ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমন(প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
কয়েক বছর আগে আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা থেকে চাঁদপুর গিয়েছিল লঞ্চ যোগে ঘুরতে। তারা ফেসবুকে সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল এই ধরনের একটি ডে লং ট্যুর দেয়ার। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে হয়ে উঠছিল না। এবার আমি বেশ কিছুদিন হল টানা ঢাকায় আছি। কিন্তু ঢাকায় থাকলেও প্রচণ্ড ব্যস্ততার কারণে বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা হয়ে উঠছিল না।
গত পরশুদিন থেকে কিছুটা ফ্রি আছি। আগামী কয়েকদিন তেমন কোন কাজ নেই। তাই চিন্তা করলাম বন্ধুদের নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি। চিন্তা করছিলাম যে কোথায় যাওয়া যায়। তারপর হঠাৎ করে মনে পরল লঞ্চে করে চাঁদপুর থেকে ঘুরে আসতে পারি। আমার আগে থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল এই ধরনের একটি ট্যুর দেয়ার। আমি আমার দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করলাম সেই ট্যুরের ব্যাপারে। তারা দুজন আমাকে বলল রাতে জানাবে।
কিন্তু আমি সেদিন রাতে হ্যাংআউটে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি রাত বারোটার পরে আমার এক বন্ধু ফোন দিয়েছে। সে ফোন দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল কিরে কালকে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? আমি ওকে বললাম আমার তো কোন সমস্যা নেই। তোরা তৈরি থাকলে যাওয়া যায়। আমার বন্ধু বলল ঠিক আছে আমি আমরা তৈরি আছি।
ও বলল আমি ইতিমধ্যে খোঁজ নিয়েছি সকাল সাড়ে সাতটায় একটি লঞ্চ ছাড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। সেই লঞ্চটি সাড়ে দশটা নাগাদ চাঁদপুর পৌঁছে যায়। আমরা সেই লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করব। আমিও তাঁর এই প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করলাম। পরবর্তী দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজর নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার বন্ধু গতরাতে বলেছিল তুই সকালে উঠলে আমাকে একটু ফোন দিস। তাই আমি ভোর ছটার সময় আমার সেই বন্ধুকে ফোন দিয়ে বললাম তৈরি হতে। আমার বন্ধু আমাকে জানালো সমস্যা নেই আমরা সাতটার ভিতরে সদরঘাট পৌঁছে যাবো।
তারপর আমি নামাজ পড়ে তৈরি হয়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। একেতো অনেক সকাল তার উপর আবার দিনটি ছিলো শুক্রবার। আমি উবার মোটরসাইকেল সার্ভিসে করে অল্প সময়ে সদরঘাট পৌঁছে গেলাম। আমি আগে কখনো সদরঘাট আসিনি। আজই প্রথম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসলাম। এই জায়গার অনেক গল্প আমি শুনেছি। শুনেছি এইখানে অনেক বড় বড় লঞ্চ আছে। যেগুলি দেখতে অনেক সুন্দর।
আমার ইচ্ছা ছিল ওই ধরনের একটি লঞ্চে করে ভ্রমণ করার। তাছাড়া সদরঘাটে শত বছরের পুরাতন কয়েকটি স্টিমার আছে। যেগুলো এখনো ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাতায়াত করে। আমার আর একটি ইচ্ছা হচ্ছে সেই স্টিমারে করে একবার বরিশাল যাওয়া। যদিও আমি লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছে সেই বড় লঞ্চ বা স্টিমার কোনোটাই দেখতে পেলাম না।
আমরা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সাতটা বেজে গিয়েছিলো। যার ফলে আমরা লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে দ্রুত টিকেট কেটে লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশ করলাম। তারপর আমাদের কাঙ্ক্ষিত লঞ্চে উঠে বসলাম। এই লঞ্চ গুলো ও অনেক বড়। আমার আগে কখনো এই ধরনের বড় লঞ্চে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিলনা। যার ফলে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছিলো। লঞ্চে উঠে প্রথমে লঞ্চের উপরের দিকে চলে গেলাম। সেখান থেকে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখছিলাম।
