একটি ভ্রমণের মর্মান্তিক পরিণতি (প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
জয়নাল খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি দোকানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। সে ঠিক করে রেখেছে আজকের দিন সে বাড়তি সময় দোকান খোলা রাখবে। যদি কিছু ব্যবসা বেশি হয়। তাহলে তার জন্য ভালো হবে। কারণ জয়নাল তার পরিবারকে কথা দিয়েছে তাদেরকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসবো।
এক ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে জয়নালের ছোট্ট সংসার। জয়নাল ছোটখাটো একটি দোকান করে। সেটাও রাস্তার পাশে হকার হিসেবে। তার এই স্বল্প আয়ে ঢাকা শহরে টিকে থাকাই মুশকিল। তারপরেও কোনো রকমে সে চালিয়ে নিচ্ছে। ঢাকা শহরে সবকিছুতেই খরচ অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি টাকা চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। তারপরেও জয়নাল রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে পরিবার নিয়ে একটু সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকার চেষ্টায়।
বেশ কিছুদিন থেকেই তার ছেলেমেয়ে দুজনই তার কাছে আবদার করছে সমুদ্র দেখার জন্য। তার মেয়েটি ক্লাস সেভেনে পড়ে আর ছেলেটি পরে ক্লাস ফাইভে। জয়নাল যখন ঢাকা শহরে আসে তখন সে একটি হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করতো। দীর্ঘদিন সে হোটেলে কাজ করেছে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেছে।
যদিও ব্যবসা বলতে তেমন আহামরি কিছু না।নিউমার্কেটের রাস্তার পাশে আরো অসংখ্য হকার এর সাথে সেও জামা কাপড় বিক্রি করে। এই জামা কাপড় আবার নির্দিষ্ট কোন কিছু না। যখন যে ধরনের জামা কাপড় কম টাকায় কিনতে পারে তখন সেটাই বিক্রি করে। কখনো গেঞ্জি কখনো প্যান্ট কখনো শার্ট। আবার শীত এর সময়ে শীতের কাপড় চোপড়। যখন যেটা সুবিধা হয় তখন সেটাই বিক্রি করে।
এভাবেই জয়নালের দিন কেটে যাচ্ছিল। এরপর সে বিয়ে করে। তারপর তাদের সংসারে আসে ফুটফুটে দুটি সন্তান। জয়নালের খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু সেই অনুযায়ী তার আয় বাড়ে না। কারন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হকারেরা এসে ব্যবসা শুরু করছে। ব্যবসায় প্রচুর প্রতিযোগিতা। তারা যে ধরনের কাপড় বিক্রি করে এখান থেকে খুব বেশি মুনাফা হয় না। তার পরেও কোনরকমে দিন চলে যাচ্ছিল। এভাবেই ঢাকা শহরে জয়নাল ১৫-১৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছে।
সন্তানরা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আর তাদের আবদার অনুরোধ ও বাড়ছে। এখন বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ ছুটিতে দাদাবাড়ি নানা বাড়িতে বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতো। এখন আর সে ব্যাপারটা সমাজে নেই। এখন অবস্থা সম্পন্ন লোকজন ছুটিতে দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে যায়। যদিও দরিদ্র নিম্নবিত্ত পরিবার গুলো এখনো এসব বিষয়ে চিন্তা করতে পারেনা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার জন্য।
কিন্তু ছেলেমেয়েরা তাদের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে শুনে তাদের ইচ্ছা জেগেছে সমুদ্র দেখার। জয়নালের নিজেরও ইচ্ছা ছিল পরিবার নিয়ে সমুদ্র দেখতে যাওয়ার। কিন্তু জয়নাল জানে কক্সবাজার খুবই খরুচে এলাকা। এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সে তার ছেলেমেয়েদেরকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যাতে তারা কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা আর না তোলে। কিন্তু ছেলে মেয়ে দুজন নাছোড়বান্দা। যেভাবেই হোক তারা সমুদ্র দেখতে যাবেই। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না দেখে জয়নালকে রাজি হতেই হলো।
জয়নাল জানে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে গেলে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। তাদের জমানো টাকা খুব বেশি নেই। অল্প কিছু টাকা আছে। সেই টাকায় জয়নালের হাত দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। কারণ কি বিপদ চলে আসে বলা যায় না। তাই সব সময় অল্প কিছু টাকা হাতে রাখতে হয়। আবার অনেক সময় এমন হয় যে হাতে নগদ টাকা থাকলে ব্যবসায় অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
মাঝে মাঝে অনেক কম দামে কাপড় কেনার সুযোগ পাওয়া যায় যদি হাতে টাকা থাকে। জয়নাল এভাবে বেশ কয়েকবার অনেক কম দামে কাপড়চোপড় কিনতে পেরেছিল। সেখান থেকে তার বেশ ভালো লাভ হয়েছিলো। ছেলেমেয়েদের আবদার নিয়ে জয়নাল বেশ কিছুদিন থেকেই চিন্তা করছিল। এর ভেতরে হঠাৎ করে একদিন রাতে তার কাছে ফোন আসে। তার এক বন্ধু জানায় একটি গার্মেন্টসের কাপড় চোপড় বিক্রি হবে খুবই অল্প দামে। কিন্তু এখন যারা টাকা দিতে পারবে মাল শুধু তারাই পাবে। খবর পাওয়ার সঙ্গে জয়নাল টাকা নিয়ে সেখানে রওনা দেয়। বেশ ভালো মানের কাপড় অত্যন্ত অল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে। জয়নাল আর দেরি না করে সাথে সাথে কাপড়গুলি কিনে নেয়।
কাপড় গুলো কিনে জয়নাল খুবই খুশি হয়। কারণ কাপড় গুলির মান খুবই ভালো। এগুলো অনেক ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। সে মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকে। এই কাপড় বিক্রি করে যে লাভ হবে সেই টাকা দিয়ে সে পরিবারকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসবে। রাতে তার স্ত্রীকে তার এই পরিকল্পনার কথা জানায়। তার স্ত্রী পরদিন তার সন্তানদেরকে বলে খুব শিগগিরই তারা সমুদ্র দেখতে পাবে। পরিবার সকলেই অত্যন্ত খুশি হয়। পরিবারের খুশী দেখে তার নিজেরও ভালো লাগে।(চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি
গল্প টা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। জয়নাল শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার যাইতে পারবে কিনা। সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। আপনি গল্প টা লেখা চালিয়ে যান।
বাহ ফটোগুলি খুব সুন্দর, অনেক সুন্দর দৃশ্য। দেখতে সত্যিই একটি খুব আকর্ষণীয় ব্লগ, ভাগ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