দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরা ফেরা এবং আড্ডা দেয়া। ১০% সাই-ফক্স।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন বিকেলে আমরা ১৫ থেকে ২০জন পর্যন্ত বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। কিন্তু কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আস্তে আস্তে সংখ্যা কমতে থাকে। কমতে কমতে একটা পর্যায়ে এমন অবস্থায় এসে দাঁড়ায় যে পুরো আড্ডাটাই বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমাদের বন্ধুদের ভেতরে আমি আর ফেরদৌস মাঝে মাঝে আড্ডা দিই। এলাকায় আরো দুই একজন আছে। কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা এতই ব্যাস্ত যে তাদের সাথে খুব একটা দেখা সাক্ষাত হয় না।
এর ভেতরে প্রায় সবারই চাকরি বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসার হয়েছে। যার ফলে আস্তে আস্তে বন্ধু-বান্ধবের জন্য বরাদ্দকৃত সময়টা আর অনেকেই রাখতে পারেনি। সাথে অনেক বন্ধু বান্ধব জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারাও হয়তো বছরে দু-একবার এলাকায় আসে। তখন তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। এখন এই আড্ডাটা খুবই মিস করি। যদিও জানি আর কখনোই আগেকার মতো আড্ডা দেয়া সম্ভব হবে না। তারপরেও পুরনো সময় গুলো মনে পড়লে অনেক খারাপ লাগে।
যাই হোক কয়েকদিন আগে বন্ধু হারুন ফোন দিয়েছিল খোঁজখবর নেয়ার জন্য। কুশলাদি বিনিময়ের পর সে বলল একদিন এলাকায় আসো আমরা কয়েকজন মিলে আড্ডা দিবো। আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। হঠাৎ সেদিন আমি আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরেছিলাম। বাসার কাছাকাছি এসে দেখি বন্ধু হারুন মোটরসাইকেল নিয়ে আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। সে আবার আমার দূরসম্পর্কের মামা হয়। কিন্তু সমবয়েসী হওয়ার কারণে মামা ভাগ্নে সম্পর্কের থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টাই বেশি জোরালো হয়েছে। আমি তাকে বললাম চলো উপরে যাই। একসাথে গল্প করা যাবে। সে বলল না তুমি কাপড় চোপড় পরে তৈরি হয়ে আসো। আমরা একসাথে কোথা থেকে ঘুরে আসি। আইডিয়াটা আমার পছন্দ হলো। আপনারা ইতিমধ্যে জানেন আমি ঘোরাফেরা করতে খুবই পছন্দ করি। ঘোরাফেরা করার কোনো ছোটখাটো সুযোগও মিস করতে চাইনা। যার ফলে আমি অল্প সময়ের ভিতর কাপড় পাল্টে নিচে চলে এলাম। তারপর দুজন মিলে উদ্দেশ্যহীন ভাবে যেতে থাকলাম।
এর ভেতর আমি হারুনকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা কোথায় যাবো? হারুন তখন আমাকে বললো চলো হাজিগঞ্জ থেকে ঘুরে আসি। অনেকদিন সেখানকার ডিম রুটি খাওয়া হয় না। পরিকল্পনাটা আমার মনে ধরল। তারপর সে আমাকে বললো ফেরদৌসকে ফোন দাও। দেখো যাবে কিনা? তাহলে আমরা তিনজন একসাথে যাই। ফেরদৌস কে ফোন দিয়ে প্রস্তাব দিতেই সে রাজী হয়ে গেলো। আমি তাকে বললাম তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হও। আমরা কয়েক মিনিটের ভেতর তোমার বাসার সামনে উপস্থিত হচ্ছি। দশ মিনিটের ভেতরে আমরা ফেরদৌসের বাড়ির সামনে পৌঁছলাম। আমরা পৌছে দেখি ফেরদৌস তখন বাসা থেকে বের হচ্ছে। পরে তিনজন দুটি মোটরসাইকেলে হাজীগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
