ছুটির দিনের ঘোরাফেরা (তৃতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রোদ্রের ভীতর নৌকায় ঘুরে সবাই কিছুটা ক্লান্ত ছিলো। তাই আমরা কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিলাম। তারপর আমরা সবাই মিলে আলোচনা করছিলাম এখন কি করা যায়? এদিকে আমাদের আবার শান্তিনগর যাওয়ার তাড়া ছিলো। কারণ সেখানে আমাদের কাজ চলছিল। সেই কাজ দেখাশোনা করার জন্য সেখানে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তখন বেলা বাজে সবে ১১ টার মতো। এত তাড়াতাড়ি ঘুরাফেরা শেষ করার ইচ্ছা আমাদের ছিল না।

IMG_20220902_104906.jpg

IMG_20220902_104750.jpg

আসার পথে আমরা একটি জায়গা দেখতে পেয়েছি। যেটির নাম জিন্দা পার্ক। যদিও ভেতরে কি আছে সে সম্বন্ধে আমার তেমন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু আমার দুলাভাই আমাকে বলল সে পার্কের ভেতরটা খুবই চমৎকার। চলো আমরা সবাই মিলে সেই পার্ক থেকে ঘুরে আসি। আমার সেখানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কারণ বাইরে থেকে দেখে আমার কাছে এমন মনে হয়নি যে ভেতরে খুব ভালো কিছু আছে দেখার মতো। তবু দুলাভাই যেহেতু বলেছে তাই চিন্তা করলাম একবার সেখান থেকে ঘুরে যায়। দেখি ভিতরে কি আছে?

IMG_20220902_105418.jpg

অতএব পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা রওনা দিলাম জিন্দা পার্কের উদ্দেশ্যে। যেই রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই রাস্তাতে জিন্দা পার্কের অবস্থান। তাই আমরা সেই একই পথ ধরে ফিরে যাচ্ছিলাম। পদ্মবিল থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব খুবই অল্প। যার ফলে আমরা অল্প কয়েক মিনিটের ভিতরে সেখানে পৌঁছে গেলাম। যদিও চাপা রাস্তা হওয়ার কারণে আমাদের ফেরার সময় কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। যাইহোক জিন্দা পার্কের কাছে পৌঁছে আমরা সেখানে একটি পার্কিং স্পট দেখতে পেলাম। সেখানে গাড়ি রেখে আমরা আসলাম টিকিট কাউন্টারের কাছে। কিন্তু টিকিটের দাম শুনে আমার খুব একটা ভালো লাগলো না। কারণ আমি বাইরে থেকে যতটুক দেখছি তাতে মনে হচ্ছে না ভিতরে খুব ভালো কিছু আছে। সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি ছিল জনপ্রতী দেড়শ টাকা। আমি তখন মনে মনে চিন্তা করছিলাম এত টাকা দিয়ে ঢুকে সেখানে কি দেখতে পাবো?

IMG_20220902_105600.jpg

IMG_20220902_105823.jpg

যদিও পার্কে ঢোকার জায়গাটি আমার কাছে বেশ পছন্দ হয়েছিলো। পার্কে প্রবেশ করার গেটটি অন্য আর পাঁচটা স্থাপনার মতো নয়। কিছুটা ভিন্নধর্মী ছিলো।পার্কে প্রবেশ করার পরেই প্রথমে দেখতে পেলাম সেখানে একটি স্কুল রয়েছে। স্কুলের সামনে একটি লম্বা খোলা মাঠ। সেই মাঠের চারদিক দিয়ে গ্যালারির মত করে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অজ পাড়া গায়ের ভেতরে এমন চমৎকার একটি স্কুল দেখে আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। আরো কিছুদূর আগানোর পর দেখতে পেলাম পার্কের ভেতরে অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদের স্থাপত্য শৈলী ছিল চমৎকার। আজকাল যেখানে যত্রতত্র শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু এই মসজিদে দেখলাম কয়েকটি ফ্যান ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেই। আর মসজিদটির স্থাপনা বেশ খোলামেলা। চারপাশ দিয়ে আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা সেখানে রয়েছে। এমন চমৎকার স্থাপত্য শৈলী দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো।

