অশুভ ছায়া (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


Polish_20230126_003243767.jpg

সাব্বিরের একবার মনে হচ্ছিল ঘুমিয়ে পড়ে। আবার মনে হচ্ছিল ঘুমালে আবার এই অদ্ভুত শব্দগুলি সে শুনতে পাবে। তাই সে বাকি রাতটা বসেই কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। বসে থাকতে থাকতে কখন তার ঝিমুনির মত এসেছে বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করে সে দরজার বাইরে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ শুনতে পেলো। আওয়াজটা এত স্পষ্ট মনে হচ্ছিল ঠিক দরজার ও পাশে দাঁড়িয়ে কোন বাচ্চা হাসছে। সাব্বির তার টর্চটা জেলে দ্রুত দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই সে দরজা খুলতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল বাইরে থেকে কেউ দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।

অনেকক্ষণ টানাটানি করার পর সাব্বির হাল ছেড়ে দিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়ল। যেই সাব্বির বিছানায় বসেছে অমনি দরজাটা পুরোপুরি খুলে গেলো। প্রচন্ড ভয়ে সাব্বির থরথর করে কাঁপছিল। সে খোলা দরজায় আলো ফেলে কাউকে দেখতে পেল না। কিন্তু মনে হল দরজার ঠিক ওপাশ থেকে কেউ প্রচন্ড রাগে গজরাচ্ছে। ভয়ানক একটা পাশবিক আওয়াজ সে শুনতে পাচ্ছিল। তার গায়ের লোমগুলো রীতিমতো দাঁড়িয়ে গেলো। সাব্বিরের ইচ্ছা করছিল দরজার বাইরে গিয়ে দেখে সেখানে কে আছে? কিন্তু তার অবচেতন মন তাকে বারবার সাবধান করে দিচ্ছিল সে দিকে না যাওয়ার জন্য। সাব্বির অনেক চেষ্টা কর করা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়াতে পারল না। মনে হল তার পা দুটো অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে সে নাড়াতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর সাব্বির সেই দরজায় একটি ছায়া দেখতে পায়। কিন্তু সেই ছায়াটি কি কোন মানুষের না কোন ভয়ঙ্কর অশুভকিছুর সেটা সে বুঝতে পারে না। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে আবার দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। বাকি রাতটা সাব্বিরের প্রচণ্ড ভয়ে কাটলো। সাব্বিরের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে দরজার ওপাশে কেউ ছিল। কিন্তু সে এই পৃথিবীর না। অন্য কোন অন্ধকার দুনিয়া থেকে তার আগমন।

বাকি রাতটা সাব্বির জেগে বসে রইল। সকালে যখন রিপন দরজা ধাক্কাচ্ছিল তারপর সাব্বির গিয়ে দরজা খুলল। কিন্তু সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে রিপন রীতিমতো আঁতকে উঠলো। সাব্বিরের চেহারা দেখে রিপন অবাক হয়ে গিয়েছে। এক রাতের ব্যবধানে একটা মানুষের চেহারা এতটা পরিবর্তন হয় কিভাবে সে সেটাই চিন্তা করছিল। এক রাতের ভেতরে সাব্বিরের মুখটা অনেক শুকনো দেখাচ্ছিল। চোখ দুটো সারারাত নির্ঘুম থাকার ফলে লাল টকটকে হয়ে রয়েছে। মাথার উস্কো খুশকো চুল সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছিল সাব্বির ভালো অবস্থায় নেই। রিপন সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করল স্যার আপনি ভালো আছেন তো? সাব্বির কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসে রইল।

তারপর রিপন সাব্বিরের রুমে গিয়ে অনেক কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু সাব্বির কোন কথারই উত্তর দিচ্ছিল না। ইতিমধ্যে সেখানে রোগীরা আসা শুরু করে দিয়েছে। রিপন সাব্বিরকে বারবার তাড়া দিচ্ছিল আর বলছিলো স্যার তৈরি হয়েনিন। রোগীরা সবাই এসে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু রিপনকে দেখে মনে হচ্ছে মনে হচ্ছিল তার কানে কোন কথায় ঢুকছে না। সে আনমনে যেন কি চিন্তা করছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর রিপন অপেক্ষারত রোগীদের গিয়ে বলল আজকে স্যারের শরীর ভালো না। আপনারা সবাই কালকে আসুন। তারপর সে দৌড়ে গিয়ে এলাকার চেয়ারম্যান কে খবর দিল। চেয়ারম্যান ঘন্টাখানিক পর সেখানে এসে সাব্বিরের চেহারা দেখে বুঝে গেল কি ঘটেছে। সাব্বির কে দেখে মনে হচ্ছিল সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। প্রচন্ড ভয় পাওয়ার কারণেই তার মাথা আর কাজ করছিল না।