কিছুদূর যাওয়ার পর ফেরদৌস হারুনকে বললো রনি কোথায়? ওকে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। প্রস্তাবটি আমাদের সবারই পছন্দ হল। তখন আমরা ঠিক করলাম আমি আর ফেরদৌস একটি জায়গায় অপেক্ষা করবো। হারুন গিয়ে রনিকে নিয়ে আসবে। তারপর আমরা চারজন মিলে হাজীগঞ্জ যাবো। তারপর হারুন রনিকে আনতে চলে গেলো। আমি আর ফেরদৌস মোটরসাইকেলে করে পদ্মার পাড়ে চলে গেলাম। কারণ আমরা জানি রনিকে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। কিছুদিন হলো পদ্মার পাড়ে যাওয়া হয়না। তাই আমি আর ফেরদৌস কিছুক্ষণ পদ্মার পাড়ে গিয়ে নদীর অবস্থা দেখছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে কেটে যাওয়ার পর হারুনের ফোন এলো। ফোন দিয়ে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করল তোমরা কোথায়? আমরা জানালাম আমাদের যেখানে অপেক্ষা করার কথা ছিলো তুমি সেখানেই থাকো। আমরা কয়েক মিনিটের ভেতর সেখানে আসছি। আমরা সেখানে পৌছে দেখি হারুন বন্ধু রনিকে নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। পরে আমরা দুই মোটর সাইকেলে চারজন রওনা দিলাম হাজীগঞ্জের উদ্দেশ্যে।
আমরা আস্তে আস্তে গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। অনেকদিন পর এভাবে চার বন্ধু একসাথে কোথাও যাচ্ছিলাম ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগছিলো। পথের মধ্যে আমরা গজারিয়া বাজারে রাফসান এর শোরুমের সামনে থামলাম। তারপর রাফসানকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের সঙ্গে যাবে কিনা। ও ব্যস্ততা দেখিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানালো। ইদানিং আমরা খেয়াল করেছি রাফসান ব্যবসা নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই আর আমরা ওকে খুব একটা জোরাজুরি করলাম না।
আমরা রওনা দিলাম হাজীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। জায়গাটা আমাদের শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই হাজীগঞ্জের কথা আমার বিভিন্ন পোস্টে আপনারা এর আগে হয়তো পড়ে থাকবেন। একসময় এই হাজিগঞ্জ বাজার ছিল অনেক বড় একটি বাজার। কিন্তু প্রমত্তা পদ্মার ভাঙ্গন এর শিকার হয়ে এই বাজার তার বেশিরভাগ অংশটা পদ্মার বুকে হারিয়েছে। তারপরেও এখন বাজারের চারপাশে বিভিন্ন উপায়ে নদী ভাঙ্গন ঠেকিয়ে বাজারটাকে কোনরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু বছর হলো এখন আর এদিকে ভাঙে না। বরং আবার নতুন করে বাজারের যে সমস্ত এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো জেগে উঠতে শুরু করেছে।
আমরা হাজিগঞ্জ বাজারে পৌঁছে পরিকল্পনা কিছুটা পরিবর্তন করলাম। কারন ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিলো এই বাজারে কয়েকটি দোকান আছে। যেখানে শুধু ডিম আর রুটি বিক্রি হয়। আপনি দোকানে বসে অর্ডার দিলে তখন আপনাকে একদম গরম রুটি সেঁকে দেবে।সাথে থাকবে ডিম ভাজি বা আপনি যেভাবে চান সেভাবে ডিম দেবে আপনাকে। আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিলো ডিম আর গরম রুটি খাওয়ার। কিন্তু সে বাজারে পৌঁছানোর পর সবাই মিলে ঠিক করলাম আগে দই খাওয়া যাক। এই বাজারের একটি দোকানের দই আমাদের সকলের খুব পছন্দের। আমরা যখনই এই বাজারে আসি সবচাইতে প্রথমে আমাদের লক্ষ্য থাকে সে দোকান থেকে দই খাওয়ার। তাছাড়া বাইরে এত গরম পড়েছে যে এই প্রচন্ড গরমের ভেতরে ফ্রিজের ঠান্ডা দই খেতে খুবই মজা লাগবে। এজন্য আমরা প্রথমে গেলাম দই খেতে। যদিও ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। দই খাওয়ার পর সেই দোকান থেকে বের হয়ে তারপর আমরা গেলাম সেই ডিম রুটির দোকানে।
