আঁধার শেষে আলোর দেখা। ১০% সাইফক্স।
বৃদ্ধ রইস মিয়া দুর্বল শরীরে রিক্সাটা নিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে যায়। গ্যারেজ মালিক আজকে ও তাকে রিকশা দিতে চাচ্ছিলো না। কারণ মাঝে মাঝে সে রিক্সার জমার টাকা ও পুরোপুরি দিতে পারেনা। তারপরে আজকে ও কোনো রকমে কাকুতি-মিনতি করে গ্যারেজ মালিকের কাছ থেকে রিক্সাটা নিয়েছে সে। কারন ঘরে কোন বাজার নেই। অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ কিনতে হবে। তার নিজের শরীরটা ও ভালো যাচ্ছে না।
যত কষ্টই হোক তারপরও তাকে আজকে চাল ডাল নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। না হলে তাকে এবং তার অসুস্থ স্ত্রীকে না খেয়ে থাকতে হবে। রিক্সায় প্যাডেল মারতে মারতে রইস মিয়া চিন্তা করতে থাকে এই জীবনে কি ভুল করেছি? সে এক সময় কত স্বপ্ন দেখেছিলো যে ছেলেগুলো বড় হলে তার আর কোন কষ্ট থাকবে না। শেষ বয়েসটা মোটামুটি ভালোভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবে।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে দুই ছেলেই তাদের সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে। বাবা মার জন্য তাদের কোন সময় নেই। তাদের দিকে ফিরে তাকানোর সময় ও তার সন্তানদের নেই। অথচ নিজেরা খেয়ে না খেয়ে ছেলেদুটোকে তারা বড় করেছে। তাদের জন্য কত কষ্ট করেছে। আর আজ দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দিন কাটছে। কিন্তু তার ছেলেরা কখনো একটু খোঁজও নেয় না।
এসব চিন্তা করতে থাকে আর রইস মিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। এত কষ্ট করে রইস মিয়া রিকশা চালায় কিন্তু তাতে তারা আয় হয় খুবই সামান্য। কারণ বেশিরভাগ লোকই বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার রিক্সায় উঠতে চায় না। তারপর আবার সে যে রিকশা চালায় সেটি এখনকার নতুন রিক্সার মত ইঞ্জিনের রিক্সা নয়। এই রিক্সা পুরাতন সেই প্যাডেল দিয়ে চালানো রিক্সা। এইসব রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়। এজন্য অনেকে এই সমস্ত পুরনো আমলের রিক্সায় উঠতে চায় না। বয়সের ভারে শরীরটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় আগের মত আর জোরে রিকশা চালাতে পারেনা রইস মিয়া। যার ফলে অনেক প্যাসেঞ্জারের কাছে তাকে গালমন্দ শুনতে হয়।
এভাবেই ধীরে ধীরে রিক্সা নিয়ে সে যাচ্ছিলো। হঠাৎ এক যুবক ডাক দিলো তাকে চাচা যাবেন? রইস মিয়া একটু আগ্রহ নিয়ে যুবকের মুখের দিকে তাকায়। আজকাল বেশিরভাগ লোকই রিক্সাওয়ালার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। ছেলেটির মুখে চাচা ডাক শুনে তার ভালই লাগে। রইস মিয়া রিকশা থামিয়ে ছেলেটিকে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ে। যুবকটি দ্রুত রিক্সায় উঠে বসে। তারপর বলে চাচা চলেন। সে চেষ্টা করে কিছুটা দ্রুত রিকশা চালাতে। যদি তার আস্তে চালানো দেখে আবার প্যাসেঞ্জারের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সে জন্য।
ছেলেটি তাকে বলে চাচা এতো কষ্ট করার দরকার নেই আপনি ধীরেসুস্থে চালান। রইস মিয়া এবারও কিছুটা অবাক হয়। আজকাল এই ধরনের মানুষ খুব একটা দেখা যায় না। সবাই ব্যস্ত। কারো অন্য কারো জন্য কোন সময় তাদের নেই। রিকশা চালাতে চালাতে যুবক তাকে জিজ্ঞেস করে চাচা আপনার ছেলে মেয়ে নাই? এই বয়সে রিকশা চালাচ্ছে যে? রইস মিয়া উত্তর দেয় ছেলেপেলে আছে গো বাবা। কিন্তু তারা আলাদা থাকে। বুড়া বাপ মার জন্য তাদের কোন সময় নাই। উত্তর শুনে ছেলেটির কাছে খুব খারাপ লাগে। সামনে একটি চায়ের দোকান দেখে ছেলেটি রইস মিয়াকে বলে চাচা চায়ের দোকানে একটু থামবেন? দুজন মিলে চা খাই। তারপর আবার যাওয়া যাবে।
রইস মিয়ার বিস্ময় বাড়তে থাকে। চায়ের দোকানে থামার পর ছেলেটি রইস মিয়াকেও তার সাথে আসতে বলে। তারপর যুবকটি তাদের দুজনের জন্য চায়ের অর্ডার দেয়। রইস মিয়ার দীর্ঘ জীবনে এমন ঘটনা কোনদিন ঘটেনি। তারপর যুবকটি তাকে জিজ্ঞেস করে তার জীবনের গল্প। রইস মিয়া তখন তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কথাগুলো শুনে ছেলেটির খুব খারাপ লাগে। হয়তো তার চোখে দু-এক ফোঁটা পানি ও চলে আসে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
