ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ (তৃতীয় পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
চাঁদপুর পৌঁছে আমরা লঞ্চঘাট থেকে বের হয়ে চারপাশটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। অবশ্য লঞ্চ থেকে নামার আগেই আমরা গুগল ম্যাপ দেখে কিছুটা ধারণা নিয়েছি শহর সম্বন্ধে। আমার বন্ধুর কলীগের বাড়ি চাঁদপুর। তো বন্ধুকে বললাম সেই কলিগকে ফোন দিয়ে তার কাছ থেকে শহরের কিছু লোকেশন সম্বন্ধে জেনে নিতে। আমার সেই বন্ধু তার কলিগকে ফোন দিল। তারপর তার কাছ থেকে কয়েকটি জায়গা সম্বন্ধে জেনে নিলো।
তারপর আমরা শহরটি ঘুরে দেখতে লাগলাম। চাঁদপুর শহরকে আমার কাছে একটি মধ্যম মানের শহর মনে হলো। চাঁদপুর যদিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর। কিন্তু এই শহরে উন্নতির তেমন কোন ছোঁয়া দেখতে পেলাম না। একসময় আমাদের শহরের চেহারাও অনেকটা এমন ছিল। বেশিরভাগ বাণিজ্যিক স্থাপনা বেশ পুরনো। শহরের ভেতর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রিক্সা এবং বিভিন্ন ধরনের থ্রি হুইলার।
আমরা প্রথমে শহরের ভেতর উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে একটি ব্রিজ দেখতে পেলাম। সেই ব্রিজের উপর উঠে দেখলাম সেখান থেকে নদী এবং শহরের একটি চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। আমরা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। সেই সময় কিছু ছবি ও তুলেছি। কিছুক্ষণ পর আমার বন্ধুকে ফোন দিয়ে তার কলিগকে জিজ্ঞেস করতে বললাম যে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।
সে জানালো নদীর পাড়ে একটি মাজার আছে। সেখানে ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। জায়গাটি নাকি খুবই সুন্দর। তারপর একজন অটোওয়ালা আমাদেরকে জানালো নদীর পাড় থেকে ট্রলার ভাড়া করে একটি জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায়। জায়গাটি নদীর ভিতর একটি দ্বীপের মত। সেখানে নাকি প্রচুর লোকজন ঘুরতে যায়। শুনে আমাদের সেখানে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা হল। কিন্তু সময় হিসাব করে দেখলাম সেখানে ঘুরতে গেলে আমাদের ঢাকায় ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। কারণ সেখানে যাওয়া আসায় প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে। তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিলাম।
তারপর আমরা সেই ব্রিজের উপর থেকে নিচে নেমে এই মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অল্প সময়ের ভেতর সেখানে পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌছে আমরা দেখতে পেলাম নদীর পাড়ে সুন্দর একটি জায়গা। এখান থেকে নদীর একটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যাচ্ছিল। আমরা আর মাজার না খুঁজে নদীর সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত ছিলাম। এর ভিতর জুম্মার আজান শুনতে পেলাম। যেহেতু সেদিন ছিল শুক্রবার তাই জুম্মার নামাজ পড়া কথা আগে থেকেই মাথায় ছিল। আমরা দেখতে পেলাম কাছেই একটি মসজিদ আছে। আমরা কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে অবস্থান করে তারপর সেই মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে।
আমরা যখন নামাজ পড়তে মসজিদে ঢুকলাম তখনও তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু নামাজ শেষ হওয়ার পর যখন মসজিদ থেকে বের হতে গেলাম তখন দেখি বাইরে দমকা হওয়া সাথে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতির এমন হঠাৎ খেয়ালি আচরণে আমরা বেশ অবাক হলাম। কিছুক্ষণ আগেও আমাদের গরম লাগছিল। এখন এই বাতাসের কারণে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হলো। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হল।
আমরা তখন চিন্তা করছিলাম এই বৃষ্টি কতক্ষণ থাকবে। তবে বৃষ্টি যেভাবে হচ্ছিল সেটা দেখে মনে হচ্ছিল এই বৃষ্টি সহজে যাবেনা। তাই আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে ঢাকার দিকে ফিরে যেতে হবে। আমরা তখন পাশের একটি হোটেল থেকে খাওয়া-দাওয়া করে লঞ্চঘাটে পৌঁছলাম। আমরা যখন লঞ্চঘাটে পৌঁছলাম তখন জানতে পারলাম আর আধাঘন্টা পরে একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। কিন্তু দমকা হওয়ার কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউ দেখা যাচ্ছিল।
