বেসরকারী চাকুরীজীবি রায়হানের দুঃসহ জীবন(ছোটো গল্প) । ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
রায়হান ঘুম থেকে উঠে দেখে আটটা বেজে গিয়েছে। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে নাস্তা না করেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাইরে গিয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। শেষ পর্যন্ত বাস এলে যুদ্ধ শুরু করতে হয় বাসে উঠার জন্য। পথে চিন্তা করতে থাকে অফিসে পৌঁছে আজ বসের ঝাড়ি খেতে হবে।
ছবির সোর্স-লিংক
গতকাল অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। অফিসের কাজ শেষ করতে করতে রাত ১১ টা বেজে গিয়েছিলো। বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুটো বেজে গিয়েছে। যার ফলে আজ সকালে তার উঠতে দেরি হয়েছে। কিন্তু বসের গতকালকের কথা কিছু মনে থাকবে না। বেসরকারি চাকরিজীবীদের এই এক সমস্যা। অফিসে আসার সময় আছে কিন্তু যাওয়ার কোন সময় নেই।
রায়হান অফিসে পৌঁছাতেই ওর কলিগ ওকে বলল ঝাড়ি খাওয়ার জন্য তৈরি থাকেন। বস একটু আগে আপনাকে খুঁজে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর যথারীতি বসের রুম থেকে ডাক আসলো। রায়হান বসে রুমের পৌঁছানোর সাথেই বস তাকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিলো। তারপর লম্বা একটা কাজের ফিরিস্তি ধরিয়ে দিলো। রায়হান বসের রুম থেকে বেরিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মনে মনে চিন্তা করছিলো যাক এযাত্রা বাঁচা গেলো।
টেবিলে ফিরে রায়হান নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। কাজ করতে করতে হঠাৎ করে তার মনে পরল সামনের সপ্তাহে বাচ্চার স্কুলের ফিস দিতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে বাচ্চাদের ফিস বাড়িয়ে দিয়েছে। রায়হান দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। গোনা টাকায় সংসার চালাতে হয়। হঠাৎ করে এই বাড়তি টাকার সংস্থান সে কিভাবে করবে?
দীর্ঘদিন ধরে রায়হানের কোনো প্রোমোশন হয় না। বেতন ও বেড়েছে সামান্য। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ার জন্য বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার মতো অসংখ্য বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। কিভাবে সে কুলিয়ে উঠবে কিছুতেই ভেবে পায়না। অথচ পারফরম্যান্স অনুযায়ী তার প্রমোশন পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রমোশন পেলো বসের এক আত্মীয়।
নানান রকম চিন্তায় রায়হান আর কাজে মন বসাতে পারেনা। রায়হান জানে বয়স আরেকটু বাড়লে কোম্পানি তাকে যে কোনো অজুহাতে ছাটাই করে দেবে। এরকমটাই সবার সাথে করে আসছে। সবচাইতে অমানবিক দিক হচ্ছে প্রায় একদম কপর্দকশূন্য ভাবে এইসব কোম্পানি থেকে বিদায় নিতে হয়। তখন আর অন্য কোথাও চাকরি করার বয়স থাকে না।
যে কটা টাকা বেতন পায় তা দিয়ে কোনরকমে কষ্টেসৃষ্টে তার ছোট্ট সংসার চলে যায়। জমানো প্রায় কিছুই থাকেনা। সবকিছুতেই অনেক হিসাব করে চলতে হয়। নিজের কোন সখ আহলাদ পূরণের কোনো সুযোগ নেই। এইসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করে বসের রুম থেকে আবার ডাক আসে। রায়হান তড়িঘড়ি করে বসের রুমে যায়। বস তাকে জিজ্ঞেস করে কাজের কতদূর। যদিও তার কাজ হয়নি তবুও বসের ঝাড়ি থেকে বাঁচার জন্য বলে আর কিছুটা বাকি আছে।
তড়িঘড়ি করে টেবিলে এসে আবার কাজ শুরু করে। আজও কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। অথচ বস সন্ধ্যার সময় বাড়িতে চলে গিয়েছে। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে কাজ শেষ করে তার টেবিলে ফাইলগুলি জমা করে দিতে। রায়হান যখন অফিস থেকে বের হলো তখন বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে যেতে পুরো ভিজে যেতে হবে। তারপর আবার বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বাস আসলেও তাতে ওঠা যাবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ। একবার চিন্তা করছিল একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় চলে যাবে কিনা। পরমুহূর্তেই ভাবনাটা বাতিল করে দিল টাকার কথা চিন্তা করে।
এমনিতেই টানাটানির সংসার। সিএনজিতে ওঠার মতো বিলাসিতা দেখানোর তার কোনো সুযোগ নেই। অগত্যা সে এই বৃষ্টির ভিতর হাঁটা শুরু করলো। হেটে যখন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলো তখন দেখল বাস যেটাই আসছে সেটাই লোকজনে ঠাসা। অনেক কষ্টে ধাক্কাধাক্কি করে শেষ পর্যন্ত একটি বাসে উঠতে পারল। কিন্তু বসার কোনো সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত রাত বারোটার দিকে ভেজা ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে যখন বাসায় পৌঁছালো। গিয়ে দেখে বাসার গেট বন্ধ। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে এত রাতে গেট খোলা যাবে না। ভেজা শরীর নিয়ে রায়হান বাইরে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে থাকলো। এ দুঃসহ জীবন থেকে আসলেই সে কি পেয়েছে?
