ছোট গল্পঃ হঠাৎ থমকে যাওয়া (প্রথম পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রাহিল জামাকাপড় পরে তৈরি হচ্ছিল বাইরে যাওয়ার জন্য। ওর মা ওকে তৈরি হতে দেখে জিজ্ঞেস করল কোথাও যাচ্ছিস? রাহিল জানালো হ্যাঁ মা। আমার এক বন্ধুর বোনের বিয়ে সেখানে যাচ্ছি। তোমাকে তো গতকালকেই বললাম। ওর মা তখন বলল বোধহয় ভুলে গিয়েছি। অবশ্য তুইতো গত কয়েকদিন ধরে দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছিস। দিনদিন যেভাবে মোটা হয়ে যাচ্ছিস তাতে না আবার কোন অসুখ বাধিয়ে বসিস। রাহিল বলল কোন চিন্তা করো না মা। কিচ্ছু হবে না আমার।

Polish_20221115_004948543.jpg

এই বলে রাহিল ঘর থেকে বের হয়ে গেল। বাহিলের মা তাকিয়ে ছেলের চলে যাওয়া দেখতে লাগলো। ছেলেটাকে নিয়ে তার ইদানিং বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত রাহুলের শরীর স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু বছর খানিক হল রাহিল মোটা হওয়া শুরু করেছে। সেই সাথে তার খাবারের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। আত্মীয় স্বজন যারা আছে তারা সবাই রাহিলের মাকে বলে ছেলের খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করো। না হলে যেকোনো সময় বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু রাহিলের মা ভেবে পায় না সে কিভাবে ছেলের খাওয়া কন্ট্রোল করবে ? ছেলেটা খুব আগ্রহ নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। তার বরং দেখতে ভালোই লাগে। রাহিল বাড়ি থেকে বের হয়ে গলির মাথায় এসে দেখে ওর জন্য ওর আরও তিনজন বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। ও কাছে যেতেই তাদের ভেতর থেকে একজন বলে উঠলো। কিরে মটকু তোর আসতে এত দেরি হল কেন? বাড়ি থেকে আবার খেয়ে এসেছিস নাকি ? রাহিল রেগে গিয়ে বলল আর কখনো আমাকে মোটকু বলবি না। এই কথা শুনে রাহিলের বন্ধুরা হাসতে লাগলো। তখন অপর এক বন্ধু রাহিলকে জিজ্ঞেস করল মোটকু না বলে কি বলে ডাকবো ?

তারা এভাবে নানা রকম হাসি ঠাট্টা করতে করতে রাহিল তার বন্ধুদের সাথে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাহিল সবে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। তারপর থেকেই সে চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু রাহিলের শরীর স্বাস্থ্য দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সরাসরি তাকে না করে দিচ্ছে। সবার একই প্রশ্ন আপনার এই শরীরে আপনি খুব বেশি প্রেসারের কাজ করতে পারবেন না। এই ধরনের কথা শুনে বাহিরে খুব খারাপ লাগে। অথচ বছর দুয়েক আগ পর্যন্ত রাহিল হালকা-পাতলা গড়নের ছিল। গত বেশ কিছুদিন হল রাহুলের ওজন বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে তার খাওয়ার চাহিদাও বাড়ছে।

রাহিলের বাইরের খাবার খেতে খুবই ভালো লাগে। তবে তার সবচাইতে বেশি পছন্দ অনুষ্ঠানের খাওয়া দাওয়া। সেজন্য সে যে কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলে সেটা কখনোই মিস করে না। যাই হোক ওরা চার বন্ধু কিছুক্ষণের ভেতরেই বিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলো। ইতিমধ্যে প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছে। রাহিলের প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে। তাই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগল কোন টেবিল ফাঁকা আছে কিনা। কিন্তু সে দেখলো সবগুলো টেবিলে লোক বসে আছে। রাহিল বুঝতে পারলো তাদের এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। কারণ এই লোকগুলি খেয়ে ওঠার পরে তাদেরকে বসতে হবে।

তাই তারা অপেক্ষা করতে লাগলো আর দেখতে লাগলো লোকগুলি কখন টেবিল থেকে উঠে। ক্ষুধা পেটে এরকম অপেক্ষা করতে তাদের মোটেও ভালো লাগছিল না। কিন্তু কিছুই করার নেই। অপেক্ষা করতে করতে শেষ পর্যন্ত লোকজন টেবিল থেকে উঠতে লাগলো। সাথে সাথেই রাহিল একটি টেবিলে বসে পড়ল। টেবিলে বসার বেশ কিছুক্ষণ পর টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো।

বিয়ে বাড়ির রোস্ট আর রেজালা রাহিলের খুবই পছন্দ। তাই টেবিলে খাবার পরিবেশন করার পরেই রাহিল একসাথে কয়েক পিস রোস্ট উঠিয়ে নিলো তার প্লেটে। রাহিলের এমন কান্ড দেখে তার বন্ধুরা নিজেদের ভেতর কানাকানি করতে লাগলো আর হাসতে লাগলো। রোস্ট খাওয়া শেষ হলে তারপর রাহিল প্লেটে অনেকখানি খাসির মাংস উঠিয়ে নিলো। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে রাহিলের খাওয়া দেখছিলো। একটা সময় ছিল রাহিলের খুবই লজ্জা লাগতো লোকজন এরকম খাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকলে। কিন্তু এখন তার এটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

