হঠাৎ প্রস্থান ও বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তাভাবনা।
মানুষের জীবনটা কেমন অদ্ভুত তাই না? দু-তিন দিন আগের কথা আমি আর আমার স্ত্রী দুজন মিলে ঘুরতে যাওয়ার নানারকম পরিকল্পনা করছিলাম। ইচ্ছে ছিল এই মাসের শেষের দিকে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার। সেই ট্যুর প্ল্যান নিয়ে নানারকম হিসাব-নিকাশও করছিলাম। তারওপর সেদিন ছিল আমাদের একটি বিশেষ দিন। তাই আমরা আগের রাতে ঠিক করেছিলাম পরদিন বাসায় কোন রান্না হবে না। আমরা তিন বেলায় বাইরের খাবো। কিন্তু পরদিন ভোর বেলায় হঠাৎ করে আমার চাচার কাছ থেকে একটা ফোন আসে। এত সকালে চাচার ফোন দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম কোন একটা খারাপ সংবাদ হয়তো আছে। ফোন রিসিভ করার পর ঠিক সেটাই ঘটলো।
ফোন রিসিভ করার পর জানতে পারলাম আমার ফুফাতো ভাই মারা গিয়েছে। হঠাৎ করে তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলাম। কারণ এই ফুফাতো ভাইয়ের সাথে আমাদের সবারই যথেষ্ট আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। খুবই মিশুক এবং গল্পবাজ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। মাত্র তিন মাস আগে ওনার স্ত্রী ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছেন। তার তিন মাস পরে উনিও পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে খুব খারাপ লাগছিল। আর সেই সাথে উনার সাথে জড়িয়ে থাকা হাজারো স্মৃতি মনের কোণে এসে উঁকি দিচ্ছিল।
কর্মজীবনে উনি তেমন কিছুই করতে পারেনি। তবে আমাদের এই ফুফাতো ভাই অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা আইডিয়াল স্কুল থেকে একাধিক লেটার সহ ফাস্ট ডিভিশনে পাস করেছিলেন। তখনকার দিনে ফার্স্ট ডিভিশনের যথেষ্ট কদর ছিল। বেশ ভালো ছাত্র হিসেবে তার নাম ডাক ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। প্রেম ঘঠিত কারণে পরবর্তীতে ওনার আর লেখাপড়া তেমন আগায়নি। তারপর থেকেই ওনার জীবনে নানা রকম চড়াই উৎরায় শুরু। অবশ্য উনার ভালোর জন্য ওনার পরিবার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। দু দুবার তাকে প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সে টিকতে পারেনি। আমার ভাইটি ছিল প্রচন্ড আবেগি এবং কিছুটা রগচটা মানুষ। এইসব লোকজনের পক্ষে বিদেশে গিয়ে টিকে থাকা খুব কঠিন।
বিদেশে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ায় সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। যার ফলে উনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সেই জন্য দেশে ফিরে এসেও আর সে তেমন কিছু করতে পারেনি। অনেকদিন ধরেই আমার সেই ফুফাতো ভাইয়ের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। তবে মারা যাওয়ার দিন কয়েক আগে তিনি আমাকে ব্যক্তিগত একটি কাজে ফোন দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা। সেদিন ভোর বেলায় যখন মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাদের বাড়িতে গেলাম। তখন সেখানে পৌঁছে মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। কারণ এই বাড়িটির সাথে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন মধ্যবিত্ত মানুষের বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম ছিল আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া।
আমরা যে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে সাধারণত বেড়াতে যেতাম তার ভেতরে আমাদের এই ফুফাতো ভাইদের বাড়ি ছিল অন্যতম। শুক্রবার থাকতো আমাদের স্কুল ছুটি। যার ফলে ঐদিন আমার মার সাথে আমরা বেড়াতে বের হতাম। তখন আমরা এই ফুপু বাড়িতে এলে খুব খুশি হতাম। কারণ অনেক প্রাচীন এই বাড়িটি আমাদের কাছে অনেক ভালো লাগার একটি বিষয় ছিল। এই বাড়িটির সাথে আমার শৈশবের হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই সেখানে গিয়ে আমার সেই ভাইয়ের কথা আরও বেশি করে মনে পড়তে লাগলো।
কি অদ্ভুত একটা ব্যাপার। মানুষের জীবনের সবচাইতে বড় সত্য যে বিষয়টা সেটাকেই মানুষ ভুলে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু আমরা সকলেই জানি এই সত্য থেকে পালানোর কোন পথ নেই। মৃত্যুর মুখোমুখি আমাদের সকলকেই হতে হবে। সেটা আজ হোক বা দুদিন পরে। আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে তখন আমাদের মৃত্যু বিষয়ক চিন্তা বেশি করে গ্রাস করে। তবে আবার দ্রুত আমরা সেটা ভুলেও যাই। আসলে আমরা ভুলে যেতে চাই। মনটা আজকে ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তাই হয়তো এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আসলে প্রিয় মানুষগুলি যখন দুনিয়া থেকে চলে যায়। তখন আর কোন কিছুই ভালো লাগেনা। এখন আমার শুধু বারবার মনে হচ্ছে আমার সেই ভাইয়ের সাথে আরও যোগাযোগ রাখা দরকার ছিল। কারন আমার সেই ভাইয়ের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি খুবই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান হওয়ায় এই পৃথিবীতে তার পরিবার বলতে আর তেমন কিছুই ছিল না। তাই এখন বারবার মনে হচ্ছে তার এই নিঃসঙ্গ সময়ে তার সকল আত্মীয়-স্বজনের উচিত ছিল তার পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু মানুষ জীবিত থাকা অবস্থায় আমাদের ভেতর এ ধরনের চিন্তাভাবনা খুব একটা আসে না। মানুষ যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় তখনই আমাদের ভেতরে এই ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। সেজন্য আমাদের সকলেরই উচিত সময় থাকতে প্রিয় মানুষগুলির খোঁজ খবর নেয়া। তাদের প্রতি নিজের কর্তব্য পালন করা। এই লেখাটা যখন লিখছি ইতিমধ্যে আমি আমার আরো একজন কাছের মানুষকে হারিয়েছি। সেটা নিয়ে অন্য আরেকদিন আপনাদেরকে জানাবো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলেই ভাইয়া জীবনটা সত্যিই অদ্ভুত কখন কি পরিস্থিতি সামনে চলে আসে কেউই বলতে পারেনা ।যেমনটা আপনার সাথে হয়েছে অনেক পরিকল্পনাই ছিল যেটা একটি ফোন কলে সব নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। আপনার ফুফাতো ভাই সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম তার মৃত্যুটা আসলেই অনেক কষ্টের। প্রতিটা মানুষের মধ্যে প্রতিভা আছে যেগুলো কেউ কাজে লাগাতে পারে আবার কেউ পারে না । এটাই জীবন যাইহোক তার মৃত্যুর মাগফিরাত কামনা করি তিনি যেন জান্নাতুল ফেরদাউস পান।😪
পৃথিবীতে যারা এসেছে তাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। তবে কিছু কিছু মৃত্যু আছে যেগুলো সবাইকে প্রতিটা সেকেন্ডে কুরে কুরে খায়। আপনার ফুপাতো ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা আসলেই শোকাহত দোয়া করি তিনি যেন জান্নাতবাসি হতে পারে। পরপর দুই জন কাছের মানুষ হারিয়ে ফেলেছেন। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ধৈর্য ধরার শক্তি দান করুক।
লেখাটি পড়ে চোখের কোনে জল অনুভব করছিলাম।মানুষটি বড়ই নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে গেলো।জীবন বড়ই অদ্ভুত। আমরা কেন যে এত ব্যস্ততাকে দোহাই দেই। আমাদের ইচ্ছা শক্তি থাকলে সবার সাথেই যোগাযোগ বজায় রাখতে পারি আসলে।খুব খারাপ লাগলো। আপনার ফুফাতো ভাইকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন, আমিন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
মৃত্যু মানুষের জীবনের একটি অলংঘনীয় সত্য কিন্তু এই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা একেবারেই উদাসিন। সমবসময় চেষ্টা করি ভুলে থাকার। এই মুহুর্তে মৃত্যু হলে হিসাবের খাতার কি অবস্থা হবে সে সম্পর্কে কজন সচেতন।