কিন্তু সেই সময়ে একটি জিনিস আমার খুবই খারাপ লাগছিল। সেটা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীর আলকাতরার মত দেখতে দুর্গন্ধযুক্ত পানি। এমন চমৎকার একটা নদী কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেলো সেটা দেখে খুবই খারাপ লাগছিল। যাইহোক এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি লঞ্চটা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম। আমি যে ধরনের লঞ্চের গল্প শুনেছিলাম এই লঞ্চটা ততোটা বড় নয়। পরে শুনতে পেলাম বড় লঞ্চ গুলো আরো একটু দূরে থাকে। কারণ তারা এই দিকের ঘাটে আসতে পারেনা তাদের বড় আকারের কারণে।
লঞ্চ ছাড়ার কথা ছিল সাড়ে সাতটার সময় কিন্তু আমরা যখন লঞ্চে উঠলাম তখন তারা আমাদেরকে জানালে ৭ টা ৪০ এ লঞ্চ ছাড়বে। কিন্তু লঞ্চ ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৮ টার কাছাকাছি বেজে গেলো। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা খারাপ লাগলো। আমরা অনেক সকালে রওনা দেয়ার কারণে কেউই নাস্তা করে আসতে পারিনি। কিন্তু আমার বন্ধু পলাশ আসার সময় চিকেন স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছিলো। আমরা লঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পরে সেটা দিয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম। স্যান্ডউইচটা খুবই মজার ছিলো।
আজকের মতো এখানে শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোনো নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা ২আই |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাইয়া আপনি একজন ভোজন রসিক মানুষ এবং ঘুরতে পছন্দ করেন সেটা জানি। তবে আপনি হঠাৎ করে সদরঘাট এসে একটু অবাক হয়ে গিয়েছেন আবার একটু মন খারাপ হয়ে গিয়েছে বুড়িগঙ্গার পানি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে নর্দমার পানির মত। যাইহোক আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সে সাথে বিস্তারিত। তবে আশাকরি আপনার চাঁদপুরের ভ্রমণের ফটোগ্রাফি এবং আপনার ভজন সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারব এবং দেখতে পারবো সেই আশায় রইলাম। আমাদের সাথে সদরঘাটে যাওয়ার লঞ্চে উঠা টিকেট কাটা সবকিছু শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আসলেই এই ব্যাপারটি খারাপ লাগে ভাবলেই।
সুন্দর একটা নদী কিভাবে মানুষ ধ্বংস করে দিল। সেটা চিন্তা করলে আসলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
আপনাকে স্বাগতম প্রথম সদরঘাট আসার জন্য। আপনি হয়তো প্রথম সদরঘাট আসছেন আর আমি ছয় বছর ধরে থেকেও এখনো লঞ্চ জার্নি করতে পারলাম না। তবে ইনশাআল্লাহ চাঁদপুর কিছুদিনের মধ্যে যাবো।
আনার পোস্ট পড়লাম ভালো লগলো, জানি পরবর্তী পার্ট আরো আকষর্ণীয় হবে। পরবর্তী পার্টের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আমিও গেছিলাম ২০১৮ তে ষাটনল থেকে ঘুরতে গেছিলাম। চাঁদপুরের ইলিশ এককথায় সু স্বাদু। এখনো মুখে স্বাদ লেগে আছে। তিন নদীর মোহনা অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাই
আমার জীবনের সেরা ভ্রমণ গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকা থেকে চাঁদপুরের লঞ্চ ভ্রমণ। ঢাকা থাকলে এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করতাম না। তবে যতটুকু শুনলাম তোমাদের যাওয়া-আসাই শুধু সার হয়েছে। আমাকে সাথে নিলে এমনটা হতো না হাহাহা।।
তুমি থাকলে আরো ভালো হতো। রেডি থেকো সামনে আমরা স্টিমারে করে বরিশাল যাব ইনশাআল্লাহ।