IMG_20220902_110013.jpg

IMG_20220902_110031.jpg

পার্ক এর ভেতর যতই আগাতে লাগলাম ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম এই পার্কটি আর দশটা পার্কের মতো বানিজ্যিক কোনো স্থান নয়। এই পাকর্টি কোন দক্ষ আর্কিটেক্ট তার মনের মাধুরী মিকির মিশিয়ে এই পার্কের নকশা করেছেন। সেখানে একটি সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম যেখানে লেখা রয়েছে এই পার্কে কোনো রকম কোনো পশু পাখির ক্ষতি করা যাবে না। এই পার্কটিকে তারা বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে।

IMG_20220902_110104.jpg

IMG_20220902_110045.jpg

মসজিদ দেখে আরো একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলাম একটি গেট। সেই গেট দিয়ে ঢোকার পর মনে হোলো আমরা একটি বনের ভেতর প্রবেশ করেছি। যেখানে প্রচুর গাছপালা রয়েছে এবং সে গাছপালার ঘনত্ব এতই বেশি মনে হচ্ছে কোন সত্যিকারের বনে প্রবেশ করেছি। কিন্তু সেই বনের ভেতর দিয়ে সুন্দর আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গিয়েছে বিভিন্ন দিকে। আমরা সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতে দেখতে পেলাম হাতের ডানে এই পার্কের ভেতরের একমাত্র রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। সেখানেও নান্দনিকতার ছোঁয়া দেখতে পেলাম। পার্কে প্রবেশ করে যা দেখতে পেলাম। তাতে একটি জিনিস পরিষ্কার সেটা হচ্ছে এই পার্কের যখন নকশা করা হয়েছে তখন একটা পরিবেশ বান্ধব স্থাপনা হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টটা একদম খোলামেলা। সেখানেও কোন শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের ব্যবহার নেই।

IMG_20220902_110705.jpg

IMG_20220902_110133.jpg

আসলে এই ধরনের পরিবেশে শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের প্রয়োজনও নেই। কারণ পুরো পার্ক প্রচুর গাছপালা দিয়ে ঘেরা আছে। যার ফলে সেখানে তাপমাত্রা এমনিতেই বাইরে থেকে বেশ খানিকটা কম। সেই রেস্টুরেন্টে বসে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর দেখতে পেলাম রেস্টুরেন্ট এর পাশেই একটি লাস্যি কর্নার। যেখানে লেখা রয়েছে এখানে অর্গানিক লাস্যি পাওয়া যায়। ভাদ্রের তালপাকা গরমে এই চমৎকার পরিবেশের ভেতরেও আমরা কিছুটা গরম বোধ করছিলাম। তাই সবাই মিলে চিন্তা করলাম ঠান্ডা লাস্যির গ্লাসে চুমুক দিলে মন্দ হবে না। সেখানকার লাচ্চি খেয়ে আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। কিছুটা ভিন্নধর্মী স্বাদ পেলাম সেই লাস্যি থেকে। লাসি পান করার পর আমরা আরো সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। (চলবে)

IMG_20220902_110631.jpg

IMG_20220902_110559.jpg


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের চতুর্থ পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানজিন্দা পার্ক, ঢাকা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া জিন্দা পার্কে তো দেখছি প্রচুর গাছপালায় আচ্ছাদিত একটু জায়গা। পরিবেশটাও মনে হচ্ছে খুবই মনোরম। চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি। এমন সুন্দর পার্কে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে মজাটাই আলাদা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করে আমাদের সাথে অতি চমৎকারভাবে শেয়ার করার জন্য প্রিয় ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

জায়গাটা প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য একদম উপযুক্ত।

আমার সেখানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কারণ বাইরে থেকে দেখে আমার কাছে এমন মনে হয়নি যে ভেতরে খুব ভালো কিছু আছে দেখার মতো।

