত দুটোর দিকে যখন বিছানায় কেবল গা এলিয়ে দিয়েছি তখনই বিদ্যুৎ চলে গেলো। যখন বিদ্যুৎ এল তখন রাত চারটা বেজে গিয়েছে। তাই তখন আর না ঘুমিয়ে একবারে ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে গিয়েছি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই মনটা খারাপ ছিলো। গতকাল রাত বারোটার দিকে হঠাৎ জানতে পারলাম দেশে জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এযাবতকালের ইতিহাসে আমাদের দেশে কখনো একবারে তেলের দাম এতটা বাড়েনি।
দিন কয়েক আগেও যখন জানতে পারলাম দেশে ভোজ্য তেলের দাম কমছে তখন কিছুটা স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল এবার বোধহয় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে। কিন্তু গত কালকের এই নিউজটা দেখার পর থেকে সামনের দিনগুলো নিয়ে শঙ্কিত হয়ে আছি। কিছুদিন আগেও সরকারি বিভিন্ন মহল থেকে শুনতে পেতাম বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসছে। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু যখন ভিন্ন চেহারা নিয়ে আমাদের সামনে আসতে লাগলো। তখন বুঝতে পারলাম এতদিন যা শুনেছি সে সবই ছিল ফাঁকা বুলি।
মনের ভেতর প্রচণ্ড ভয় কাজ করছে। বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলংকার মত না হয়ে যায়। মনের ভেতর যত কিছুই থাকুক প্রকাশ করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। কারণ দেশের এখন এমন অবস্থা কথা বললেই হয়তো আপনি বিপদে পড়ে যাবেন। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে চুপচাপ মুখ বুজে পড়ে থাকাও সম্ভব না। এই পরিস্থিতি থেকে দেশ কিভাবে পরিত্রাণ পাবে সেটাও বুঝতে পারছি না। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতটুকু খারাপ সে সম্বন্ধেও আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই। তবে বুঝতে পারছি সামনের দিনগুলো হয়তো আরো খারাপ হতে যাচ্ছে।
অবশ্য এখন যা ঘটতে যাচ্ছে সেটা অস্বাভাবিক কিছু বলে মনে করি না। কারন একটি দেশের যখন রন্ধ্রে- রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে তখন এই অবস্থা হতে বাধ্য। হয়তো দেশের অবস্থা আরো আগেই খারাপ হয়ে যেতো। কিন্তু দেশের দুর্দিনে যারা সব সময় সর্বস্ব নিয়ে এগিয়ে আসে সেই অশিক্ষিত দিনমজুরেরা দেশের অর্থনৈতিক ভিতটাকে এখনো ধরে রেখেছে। যাদেরকে আমাদের দেশের এয়ারপোর্ট এর লোকজন কামলা বলে অভিহিত করে সেই কামলারাই দেশের অর্থনীতির চাকা এখনো সচল রেখেছে।
রাজনীতি নিয়ে কমিউনিটিতে লেখা নিষেধ। এই জন্য রাজনীতি নিয়ে কিছু লিখতেও চাই না। কিন্তু যখন নিজের জীবনের উপর কোন জটিল প্রভাব এসে পড়ে তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা। চিন্তা করছিলাম দেশের অবস্থা যদি আসলেই শ্রীলংকার মত হয়ে যায় তাহলে কি হবে আমাদের করণীয়? দেশ এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। এখনো আমাদেরকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমদানির উপর অনেকটাই ভরসা করতে হয়। এদিকে দিন দিন আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা কমে আসছে। অবস্থার যদি দ্রুত উন্নতি না হয় তাহলে খুব দ্রুত আমাদের দেশ একটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। যার জন্য আজকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন ভঙ্গুর। মেগা প্রজেক্ট এর নামে অনেক ব্যয়বহুল প্রকল্প করা হয়েছে বিদেশি ঋণে। যেটার আসলে এই মুহূর্তে খুব একটা প্রয়োজন ছিল না। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করার থেকে সরকারের নজর ছিল কিভাবে এই খাত থেকে টাকা লুটপাট করা যায়। সেই জন্য সোলার খাতে ভর্তুকি না দিয়ে কুইক রেন্টাল নামের কিছু দানব স্থাপনের সুযোগ কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীকে দেয়া হয়েছিল। যারা বিগত ১০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে।
অনেক সমস্যা সামনে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কোন সমাধান চোখে পড়ছে না। দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর ভরসা করে লাভ নেই। কারণ তাদের এক পা দেশে রয়েছে তো আর এক পা বিদেশের মাটিতে। দেশের পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই তারা তাদের সেকেন্ড হোমে শিফট হয়ে যাবে। বিপর্যয়ের মোকাবেলা করতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে। বিপর্যয় শুরু হলে সবচাইতে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশে আরেক দফা দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এমনিতেই এখন বেশিরভাগ খাদ্য সামগ্রী দরিদ্র শ্রেণীর ক্রয় সীমার বাইরে চলে গিয়েছে। আরেক দফা দাম বাড়লে কি অবস্থা হবে সেটা চিন্তাও করতে পারছি না। তবে যোগ্য নেতৃত্বে এখনো এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব। কিন্তু সেই যোগ্য নেতৃত্বের কোন দেখা পাচ্ছি না। আমাদের দেশের হাজার সমস্যার মাঝে কিছু সুবিধাও আছে। সেই সুবিধাগুলির ভেতর অন্যতম হচ্ছে আমাদের রেমিটেন্সের প্রবাহ আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে গার্মেন্টস সেক্টরের শক্ত অবস্থান। এই দুটো খাতের উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিন্তু সেই জন্য দেশের সর্বোচ্চ মহলের সদিচ্ছার ব্যাপক প্রয়োজন দেখা যাক তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় কিনা?
