হুমায়ুনের ঈদের কেনাকাটা (প্রথম পর্ব)
হুমায়ুন মাথার থেকে আইসক্রিমের বাক্সটা নামিয়ে ঘামে ভেজা মুখটা গামছা দিয়ে মুছে নিলো। তপ্ত এই দুপুরে আইসক্রিমের ভারী বাক্সটা মাথায় নিয়ে চলতে তার বেশ কষ্ট হয়। কিন্তু এই সময় তার বেচা কেনাও ভালো হয়। তাই যত কষ্টই হোক তাকে চলতেই হয়। হুমায়ূন বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলো আর চিন্তা করছিলো এইভাবে চলতে থাকলে তো তার পক্ষে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। আবার সামনে আসছে ঈদ। ঈদ মানেই বাড়তি খরচ। তাছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে।
আইসক্রিম বিক্রি করে তার সামান্য যে কটা টাকা আয় হয় সেই টাকায় সংসার চালানোর তার জন্য দিন দিন কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আবার আইসক্রিম যে একটু বেশি দামে বিক্রি করবে সেই উপায়ও নেই। কারণ দাম বাড়ালে তার বিক্রি কমে যাবে। তার এই আইসক্রিমের মূল ক্রেতা হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণী লোকজন। আইসক্রিমের দাম বাড়ালে তারা আর তখন আইসক্রিম খেতে পারবেনা। যার ফলে তার পক্ষে আইসক্রিমের দাম বাড়ানো সম্ভব না। তারপরও সে একা দাম বাড়ালে তারা আইসক্রিম বিক্রি হবে না।
কিভাবে সংসারের খরচ যোগাবে সেটা নিয়ে সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে ছিলো। সে বসে বসে চিন্তা করছিলো। এর ভিতর একটি বাচ্চা এসে আইসক্রিম চাইলো। হুমায়ুন বাচ্চাটির কাছে আইসক্রিম বিক্রি করে আবার সেখানেই বসে রইল। আরো কিছুক্ষণ সেখানে এভাবে বসে থাকার পর হুমায়ুন একটি স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। কারণ তার আইসক্রিমের বেশিরভাগ কাস্টমার বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চারা। অবশ্য শহরের নামকরা স্কুলের বাচ্চারা তারা আইসক্রিম খায় না। তারা বড় বড় কোম্পানির আইসক্রিম খায়।
তাই সে এমন সব স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা পড়ে। সে খেয়াল করে দেখলো বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। এখনই স্কুলের গেটে গিয়ে পৌঁছে যেতে না পারলে তাহলে আজকে আর বেশি আইসক্রিম বিক্রি হবে না। তাই সে দ্রুত পা চালালো একটি স্কুলের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে দেখে এখনো ছুটি হতে কিছুক্ষণ বাকি। তবুও বেশ কিছু ছেলে পেলে স্কুলের গেটের বাইরে চলে এসেছে। তাদের কাছে সে আইসক্রিম বিক্রি করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ এইভাবে আইসক্রিম বিক্রি করতে করতে সে হঠাৎ ছুটির ঘন্টা শুনতে পেলো। ছুটির ঘন্টা বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই হুরমুর করে স্কুলের বাচ্চারা সব বের হয়ে আসলো। আর হুমায়ুন মনের আনন্দে তাদের কাছে আইসক্রিম বিক্রি করতে লাগলো। বেচাকেনা শেষে সে হিসাব করে দেখল আজকে বেশ ভালই আইসক্রিম বিক্রি হয়েছে।
হুমায়ুন প্রতিদিন তার আইসক্রিম বিক্রির টাকা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখছে ঈদের জন্য। কারন গত বছর ঈদে সে তার ছেলেমেয়েদের কোন নতুন জামা কাপড় দিতে পারেনি। তাই ঠিক করেছে এবারের ঈদে তার বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনবে। এই জন্য সে বেশ কিছুদিন থেকেই অল্প অল্প করে টাকা জমাচ্ছে। (চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সুন্দর একটি সংগ্রামী জীবনের গল্প।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন এমনই হয়।
একসময় আমাদের গ্রামের একমাত্র।প্রাইমারি স্কুলের সামনে এমন আইস্ক্রিময়ালার দেখা মিলতো। আমরা টিফিনে কিংবা স্কুল শেষে তাদের থেকে আইসক্রিম কিনে খেতাম।
তবে এখন অবস্থা ভিন্ন। আমাদের স্কুলের উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন রকম নামি-দামি কোম্পানির আইসক্রিম পাওয়া যায় আশেপাশের দোকান গুলোতে।
তবে সেই আইসক্রিমওয়ালাদের সাথে ও মাঝে মাঝে দেখা হয়। তাদেরও এসেছে বিরাট পরিবর্তন। তাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মত মানুষ হয়েছে সংসারের হাল ধরেছে। আর বাবাদের কাধের বোঝা হয়েছে হাল্কা।
জানিনা এই গল্পের শেষটা কেমন হবে।
তবে পড়তে গিয়ে আমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
এক সময় প্রায় সব ধরনের স্কুলের সামনেই এই ধরনের আইসক্রিমওয়ালা দেখা যেতো।
তত্ত্ব দুপুরে আইসক্রিমের ভারী বাক্সটা মাথায় নিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গমন সত্যিই অনেক অনেক কষ্টের ব্যাপার। যার মাথায় ভারী বোঝা আছে সেই শুধু এই কষ্টের মর্ম বুঝবে। বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হুমায়ুনের মতো আইসক্রিম বিক্রেতার কাছে সংসার চালানো বড়ই কষ্টদায়ক। যাইহোক পরিশেষে তার আজকের দিনে আইসক্রিম বেচাকেনা ভালো হয়েছে জেনে খুবই ভালো লাগলো। সেই সাথে গল্পটি বেশ প্রাণবন্ত ছিল আর তাই পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ
আশা করি পরবর্তী পর্ব পড়েছেন।
যারা খেটে খায় তাদের অল্প উপার্জনে অনেক আনন্দ পায়। আসলে এ সকল জীবন সংগ্রামী মানুষগুলো প্রকৃতপক্ষে সুখী। আইসক্রিম অলার এ জীবনের মাধ্যমে আমরা আমাদের এই সমাজের নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া স্নান মানুষদের একটা প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাচ্ছি।
ঠিকই বলেছেন যারা খেটে খায় তাদের এই অল্প আয়েই এক ধরনের তৃপ্তি থাকে।
প্রত্যেকটি বাবা-মা চায় নিজের সন্তানদেরকে ঈদ উপহার দিতে। ঈদের দিনে যদি নতুন জামা তার সন্তানদের হাতে তুলে দিতে পারে তাহলে তারা অনেক খুশি হয়। আইসক্রিমওয়ালা নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে নিজের সন্তানের ঈদের খুশি কিনতে চেয়েছে। অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া গল্পটি। ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা ঠিক বলেছেন প্রত্যেক বাবা-মাই চাই তার সন্তানকে ঈদে নতুন জামা কাপড় দিতে। সে বাবা-মা যত দরিদ্রই হোক না কেন।
খুব সুন্দর ভাবে শুরু করেছেন ,একদম বাস্তব ঘটনার সাথে তাল-যোগ মিলিয়ে এগোচ্ছে গল্প টা।আশা করি আগামী পর্বে ভালো একটি গল্প পড়তে চলেছি।
একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন। এই ধরনের ঘটনা আমাদের আশেপাশে অনেক ঘটে চলেছে।