ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত জীবন ( পঞ্চম পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কলেজ এরিয়ার বাইরে গিয়ে সেই ছেলেগুলো জিজ্ঞেস করলো সোহেলকে। তোমাকে যারা মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে বদলা নিতে চাও ? সোহেল তখন বলল তারা তো অনেক পাওয়ারফুল মানুষ। আমি একা কিভাবে তাদের উপর প্রতিশোধ নেবো। তখন তারা বলল তুমি আমাদের সাথে হাত মিলালে আর একা নও। আমাদেরও অনেক লোক আছে। কিছুদিন আগে এই হোস্টেল গুলো আমরাই চালাতাম। কিন্তু ওরা সুযোগ বুঝে হোস্টেল আমাদের কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে।

Polish_20220916_000218325.jpg

আমরা আবার চেষ্টা করে যাচ্ছি ওদের কাছ থেকে হোস্টেলের দখল কেড়ে নিতে। ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো। সোহেল তখন বললো আপনাদের সাথে যোগ দিতে পারি। যদি আপনারা ওয়াদা করেন যে আপনাদের কাজ শেষ হওয়ার পর আমাকে আর কখনো কোন রাজনৈতিক প্রগ্রামে ডাকবেন না বা ঝামেলা করতেও ডাকবেন না। ছেলেগুলো বলল আমরা রাজি তোমার প্রস্তাবে। কিন্তু প্রথমে তোমাকে এই হোস্টেল থেকে আমাদের হোস্টেলে গিয়ে উঠতে হবে। কারণ এই হোস্টেলে থেকে তুমি আমাদের সাথে কাজ করতে পারবে না। ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।

সোহেল বলল সেটা আমি বুঝতে পারছি। আজ রাতেই আমি তোমাদের হোস্টেলে শিফট হয়ে যাবো। রাতের বেলায় সোহেল চুপিচুপি নর্থ হোস্টেলে গিয়ে উঠলো। নতুন হোস্টেলে উঠে সোহেল সেই ছেলেগুলোর সাথে মিটিংয়ে বসলো কিভাবে কি করা যায়? তার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিলো। মিটিংয়ে সোহেল প্রস্তাব করলো প্রথমে এমন কিছু কাজ করতে হবে যাতে কলেজের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সোহেলদেরকেও ভয় পেতে শুরু করে। সবাইকে বোঝাতে হবে এই কলেজে এখন দুটো শক্তিশালী গ্রুপ আছে। তারপর আস্তে আস্তে সব কিছুর উপরে প্রভাব বিস্তার করতে হবে।

পরিকল্পনা হলো পরদিন সকালে সোহেলকে যারা মেরেছে তাদের একজনকে মারা হবে। পরদিন সকাল থেকে কলেজের লোকজন এক নতুন সোহেলকে দেখতে পেল। যেই সোহেল এতদিন চুপি চুপি মাথা নিচু করে কলেজে আসা যাওয়া করতো। পরদিন সে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল সাথে প্রায় ৩০-৪০ জন ছেলে নিয়ে। ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রথমে যেই ছেলেটা সোহেলকে চড় মেরেছিল তাকে খুঁজে বের করে চরম মারধোর করল। মারামারি করার সময় সোহেলের বুনো চেহারা দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। সবাই চিন্তা করতে লাগলো এই ছেলেটা এতদিন কি নিরীহ ছিল। হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন কিভাবে হলো?

আর এই মারামারির কারণে সোহেলের জীবনের গতিপথ পাল্টে গেলো। যে সোহেল কয়েকদিন আগেও খুব সাধারণ একটা জীবনের স্বপ্ন দেখত একটি ঘটনা তার জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। যে সোহেল এতদিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করত না। এখন সে কারণে-অকারণে মানুষজনকে মারতে থাকলো। আশেপাশের দোকান থেকে অল্প কিছুদিনের ভিতরে চাঁদা তোলা শুরু করলো। ধীরে ধীরে ছাত্র রাজনীতির নোংরা থাবায় সোহেল অন্ধকারের পথে তলিয়ে যেতে থাকলো। কিছুদিনের ভিতরেই সোহেল কলেজের ত্রাস হিসাবে গণ্য হতে লাগলো।

এদিকে সোহেলকে যারা মারধর করেছিল তারা সোহেলের এমন পরিবর্তনে বেশ ভয় পেয়ে গেল। এখন আর সোহেল কখনো একা চলাফেরা করে না। সব সময় সাথে ১০-১৫ জন ছেলেপেলে থাকে। ত্দের সাথে অস্ত্রও থাকে। এদিকে যারা সোহেলকে তাদের দলে টেনে নিয়েছিল সোহেলের চৌকস এবং আগ্রাসী নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করল। আস্তে আস্তে সোহেল সেই গ্রুপের নেতা হয়ে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যে সোহেলের সাথে ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তাদের বিভিন্ন অপকর্মে সোহেল সহযোগিতা করতো। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গত পর্বে ভেবেছিলাম সোহেল হয়তো কোন বড় ধরনের প্রতিশোধ নেবে কিন্তু এই প্রতিশোধ নিতে গিয়েছে সে ছাত্র রাজনীতির কড়াল গ্রাসে আটকা পড়বে সেটা ভাবি নাই। আসলে পারিপার্শ্বিক চাপের প্রভাবে সোহেল নিজেকেই বদলে ফেলেছে।

 2 years ago 

বর্তমান রাজনীতির প্রভাবে একজন সহজ সরল ছাত্র যেভাবে ছাত্র জীবন হারিয়ে ফেলে অন্ধকার জীবনে চলে যাচ্ছে তারই বাস্তবতা আপনার এই গল্পের মধ্যে দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে। একসময়ের সহজ সরল ছাত্র সোহেল এখন হয়ে গেছে অন্যতম সেরা মাস্তান। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত সোহেলের ভাগ্য কোথায় গিয়ে ঠেকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62555.95
ETH 2435.55
USDT 1.00
SBD 2.64