স্কুল জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা।১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


প্রত্যেকটা মানুষের স্কুল জীবনে এমন বেশ কিছু ঘটনা থাকে। যেটা সারা জীবন তার মনে থাকে। সেটা হতে পারে আনন্দময় কোন ঘটনা বা খারাপ কোন অভিজ্ঞতা। ভালো-মন্দ মিলিয়ে সব রকমের অভিজ্ঞতা স্কুলজীবনে আমাদের হয়ে থাকে। তবে ভালো অভিজ্ঞতাগুলো মানুষ স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন করে সাজিয়ে রাখে।


9dbf89b6ee8209ceab4c081cfbcd9388591dba25.jpg

ছবির সোর্স-লিংক


আমি আমার স্কুল জীবনের কয়েকটা বছর কাটিয়েছি ফরিদপুর জিলা স্কুলে।

তার আগে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্কুলে পড়েছি।

কিন্তু ক্লাস সেভেন থেকে এসএসসি পাশ করা পর্যন্ত আমি ফরিদপুর জিলা স্কুলে ছিলাম।

স্কুলে আমি একজন মধ্যম মানের শিক্ষার্থী ছিলাম। সাধারণত ক্লাসের সবচাইতে ভালো ছাত্র এবং সবচাইতে খারাপ ছাত্র গুলো শিক্ষকদের নজরে থাকে। কিন্তু প্রতিটা ছাত্রের মনে এই বাসনা কাজ করে যেন শিক্ষকরা তাকেও অনেক গুরুত্ব দেয়। ভালো-খারাপ ছাত্র বাদে আর এক ধরনের ছাত্রদের শিক্ষকরা অনেক গুরুত্ব দেয়। তারা হচ্ছে যারা খেলাধুলায় ভালো থাকে। আমি খেলাধুলায় ও মধ্যম মানের ছিলাম।

একবার আমাদের স্কুলে একই সাথে বিসিএস কমপ্লিট করা বেশ কয়েকজন তরুণ শিক্ষক যোগ দিলো। তারা স্কুলে যোগ দেয়ার পরে অল্প সময়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে গেলো। ছাত্রদের সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে ছাত্রদের সাথে তাদের একটি অন্য রকম যোগাযোগ গড়ে উঠল। আমরা সাধারণত শিক্ষক বলতে বুঝি রাশভারী চেহারার গম্ভীর কোন মানুষকে। যাদের দেখলে আমরা সব সময় ভয় পেতাম। কিন্তু এই তরুণ শিক্ষকেরা যোগ দেয়ার পরে আমাদের শিক্ষক সম্বন্ধে ধারণা পাল্টে গেল। এই শিক্ষকেরা আমাদেরকে শুধু পড়ালেখায় উৎসাহ দিত না। তারা আমাদের অন্যান্য বিভিন্ন কাজে উৎসাহ দিত। তাদের প্রায় সবাই ছিল খুবই ক্রীড়াপ্রেমী।

আমরা যখন জিলা স্কুলে পড়তাম। তখন জিলা স্কুল দুই শিফটে ভাগ করা ছিল। মর্নিং শিফট আর ডে শিফট। মর্নিং শিফট এর সাথে ডে শিফট এর সব সময় কম্পিটিশন লেগে থাকতো। হঠাৎ একদিন আমাদের এক শিক্ষক বলল ডে শিফটের ক্লাস নাইনের সাথে আমাদের ক্রিকেট ম্যাচ হবে। আমরা তখন ক্লাস নাইনে ছিলাম। আমার বন্ধুবান্ধব যারা ক্লাসে ছিল তারা বেশিরভাগই ভালো ক্রিকেটার ছিল। আমরা এ ঘোষণা শুনে খুবই খুশি। একটি জমজমাট ক্রিকেট ম্যাচের প্রত্যাশা করছিলাম। যথারীতি সেই দিনটি আসলো। এখন খেলোয়াড় বাছাই করা হবে। খেলোয়াড় বাছাই করার ওখানে আমিও ছিলাম। আমি মূলত ছিলাম একজন বাঁহাতি বোলার। আবার লোয়ার অর্ডারে টুকটাক ব্যাটিং ও করতে পারতাম। কোন এক অদ্ভুত কারনে আমাকেও টিমে সিলেক্ট করা হলো। ডে শিফটের টিম অনেক শক্তিশালী। আমাদের টিম ও খারাপ না।

