পরিকল্পিত প্রতিশোধ (শেষ পর্ব)।
সুজনের ফোন কল পাওয়ার পর থেকে পুলিশ অনেক চেষ্টা করলো তার লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য। কিন্তু তারা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। এদিকে ফোন করার পর সুজন অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তার ম্যাক্সিকা প্রবাসী ভাই তাকে গ্রীন সিগন্যাল দেয় সে আশায়। এদিকে প্রায় ১২ ঘন্টা পার হয়ে যায় কিন্তু টাকা পাওয়ার কোন খবর সুজন পায় না। হঠাৎ করে অনেক রাতে সুজন তার মেক্সিকা প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে একটি মেসেজ পায়। সেখানে শুধু এটুকু লেখা ছিল টাকা পেয়েছি।
সুজন তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সফল হয়। কিন্তু এখন মূল কাজটুকু বাকি রয়ে গেছে। সুজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তার নির্দোষ ভাইকে জেল থেকে মুক্ত করা আর আফজাল সাহেবের মুখোশ মানুষের কাছে খুলে দেয়া। টাকাটা পাওয়ার পর সুজন বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলো। পরদিন সকাল দশটার দিকে আবার সে রাফির বাবাকে ফোন দিলো। ফোন দিয়ে বলল এখন যেটা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। রাফি বাবা বলল আমি তো আপনার চাহিদার মত টাকা দিয়ে দিয়েছি। এখন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।
তখন সুজন বলল আমার চাহিদা এখনো শেষ হয়নি। রাফির বাবা রেগে গিয়ে গালাগালি করে উঠলো। তখন সুজন তাকে বলল যখন নিজের পরিবারের উপর আঘাত আসে তখন কেমন লাগে সেটা বুঝতে পারছেন? আপনি যখন আমার নির্দোষ ভাইকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন তখন আমাদের কেমন লেগেছিল আশা করি এটা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন। তখন রাফির বাবা জিজ্ঞেস করল কে আপনি? তখন সুজন তার পরিচয় দিলো। বললো যে আসলাম কে আপনি নিজের অপকর্মের জন্য শুধু শুধু মাদক মামলায় জেল খাটাচ্ছেন। আমি সেই আসলামের ছোট ভাই সুজন।
এই কথা শুনে রাফির বাবা বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো। তখন সে জিজ্ঞেস করল তুমি কি চাও? সুজন বলল আপনি আজকে প্রেস কনফারেন্স করবেন। প্রেস কনফারেন্সে নিজের সব কুফর্মের কথা স্বীকার করবেন এবং পুলিশের কাছে সারেন্ডার করবেন। আমার ভাইকে যে নির্দোষ আপনি তাকে ষড়যন্ত্র করে মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছেন সেই কথা স্বীকার করবেন। এছাড়া আপনার আর কোন পথ নেই। যদি আমার ভাই আগামী সাত দিনের ভিতর জেল থেকে না বের হয়। তাহলে আপনার ছেলেকে আমি টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো। জীবনে আর কখনো ছেলের চেহারা চোখে দেখতে পারবে না।
তখন রাফির বাবা সুজনকে হুমকি দিলো। বলল আমার সাথে এই ধরনের কাজ করার পরিণতি চিন্তা করতে পারছো? সুজন বলল সেসব চিন্তা আর এখন করি না। আপনি নিজে আমার পরিবারটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এখন আর আমার আগে-পিছে কেউ নেই কান্না করার। যে কোন মূল্যই হোক আমি আমার ভাইকে জেল থেকে বের করতে চাই। তাতে যদি নির্দোষ কোন বাচ্চাকে খুন করা লাগে আমি সেটাতেও পিছু পা হবো না। সুজনের এই কথা শুনে রাফির বাবা ভয় পেয়ে গেলো।
সুজন তখন তাকে আল্টিমেটাম দিলো। আপনার হাতে সময় খুবই কম। আপনি প্রেসক্লাবে গিয়ে আগামী ২ ঘণ্টার ভিতর প্রেস কনফারেন্স করবেন। সেটা পুলিশ এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে। যত দ্রুত সম্ভব আমার ভাইকে জেল থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করবেন। আর পুলিশের কাছে আমার নামে কোন কমপ্লেন করে থাকলে সেটাও উঠিয়ে নেবেন। তবে সর্বোচ্চ সময় আপনার জন্য সাত দিন। সাত দিন যদি পার হয়ে যায় আমি আর এক মিনিটও অপেক্ষা করব না। আপনার ছেলেটাকে আমি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।
