পদ্মবিল দর্শন।
বেশ কিছুদিন থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শহর থেকে কিছুটা দূরে একটি জায়গার বেশ সুনাম শুনতে পাচ্ছিলাম। জায়গাটি পদ্মবিল নামে পরিচিতি পেয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে সেই জায়গা সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছিলাম। সেখানকার বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ছবিও দেখতে পেয়েছি। তাই কিছুদিন থেকেই চিন্তা করছিলাম সেখান থেকে একবার ঘুরে আসব।
তবে জায়গাটি আমাদের শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। আবার সেখানে সরাসরি যাওয়ার কোন গণপরিবহন নেই। সেখানে সরাসরি যেতে হলে অটোরিকশা বা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে। যাই হোক কয়েকদিন আগে যখন পদ্মার চর থেকে ঘুরে ফিরছিলাম তখন বন্ধু প্রদীপের সাথে পরামর্শ করলাম এরপরে আমরা পদ্মবিলে যাব। সে আমার প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু গত দুদিন প্রচন্ড গরম থাকায় আমি ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাইনি। তবে গতকাল সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়। বেশ ভারী এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে গতরাতে। আজকেও আকাশটা পুরো মেঘলা হয়ে রয়েছে। সাথে বেশ জোরে বাতাস বইছে।ঘোরাফেরার জন্য আমার সবচাইতে পছন্দের হচ্ছে এই ধরনের আবহাওয়া। মেঘলা আকাশ আর দমকা হাওয়া পুরো পরিবেশটা চমৎকার উপভোগ্য করে তুলেছে।
যাই হোক আজ সকালে বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম যে আজ আমরা ঘুরতে যাবো। ওকে বেলা সাড়ে তিনটার সময় শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে থাকতে বললাম। তারপর আমি যথারীতি ঠিক সাড়ে তিনটার সময় জনতা ব্যাংকের মোড়ে পৌঁছালাম। কিন্তু পৌঁছে দেখি প্রদীপের কোন দেখা নেই। ব্যাপারটিতে আমি বেশ বিরক্ত হলাম। কারণ এর আগে যেদিন চরে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেদিনও প্রদীপ নির্ধারিত সময়ে আসতে পারেনি। আজকেও আসতে বেশ কিছুক্ষণ দেরি করল।
সে যাই হোক প্রদীপ আসার পরেই আমরা দুই বন্ধু রওনা দিলাম পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে। অবশ্য মধ্যপথে একটি জায়গায় থেমেছিলাম। সেখানে অল্প সময় ঘোরাফেরা করে করেছি সাথে কিছু ছবিও তুলেছি। তারপর সেখান থেকে আবার পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। যেহেতু জায়গাটা আমরা কেউই ভালোভাবে চিনি না। তাই মানুষজনের কাছে শুনতে শুনতে যাচ্ছিলাম। প্রায় দুই তিন দফা অটো রিক্সা পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত একটি ভ্যান নিয়ে আমরা পদ্ম বিলে পৌছালাম।
সেখানে গিয়ে আমার চক্ষু চরক গাছ। দেখি চারিদিক লোকে লোকারণ্য। এত মানুষ দেখে আমি বেশ হতাশ হলাম। কারণ আমি সবসময় একটু নিরিবিলি ঘুরতে পছন্দ করি। কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ আমার মোটেই পছন্দ না। কিন্তু কি আর করা যেহেতু চলে এসেছি তাই আর ফিরে যাওয়ার তো কোনো উপায় নেই। সেজন্য ঠিক করলাম আমরা একটি নৌকায় করে বিলের ভেতর থেকে ঘুরে আসি অন্য সবার মত করে। কিন্তু সেখানে যে নৌকা ছিল সেই নৌকাগুলোর সাইজ দেখে আমি খুবই ভয় পাচ্ছিলাম। একদম ছোট সাইজের ডিঙ্গি নৌকা। এই ধরনের নৌকায় উঠতে আমার এমনিতেই অনেক ভয় করে। আবার এসব নৌকা খুব সহজে উল্টে যায়।
আমি পাড়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিলাম নৌকায় উঠবো কি উঠবো না। কিন্তু বন্ধু প্রদীপের জুরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত নৌকায় উঠে বসলাম। নৌকায় বসতেই খেয়াল করলাম নৌকাটা পানির থেকে মাত্র চার পাঁচ ইঞ্চি ওপরে রয়েছে। একটু এদিক ওদিক হলেই নৌকায় পানি উঠে যাবে। এদিকে আমাদের নৌকার মাঝি প্রথম থেকেই বেশ জোরে চালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি তাকে বারবার করে নিষেধ করলাম। তাকে বললাম এত তাড়াহুড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি ধীরেসুস্থ্যে নৌকা চালান। পরে সে কিছুটা স্থির হল। অল্প কিছুক্ষণ পর আমরা পাড় থেকে বিলের প্রায় মাঝামাঝি চলে এলাম।