তারপর ছেলেটি রইস মিয়াকে বলে চাচা চলেন আপনার বাড়ি যাই। যাওয়ার পথে ছেলেটি একটি মুদি দোকান থেকে বেশকিছু বাজার করে। তারপর রইস মিয়ার বাড়ি পৌঁছালে ছেলেটি ৫০০ টাকার একটি নোট তাকে ধরিয়ে দেয় আর সাথে দিয়ে দেয় বাজারের ব্যাগটি। সাথে ছেলেটি বলে কাল থেকে আপনাকে আর রিকশা চালাতে হবে না। আমি আপনাকে একটি ছোট্ট দোকান করে দেবো। আপনি বসে বসে টুকটাক করে দোকানদারি করবেন। এই বয়সে আপনাকে আর এত কষ্ট করতে হবেনা। ছেলেটি তাকে জানায় তাদের একটি সংগঠন আছে। সেই সংগঠন থেকে দরিদ্র লোকজনকে সহযোগিতা করা হয়। রইস মিয়াকেও তাদের সংগঠন থেকে সহযোগিতা করা হবে।
কৃতজ্ঞতায় রইস মিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। ছেলেটি যাওয়ার সময় বলে আমি দুই-একদিনের ভিতরে আবার আসছি। খুব তাড়াতাড়ি আপনার দোকানের ব্যবস্থা করে দেবো আপনি একদম চিন্তা করবেন না। এই কথা বলে ছেলেটি সেখান থেকে চলে যায়। রইস মিয়া অপলক নেত্রে ছেলেটির চলে যাওয়া দেখতে থাকে। তার কাছে পুরোটাই স্বপ্ন মনে হয়। কিন্তু হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে সে বুঝতে পারে আসলে স্বপ্ন নয় বাস্তব। (সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সত্যিই যখনই লাইনটুকু পড়ছিলাম খুব খুব খুবই খুশি লাগছিল। আনন্দ চোখে পানি চলে আসছে। সত্যি ভাইয়া এমন লোক এখন পৃথিবীতে কমই পাওয়া যায়।ভাই আপনি খুব সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার আজকের গল্পটি সত্যিই অসাধারণ ছিল। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই ধরনের লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে কম হলেও এখনো কিছু আছে। তাদের জন্যই আমরা এখনো আশায় বুক বাঁধতে পারি।
ভাইয়া আপনার এই গল্প গুলো আমার অনেক ভালো লাগে, পড়ে অনেক শান্তি পায়। আর আমাদের এই জীবনের চলার পথের অনেক কিছু শিখতে পারি।
আসলে কষ্ট লাগে এই ধরনের মানুষ গুলোকে দেখে,
তবে সব শেষে বলবো এই ভালো মানুষ গুলোকে বাচিয়ে রাখুক। কারন দিন শেষে তারাই দাঁড়াবে সকলের পাশে।
এমন কিছু মানুষই আসলে আমাদেরকে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতে শেখায়। এদের জন্যই সমাজটা এখনো সুন্দর মনে হয়।
কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা, এরকম হৃদয়বান ব্যক্তি এখনও আমাদের সমাজে আছে। কিন্তু রইচ মিয়ার পুত্রের মত পাষাণ হৃদয়ের কুষণ্ড পুত্র আমাদের সমাজে এখন অনেক বেশি দেখা যায়। মাঝেমধ্যে মনে হয় এরাই পৃথিবীতে এসে পৃথিবীর পরিবেশ টাকে নোংরা করে তুলেছে। যাইহোক এটা কি বাস্তব নাকি গল্প? সে যাই হোক হৃদয় নাড়া দিয়ে গেছে এটাই অনেক।🖤🖤
এই রকম এক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার সঙ্গে গতকালকেই আমার কথা হয়েছে। আসলে এখন ধনী-দরিদ্র সকলের ভেতরেই মনুষ্যত্বের অভাব লক্ষ্য করা যায়।
আসলেই ভাই😑
এখনো কিছু ভালো মানুষ রয়েছে যাদের জন্য পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে।কথায় আছে-"আপনের থেকে পর ভালো"।নিজের ছেলেমেয়েরা না দেখলে ও ঈশ্বরের দূত হিসেবে হয়তো ছেলেটি এসেছিলেন বৃদ্ধ রইস মিয়ার কাছে।অনুপ্রেরণামূলক গল্প পড়ে ভালো লাগলো ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।
এই সমস্ত বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তায় দেখলে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু কিছুই করার নেই।
ভাইয়া কি বলবো এটা গল্প নয় বাস্তব হচ্ছে। আমাদের এলাকায় একজন মুরুব্বি আছে ৫০+বয়স তার পরেও রিকশা চালায় ছেলেকে পড়া লেখা করিয়েছে কিন্তু ছেলে জুয়ার সাথে জড়িত তাই এই বুড়ো লকটির সংসার চালাতে হয় আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল আমি তাকে অনেক কষ্টে ৬০০টাকা দিয়ে থাকি তার ছেলের নাম আলামিন আগে ছেলেটার ফার্মিসি ছিল ওষুধ এর জুয়ায় সব শেষ করে দিয়েছে। এই সব কথা শুনলে আর চোখে পানি রাখা যায় না। সত্যি ভাইয়া আপনি আমাদের মাঝে বাস্তব কিছু তুলে ধরেছেন।
এমন সব গল্প আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমরা ক'জনইবা সেসব গল্পের খবর রাখি?
আমাদের সমাজে এরকম হাজারো রইস মিয়া রয়েছে । যারা তাদের জীবনের সবকিছু দিয়ে তাদের সন্তানদের মানুষ করে। কিন্তু তারা অবশেষে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে আলাদা সংসার করে। তাদের বুকচাপা এ দুঃখ দেখার জন্য কেউ নেই।