রাহিলের মত আমিও দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছি, দিন দিন খাবারের চাহিদা আমারও বাড়ছে,বিয়ে বাড়ির খাবারের কথা শুনে আমার নিজেও লোভ হচ্ছে 😜😜।ভাইয়া খাওয়া দাওয়া কথা লিখেয়েন না তো,আমার খালি খেতে মন চায় খাওয়া দাওয়া কথা পড়ে😂😂।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ

 2 years ago 

রাহিলকে নিয়ে হাসাহাসি করা তার বন্ধুদের মোটেও উচিত হয়নি। আসলে একটি মানুষ হঠাৎ করে এভাবে বদলে গেল সেটা সত্যিই অনেক চিন্তার বিষয়। হয়তো কোন অজানা কারণে রাহিলের এই পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি বড় ধরনের কোন রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধতেও পারে। আসলে এরকম পরিস্থিতিতে রাহিলের মত মানুষদের অনেক লাঞ্ছনার শিকার করতে হয়। প্রত্যেকটি পদক্ষেপে তাকে অপমানিত হতে হয়। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।

 2 years ago 

যে মোটা হয় সেই শুধু বুঝে মোটা হওয়ার যন্ত্রণা কি। একবার মোটা হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক কঠিন কাজ। রাহিলের সাথে বর্তমানের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সে এখনও যদি চেষ্টা করে তাহলে তার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। সত্যি রাহিলের জন্য খুব খারাপ লেগেছে সে মোটা বলে আজ তার চাকরি করতে গিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া সময় উপযোগী সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। এর পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ভাইয়া অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন। গল্পটি পড়ে বেশ ভালই লাগছে। বন্ধুবান্ধবের মাঝে অনেক রকম হাসি ঠাট্টা মশকরা হয়েই থাকে। রাহিলকে মুটকো ঢাকায় সে রেগে গিয়েছে। তবে তার মা এখন সর্বদাই চিন্তিত ছেলেকে কিভাবে কন্ট্রোল করবে। অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বের জন্য, এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

ভাইয়া গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। রাহিলের জন্য খারাপ লাগলো। একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, যারা বাইরের খাবার খায় ফাস্ট ফুড তারা দ্রুত মোটা হয়। রাহিলের চাকরি ও হয় না এই কারনে। পরের পর্বের জন্য ওয়েট করছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

বর্তমানে এরকম মোটা মানুষের অনেক বেশি অসুবিধা হয়। বিশেষ করে নিজের চলতেও অনেক বেশি কষ্ট হয়। তার উপরে আবার রাহিল খাওয়া দাওয়া করে বেশি। অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেতে তো আরো বেশি পছন্দ করে সে। আসলে বন্ধু-বান্ধবেরা অনেক সময় এরকম ঠাট্টা মশকারি করে থাকে। কিন্তু ওর মায়ের ওর জন্য অনেক চিন্তা হয়। আসলে চিন্তা হওয়াটা ও স্বাভাবিক। মাস্টার্স কমপ্লিট করে কোন চাকরি ও পাচ্ছে না শুধুমাত্র মোটা হওয়ার কারণে। পরবর্তীতে কি হবে তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

ক্ষমার দৃষ্টিতে ভাইয়া, আপনার আজকের পোস্টে রাহিল নামটি কয়েকবার দেখলাম ভুল লিখেছেন। ভুলটা সংশোধন করলে পোস্ট পড়তে আরেকটু ভালো লাগবে।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো গল্পটি। মোটা হয়ে চলাচল করা যে কি কষ্ট তা আমার এক আত্মীয় কে দেখেছি। তার খুব ইচ্ছে স্বাভাবিক হওয়া কিন্তু চাইলেই আর সম্ভব নয়। কারণ এটা তার একটা রোগ😪

 2 years ago 

প্রথমে বলবো শরীর হলো ঈশ্বরের দান ৷ কেউ মোটা হবে কেউ চিকন ৷ আর এমন কেউ আছে না খেলেও অনেক মোটা ৷ আবার কেউ খেয়েও মোটা হয় না ৷
তবে এটা ঠিক যে রাহিল যেভাবে খায় ৷ তারে এরপরে আর কেউ দাওয়াত দিবে না ৷ হি হি হি ৷

 2 years ago 

আপনার গল্প লেখার ধরন আলাদা যেটি আমার বেশ ভালো লাগে।যাইহোক গল্পটি পড়ে বেশ মজা লাগছিল।আসলেই মোটা হলে খুবই সমস্যা সবাই খেপিয়ে দেয়।আর খাওয়ার কাহিনী শুনেই আমার হাসি পাচ্ছিল।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64041.25
ETH 2762.17
USDT 1.00
SBD 2.66