ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত জীবন (চতুর্থ পর্ব)।
সোহেল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল দরকার হয় এখানে সে আর লেখাপড়াই করবে না। সোহেল সেখান থেকে ফিরে রুমে না গিয়ে অন্য একটি হলের কমন রুমে গিয়ে টিভি দেখতে লাগলো। আজকের সকালের মারামারিটা হয়েছে সাউথ হোস্টেল বনাম নর্থ হোস্টেল। সকালে সাউথ হোস্টেলের নেতারা নর্থ হোস্টেলে গিয়ে এক ছেলেকে মেরেছে। তারই বদলা নেয়ার জন্য নর্থ হোস্টেলের ছেলেপেলেরা বিকালের দিকে এসে সাউথ হোস্টেলে হামলা চালিয়েছে। সোহেলের তখন স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। সে এই কলেজের নাম শুনে বলেছিল কলেজটি ভালো হলেও সেখানকার পরিবেশ এখন অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। ছাত্র রাজনীতির জন্য সেই কলেজের বারোটা বেজে গিয়েছে।
এই পরিবেশ দেখে সোহেল খুবই হতাশ হয়ে পড়ল। সে চিন্তা করতে লাগল যদি পরিবেশ এমনই থাকে তাহলে আমি লেখাপড়া করব কিভাবে? তাই সোহেল চিন্তা করলো এই হোস্টেল থেকে অন্য কোন হোস্টেলে যাওয়া যায় কিনা সে চেষ্টা করে দেখতে হবে। পরদিন সোহেল ক্লাসে গিয়ে কয়েকজন ছাত্রের সাথে আলাপ আলোচনা করলো তার সমস্যা নিয়ে। তারা বলল এখানে একটি হোস্টেল আছে যেটি রাজনীতি মুক্ত। দেখো যদি সেখানে যেতে পারো তাহলে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে। আইডিয়াটা সোহেলের খুব পছন্দ হলো।
পরদিন সোহেল সেই হোস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে গিয়ে দেখা করলো। তাকে সোহেল সমস্যার কথা জানালে সে সোহেলকে তার এসএসসির রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করলো। পরে সোহেলের রেজাল্ট শুনে তিনি সোহেলকে বললেন তোমার তো আসলে এই হলেই থাকা উচিত ছিলো। কিন্তু আপাতত এই হলে কোন সিট খালি নেই। তুমি একটি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে রাখো। যদি সিট খালি হয় তখন তুমি উঠতে পারবে। সোহেল সেদিনই একটি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিলো।
কিন্তু সোহেলের অন্য হোস্টেলে যাওয়ার খবর কিভাবে যেন তাকে যারা হোস্টেলে উঠিয়ে ছিলো তাদের কানে চলে গেলো। রাতে যখন সোহেল পড়ছিল তখন দুজন ছেলে এসে সোহেলকে বললো নেতা আপনাকে ডাকছে। চলুন তার কাছে যেতে হবে। সোহেল কোনরকমে একটি শার্ট পড়ে তাদের সাথে রওনা দিলো। যখন সে সেই নেতার রুমে প্রবেশ করলো তখন দেখলেও সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটি সোহেলকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলল। সেই নেতাকে জিজ্ঞেস করল ভাই আপনি আমাকে ডেকেছেন?
সেই নেতা তখন তাকে বলল তোমার তো শুনলাম পাখনা গজাইছে। এখনো ১০ দিন পার হয় নাই তোমারে হোস্টেলে উঠাইছি। আর তুমি অন্য হোস্টেলে যাওয়ার ধান্দা করতাছো। এরপর যদি এরকম কিছু শুনছি তাইলে হাত-পা ভাইঙ্গা কলেজ থেকে বাইর কইরা দিমু। এর ভিতর একটি ছেলে উঠে এসে সোহেলকে সজরে দুটি চড় মারলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সোহেল হতভম্ব হয়ে গেলো। কি কারনে সে মার খেলো সে কিছুই বুঝতে পারছে না। চড় মারার পরে অন্য একটা ছেলে সোহেলকে ঘাড় ধরে সেই রুম থেকে বের করে দিলো।
দুঃখে অপমানে সোহেলের চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এল। রুমে এসে সোহেল কাঁদতে লাগলো। সোহেল মারামারি কখনোই পছন্দ করে না। কিন্তু সে অত্যন্ত জেদি ছেলে। কাঁদতে কাঁদতে সে সিদ্ধান্ত নিল আগামীকালই সে এখান থেকে চলে যাবে। এর ভেতরে তার রুমে দুজন ছেলে প্রবেশ করল। তারা এসে সোহেলকে বলল তুমি আমাদের সাথে আসো। তোমার সাথে জরুরী কথা আছে। সোহেল তাদেরকে ভালোভাবে চিনতে পারল না। সোহেল তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো আপনারা কারা? তখন সেই লোকগুলো বলল আমরা তোমার ভালো চাই। আমাদের সাথে এলে তোমার লাভ হবে। তোমার এই অপমানের প্রতিশোধ তুমি নিতে পারবে। এই কথাটা তার মনে ধরল। সে তাদের সাথে বাইরে রওনা দিল। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
এই হলের রাজনিতী খুবই ভয়াবহ।বেচারা সোহেলের জীবন নিয়ে টানাটানি পড়াশোনার অবস্থা তো আগেই খারাপ হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
সোহেলকে এত তাড়াতাড়ি মার খেতে হবে সেটা ভাবি নাই তবে আপনার গল্প খুব বড় একটি মোড় নিচ্ছে মনে হচ্ছে। জানিনা সোহেল এখন তার অপমানের কি প্রতিশোধ নেবে ! পরের পর্বের আশায় থাকলাম আশা করি খুব তাড়াতাড়ি পর্বটা পোস্ট করবেন।
শত শত ছাএের ভবিষ্যতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে এইরকম নোংরা ছাএরাজনীতির কারণে।। শেষে গল্প টার টুইস্ট এনে দিলেন ভাই। দেখা যাক সোহেল অন্য কারো প্ররোচনায় পড়ে যায় নাকী আবার।।
ভাইয়া এখনকার পাতি নেতাদের ফাদে যে সমস্ত ছাত্ররা পা দিয়েছে তারা সকলেই ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। অযথা চড় ও অপমান হওয়ার পরে নিশ্চয়ই সোহেলের মনে জিদ টা আরো বেড়ে গেছে। সে মনে মনে ভাবতেও পারে প্রতিশোধ নেওয়া যায় কিভাবে। এখন দেখার বিষয় দুইজন সোহেলকে নিয়ে গিয়ে কি পরামর্শ দেয় এবং কি কাজে ব্যবহার করে।
কি একটা অবস্থা , আমার কাছে এইসব কিছু অনেক বেশি ভয় লাগে,আর রাজনীতির এমন ঝামেলায় কেউ পড়লে তার অবস্থা কি যে হয় তা বলা মুশকিল। দুইজন এসে বলছে তার ভালো চায় কিন্তু কি করে বসে কে জানি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।