রুহুল মিয়ার অপূর্ণ ইচ্ছা। ১০% সাইফক্স।
রুহুল মিয়া সকাল-সকাল রিক্সা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। রমজান মাস শুরু হয়েছে। এই গরমের সময়ে রোজা রাখা এমনিতেই কষ্টকর ব্যাপার। তার ভেতর রোজা রেখে রিকশা চালানো আরো কষ্টকর। তারপরেও করার কিছুই নেই। ৬ জনের পরিবারের আহার জোটানোর জন্য রুহুল মিয়ার যত কষ্টই হোক রিক্সা নিয়ে প্রতিদিনই বের হতে হয়।
রুহুল মিয়া একদম সকাল-সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালায়। তারপর বাড়ি চলে আসে। সন্ধ্যার পরে আবার রিকশা নিয়ে বের হয়। যেদিন ইনকাম কম হয় সেদিন সারাদিন রিক্সা চালায়। আর যদি দুপুরের ভেতর ভালো ইনকাম হয়ে যায়। তাহলে বাড়ি চলে আসে। যখন সে রিকশা চালায় তখন সে দেখে রাস্তার দু'পাশ দিয়ে বিভিন্ন রকম খাদ্যপণ্যের দোকান তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কত রংবে রঙের খাবার সেখানে। কিন্তু রুহুল মিয়াদের কপালে সেগুলি নেই। এত বড় পরিবারের ভাতের খরচ যোগাতেই খারাপ অবস্থা। সেখানে বিলাসিতার সুযোগ কই?
কিন্তু আজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ছোট ছেলেটা বলেছে বাবা একটা তরমুজ নিয়ে আইসো। রুহুল মিয়া হেসে ছেলেকে কথা দিয়েছে সে আজ একটা তরমুজ নিয়ে আসবে। এই জন্য সে আজ একটু সকাল সকাল বের হয়েছে। বাজারে ফলমূলের যে দাম। তাতে তার মত রিকশা ওয়ালার জন্য ফল কিনে খাওয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার। তারপরও যত কষ্টই হোক ছেলেটার জন্য আজকে সে যেভাবেই হোক একটি তরমুজ কিনবে।
সকাল সকাল রিকশা নিয়ে বের হলেও তার খুব একটা লাভ হয়নি। কারণ রোজার সময় এত সকালে সাধারণত কেউ বাড়ি থেকে বের হয়না। তারপরও সে আস্তে আস্তে রিক্সা চালাচ্ছিল মাঝে মাঝে দু একটা ভাড়াও পাচ্ছিলো। বেলা বাড়ছে আর রুহুল মিয়া দরদর করে ঘামছে। প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছে চার-পাশটা পুড়ে যাচ্ছে। এর ভেতরে ও রুহুল মিয়া তার রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে। দুপুর পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু রুহুল মিয়ার এখনো তরমুজ কেনার টাকা জোগাড় হয়নি। যে কটা টাকা তার ইনকাম হয়েছে সে টাকা চাল ডাল কিনতে খরচ হয়ে যাবে।
তরমুজ কিনতে হলে তাকে বাড়তি টাকা আয় করতে হবে। এজন্য সে ঠিক করেছে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা রিক্সা চালাবে। এভাবে সে অত্যন্ত কষ্ট হলেও রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলো। বিকালের দিকে রুহুল মিয়ার হাত-পা আর চলছিল না। সে রিক্সা থামিয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিচ্ছিলো। এর ভেতর এক লোক ডাক দিলো এই রিক্সা যাবে? অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুহুল মিয়া বললো যাবো স্যার। লোকটি রিকশায় উঠলে রুহুল মিয়া আস্তে আস্তে চালাতে লাগলো।
লোকটি রুহুল মিয়াকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার এত আস্তে চালাচ্ছ কেনো। রুহুল মিয়া বলল স্যার সেই সকাল বেলা থেকে টানা রিকশা চালাচ্ছি। রোজা থেকে সারাদিন রিক্সা চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাই এখন আর হাত পা চলছেনা লোকটি তখন বলল সারাদিন চালানোর দরকার কি? দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালাতে পারো। রুহুল মিয়া তখন তাকে বলল স্যার প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালায়। কিন্তু আজ আমার কিছু বাড়তি টাকার প্রয়োজন। সেজন্য সারাদিন ধরে রিকশা চালাচ্ছি। লোকটি কৌতূহলবশত তখন জিজ্ঞেস করল বাড়তি টাকা দিয়ে কি করবে? সে তখন জবাব দিল আমার ছোট ছেলেটা তরমুজ খেতে চেয়েছে। তার জন্য আজকে একটা বড় তরমুজ কিনব। এই জন্য যত কষ্টই হোক রিকশা চালিয়ে যাচ্ছি। এই কথা শুনে লোকটা আর কিছু বলল না।