আমাদের এক ফ্রেন্ড লঞ্চে যেতে অস্বীকৃতি জানালো। সে খুবই ভয় পাচ্ছিল নদীর অবস্থা দেখে। অবশ্য ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ এই রুটে অনেক লঞ্চ ডুবি হয়েছে। অনেক মানুষ ও মারা গিয়েছে। আমার সেই বন্ধুর ভয় পাওয়া দেখে আমরা চিন্তা করছিলাম যে বাসে যাওয়া যায় কিনা। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছে গিয়েছি। আবার বাইরে হচ্ছে বৃষ্টি। এর ভেতরে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়াও ঝামেলা। শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তা ভাবনার পর আমরা লঞ্চে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ পর লঞ্চ ছেড়ে দিলো।
আমরা খেয়াল করে দেখলাম লঞ্চ যখন নদীর মাঝে এসেছে তখন আর বড় ঢেউ দেখা যাচ্ছে না। আমরা তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ঢেউ না থাকলেও বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। যার ফলে লঞ্চের ভিতর আমাদের বেশ শীত লাগছিল। আমরা তিনজন পাশাপাশি তিনটি চেয়ারে বসে ছিলাম। আসার সময় যেমন আমরা পুরো পথ দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে এসেছি। কিন্তু ফেরার সময় আমরা প্রায় পুরোপুরি সময় সিটে বসেছিলাম। শুধু আমি মাঝে মাঝে উঠে ঘুরে বেরিয়েছি। শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগে গেল।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক, লিংক |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
ইলিশের বাড়ি চাঁদ পুর তিন বন্ধু মিলে লঞ্চ জার্নিতে বেশ মজায় করেছেন । চাঁদপুরে দেখার মধ্যে লঞ্চ টার্মিনাল বেশি ভালো লেগেছে। আপনার বন্ধু একটু ভয় পাচ্ছিলেন লঞ্চে যেতে। তার পরও লঞ্চ যেতে হল। ভয় লাগার পিছনে কারণ হচ্ছে ঢাকা থেকে চাঁদ পুর গামী লঞ্চগুলো একটি বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আপনারা ভালো ভালোই ফিরে এসেছেন আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তবে ফুলের ফটোগ্রাফি গুলো কিন্তু চমৎকার লাগছে ভাইয়া এতো সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
চাঁদপুরের ইলিশ এর কথা জীবনে অনেক শুনেছি এবং চাঁদপুরের ইলিশ খেতে অনেক মজা। আপনার বন্ধুকে নিয়ে চাঁদপুরে ঘুরতে গিয়েছেন এবং অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যদিও কখনো চাঁদপুর যাওয়া হয়নি, তবে চাঁদপুর ভ্রমণ করার আমার ইচ্ছে রয়েছে।
রুপোক ভাই আপনারা বন্ধুরা সবাই মিলে খুব আনন্দময় মুহূর্ত সময় কাটিয়েছেন। আসলে চাঁদপুর কখনো যাওয়া হয়নি তবে শুনছি চাঁদপুর অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। তবে আপনার মাধ্যমে চাঁদপুরের কিছু ফটোগ্রাফির দেখতে পেয়ে বুঝলাম। যে চাঁদপুর অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। ঠিকই বলেছেন ভাই লঞ্চে যখন উঠি তখন চারো দিকে তাকালে খুবই ভয় লাগে।কিন্তু ভয় লাগলেও আমরা বেশিরভাগ লঞ্চে বাড়িতে যাই। এবং ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
দাদা আশাকরি ভালো আছেন? ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন। এই মুহূর্তগুলো জীবনের পাতায় স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে। চাঁদপুর ভ্রমণের খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। ছবিগুলো খুবই অসাধারণ ছিল । এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
ইলিশের শহর চাঁদপুরে গিয়ে মনে হয় আপনারা ইলিশ মাছ আর খেতে পারেন নি । বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে আপনারা বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারেননি । তবে এরকম বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে লঞ্চ প্রায়ই অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে । কিন্তু আপনারা ভালভাবেই ঢাকাতে পৌঁছেছেন জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া । ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে কিছু ফটোগ্রাফি এবং কিছু মুহুর্ত শেয়ার করে নেওয়ার জন্য