নদীপথে ফেরিতে চলাচলের অভিজ্ঞতা। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আমাদের শহর থেকে ঢাকার সাথে যোগাযোগের মধ্যে নদী পার হতে হয়। নদী পারাপার হওয়ার সাধারণত এখানে দুটি মাধ্যম রয়েছে। একটি হচ্ছে ফেরি অন্যটি হচ্ছে লঞ্চ। লঞ্চ পারাপারের সমস্যা হচ্ছে লঞ্চ আপনাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দেবে। তারপর সেখান থেকে আপনাকে লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত গিয়ে লঞ্চে উঠে নদী পার হতে হবে। নদী পার হওয়ার পর আবার বেশ খানিকটা হেঁটে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। যদিও এইভাবে গেলে একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যায়। কিন্তু এই নামা ওঠার ঝামেলার জন্য অনেকেই লঞ্চ পারাপারে যেতে চায়না।

IMG_20211123_152230.jpg

আবার যাদের সাথে মহিলা থাকে এবং বড় লাগেজ থাকে তারাও লঞ্চ পারাপারে যেতে চায়না। কারণ মহিলাদের কে নিয়ে এতটা পথ হাঁটতে কেউ চায় না। সাথে আর একটা ঝামেলা আছে লাগেজ পরিবহনের। পরিবহনে অনেকেই কুলি ব্যবহার করে। কিন্তু এই কুলিরা নানান রকম ঝামেলা করে। যার ফলে সময় বেশি লাগলেও অনেকেই ফেরির মাধ্যমে যে বাস পার হয় সেই বাসে যেতে চায়।

IMG_20211118_124833.jpg

বাস জার্নি আমার কাছে কখনোই ভালো লাগেনা। দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকতে আমার খুবই বিরক্ত লাগে। আমার সবচাইতে পছন্দের জার্নি হচ্ছে ট্রেন জার্নি। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় আমাদের শহর থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। তবে আশা করছি অতি শীঘ্রই আমরা ট্রেনে করে ঢাকা যেতে পারবো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমাদেরকে বাধ্য হয়েই বাসে যাতায়াত করতে হবে।

IMG_20211118_130322.jpg

ঢাকা থেকে ফরিদপুর আসা যাওয়ার সময় একটি মুহূর্ত আমার কাছে খুব ভালো লাগে। যখন বাস ফেরিতে থাকে ওই সময়টা আমার খুবই চমৎকার লাগে। কারণ বাস ফেরিতে ওঠার পরেই আমি সোজা ফেরির টপ ডেকে চলে যায়। সেখান থেকে নদীর খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। সেখানে সুন্দর বসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ফেরিতে কাটানো কিছু মুহূর্ত ভাগ করে নেব এবং ফেরির কিছু দৃশ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।

IMG_20211118_124947.jpg

আমাদের এই অঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের ফেরি চলাচল করে। একটি হচ্ছে ছোট ফেরি আরেকটি হচ্ছে বড় ফেরি। বাস ফেরিতে ওঠার পর নদী পার হতে আমাদের সাধারণত সব মিলিয়ে এক ঘন্টা লাগে। এই সময়টা আমি খুবই উপভোগ করি। বড় ফেরি গুলি চারতলা বিশিষ্ট হয়। এই ফেরি গুলির দ্বিতীয় তলায় থাকে একটি রেস্টুরেন্ট এবং দুটি দোকান। বাস ফেরিতে ওঠার পর আমি প্রথমে ফেরির দ্বিতীয় তলায় চলে যাই। সেখান থেকে হালকা কিছু খাবার কিনে তারপর আমি ফেরির একদম উপরের তলায় চলে যায়।

IMG_20211118_130251.jpg

IMG_20211118_130305.jpg

সেখানে গিয়ে নদীর দিকে তাকালে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। আপনি পদ্মা নদীর প্রেমে পড়ে যাবেন। নদীর এই নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে সবাই খুব পছন্দ করে। এজন্য বাস ফেরিতে ওঠার পর অনেক লোকজন উপরে চলে আসে এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। আর এখানে এসে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। কারণ এই টপডেক থেকে যে ভিউ আপনি পাবেন নদীর সেটা অন্য কোথা থেকে পাবেন না।