সেখানে বসে ওরা তিনজন গরম রুটি আর ডিম ভাজি খেলো। এর ভেতরে বন্ধু হারুন এটি ঠাণ্ডা কোক নিয়ে এসেছে। সকলে একে একে করে সেই কোকের বোতলে চুমুক দিচ্ছিলাম। আমি কোক খেলাম কিন্তু ডিম খেলাম না। কারণ আজকে এমনিতেই আমার একাধিক ডিম খাওয়া হয়েছে। এই গরমের ভেতর আমি আর খেতে রাজি হইনি। যাইহোক যখন ওরা ডিম রুটি খাচ্ছিলো। তখন আমি দোকানদারের কয়েকটি ছবি তুললাম। কিন্তু দোকানদারের চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটি তার খুব একটা পছন্দ হয়নি। তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম যে কি ব্যাপার? তখন সে জানালো কয়েকদিন আগে তাদের এলাকার কোন একজন তার ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেছে। সেই ছবি দেখেছে তার প্রবাসী মেয়ের জামাই। এই ছবি দেখে হয়তো সে তার শশুরকে কিছু বলেছে। এজন্য সে ছবি তোলা খুব একটা পছন্দ করে না।
ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আমি তখন তাকে আশ্বস্ত করলাম আমি এটা ফেসবুকে দেবো না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। আমি যেখানে এই ছবি ব্যবহার করব সেখান থেকে আপনাকে কেউ চিনতে পারবে না। যাই হোক তার সাথে আরো বেশ কিছুক্ষন গল্পগুজব করে পরে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বিকালটা অত্যন্ত চমৎকার কাটল আমার দীর্ঘদিন পর চার বন্ধু মিলে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | হাজিগঞ্জ বাজার |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগে। আর সেটা যদি হয় এরকম সুন্দর পরিবেশ নদীর পারে তাহলে তো কোন কথাই নেই। আমরাও মাঝেমধ্যে সময় পেলে বন্ধুরা মিলে পদ্মার পাড়ে বসে আড্ডা জমিয়ে তুলি। নিঃসন্দেহে আপনারা খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন। আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা থাকলো
যে বাজারে আড্ডা দিয়েছিলাম সেই জায়গাটি আসলেই সুন্দর। একদম নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি বাজার। সময়টা ভালোই উপভোগ করেছিলাম।
বন্ধুরের সাথে একত্রিত হয়ে ঘুরতে যাওয়া, আপনাদের পরিকল্পনাটা বেশ ভালো ছিল । সত্যি আমরা সবাই এই সময়টা মিস করি । কোন এক সময় ছিল বন্ধুছাড়া ভালো লাগত না । আর এখন বাস্তবতার সাথে লড়তে সময় চলে যায়। শুভকামনা
জীবনের একটা সময় গিয়ে সবাইকেই একা হয়ে যেতে হয়। তখন পরিবারের বাইরে আর কারো জন্যে সময় থাকে না।
বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি করার আনন্দটাই আলাদা। আমিও বন্ধুদের সাথে বাজারে গিয়ে দই খেতে অনেক পছন্দ করি। আর বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব করে সত্যিই সময়টা অনেক চমৎকার ভাবে কাটানো যায়। সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
ঠিকই বলেছেন বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়টা আসলেই চমৎকার।
আসলে ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন আমরাও এক সময় অনেকগুলো বন্ধু একসাথে বসে আড্ডা দিতাম। কিন্তু এখন যদিও মাঝে মাঝে বাড়ি যাওয়া হয় কিন্তু সেই বন্ধুদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই তাদের জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যস্ত থাকে। আর মাত্র দুই একজন বন্ধু হয়তো মিলে আড্ডা দেই তা তো ভালোই লাগে। আর আপনিতো বন্ধু প্রিয় মানুষ মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে থাকেন আজকেও বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি করে ভালো সময় পার করেছেন বোঝাই যাচ্ছে।
বন্ধু ছাড়া জীবন আমার ভালো লাগেনা। এই জন্য সময়-সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি।