অশুভ ছায়া (প্রথম পর্ব)।
সাব্বির আজকে অনেক খুশি। কারণ দীর্ঘদিনের লেখাপড়া শেষ করে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি শেষে সে আজ চাকরির জয়েনিং লেটার হাতে পেয়েছে। পোস্টিংটা হয়েছে যদিও প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। কিন্তু তাতেও তার মনে কোন দুঃখ নেই। কারণ সাব্বির ছোটবেলা থেকেই গ্রামীন পরিবেশ অনেক পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকেই তার শহরে পরিবেশে বেড়ে ওঠা। তবে সে কখনোই শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ পছন্দ করেনি। গ্রামে তেমন কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকায় তার গ্রামে তেমন একটা যাওয়া হতো না। তবে যখনই বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেতো। সে সুযোগটা সে কখনোই মিস করত না।
সেজন্য গ্রামে পোস্টিং হলেও সে একেবারেই মন খারাপ করেনি। তবে তার কয়েকজন বন্ধু প্রচন্ড মন খারাপ করেছে গ্রামে পোস্টিং হওয়ায়। সাব্বির বাড়ি ফেরার পথে মিষ্টির দোকান থেকে কয়েক কেজি মিষ্টি কিনে বাড়িতে ফিরলো। সদ্য বিয়ে করা নতুন বউকে তার চাকরি হওয়ার খবরটা দিতে সে প্রচন্ড খুশি হলো। তবে পরক্ষণেই তার বউ সাদিয়া তাকে জিজ্ঞেস করল পোস্টিং কোথায় হয়েছে? তখনই সাব্বির বুঝতে পারল এখনই তার বউয়ের মুখ থেকে হাসি মুছে যাবে। কারণ সে গ্রামীন পরিবেশ একেবারেই পছন্দ করে না।
সাব্বির প্রথমে নানা রকম কথাবার্তা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু তার বউ নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাকে বলতে হল দেশের উত্তর অঞ্চলের একটি গ্রামে তার পোস্টিং হয়েছে। এ কথা শুনেই সাদিয়া প্রচন্ড মন খারাপ করলো। কারন সে আগে থেকে চিন্তা করে রেখেছিল সাব্বিরের কোন একটা ভালো শহরে পোস্টিং হলে। তারা সেখানে গিয়ে সুন্দর করে নিজেদের সংসারটা গুছিয়ে নেবে। কিন্তু গ্রামে পোস্টিং হওয়ায় তার সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।
সাদিয়া অবশ্য আগে থেকেই সাব্বিরকে বলছিল শহরের পোস্টিং এর ব্যাপারে তদবির করার জন্য। তবে সাব্বির তদবির করতে রাজি হয়নি। কারণ তাকে তার এক স্যার বলেছে যারা প্রথম পোস্টিংয়ের সময় তদবির করতে যায়। তাদেরকে ভালো চোখে দেখা হয় না। আর যেহেতু সাব্বিরের গ্রামে যেতে কোন সমস্যা নেই সেজন্য সে আর এই ঝামেলায় যায়নি। সাদিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সাব্বির কে বলল তোমাকে গ্রামে যেতে হবে না। আমার মামার পরিচিত লোক আছে। আমি মামাকে বলে তোমার পোস্টিংটা ক্যানসেল করাচ্ছি।
কিন্তু সাব্বির সাদিয়ার প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি হয় না। সে সাদিয়াকে বারবার করে বোঝাতে চেষ্টা করল এটা আমার জীবনের প্রথম পোস্টিং। এখন যদি আমি সেই পোস্টিং ক্যানসেল করার জন্য লবিং করি। তাহলে এটা ঊর্ধ্বতন মহল ভালোভাবে দেখবে না। আর তাছাড়া গ্রামের মানুষজন ভয়াবহ কষ্টে আছে। তাদেরকে সেবা দেয়াটা ডাক্তার হিসেবে আমার ধর্ম। ডাক্তারি পেশা আমি বেছে নিয়েছি লোকজনের সেবা করার জন্য। এখন নিজের আরাম-আয়েশের কথা চিন্তা করে আমি এই পোস্টিং ক্যানসেল করতে পারবো না।
তোমাকে আমার সাথে গ্রামে যেতে হবে না। তুমি এখানে আমার বাবা মার সাথে থাকো। আমি গ্রামে একাই যাবো। তখন সাদিয়া তাকে বলল আমার তো গ্রামে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। কখনো ইচ্ছা হলে দু-একদিনের জন্য যেতে পারি। কিন্তু গ্রামে গিয়ে থাকা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। সাব্বির তখন সাদিয়াকে বলল সেটা তোমার ইচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে তোমাকে জোড়াজুড়ি করব না। এই কথা বলে সাব্বির কাপড় চোপড় ছেড়ে ফ্রেস হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে খাওয়া-দাওয়া করে সে তার কাপড় গুছাতে লাগলো।
সাব্বিরকে কাপড় গোছাতে দেখে সাদিয়া অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল। তোমাকে কবে সেখানে জয়েন করতে হবে? সাব্বির বললো পরশুদিন সকালে আমাকে আমার কর্মস্থলে রিপোর্টিং করতে হবে। কালকে সকালে আমি আমার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। এ কথা শুনে সাদিয়া কোন কথা না বলে মুখ গোমড়া করে বসে রইল। পরদিন সকালে সাব্বির তার পরিবারের সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দিল। যাওয়ার সময় সাব্বিরের মা তাকে বলল ওখানে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে বৌমাকে তোর সাথে নিয়ে রাখিস। ওখানে তুই একা কিভাবে কি করবি? সাব্বির বলল সেটা পরে দেখা যাবে। যাওয়ার সময় সাদিয়া সাব্বিরকে তেমন কিছুই বলল না। সাব্বির কিছুটা মন খারাপ করে বাড়ি থেকে রওনা দিলো। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
প্রখ্যাত লেখকদের এই ধরনের লেখাগুলো পড়তে খুবই ভালো লাগে। শুরুটা চমৎকার হয়েছে তবে যখনি চিন্তা করি এটা একটা গল্প তখনই পড়ার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তোমার লেখা নিয়ে নয় যেকোন লেখা পড়ার ক্ষেত্রেই এমন হয়। যদি সত্য ঘটনা অবলম্বনে বা কমপক্ষে এর ছায়া অবলম্বনে গল্পগুলো লেখা হয় তাহলে পড়তে ভালো লাগে।
সাব্বিরের মন-মানসিকতা খুবই ভালো সেজন্যই তিনি গ্রামে যেতে অনীহা প্রকাশ করেনি। প্রতিটা মানুষের মধ্যে এই ধরনের মন মানসিকতা থাকা উচিত যেটা সাব্বির করেছে। গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি রোগাক্রান্ত এবং বিভিন্ন সমস্যায় সম্মুখীন হয় সেজন্য তাদের উন্নত চিকিৎসা পাওয়া উচিত। সেই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে সাব্বির উত্তম কাজ করেছে।