প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


দীর্ঘ সাত ঘন্টার জার্নি শেষে আমরা সিলেট পৌঁছলাম। সেখান থেকে গাড়িতে করে অল্প সময়ে আমাদের থাকার জন্য যে জায়গা ঠিক করা ছিল সেখানে পৌঁছালাম। সেখানে পৌঁছে জায়গাটি দেখে আমাদের সবারই খুব পছন্দ হলো। সেটি ছিল রোডস এন্ড হাইওয়ে এর একটি রেস্ট হাউস।

IMG_20220210_152108.jpg

IMG_20220210_140421.jpg

IMG_20220210_154738.jpg

সেখানে আমাদের জন্য দুটি রুম বরাদ্দ করা হয়েছিল। একটি রুম ছিল নিচতলায় আর অপরটি ছিলো দ্বিতীয় তলায়। কারন রুম গুলো আমাদের খুব পছন্দ হলো। রুম গুলো ছিল বেশ বড় এবং বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। প্রত্যেকটা রুম ছিল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম। যদিও এই শীতের ভেতরে তার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া প্রতিটা রুমের সাথে বাথরুম যেখানে গরম পানির ব্যবস্থা আছে। থাকার জায়গাটা আমাদের সবারই বেশ পছন্দ হলো।

IMG_20220210_155845.jpg

IMG_20220210_155209.jpg

IMG_20220210_160227.jpg

রেস্ট হাউজের সামনে ছোট একটি জায়গায় সুন্দর ফুলের বাগান আছে। রেস্ট হাউসটা আকারে খুব একটা বড় না। কিন্তু বেশ পরিপাটি করে সাজানো। সেখানে একটি ডাইনিং রুম আছে। যেখানে অবস্থানরত লোকজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘযাত্রার ফলে আমরা কিছুটা ক্লান্ত বোধ করছিলাম। যার যার রুমে প্রবেশ করে আমরা সকলেই গোসল করে ফেললাম।

IMG_20220210_155553.jpg

IMG_20220210_155158.jpg

এর ভিতরে রেস্টহাউজের লোক এসে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করল খাবার কখন পরিবেশন করবে। আমরা বললাম আর কিছুক্ষণ পর খাবার দিতে। যদিও খাবার নিয়ে আমরা কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। কারণ এই অঞ্চলের রান্না আমরা খেতে পারি না। কিছুক্ষণ পর খাবার পরিবেশন করে আমাদেরকে তারা ডাকল খাওয়ার জন্য। আমরা ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলাম টেবিলের উপর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। আমরা যখন খাওয়া শুরু করলাম তখন বুঝতে পারলাম এদের রান্নাটা যথেষ্ট ভালো। রেস্ট হাউজের রান্না সম্বন্ধে আমার আগে থেকে তেমন কোন ধারণা ছিল না। তবে শুনেছিলাম এখানকার রান্না ভালই হয়।খাবারের মেন্যুতে ছিল কাতল মাছ, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল, ভর্তা আর সাথে সালাদ। প্রত্যেকটা রান্না খুব ভালো হয়েছিল। আমরা সকলে বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলাম।

IMG_20220210_155231.jpg

IMG_20220210_154729.jpg

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। এর ভেতর ড্রাইভারকে বলে দেয়া হয়েছিল বিকাল চারটার সময় আমরা বের হব। চারটা বাজার কিছুক্ষণ আগেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলো। তারপর আমরা তৈরি হয়ে বাইরে এলাম। বাইরে এসে দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টি দেখে আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। যদিও ড্রাইভার আমাদেরকে আশ্বস্ত করলো বৃষ্টি আর বাড়বেনা। আর কিছুক্ষনের ভিতর বৃষ্টি চলে যাবে এই কথা বলে।

IMG_20220210_154749.jpg

IMG_20220210_154802.jpg

যাই হোক আমরা গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম শাহজালালের মাজারের উদ্দেশ্যে। এই মাজার আমাদের রেস্ট হাউজ থেকে খুব একটা দূরে নয়। যার ফলে অল্প সময়ে আমরা সেখানে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছে আমরা মাজারে ভেতরটা ঘুরেফিরে দেখছিলাম। এই মাজার নিয়ে নানা রকম গল্প প্রচলিত আছে। তবে এই মাজারে দুটি জিনিস আমার কাছে একটু অন্য রকম লাগলো। একটি হচ্ছে এখানকার পুকুরে থাকা বড় আকৃতির গজার মাছ। শুনেছি এই মাছগুলোর অনেক বয়েস। আরেকটি জায়গায় দেখলাম বেশকিছু কবুতর খাবার খাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে হঠাৎ করে উড়ে গিয়ে পাশের একটি বিল্ডিং এর কার্নিশ এ গিয়ে বসছে। সেটি একটি দেখার মত দৃশ্য। যখন একসাথে এক ঝাক কবুতর উড়ে যায় দেখতে খুবই চমৎকার লাগে।

IMG_20220210_155231.jpg

IMG_20220210_155017.jpg

IMG_20220210_162039.jpg

IMG_20220210_162029.jpg

আমরা পুরুষেরা কবর জিয়ারত করে তারপর আর কিছুক্ষণ ভেতরটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। এই মাজারে আরো একটি জিনিস যেটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেটি হচ্ছে এখানে কিছু দান পাত্র আছে। যেগুলো বলা হচ্ছে পাঁচশত বছরের পুরনো। এত প্রাচীন নিদর্শন দেখে বেশ ভালই লাগলো।

IMG_20220210_155845.jpg

IMG_20220210_154849.jpg

এই মাজারে দেখলাম বিভিন্ন ধরনের মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই মাজারে যে শুধু মুসলিম ধর্মের মানুষ আসে তা নয়। এখানে সকল ধর্মের মানুষদের আনাগোনা আছে। আমরা বেশ কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোককে দেখতে পেলাম। মাজার ঘুরে ফিরে দেখা শেষ হলে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

IMG_20220210_155053.jpg

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের আরেকটি পর্ব নিয়ে।

সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানলিংক, লিংক

Sort:  
 2 years ago 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট ভ্রমণ নিয়ে আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যা ভ্রমণপিপাসুদের অনেক কাজে দিবে। আপনার রেস্ট হাউসে থাকার অভিজ্ঞতা টা ছিল খুবই দারুণ। হোটেলের সুন্দর পরিবেশ এবং আতিথিয়তা আপনার মত সকলকেই আকর্ষিত করবে। হোটেল থেকে মাজারের দূরত্ব খুব বেশি না হয় অল্প সময়ে মাজার ও ভ্রমণ করা যাবে। মাজারের অনেক দৃশ্যমান ছবির সাথে কবুতরের ছবিগুলো আমাকে খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়, ভ্রমণ বিষয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সিলেট এর বেশ কিছু জায়গা আছে যেগুলো আমার খুব পছন্দের। তবে আপনি যদি সিলেট যেতে চান আমার পরামর্শ থাকবে বর্ষাকালে যাওয়ার।

 2 years ago 

ধন্যবাদ, শ্রদ্ধেয়।এমন পরামর্শ মাথায় রাখলাম।

 2 years ago 

আপনার সিলেট ভ্রমনের গল্প গুলো উপভোগ করছি এবং সেইসাথে দারুন দারুন ফটোগ্রাফিও। তবে সিলেট পৌঁছানোর পরে আপনারা যে রেস্টহাউসে উঠেছেন এবং আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আপনাদের খুবই ভালো লেগেছে এবং কি সবকিছু পরিপাটি ছিল। সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় ছিল আপনার খাবার দাবার নিয়ে, তবে খাবার খেয়ে যখন আপনি সন্তুষ্টি বোধ করলেন, তখন আমার মনে পড়ে গেল আপনার বান্দরবান ট্যুর এর কথা। ওখানে গিয়ে আপনি তৃপ্তি মত খেতে পারেন নি এবং কোথাও ভালো কোন রেস্টুরেন্টে পাননি তবে এখানে ভালো স্বাদ পেয়েছেন খাবারে সেটা জেনে খুবই ভালো লাগলো। অবশেষে শাহজালাল মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছেন সেখানে ঘুরে পিরেছেন এবং অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করেছেন। আমার অনেক শখ ছিল যাওয়ার কিন্তু আমার স্বাদ এখনও অপূর্ণই রয়ে গেল, তবুও আপনার সাথে আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মনে হলো যে আপনার সাথে ঘুরে এলাম। আপনার আর আমাদের সাথে আপনার সিলেট ভ্রমণের গল্প গুলো খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম। অবশ্যই আপনার সামনের এপিসোডগুলো অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

সিলেট আসলেই চমৎকার একটি জায়গা। একবার সময় করে ঘুরে আসুন। দেখবেন খুবই ভাল লাগবে।

 2 years ago 

ভাইয়া,যতই ছবিগুলো দেখছি ততই আমার সিলেটে যাওয়ার কথা মনে পড়ছে। ওইখানে জালালি কবুতর গুলাকে একটু খাবার দিলে ঝাকে ঝাকে অনেক কবুতর এসে পড়তো এসে পড়তো। গজার মাছ তো বিরাট বড় বড়।আগে আমি মনে করতাম এগুলো মানুষকে খেয়ে ফেলতে পারে।আরেকটা জিনিস না বললেই নয়,কোন রকম একজন কে টাকা দেওয়ার জন্য বের করলে কোথায় থেকে এত মানুষ টাকা নেওয়ার জন্য চলে আসে।একবার তো আমার মা অনেক বিপদে পরে গিয়েছিলো।যাই হোক ভালো লাগলো।

 2 years ago 

কবুতর গুলো এখনো আছে। যখন সব ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় তখন দেখতে খুব সুন্দর লাগে।

 2 years ago 

আপনার ফটোগ্রাফি দেখে আমার আর তর চইছে না,
কবে যে সিলেটে যাব?
ধন্যবাদ আপনাকে অসাধারণ ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য

 2 years ago 

আসলেই চমৎকার একটি জায়গা। সময় পেলে সিলেট থেকে একবার ঘুরে আসুন।

 2 years ago 

জ্বি ভাইয়া চেষ্টা করতেছি যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়,
ধন্যবাদ আপনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60699.39
ETH 2655.06
USDT 1.00
SBD 2.59