আসাদ সাহেবের আত্মসমর্পণের গল্প (প্রথম পর্ব)। ১০% লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
আসাদুর রহমান ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। তৃতীয় তলায় পৌছে নিজের ফ্লাটের কলিংবেলটা চাপলেন। সারাদিন অফিস করে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ও ক্লান্ত লাগছে। কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী দরজা খুলল। আসাদ সাহেব স্ত্রীকে বলল এত সময় লাগল কেন দরজা খুলতে? তার স্ত্রী বললেন রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলাম তাই একটু আসতে দেরি হয়েছে। স্ত্রী তাকে বললেন তুমি কাপড় চোপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি কিছু হালকা নাস্তা দিচ্ছি।
ছবির সোর্স- লিংক
আসাদ সাহেব জামা কাপড় পাল্টে হাতে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলেন। কাপড়চোপড় পাল্টে হাত মুখ ধোয়ার পরে একটু ভালো লাগছে তার। ফ্যানটা চালিয়ে বসার ঘরে সোফার উপর বসলেন তিনি। আসাদ সাহেবের ছোট সংসার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে। এতক্ষণ তিনি বাসায় এসেছেন অথচ ছেলে মেয়ে দুটোর কোন খোঁজ নেই। একটু পরে মেয়েটা বসার ঘরে এসে উঁকি দিল। বাবাকে দেখে কাছে এসে বসলো। তারপর বাবাকে বললো আমার স্কুল ব্যাগটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটা ব্যাগ কিনতে হবে। আসাদ সাহেব বললেন ব্যাগটা আমার কাছে নিয়ে এসো। দেখি কি হয়েছে? তার মেয়ে বলল তোমার দেখতে হবে না। ব্যাগটা একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমার নতুন ব্যাগ চাই। তিনি আস্তে করে বললেন আচ্ছা দেখি কি করা যায়। মেয়েটা একথা বলে সেখান থেকে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী এক কাপ চা এবং দুটো টোস্ট বিস্কুট নিয়ে তার কাছে এসে বসলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের নাস্তা বলতে এই হয় সাধারণত। আসাদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন সাইমার ব্যাগ নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে? স্ত্রী তাকে জানালেন রংটা একটু চটে গিয়েছে। এখন সে জেদ ধরেছে তার নতুন ব্যাগ চাই। না হলে সে স্কুলে যাবে না। এই কথা বলে স্ত্রী রান্না ঘরে চলে গেল। তিনি টেলিভিশনটা ছেড়ে খবর দেখতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ছেলে আবিরকে তিনি ডাকলেন। প্রতিদিন রাতেই তিনি ছেলেমেয়েদের কাছে তাদের পড়ালেখার খবর নেন। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে? ছেলেটা বাবাকে কিছুটা ভয় পায়। ভয় পেয়ে বললো বাবা ভালোই চলছে।
আসাদ সাহেব চিন্তা করতে লাগলেন ছেলেটা তাকে কেন এত ভয় পায়। সে তো কখনো তাকে মারধর করে না। তিনি ছেলেকে বললেন আচ্ছা যাও গিয়ে পড়তে বস। টেলিভিশনে এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খবর দেখাচ্ছে বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যম মানের চাকরিজীবী আসাদ সাহেবের এই ধরনের খবর দেখলেই তার কাছে অস্থির লাগে। তিনি চ্যানেল পরিবর্তন করে অন্য চ্যানেলে চলে গেলেন। কিন্তু মনের ভেতর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারটা ঘুরপাক খেতে থাকলো। কারণ সে জানে কাল সকাল থেকেই এই খবরটা তার জীবনে প্রভাব ফেলবে।
ক্রমাগত মধ্যবিত্তের জীবনটা সংকট পূর্ণ হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর সরকার আরোপিত বিভিন্ন রকমের ভ্যাট ট্যাক্স এর যন্ত্রনায় মধ্যবিত্তরা অস্থির। অল্প আয়ে এই শহরে টিকে থাকা দিনদিন মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নানা রকম খরচ কমাতে হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসাদ সাহেব ভয় পেয়ে যান। বয়স এখন প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে। তাদের খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়াতে সবচেয়ে বেশি টাকা চলে যায়। বাকি যে টাকাটা কে সেই টাকা থেকে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ মেটানোর পর খুব একটা কিছু অবশিষ্ট থাকে না। ওই অল্প কটা টাকা দিয়ে পুরো মাস চলতে হয়।
আসাদ সাহেব চিন্তা করতে থাকে এই জীবন থেকে সে কী পেলো? প্রতিদিন সকালে উঠে অফিস যাওয়া। সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে বাড়িতে ফিরে হিসাব করতে বসা। এইতো জীবন। কোথাও একটু আনন্দ বিনোদন নেই। মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। বিনোদনের জন্য বাড়তি কোনো বরাদ্দ থাকেনা। বিনোদন বলতে শুধু টেলিভিশন দেখা।
এসব চিন্তা করতে করতে রাতের খাওয়ার সময় হয়ে গেল। খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসলো। আসাদ সাহেবের মেয়ে হঠাৎ করে বাবার কাছে আবদার করলো। বাবা আমার বান্ধবীরা অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে তাদের বাবা-মার সঙ্গে। চলনা আমরাও কোথা থেকে ঘুরে আসি। আসাদ সাহেব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললেন অফিস থেকে ছুটি দেবে না। আসাদ সাহেবের স্ত্রী আড় চোখে তার দিকে তাকালেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে খরচ এর চিন্তা করে আসাদ সাহেব ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তিনি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু কষ্ট পেলেন। তিনি জানেন আজকাল মানুষ একটু সময় সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। তার অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি কখনও পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেননি। মেয়েটার কথা চিন্তা করে তার খুব খারাপ লাগছিল। এসব চিন্তা করতে করতে আসাদ সাহেব খাওয়া শেষ করলেন।