কিন্তু চারদিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কারণ আমি প্রথম যখন এই পদ্মবিলের ছবি দেখি। তখন দেখেছিলাম পুরো বিলটাতে হাজার হাজার বাতির মতো পদ্মফুল ফুটে রয়েছে। কিন্তু এখন এখানে এসে দেখতে পেলাম মানুষ জনের অত্যাচারে বিলটা প্রায় পদ্মফুল শূন্য হয়ে গিয়েছে। গত দুদিন ধরে ফেসবুকে এটা নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা দেখছিলাম। সবাই বলছিলো এখানে যে সমস্ত দর্শনার্থী নৌকায় ঘুরতে আসে। তারা সবাই প্রচুর পরিমাণে পদ্মফুল অকারণে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে আজ বিলটি প্রায় পদ্মফুল শূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যদিও এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের জন্য মোটেও নতুন নয়। কারণ আমরা বাঙালিরা যেকোনো সুন্দর জিনিস নষ্ট করতে ওস্তাদ।
যাই হোক আমরা যখন বিলের ভেতর ঘোরাফেরা করছিলাম। তখন আশেপাশে বেশ কিছু লোককে দেখতে পেলাম তারা পদ্মফুল ছিড়ছে। দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। তাদের কয়েকজনকে কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। আর নৌকার মাঝিকে বললাম দর্শনার্থীরা যাতে পদ্ম ফুল ছিঁড়তে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি এই পদ্মফুল দর্শনার্থীরা নষ্ট করে ফেলে তাহলে আর এখানে কেউ আসবে না। তাতে আপনারাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। নৌকার মাঝি অবশ্য আমাদের সাথে একমত প্রকাশ করল। সে বলল আমরা লোকজনকে ফুল ছিঁড়তে মানা করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনে না। যাইহোক বেশ কিছুক্ষণ বিলের ভেতর ঘোরাফেরার পর আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | পদ্মবিল, কানাইপুর। |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে এবং পোস্টটা পড়ে তো আমার ওখানে খুব যেতে ইচ্ছা করছে। এত সুন্দর জায়গা। এত এত পদ্মফুল! দুর্দান্ত জাস্ট।
বিলের পদ্মফুল গুলো অনেক সুন্দর। তাছাড়া জায়গাটাও বেশ সুন্দর। ফটোগ্রাফিগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি সুন্দর সময় পার করছেন বিলে।
কতদিন পরে যেন পদ্মফুল দেখলাম খুব ভালো লাগলো। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে যেটা জানতে পারলাম তাতে আমিও খুব হতাশ হয়ে গিয়েছি। আসলে মানুষ এখন আর মানুষ নেই। প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষ এখন নির্বিচারে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি বুঝতে পারিনা পদ্মবিল দর্শন করতে এসে পদ্মফুল বাসায় নিয়ে যাওয়ার দরকার টা কি। প্রকৃতির প্রতি আমাদের সবারই যত্নশীল হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
ভাইয়া আপনার ফটোগ্রাফি বরাবরের মতোই অনেক সুন্দর ছিল, পদ্ম বিলের অসাধারণ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, আমাদের বাড়ির সামনে এরকম একটি পদ্ম বিল আছে নাম কাতলির পদ্ম বিল, আমাদের বাড়ি থেকেই দেখা যায় কিন্তু কখনো বিলের মধ্যে যাওয়া হয়নি, আপনার বিলে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখে আমারও খুব যেতে ইচ্ছে করছে এবার বাড়িতে গেলে অবশ্যই কাতলির পদ্ম বিলে ঘুরতে যাবো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর দৃশ্য গুলো তুলে ধরার জন্য।
ভাইয়া পদ্ম ফুলের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে। তবে আমার খুবই খারাপ লাগলো আপনারা জনগণকে নিষেধ করা শর্তেও তারা পদ্মা ফুলগুলো ছিঁড়ছে। আসলে মানুষ আজও বোকা রয়েছে, পদ্মফুলগুলো না ছিড়ে যদি সবাই মিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করে তাহলে সকলের মনটা খুবই সতেজ হয়ে উঠতো।
ঘুরা ঘুরির মজাই আলাদা, আমারো মানুষ জনের ভীর ভালো লাগে না। কলাহল হীন প্রকৃতিতে মনকে সতেজ করতে পারি।
ভালো লাগলো না এই পর্যটন স্থান 😶
আপনি আপনার বন্ধুর সাথে পদ্মা বিলে ভালো ঘোরাফেরা করেছেন। আর দারুন কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন ভাই। খুবই সুন্দর ছিল আপনার ফটোগ্রাফি গুলো। আসলে এই পদ্ম ফুল ফুটে থাকে থাকে দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু মানুষ তুলে নিয়ে যায় সেজন্য কিন্তু এটা সৌন্দর্য অনেকটাই কমে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য।
সত্যি সত্যি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এই অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আপনার পদ্মবিল পরিদর্শন। ফটোগ্রাফি গুলো ও খুব সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।