IMG_20211118_125123.jpg

IMG_20211118_130524.jpg

যে সমস্ত এলাকার লোকজন নদী পারাপারে অভ্যস্ত তাদের জন্য অবশ্য এটা কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়। কিন্তু যাদের শুধু সড়ক পথেই চলাচল তাদের জন্য এটা একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আপনি যখন ফেরির টপ ডেকে বসে থাকবেন তখন সেখানে বিভিন্ন রকম হকারেরা আসবে। কেউ ঝাল মুড়ি নিয়ে কেউ জুতা পালিশ করতে। টপ ডেকে নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও থাকে।

IMG_20211118_130618.jpg

বাস জার্নির এই সময়টা আমি শুধু উপভোগ করি। তাছাড়া ফেরিতে টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। যাত্রাপথে অনেকেরই টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের জন্য ফেরি এক ধরনের নিরাপদ জায়গা। ফেরির দ্বিতীয় তলার রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেখানে মূলত থাকে বিভিন্ন রকমের মাছ আর মুরগি। ওই রেস্টুরেন্টের মূল আকর্ষণ অবশ্য পদ্মার ইলিশ। যদিও তারা পদ্মার ইলিশ বিক্রি করে কিন্তু অনেকেরই অভিযোগ এটা আসলে পদ্মার ইলিশ না।

IMG_20211118_125110.jpg

IMG_20211118_125023.jpg

ওখানে আমি কয়েকবার খেয়েছি। এখানে খাবার খাওয়ার একটি মজার সিস্টেম আছে। দেড়শ টাকার বিনিময় মাছ বা মাংস যেকোনো একটি আইটেম সাথে আনলিমিটেড ভাত এবং ডাল খেতে পারবেন। এদের রান্না আমার কাছে খুব একটা পছন্দ হয়নি। তার পরেও দূরের যারা যাত্রী তাদের এখান থেকে খেতে হয়। কারণ এখানে মোটামুটি কম দামেই খাবার পাওয়া যায়। বাংলাদেশে হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট গুলিতে খাবারের দাম থাকে অত্যধিক বেশি।

IMG_20211118_130335.jpg

IMG_20211118_130335.jpg

একটি ফেরিতে ২০ থেকে ৩০ টি গাড়ি ওঠে। নদী পথে যাতায়াতের জন্য ফেরি একটি নিরাপদ মাধ্যম। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক আপনি ফেরিতে মোটামুটি নিরাপদ থাকবেন। আমার ছোটবেলা থেকেই ঢাকা যাওয়ার সময় ফেরিতে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কখনো কোনো ফেরি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ডুবতে দেখিনি। যদিও অল্প কয়েকদিন আগে একটি ফেরি কারিগরি ত্রুটির কারণে ডুবে গিয়েছে। এটা দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। কারণ জীবনে প্রথম এই ধরনের ঘটনা দেখলাম।

IMG_20211118_125534.jpg

IMG_20211118_125330.jpg

IMG_20211118_125336.jpg

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। বিশেষ করে যাদের নদীপথে চলাচলের অভিজ্ঞতা নেই। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রহুয়াই নোভা ২আই
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থান লিংক

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

খুব সুন্দর লাগলো ভাইয়া। আমরা কখনো ফেরিতে উঠি নাই। তবে আপনার পোস্ট পড়ে আমি অনেক কিছুই বুঝলাম। বাস ফেরি তো তাহলে খুব সুন্দর হয়। রেস্টউরেন্টও আছে যেহেতু, খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনো টেনশনই নেই৷ অনেক ভালো সময় কাটিয়েছেন আপনার ভ্রমণে। ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

এমন একটা পোস্ট করলেন ভাইয়া দেখেই অনেক ভালো লাগলো। যেমন সবগুলো ফটোগ্রাফি তেমনি আপনার পুরো লেখাটা। আপনি একটা কথা ঠিকই বলেছেন বাসে যাতায়াত করতে আমারও ভালো লাগেনা। কিন্তু কি করার বাধ্য হয়ে বাসে যাতায়াত করতে হয়। আপনাদের এখানে কত সুন্দর ফেরি যাতায়াতের ব্যবস্থা। আমি কখনো এরকম ফেরিতে উঠেনি। কিন্তু আপনার সবগুলো ছবি দেখে অনেকটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে কোনটা কি রকম হবে এবং কি কি আছে। ফেরির দ্বিতীয় তলার রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে দেখে ও খুব ভালো লাগলো মনে হচ্ছে যেন বাইরের কোন রেস্টুরেন্ট।আর নদীপথের ছবিগুলো অসম্ভব সুন্দর লেগেছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগলো। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটি পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

 3 years ago 

আমার সবচাইতে পছন্দের জার্নি হচ্ছে ট্রেন জার্নি।

আমার ও পছন্দ হচ্ছে ট্রেন জার্নি।কোনো সমস্যা থাকেনা এতো। তবে মাঝেমধ্যে কিছুক্ষণ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তখন আবার একটু বিরক্ত লাগে।তবে অন্য কিছুর মতো বিরক্ত লাগেনা।

তবে আফসোস আমার কখনো ফেরিতে যাওয়া হয়নি।বড় হয়ে শুনেছি আমার গ্রামে যাওয়ার পথে ফেরি ছিলো।তবে আমি একটু বড় হতে হতেই বন্ধ হয়ে গেলো।

 3 years ago 

চেষ্টা করবেন একবার ফেরিতে উঠার । আশা করি খুব ভালো লাগবে।

 3 years ago 

আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি উপহার দিয়েছেন। আমার এলাকায় যেতে যদিও নদী আছে পেরি পার হতে হয় না। আমাদের এলাকাতে আবার ট্রেনের যোগাযোগ এবং বাসের যোগাযোগ খুবই সুন্দর। কিন্তু আমি ট্রেনে চড়তে ইচ্ছে করেনা এক ধরনের অনীহা আমার মাঝে চলে এসেছে। ট্রেনের প্রতি অনীহা আসার কারণ ট্রেনের টিকিট কাটলে এক ঘন্টা 2 ঘন্টা বসে থাকতে হয় আগে আগে যেতে হয় নানান ধরনের বিরম্বনা এটা আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর লাগে। যাই হোক আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। এবং সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বলেছেন যে আপনাদেরকে নদিতে পার হতে হলে নানান জায়গায় নামতে হয়। কিছুদূর হাঁটতে হয় এরপরে বাছে আসলে অনেক দূরে হেঁটে আসতে হয়। মহিলাদের কে নিয়ে যাওয়া আসা খুব কষ্টকর। আপনার মনের ভাবগুলো আপনি অনেক সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।

 3 years ago 

নদী পথে যাত্রা করতে আমারও খুবই ভালো লাগে ভাইয়া। আমার বাড়িতেও যাওয়ার জন্য নদী পারাপার হতে হয় তো আমি প্রায় সময় লঞ্চে যাতায়াত করি আবার মাঝে মাঝে ফেরি দিয়েও নদী পারাপার হই। এটা আসলেই খুবই মজার আর আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো সত্যিই খুবই সুন্দর।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

নদীতে ফেরি দিয়ে চলাচল আমিও কয়েকবার করেছি। এই অভিজ্ঞতা টা সত্যিই একটু আলাদা। আমি কয়েকবার বরিশাল গিয়েছি চরমোনাই এ। সেখানকার জানি আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে এবং অনেকটা রোমাঞ্চকর ও বটে।
আপনার ফেরি চলাচলের অভিজ্ঞতা পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাই

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার দারুন ভালো লেগেছে। ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ সুন্দর হয়েছে। ফটোগ্রাফিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গুলো খুবই আকর্ষণীয় লাগছে। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

সমুদ্র ভ্রমণের সময় আমি সত্যিই পছন্দ করি, সমুদ্র আরাম এবং প্রশান্তি নিয়ে আসে, আপনি অবশ্যই এই সুন্দর মুহূর্তটি নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকবেন, আপনার ফটোগ্রাফি খুব ভাল বন্ধু, শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

 3 years ago 

ভাইয়া আমার কাছেও ফেরিতে নদী পারাপার হতে খুব ভালো লাগে। ঢাকায় যাতায়াতের পথে আমি বেশ অনেক বার নদী পারাপার হয়েছি। ভাইয়া আপনি নদীপথের খুব সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57440.82
ETH 3108.89
USDT 1.00
SBD 2.42