এটা ঠিক বলেছেন ভাই। আজকালকার পার্ক গুলোর খুব অবস্থা খারাপ। পরিবার নিয়ে সেখানে যাওয়া যায় না। ঘোরাঘুরি নিয়ে আপনার আগের দুটো পর্ব আমি মিস করে গেছি। তবে এই পর্বটা পড়লাম। এবং সময় পেলে বাকি পর্ব দুটো পড়ে নেব। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য ভাই।

 2 years ago 

বাংলাদেশে কখনো আসলে চেষ্টা করবেন এই পার্কটা থেকে ঘুরে যেতে। নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি ভালো লাগবে।

 2 years ago 

আমিও জিন্দাপার্ক গিয়েছিলাম তবে সামনের অংশ থেকে ঘুরে চলে এসেছি, এর ভিতর যে এত চমৎকার চমৎকার জায়গা রয়েছে আমার তার ধারণা ছিল না, তবুও যতটুকু ঘুরে ছিলাম খুবই ভাল লেগেছিল খুবই সুন্দর একটি জায়গা.

 2 years ago 

চরম বোকামি করেছেন। এরপরে সময় সুযোগ পেলে ঘুরে আসবেন। দারুন একটি জায়গা।

 2 years ago 

বিভিন্ন কারণে আর সেদিকে যাওয়া হচ্ছে না তবে অবশ্যই আবার যেতে হবে।

 2 years ago 

পোস্টটা পড়ে এবং দেখে বুঝলাম জিন্দা পার্ক শুধু নামেই জিন্দা না। জিন্দা পার্কের ভেতরেও জিন্দাই। আশা করি, আপনার দেড়শ টাকা জলে হয়নি। আপনার এই পোস্টের পরবর্তী পর্ব দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। এমন সুন্দর পর শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

 2 years ago 

পার্ক থেকে যখন বের হচ্ছিলাম ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এখানকার এন্ট্রি ফি ৫০০ টাকা হলেও খারাপ হোতো না।

 2 years ago 

হৃদয় যখন পূর্ণতা অনুভব করে তখন টাকাটা তুচ্ছ মনে হয়। সুন্দর মুহূর্ত গুলো জীবনে স্মৃতি হয়ে রয়।

 2 years ago 

অও, জিন্দা পার্কটি খুবই সুন্দর।খুবই পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘুরতে খুবই ভালো লাগে।3 নং ছবি ও শেষ ছবিটি দেখে মন ছুঁয়ে গেল।স্কুলের মাঠটি এতটাই পরিস্কার ও সুন্দর মুগ্ধ হলাম।আশা করি সুন্দর সময় কাটিয়েছেন আপনারা,ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

সময়টা দারুন কেটেছিলো সেখানে।

 2 years ago (edited)

এই তো পেয়ে গেছি পর্ব তিন। দুর্দান্ত। তবে ৩ টে পর্বের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের ছবি যেন অসাধারণ। আসলে ঘোরার জন্য সব সময় হাই-ফাই জায়গার প্রয়োজন হয় না। এই ভাবে ছোট টুরের মাধ্যমে আমরা অনেক অসাধারণ জায়গা আবিষ্কার করতে পারি। বেশ ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আমি আবার শহুরে কোলাহল থেকে নির্জনতা অনেকটা পছন্দ করি। সেই নির্জনতা যদি হয় এমন সবুজ সমারোহের মাঝে। তাহলে তো সেটা অন্য মাত্রায় চলে যায়। আসলে সেখানে চমৎকার সময় কাটিয়েছি। আবার ইচ্ছা আছে সেখানে যাওয়ার।

 2 years ago 

প্রথমের ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভাবলাম আপনার দেড়শো টাকা বুঝি গচ্ছা গেল। কিন্তুু ভিতরের পরিবেশ দেখে বুঝতে পারলাম দেড়শো টাকা কাজে লাগছে। এমন একটি পার্কে আমিও যেতে চাই,প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে চাই। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সময় সুযোগ পেলে একবার সেখান থেকে ঘুরে আসবেন। অসাধারণ একটি জায়গা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59484.75
ETH 2614.53
USDT 1.00
SBD 2.41