খাওয়া শেষে আবার গিয়ে টিভি দেখতে বসলেন। এর ভিতর আসাদ সাহেবের স্ত্রী ও এসে তার পাশে বসলেন। তার স্ত্রী তাকে বলল মেয়ের মন খুব খারাপ হয়েছে। অনেক আশা করেছিল এবার কোথাও ঘুরতে যাবে। আসাদ সাহেব কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তার স্ত্রীকে বলল আচ্ছা দেখি চেষ্টা করে কিছু করা যায় কিনা। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন এখনই মেয়েকে কিছু বলার দরকার নেই। ব্যবস্থা করতে পারলে তখন বলো। পরদিন সকালে আসাদ সাহেব অফিসে গেলেন। চিন্তা করছিলেন কিভাবে ঘুরতে যাওয়ার টাকা যোগাড় হবে।
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেলে ন্যূনতম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকাটা তার মত স্বল্পআয়ের মানুষ কিভাবে জোগাড় করবে। আবার সন্তানের আনন্দের কথাও চিন্তা করছেন। ছেলে মেয়ে দুটোকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে তারা অনেক খুশি হবে। কখনো তো তাদেরকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। আশা সাহেব সিদ্ধান্ত নিল যেভাবে হোক টাকাটা সে জোগাড় করবে।(চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
আসলে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর অনেক সাধ।বেড়ানোসহ ভালো খাবার,ভালো পোষাক।কিন্তু তা কুলাতে হিমসিম খায়।তবুও চেষ্টা করে ব্যাপারগুলো সমাধান টানতে পারে।
আপনার গল্পের আসাদের কথা বলি। উনি মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবে।কারন তার চেষ্টা রয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা পোস্ট লেখার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
ভাইয়া, ভাইয়া আপনি একটি বাস্তব সম্মত গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।বর্তমানে যে পরিস্থিতি আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আর ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়।এর বাইরে কোন কিছু করার চিন্তা ভাবনা মাথায় আসাটাও যেন মধ্যবিত্ত পরিবারের অপরাধ।
ভাইয়া আপনি একজন আসাদ সাহেবের গল্প লিখেছেন। হাজারো আসাদ সাহেব আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আপনি এই গল্পের মাদ্ধমে মদ্ধবিত্ত পরিবার আর একজন বাবার একটি জীবন যুদ্ধ কাহিনী তুলে ধরেছেন যেটা পড়ে আর অনেক ভালো লেগেছে , সত্যি কথা বলতে এমন একজন বাবা আর একটা মদ্ধবিত্ত পরিবার এমন একটা অবস্থায় থাকে, না পারে এগুতে আবার না পারে পিছাতে , তবে ভাইয়া এমন কাহিনী প্রতিনিয়ত ঘটছে বেশির ভাগ পরিবারে , অনেক ভালো লাগলো লিখা গুলা ভাইয়া , অনেক ধ্যন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
বাবারা এমনি হয়। যত কষ্টই হোক না কেন দিনশেষে চেষ্টা করে ছেলে মেয়ে , পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাবার। এর মধ্য দিয়েই তাদের সারাটা জীবন কেটে যায়। নিজের কথা , নিজের শখ আল্লাদের কথা ভাবার সময় তাদের কখনোই হয় না। অনেক সুন্দর এবং বাস্তব একটি গল্প লিখেছেন ভাইয়া। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ।
এই গল্পটি আমি মনে করি প্রতিটা মধ্যবিত্ত সংসার এর ই। আসলে আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ হয়ে যায় অনেক বেশি। যার কারণে সংসার সামলে উঠতে পরিবারের ইনকাম কর্তা গুলোর নাজেহাল অবস্থা হয়। আর আমাদের সবকিছুর দাম যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর পরে আর কিই বা বলার থাকে। এইযে আজকে পেপার এ পড়লাম বাস বাড়া পাঁচটাকার জায়গায় এখন দশ টাকা। অর্থাৎ সব জায়গায় ডাবল এখন।
আসলে আপনি খুব সময় উপযোগী একটি গল্প লিখছেন ভাইয়া। পড়ে খুব ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আমাদের সবারই এখন আসাদ সাহেবের মত অবস্থা।দিনদিন সব কিছুর দাম যেইভাবে বাড়তেছে। তাহলে মনে হয় একদিন আমাদের সবারই এই আসাদ সাহেবের মত অবস্থাই হবে। আজকে পত্রিকায় দেখলাম ভাড়া সহ আরো অনেক কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মত মধ্যবিত্ত দের এই কষ্ট গুলো কেউ কোনদিন বুঝবে না আর বুঝেও নাই। আমাদের কষ্ট শুধু আমরাই বুঝবো। আপনার গল্পটা পড়ে আজকে একদম খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আমাদের দেশে এখন ৩০/৪০ হাজার টাকায় কিছু হই না, দ্রব্যমূল্যর যে দাম, আর যদি হয় মধ্যেবিত্ত পরিবার চালানো খুব কঠিন৷ সখ,আহ্লাদ এইসব মধ্যেবিত্ত পরিবারের এখন মানায় না বললেই চলে তারা কি মানুষ না৷
অনেক ধন্যবাদ রূপক ভাইয়া এতো সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া অনেক ভালো লাগলো আপনার এই গল্পের পোস্টটি পড়ে। আসলে ভাইয়া সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেটা স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যেও থাকে। কিন্তু আর্থিক কারণে সব আশা-আকাংখা-স্বপ্ন-সাধ পূরণ হয় না। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
মধ্যবিত্ত জীবনের বাস্তবতা এটাই। তারপরও ইচ্ছের কাছে মানুষ পরাজিত পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।