ধ্বংস হয়ে যাওয়া কৈশোর (প্রথম পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
এলাকার রাস্তার শেষ মাথার কালভার্টের উপর বসে রবিন সিগারেট খাচ্ছিলো আর আনমনে কোন একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলো। এখন বাজে সকাল দশটা। রবিন সাধারণত এই সময়ে কখনো একা থাকে না। সাথে আরও বেশ কয়েকজন সাঙ্গোপাঙ্গ থাকে। আজকে এখনো কেউ আসেনি কেন এটা চিন্তা করে সে কিছুটা বিরক্ত বোধ করছিলো। এমনিতেই গতকালকে পাশের এলাকার ছেলেদের সাথে ঝামেলা হওয়ায় মাথাটা গরম হয়ে আছে।
ওদেরকে কিভাবে একটা উচিত শিক্ষা দেয়া যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করছে। রবিনের এলাকার ছেলেদের নিয়ে একটি দল আছে। দলের সদস্য সংখ্যা খুব বেশি নয় ৮ থেকে ১০ জন। কিন্তু এই দলটিকে স্থানীয় লোকজন খুবই ভয় পায়। এদেরকে সহজে কেউ ঘাটাতে যায় না। এই দলের কারোরই বয়স ১৭/১৮ বছরের উপরে হবে না। কিন্তু এদের সবারই মাথা অত্যন্ত গরম। এদের ভিতর রবিনের মাথা সবচাইতে বেশি গরম। এই গ্রুপে একমাত্র রাসেল নামে একটি ছেলে আছে যার মাথা কিছুটা ঠান্ডা।
রবিনের দলটা অকারণে কারো সাথে খুব একটা ঝামেলা করে না। তবে তাদের সাথে কেউ ঝামেলা করতে আসলে তাদেরকে সহজে ছেড়ে দেয় না। রবিন যে এলাকায় বাস করে সে এলাকার পুরো জেলাব্যাপী একটি দুর্নাম আছে। এই এলাকাটা সন্ত্রাসীদের জন্য কুখ্যাত। জেলার সবচাইতে বড় সন্ত্রাসী গুলোর বসবাস এই এলাকাতে। যার ফলে এই এলাকার ছেলেরা অন্য এলাকার ছেলেদের থেকে কিছুটা অন্যরকম ভাবে বেড়ে ওঠে। সবার ভিতর একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে মাস্তানি ভাব লক্ষ্য করা যায়। যদিও রবিনদের গ্রুপের প্রতিটা ছেলেই এখনো ছাত্র।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রবিন রাসেল কে ফোন দিলো। ফোন দিয়ে কিছুটা বিরক্ত ভাবে জিজ্ঞেস করল কিরে তোরা কোথায়? আমি একা একা বসে আছি তোদের কোনো খবর নেই। রাসেল বলল বাসার একটা কাজে ব্যস্ত আছি কিছুক্ষণ পরে আসছি। তুই অন্যদের ফোন দিয়ে দেখ। রাসেলের কথা শুনে রবিনের মেজাজ আরো খারাপ হলো। তারপর সে আর অন্য কাউকে ফোন না দিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
কিছুক্ষণ পর সেখানে গ্রুপের দু-তিনজন এসে উপস্থিত হলো। এসে রবিনকে জিজ্ঞেস করল কিরে কতক্ষণ ধরে এখানে আছিস। রবিন একটি গালি দিয়ে ওদের কে বলল সেই সকাল থেকে বসে আছি। তোদের কারো কোন খবর নেই। ওরা বলল আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো। ওরা রবিনকে জিজ্ঞেস করল এরকম মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন? রবিন বলল কালকের ঝামেলার ব্যাপারটা কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছিনা। ওদের যতক্ষণ একটা শিক্ষা দিতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি নেই।
ওরা রবিনকে জিজ্ঞেস করল গতকালকে আসলে কি হয়েছিল বলতো? রবিন বলল এলাকার ভিতরে পাশের এলাকার ছেলেরা একটি মেয়েকে বাজে মন্তব্য করেছিল। তখন রবিন তাদেরকে বাধা দেয়। এই নিয়ে রবিনের সাথে কিছুটা তর্কাতর্কি হয়েছে। একপর্যায়ে সেটা হাতাহাতি রূপ নিয়েছিল। তারপর ছেলেগুলো দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। এখন রবিনের ইচ্ছা এদেরকে একচোট ধোলাই দেয়ার। সেজন্য গ্রুপে সবার সাথে পরামর্শ করার জন্য রবিন বসে আছে সকাল থেকে।
রবিনরা বলতে গেলে শখের বশেই মাস্তানি করে। তারা সবাই মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। যদিও ইদানীং তারা একজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় আছে। এই নেতার কাছে যাওয়ার একটি কারন আছে। মাস্তানি করতে গেলে অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। রবিনদের কাছে আগে অস্ত্র বলতে শুধু কয়েকটি রামদা ছিলো। রাসেল এর মাধ্যমে এই নেতার সাথে ওদের পরিচয় হয়।
পরে এই রাজনৈতিক নেতা একদিন রাসেলের কাছে দুটো পিস্তল দেয়। এই পিস্তল দুটো পাওয়ার পর ওদের সাহস আরো বেড়ে যায়। পিস্তল দুটোর কারণে সবাই ওদেরকে সমীহ করে চলতে থাকে। আশেপাশের এলাকার যারা ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তারা ওদেরকে ভয় পেতে থাকে। এই পিস্তল পাওয়ার বিনিময় ওদের রাজনৈতিক নেতার সাথে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। সেটা ওরা হাসিমুখেই করে।
এভাবে আরো কিছুক্ষন বসে থাকার পর রাসেলও সেখানে এসে উপস্থিত হলো। রবিন রাগ করে রাসেল কে বলল এতক্ষণে আসার সময় হলো। রাসেল বললো কী করবো বল? বাসায় একটি জরুরী কাজ ছিলো। সেটি শেষ না করে আসতে পারলাম না।(চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আবার নতুন গল্প মানে নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হওয়া। প্রথম পাঠ পড়ে মজা পাইলাম। মন থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।পরবর্তী পাটের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই ধৈর্য ধরে গল্পটি পড়ার জন্য।
প্রথম পর্ব পড়েই কিশোর গ্যাং এর গন্ধ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে কুখ্যাত কোন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তির ইতিহাস শুনতে পাচ্ছি। অপেক্ষায় রইলাম দেখি ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয়।