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
আশা করছি গল্পটি আপনাদের ভাল লাগবে।
পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
বাস্তবিক একটি গল্প খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেকেই গল্প লিখে কিন্তু ফুটিয়ে তুলতে সবাই পারেনা। আপনি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
ভাই চাকরিজীবীদের সম্পূর্ণ বাস্তব জীবন চিত্রটি আপনি যেভাবে তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে স্যালুট জানাই। অসাধারণ হয়েছে ভাই আমি পড়েছি পুরোটা। আমিও এক সময় চাকরি করতাম তবে এখন ব্যবসা করার সুবাদে এই অস্বস্তিকর জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এত সুন্দর একটি বাস্তব চিত্র আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
রায়হান সাহেবের মতো লাখো বেসরকারি চাকুরিজীবী রয়েছে,যাদের জীবন যাত্রার মান অনেক অন্নোত।
আসলে বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আসলেই জীবন বড় নির্মম।প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে একেকটি অধ্যায়।যা পরিশেষে হয় ইতিহাস। সেই ইতিহাস হয়তো কারো স্বীকৃতি পায় ইতিহাসের পাতায়। কারোটা স্বীকৃতি পায় না। তবুও তো ইতিহাস। তাছাড়া আপনার আজকের লেখাটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে জীবনেরই এক দুঃসহ ইতিহাস। যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
এটা কোনো গল্প না। এটা যেন একজন মধ্যবৃও বেসরকারী চাকরিজীবির আর্তনাদ। আপনার গল্পটার বর্তমান সময়ের সাথে শতভাগ সামঞ্জস্য রয়েছে। অসাধারণ ভাবে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। এক শ্রেণির লোককে বেশি সুবিধা দিতে গিয়ে কিন্তু এক শ্রেণির লোক দরিদ্রের শেষ সীমায় চলে এসেছে এটা যে কেন কতৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। খুব ভালো লিখেছেন ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র এটাই। এই কাহিনীটা শুধু একজনের না ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। হয়তো তারা কখনও মুখ ফুটে বলে ন। কিন্তু কাহিনীটি তাই হয়, খুব খারাপ লাগলো কাহিনী টা পড়ে আসলে। কারণ বাস্তব ব্যাপার গুলো যে কতটুকু ভয়ংকর হয় তাই কাহিনীগুলো না পড়লে বুঝা যায়না।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আমাদের বয়সী যে ছেলেগুলা চাকরিতে ঢুকেছে এবং নতুন বিয়ে করেছে তাদের সবারই আমি শুনেছি একই অবস্থা কারণ সংসার সামলিয়ে এই বয়সে জব নিয়ে আসলে খুবই তারা বিপদের মধ্যে আছে। চাকরিতে আসলে বেশিরভাগ সময় মন মতো স্যালারি পাওয়া যায় না অথবা প্রমোশন পাওয়া যায় না তা সে যত কষ্টই করুক না কেনো। সমাজের খুবই বেহাল দশা এই দিকটা দিয়ে, আপনার গল্পটা পড়ে কষ্ট পেলাম আমি।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
অনেক সুন্দর একটি কাহিনি পরলাম এতক্ষণ। অনেক অনেক ভাল লাগলো,, আসলে সত্যিই বলতে আমাদের এখনকার সময়ে এই জীবন যুদ্ধ সবসময় ঘটে চলেছে। যা আসলে দু:খজনক। প্রতিটি মানুষ বাচার জন্য নিজের পরিবারের জন্যে দিন ভর যুদ্ধ করেই যাচ্ছে।
সত্যিই খারাপ লাগে, যখন এই মানুষ গুলোর কষ্টের দিন গুলোর কথা শুনতে পায়।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
একেবারে বাস্তব জীবনের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে আপনার লেখাতে। সত্যিই প্রাইভেট চাকরিজীবীদের কে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এভাবে করেই জীবন পার করতে হয়। এদের মধ্যে খুব অল্প জন-ই আছে যারা স্বাচ্ছন্দে কাজটা করতে পারছে। আসলে এরকম পরিস্থিতির জন্য কে বা কারা দায়ী সেই বিষয়টি মাঝে মাঝে চিন্তা করি। কেন আমরা কর্মের একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারছিনা আমাদের প্রাইভেট সেক্টর গুলোতে। এভাবে করে চাপ নিতে নিতে আমাদের সমাজের একটা মানুষ দিনে দিনে তিলে তিলে হারিয়ে যায় এটাই হচ্ছে দিন শেষে আমাদের ব্যর্থতা। অথচ চাইলে এই মানুষটিকে দিয়ে অনেক ক্রিয়েটিভ এবং অনেক ভালো ভালো কাজ করানো যেত কিন্তু এইরকম বাজে সিস্টেম এর কারনেই আমাদের মেধা এবং প্রতিভা গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একদম ঠিক বলেছেন।