রাফির বাবা তখন কেঁদে দিলো। বলল প্লিজ আমার ছেলেটার কিছু করোনা। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। এদিকে সুজন তাকিয়ে দেখে সুজনের কথা শুনে রাফি ভয়ে কাঁপছে। ফোন রেখে সুজন রাফিকে আশ্বস্ত করলো তুমি ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে কিছুই করব না। তখন সুজন রাফির কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। রাফি ছোট মানুষ হলেও বুঝতে পারল তার বাবা সুজনের পরিবারের সাথে ভয়াবহ অন্যায় করেছে। রাফির বিশ্বাস করতে কষ্ট হল যেই বাবাকে সে এত ভালো জানে তিনি এমন জঘন্য কাজ করতে পারেন।
পরবর্তী ঘটনাগুলো বেশ দ্রুতই ঘটলো। সুজন তিন ঘন্টা পরে ইউটিউব থেকে রাফির বাবার প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও দেখতে পেলো। রাফির বাবার প্রেস কনফারেন্সের পর সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হলো। পরের মাত্র ৩-৪ দিনের মাথায় সুজনের ভাইও জেল থেকে মুক্ত হলো। পুলিশের কাছে সমস্ত অপরাধ স্বীকার করায় রাফির বাবার বিরুদ্ধে মামলা হলো। তাকে পুলিশ এরেস্ট করে জেলে পাঠিয়ে দিলো। সুজনের ভাই জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর সুজন রাফিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। এদিকে রাফির মা রাফিকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হলো কিন্তু রাফির বাবার জন্য সে কান্নাকাটি করছিলো। রাফি বাড়ি ফিরে তার মাকে সবকিছু খুলে বললো। রাফির বাবার কথা শুনে রাফির মাও রাফির বাবাকে ঘৃণা করতে শুরু করলো।
দীর্ঘদিন পর আবার সুজনের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। দুই ভাই একসাথে মিলে তাদের বাবা-মায়ের স্মৃতিচারণ করতে লাগলো। সুজন যখন তার ভাইকে বলল রাফির বাবার কাছ থেকে শুধু সে তাকে মুক্ত করেনি তার কাছ থেকে ২ কোটি টাকাও আদায় করেছে। তখন সুজনের ভাই বলল ওই পাপের টাকায় আমাদের দরকার নেই। ওই টাকাটা কোন একটা প্রতিষ্ঠানে দান করে দে। আমরা দুই ভাই মিলে কিছু করে খেতে পারবো। ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধায় সুজনের মাথাটা নত হয়ে এলো আর গর্বে তার বুক ফুলে উঠলো। (সমাপ্ত)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
কিছুটা ধারণা আগেই পেয়েছিলাম।অনেক সুন্দর একটা গল্প পড়লাম।শেষপর্যন্ত সত্যের জয় হল দেখে ভাল লাগল।
কিন্তু বাস্তবে সত্যের জয় কমই হয়।
হ্যা দাদা। আর হলেও এত সময় লাগে যে আমরা ভুলেই যাই।
সবশেষে আসলে ভাই সত্যের জয় হবে এটাই স্বাভাবিক। আর যখন সত্যের জয় হয় তখন কিন্তু ভালো লাগে। আপনার পুরো গল্পটাই আমি পড়েছিলাম আর আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকের এই লেখায় চমৎকার একটি পরিসমাপ্তি পেলাম । যারা অন্যায় করে তাদের এই ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত। তাহলে অন্যদের থেকে অনেক শিক্ষা হবে। অবশেষে সুজনের ভাই টাকাটা নিজেরা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনেক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধন্যবাদ ভাই কমেডি একটি লেখা পড়ে ভালো লাগলো।
এটা কি আপনার কাছে কমেডি মনে হয়েছে?
কমেডি বলতে আমি মিলনাত্মক বুঝিয়েছি। ইতিবাচক একটি সমাপ্তি বুঝিয়েছি। ভাই আমি শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর সাথে তুলনা করে এটাকে কমেডি বলেছি ।
গল্পের শেষ পর্বটিও পড়ে নিলাম। গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের জয় সব সময় হয়। আর আপনার গল্পের শেষে সত্যের জয় দেখে সত্যিই আমার অনেক ভালো লাগলো।
হ্যাপি এন্ডিং দেখতে সবারই ভালো লাগে।