খেলা শুরু হলো। টসে জিতে আমরা ব্যাটিং নিলাম। প্রথম দুই ওভার আমাদের ব্যাটসম্যানরা মোটামুটি ভালই খেললো। তৃতীয় এভার থেকে হঠাৎ করে উইকেট পড়া শুরু হলো। দেখতে দেখতে মাত্র ২০ রানে ৫ উইকেট পড়ে গেলো। তারপর আমাদের ক্যাপ্টেন আমাকে বলল ব্যাটিংয়ে যেতে। যাওয়ার সময় বলে দিলো শেষ পর্যন্ত খেলে আসতে হবে। উইকেট হারানো চলবে না। আমি মাথা নেড়ে তার কথায় সায় দিয়ে মাঠে নেমে পড়লাম ব্যাটিং করার জন্য। খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে নেমেছিলাম। যদিও এই ধরণের পরিস্থিতিতে খেলার আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। কারণ আমার ডিফেন্স খুবই ভালো ছিল। সেজন্য যখনই আমি কোন টিমে খেলতাম। যদি হঠাৎ করে বেশি উইকেট পড়ে যেতো। তাহলে আমাকে নামাতো উইকেট না হারানোর জন্য।

আমি গিয়ে ধীরেসুস্থে ব্যাটিং শুরু করলাম। প্রতিপক্ষের বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করছিল। কিন্তু আমি দেখেশুনে খেলতে লাগলাম। রান খুব বেশি হচ্ছিল না। কিন্তু উইকেট আর পড়ছিলো না। এভাবে কিছুক্ষণ খেলার পরে রানের চাকা কিছুটা সচল হলো। এভাবে খেলতে খেলতে ইনিংসের প্রায় শেষের দিকে চলে এলাম। আমি এক দিক থেকে উইকেট আগলে রেখেছিলাম। অন্যদিক থেকে শেষের ব্যাটসম্যানরা এসে মেরে খেলছিল। দেখতে দেখতে ওভার প্রায় শেষ হয়ে গেলো। ওপাশ থেকে সবাই আউট হয়ে গেলেও আমি এপাশে নট আউট থাকলাম। খুব বেশি রান আমাদের হয়েছিলো না। ৭০ রান বা এর আশেপাশে হয়েছিলো। উইকেটে ছিল প্রচুর ঘাস। যারফলে সেখানে ব্যাটিং করা খুবই কষ্টকর ছিল। আমি সম্ভবত ৩০ রানে নট আউট ছিলাম। যখন ইনিংস শেষে আমি ফিরছিলাম তখন দৌড়ে এসে আমার বন্ধুরা আমাকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো। আর একটু আগানোর পর স্যার নিজে এগিয়ে আসলো একটি পানির বোতল নিয়ে। বললো খুবই ভালো খেলেছো। এখন একটু পানি খেয়ে রেস্ট নাও। শেষ পর্যন্ত আমরা ম্যাচটা জিতে গিয়েছিলাম। আমাদের বোলাররা ও অনেক ভালো বল করেছিলো। আমি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলাম।

ম্যাচ শেষে স্যার আমার অনেক প্রশংসা করলেন। পুরোপুরি মনে নেই কি বলেছিলেন। সম্ভবত এমন কিছু বলেছিলেন যে ওর ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিংয়ের জন্য আজকে আমরা ম্যাচটা জিততে পেরেছি। সেই ক্রিকেট ম্যাচের স্মৃতি এখনো আমার স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করছে।

আজ থেকে প্রায় বাইশ তেইশ বছর আগেকার ঘটনা। যার ফলে উপরে যে ঘটনা বর্ণনা করেছি। তার সাথে কিছুটা হেরফের হতে পারে বাস্তবের। কিন্তু এখনো সেই ঘটনা অনেকটাই মনে আছে। মাঝে মাঝে এই সমস্ত স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালই লাগে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

logo.png

Support @amarbanglablog by delegating STEEM POWER.
100 SP250 SP500 SP1000 SP2000 SP