চেয়ারম্যান রিপনকে বলল তাড়াতাড়ি এই লোকের বাড়ি খবর দেয়ার ব্যবস্থা কর। ডাক্তারের অবস্থা তো ভালো মনে হচ্ছে না। অতি দ্রুত ডাক্তারের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে এর অবস্থাও আগের সেই ডাক্তারের মত হবে। রিপন তখন চেয়ারম্যান সাহেবকে বলল আপনি দু একজন লোক এখানে আপাতত রাখেন। আমি ততক্ষণে গিয়ে শহর থেকে উনার বাড়ি ফোন দেয়ার ব্যবস্থা করছি। রিপন সাব্বিরের বাড়ি ফোন দিয়ে জানালো সাব্বির কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারা যেন এসে সাব্বিরকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। তারপর রিপন গ্রামে ফিরে সেদিন আর সাব্বিরকে সেই পুরনো বাড়িতে থাকতে দিল না। সাথে করে নিজের বাড়ি নিয়ে এলো।

পরদিন সকালে রিপন ঘুম থেকে উঠে দেখে সাব্বির বাড়িতে নেই। তারপর বেশ কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘোরাফেরা করে রিপন ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্সে যাই সাব্বিরকে খোঁজার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখে সাব্বির তার রুমে গিয়ে বসে আছে। সাব্বিরের অবস্থা দেখে রিপন এবার সত্যি সত্যি খুব ভয় পেয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত সে সাব্বিরকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এর ভিতরে সাব্বিরের পরিবারের লোকজন সেখানে চলে এসেছে। সাব্বিরের মা এবং বউ সাব্বিরের অবস্থা দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তারপর তারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাব্বিরকে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সাব্বির তার সাথে করে অশুভ ছায়ার স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফেরে। কিন্তু সে আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না।(শেষ)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গল্পের শেষটা খুবই ভয়ংকর ছিল। এরকম গল্প গুলো রাতের বেলা পড়লে তো এমনিতেই বেশি ভয় লাগবে কিন্তু আমি দিনের বেলায় পড়েছি। তবে সাব্বিরের এই অবস্থা হয়ে গেল দেখে খুব খারাপ লাগছে। তার জীবনের শেষ ভয় দিয়েই হলো।

 last year 

গল্প লিখতে গিয়ে এক সময় আমার নিজেরই ভয় লাগতে শুরু করেছিলো। হা হা হা

 last year 

আসলে ভাই এটা ঘটা টা স্বাভাবিক কারণ এই রকম গল্প লিখতে লিখতে একটা সময় মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভয় মনে ঢুকে যায়।

 2 years ago 

এযাবৎ রিপনের কারনে সাব্বির হয়তো এখনো বেচে আছে। রিপন না থাকলে সাব্বির বেচে থাকতো কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। সাব্বিরের জন্য অনেক খারাপ লেগেছে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

রিপন আসলেই সাব্বিরকে অনেক সহযোগিতা করেছে।

 2 years ago 

সাব্বিরের জীবনের ভয়ংকর পরিণতির কথা জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো। শেষপর্যন্ত সে রক্ষা পেলো না ভয়ংকর সেই অশুভ ছায়া থেকে। ভয়ংকর সেই অশুভ ছায়া তার পিছু ছাড়লো না। ভাইয়া আপনার লেখনী কিন্তু অসাধারণ ছিল। মনে হচ্ছিল যেন চোখের সামনে হরর মুভি দেখছি। সত্যি ভাইয়া এত দক্ষতার সাথে আপনি পুরো লেখাটি শেষ করেছেন যে লেখার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম।

 last year 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60209.30
ETH 2627.55
USDT 1.00
SBD 2.55