দুর্ধর্ষ গেরিলাদের দুঃসাহসিক অভিযান (শেষ পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
পূর্ববর্তী পর্বের-লিংক
শমসের এলএমজি বাহি চারজন গেরিলাকে বলল তোমরা আমার সাথে সামনে এসে কাভার ফায়ার দিতে থাকো। শমসের সাথে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে তাদের সাথে গুলি করেছিলো। আর আমজাদকে বলল বাদবাকি গেরিলা যোদ্ধাদেরকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে। কারণ সেখান থেকে সবার পক্ষে বেঁচে ফেরা সম্ভব না।
আমজাদ কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। আমজাদ শমসেরকে বলছিল শমসের ভাই আপনি চলে যান আমি এখানে থাকি। কিন্তু শমসের আমজাদ কে ধমক দিয়ে বললো বেশী কথা বলো না। এখন কথা বাড়ানো সময় নেই। তাড়াতাড়ি সবাইকে নিয়ে সরে যাও। না হলে সবাইকে মরতে হবে। এর ভেতরে অস্ত্রাগার গুলো বিপুল শব্দে বিস্ফোরিত হলো। আশেপাশের পুরো এলাকার কেঁপে উঠলো।
শমসের হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তার মনে এখন এক ধরণের অদ্ভুত শান্তি কাজ করছে। যে মিশন নিয়ে সে এসেছিল সেটা তো সাকসেস করতে পেরেছে। এখন তার জীবন গেলেও কিছু যায় আসে না। এদিকে আমজাদ বাকি গেরিলা যোদ্ধাদের নিয়ে পিছু হটছে। আর শমসের আর তার সাথে থাকা চারজন গেরিলাযোদ্ধা এলএমজি দিয়ে পাকবাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছে।
তাদের পাঁচজনের কারণে পাকবাহিনী আগাতে পারছেনা। এর ভেতরের শমসের খেয়াল করে দেখে ৫/৬ জনের একটি পাকিস্তানি আর্মির দল তাদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। শমসের তার কাছে থাকা একটি গ্রেনেড সে দিকে ছুড়ে মারল। সেই গ্রেনেডের আঘাতে পাকিস্তানি আর্মিরা সবাই ধরাশায়ী হলো।
এর ভেতরে শমসের তার সাথে থাকা চারজন যোদ্ধার ভিতরে দুজন কে বলল তোমরা দুজন দুটো এলএমজি নিয়ে এখন পিছনে চলে যাও। কিন্তু তারা শমসেরকে ছেড়ে সেখান থেকে যেতে মোটেই রাজি ছিল না। শমসের তাদেরকে জোর করে সেখান থেকে পাঠালো। তাদেরকে বলল আমাদের এমনিতেই অস্ত্র সংকট। তারপর এতোগুলো এলএমজি একসাথে পাকবাহিনীর কাছে ধরা পড়লে পরবর্তীতে আমাদের কাছে আর কোন ভারী অস্ত্র থাকবে না। তাই অন্তত দুটি এলএমজি বাঁচাতে পারলেও পরবর্তীতে কোন মিশনে কাজে লাগবে। তোমরা দ্রুত এখান থেকে চলে যাও।
সেই গেরিলাযোদ্ধা দুজন অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেখান থেকে চলে গেলো। এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যরা ক্রমে কাছে চলে আসছে। শমসেরদের গুলি প্রায় ফুরিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর শমসের বাকি দুজন যোদ্ধা কে বলল একটি এলএমজি আমার কাছে দিয়ে তোমরা দুজনও চলে যাও। তারা কিছুতেই শমসেরের কথা শুনছিল না। শেষ পর্যন্ত শমসের তাদেরকে জোর করে সেখান থেকে পাঠিয়ে দিলো।
একটি এলএমজি নিয়ে নিজে কাভার ফায়ার দিতে থাকলো। যখন দেখলো তার সাথে থাকা সমস্ত গেরিলা যোদ্ধারা চলে গিয়েছে। তখন শমসের গুলি করা বন্ধ করলো। পাকিস্তানি যোদ্ধারা মনে করলো সবাই মারা গিয়েছে। এই মনে করে সবাই শমসেরের অবস্থানের দিকে আগাতে থাকলো।
যখন পাকিস্তানি সৈনিকরা একেবারে কাছে চলে এলো। তখন শমসেরের এলএমজি আবার গর্জে উঠলো। একসাথে বেশ কিছু পাকিস্তানি সৈন্য ধরাশায়ী হল। পাকিস্তানি সৈন্যদের পাল্টা গুলিতে দুর্ধর্ষ গেরিলা কমান্ডার শমসের শহীদ হোলো। এভাবেই শেষ হলো অসমসাহসী গেরিলাদের দুর্ধর্ষ কয়েকটি অভিযান। এমন নাম না জানা অসংখ্য শমসেরের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই লাল সবুজের পতাকা। তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি এই গল্পটি। (সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাই আপনার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা, খুব ভালো লেগেছে আমার। আপনি খুব সুন্দর গোছালোভাবে গেরিলাযুদ্ধের বর্ণনা করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এরকম একটি গল্প আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। সেইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
সত্যি আমি এই গল্প পড়ার পর কিভাবে ভাষাই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা প্রকাশ করবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। এতো কিছুর পর এতো প্রানের বিনিময়ে জয় করেছেন আমাদের লাল সবুজের পতাকা। স্যালুট জানায় তাদের।
ধন্যবাদ ভাইয়া এতো সুন্দর ভাষায় গল্পটি শেষ করার জন্য।