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok



আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

ভাই আমিও আপনার মতোই। সবকিছুতেই মধ‍্যম মানের। সেজন্য আমিও খুব একটি স‍্যারদের নজরে কখনো পড়িনি।
এবং এই ক্রিকেট ম‍্যাচ আমরাও অনেক খেলেছি স্কুলে। তবে আমাদের স্কুলে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি হতো। প্রায় প্রতিদিন টিফিনে মাঠে কোন না কোন টিমের ম‍্যাচ থাকতোই। আপনার স্কূল লাইফের গল্পটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

🙂🙂

আপনার স্কুল জীবনের এই ঘটনাটি খুব ভাল লাগছে আমার।আমি ক্রিকেট খেলা মাঝে মাঝে খেলি।তবে ফুটবল আমার প্রিয়।আপনার ধীরে সুস্থে ব্যাটিং এর মাধ্যমেই আসলে ম্যাচটা জিতেছিলেন।ঠান্ডা মাথায় খেলার জন্যই মনে হচ্ছে আপনি 30 রান নিয়েই নক আউট ছিলেন।
আপনার খেলা পছন্দ করে যখন আপনার শিক্ষক পানির বোতল নিয়ে আসলো তখন আপনার নাজানি কি অনুভূতি হয়েছিলো।

খুব ভালো ছিল পোস্টটি শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

 3 years ago 

সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল সেই সময়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।

 3 years ago 

প্রত্যেকটি শিক্ষককে অবশ্যই এমন বন্ধুসুলভ হওয়া উচিত। এবং সুন্দর ছিল আপনার স্কুল জীবনের কাহিনী

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

স্কুল লাইফে আমাদেরও বিভিন্ন স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতা হতো। আমি ছিলাম বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। ওপেনে নেমে মোটামুটি ভালোই খেলে দিতাম। আমি লেগ সাইট এ, মিডেল এ ভালো খেলতাম কিন্তু অফ সাইট এ বল দিলে আরো হতো না একদমই। একবার আমরা সেমিফাইনাল অব্দি গেছিলাম কিন্তু অন্তিম পর্যায়ে হেরে গেছিলাম।

 3 years ago 

সেই সময়ের কথা মনে পড়লে আসলেই অন্যরকম লাগে দাদা।

ভাই প্রত্যেকটা খেলাই আমাদের মিনে হাজারো আনন্দের সঞ্চার ঘটায়। আপনার স্কুল জীবন অনেক আনন্দঘন ছিলো।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনি সুন্দর অতীত আলোচনা করেছেন। স্কুল লাইফে মেয়েদের হ্যান্ড বল খেলা চলত। আমি নিয়মিত একজন খেলোয়াড় ছিলাম।সেই সৃতিচারণ করব একদিন।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সেই স্মৃতিচারণমূলক পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 

দারুন একটি পোস্ট করছেন ভাই।টান টান উত্তেজনার পোস্ট।খেলায় জিতেছিলেন এ জন্য স্বাগত। স্কুল জীবনের ঘটনা বিশেষকরে হাইস্কুলের স্মৃতি গুলো আমাদের বেশি মনে থাকে।
তাই আপনার স্কুল জীবনের ক্রিকেট খেলা নিপুণভাবে বর্ণনা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সব মিলে পোস্টটি চমৎকার একটি পোস্ট।
শুভ কামণা রইল।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

হ্যাঁ ঠিক বলছেন ভাই, প্রায় প্রতিটি মানুষের স্কুল জীবনের অনেক ঘটনা থাকে চাইলেও সেটা ভুলতে পারে না সে। আমি আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়লাম ভালো লাগলো ভাই। স্কুলে থাকাকালীন প্রায় প্রতিদিন ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করতাম স্কুল শেষে এর জন্য রেগুলার বকা শুনতে হতো বাসায়।
ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টি ধন্যবাদ ভাই ❤️

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57408.28
ETH 3079.77
USDT 1.00
SBD 2.31