লোকটা যখন রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলো। তখন রুহুল মিয়াকে বাড়তি ১০০ টাকা দিলো। টাকাটা দিয়ে বলল যাও একটা তরমুজ কিনে বাড়িতে চলে যাও। আজকে আর রিকশা চালাতে হবে না। খুশিতে রুহুল মিয়ার চোখে পানি চলে এলো। সে মন ভরে লোকটার জন্য দোয়া করলো। লোকটা হাসিমুখে বাড়িতে চলে গেলো। রুহুল মিয়া হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সে তাড়াতাড়ি রিকশার প্যাডেল মারতে লাগল ফলের দোকানের উদ্দেশ্যে। ফলের দোকানে পৌঁছে মোটামুটি ভালো সাইজের একটি তরমুজ সে কিনলো। এর আগেও সে কয়েকটি তরমুজ কিনেছে। কিন্তু সেগুলো ছিল খুবই ছোট। খেতেও একটুও ভাল ছিলনা। তাই আজ একটু বড় সাইজের তরমুজ কিনেছে সে। তরমুজ কেনার পর চোখে তার ছেলেটির হাসি মুখ ভেসে উঠলো।
রুহুল মিয়া তরমুজ রিক্সায় উঠিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আজ সে খুবই খুশি ছিলো। তাই সে জোরে জোরে রিক্সা চালাচ্ছিলো। হঠাৎ করে পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে তাকে রাস্তার উপর পিষে চলে গেলো। তরমুজটি ট্রাকের ধাক্কায় রিকশা থেকে পড়ে ফেটে চৌচির হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিলো। তারপাশেই পড়েছিল রুহুল মিয়ার নিথর দেহ। (সমাপ্ত)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
ভাইয়া গল্পটি প্রথম থেকে শেষ অব্দি পড়ে কিছুটা ভালো লাগছিল। যখন সমাপ্তিতে দেখলাম রাহুল মিয়া ট্রাকের নিচে পিশেয় গেল তখন হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। আসলেই আমাদের সমাজে এমন রাহুল মিয়া হাজারো ঘরে ঘরে বিদ্যমান। কত রুহুল মিয়ার স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে চুরে যাচ্ছে তার হিসেব নেই। স্বপ্ন ভাঙ্গার সাথে সাথেই রুহুল মিয়ার ছেলের ও তরমুজ খাওয়া হয়ে উঠে না। অনেক চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন ভাইয়া খুবই ভালো লাগলো। দোয়া করি সবার হৃদয় প্রশস্ত হোক রুহুল মিয়াদের জন্য।
ধন্যবাদ আপু আপনাকে আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। আসলে আমাদের চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। আমরা কটা ঘটনাই বা জানতে পারি।
গল্পটার শুরূ থেকে মধ্যাম পর্যন্ত পড়তে ভালো লাগলো এর মাঝে একজন মহৎ লোকের দান করা টাকার অংশটি পড়ে আর ভালো লাগলো।কিন্তু গল্পের শেষে রূহুল মিয়ার দুর্ঘটনা মৃত্যুবরণ টা গল্পের সৌন্দর্য হারিয়েছে।কিছু করার নেই নিয়তি এটাই লিখে রেখেছেন রূহুল মিয়ার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এত সুন্দর একটা গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।
আমাদের চারপাশে অহরহ এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে। সে ঘটনাই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ইশশ,শেষ লাইন গুলো পড়েই খারাপ লাগলো।মানতে কষ্ট হলেও এটাই তো বাস্তবতা,এমনটাই ঘটছে।
একদম ঠিক বলেছেন। মানতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তবতা।
গল্পের শুরুটা যখন পড়ছিলাম তখন কল্পনা করছিলাম শেষ টা হবে " তরমুজ পেয়ে রুহুল মিয়ার ছেলে খুব খুশি।" কিন্তু কিছু জিনিস আমাদের কল্পনাশক্তির উর্দ্ধে। বাস্তব খুব নিষ্ঠুর।
বাস্তবতা আসলেই খুব নিষ্ঠুর। খুব ভালো বলেছেন।
আপনার আজকের পোস্ট পড়ে কি লিখবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না ভাইয়া। আসলে খুবই কষ্ট লাগে যখন এই ধরনের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। কোথায় আমাদের জীবন আর কোথায় তাদের। আপনি অনেক সুন্দরভাবে গল্পটি ফুটিয়ে ফুলেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ।
সমাজের নিম্নবিত্তদের জীবনে এমন হাজারো গল্প রয়েছে। তার ভিতরে কটা গল্পই বা আমরা জানতে পারি?
রাহুল দেয়ার মতো অনেক পরিবারের কর্তা আছে যারা পরিবারের চাহিদা মেটাতে যে নিজের ভোগ বিলাসিতা কথা ভুলে যায়। অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।