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সত্যিই দুঃশ্চিতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দিন দিন সবকিছুর যে হারে দাম বেড়ে যাচ্ছে তাতে করে সবাই খুব সমস্যার সম্মুখিন হয়ে পড়বে। আমাদের মতো সাধারন মানুষের কি বা করার আছে দেশ যেভাবে চালাচ্ছে আমরা সেভাবেই চলছি এছাড়া আর কিছু করার নেই আমাদের। শুধু ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে যেন আমরা না পড়ি। বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙏
শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হলে দেশের মানুষের যে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে সেটা চিন্তা করলেও গা শিউরে উঠছে।
দুঃচিন্তা করার মতোই বিষয় ভাই। একেবারে ৫০% দাম বৃদ্ধি জ্বালানি তেলের। আসলেই সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য। কথাগুলো ভাবলেই কেমন যেন লাগছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এইরকম দফায় দফায় হলে আর দেখতে হবে না😢😩।।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানে প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে।
হুম ভাইয়া খুব সুন্দর একটি ব্লগ লিখেছেন ৷ঠিক যে হারে সবকিছু দাম বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট আর ভোগান্তি হতে হচ্ছে৷সবকিছুর বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷ যাই হোক ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এই সমস্যা যেন তাড়াতাড়ি কেটে যায়৷
সমস্যা তাড়াতাড়ি কেটে যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।
খুবই চিন্তার বিষয়, তবে আমাদের দেশে এরকম হুটহাট অনেক কিছুর দাম বেড়ে যায়। তবে এখন যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে এটা খুবই চিন্তা করার বিষয়। আপনি ঠিক বলেছেন আসলে এই বিষয়ে আসলে কিছু বলতেও পারব না পরিস্থিতির চাপে চুপচাপ মুখ বুজে থাকাটাই ভালো হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক কথাই শেয়ার করেছেন ভালো লাগছে আপনার কথাগুলো
চুপ করে থাকতে থাকতে দেয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছে। এখন আর চুপ করে থাকার উপায় নেই।
আজ শনিবার তাই বাসা থেকে বের হয়নি ।পত্রিকা ও খবর দেখা হয়নি। হঠাৎ করে যখন আপনার লেখাটি পড়লাম এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা শুনলাম ।আমার মাথায় যেন বজ্রপাত পড়লো। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাবে। কি হবে আমাদের? কত মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে।
ইতিমধ্যে দাম বৃদ্ধি শুরু হয়ে গিয়েছে।
ভাইয়া কি যে বলবো বুঝতে পারতেছি না। ভয়ে বাজারে যেতে মন চায়না আবার না খেয়েও থাকা যাচ্ছে না। তবে আগামীর দিন গুলো অনেক অন্ধকার সেটা বুঝতে পারতেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সব গুলো কথার সাথে সহমত।
বাজারে গেলে ইদানিং জিনিসপত্রের দাম শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।
ভাইয়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের গ্রাম অঞ্চলের কৃষক বা চাষীদের সবচাইতে বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। কেননা এখন মাঠে মাঠে ধান লাগানোর জন্য জমি চাষ করার কাজ শুরু হয়েছে। এক কথায় আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত মানুষেরা অসহনীয় সমস্যার সম্মুখীন। কিন্তু কিছুই করার নেই, কিছু বলারও নেই, কিছু বললেই তো-থাক সেটার উচ্চারণ করলাম না। যাহোক সময়োপযোগী একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষিখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।