বিদ্যুৎ নিয়ে বিভ্রাট।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আশা করি পোষ্টের টাইটেল দেখেই আপনারা বুঝতে পেরেছেন আজ আমি কি নিয়ে কথা বলতে চলেছি। এমন একটি বিষয় নিয়ে আজ কথা বলতে চলেছি যে বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সকলের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জি হ্যাঁ বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলতে চলেছি আজ। এ ব্যাপারে আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই। তবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে যেটা আমি দেখছি এবং যেটা আমি বুঝতে পারছি সেটাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

IMG_20221008_181945.jpg

গত কয়েক মাস আগে যখন বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য অনেকটা বেড়ে গেলো। তখন হঠাৎ করে বাংলাদেশের মানুষ একটি ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হল। বাজারের প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেল। সাথে শুরু হলো অসহনীয় লোডশেডিং। অথচ তার অল্প কিছুদিন আগেই সরকার ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল দেশ এখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য স্পর্শ করতে পেরেছে। তখন আর পাঁচ জন বাঙালির মত আমিও অনেক খুশি হয়েছিলাম। তাদের এই ঘোষণা বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এই ভুল ধারণা ভাঙতে খুব বেশি সময় লাগে নি। অল্প কিছুদিনের ভিতরেই দেখলাম পুরো দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেল।

এমনিতেও যে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল ব্যাপারটা তেমন নয়। কারণ শহর অঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ। সেখানে শুধু নামে মাত্র বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু সেই বিদ্যুতের সুফল থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত। কারণ দিনের বেশিরভাগ সময় সেখানে বিদ্যুৎ থাকে না। বর্তমানে আবার ওপেক কর্তৃক জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং সাথে সাথেই বাংলাদেশেও লোডশেডিং এর মাত্রাও বেড়ে গিয়েছে। দেশে বিশেষজ্ঞের অভাব নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টারা এক একজন বিশাল জ্ঞানী ব্যক্তি। কিন্তু আমার মত অতি সাধারণ একজন মানুষ যে চিন্তা করেন সেই চিন্তাটা তারা কেন করতে পারেন না। এই কথাটাই আমি গত কয়েকদিন যাবত চিন্তা করছি।

আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশে কোন তেলের কুপ নেই। তেল পুরোটাই আমদানি করে আমরা আমাদের চাহিদা মিটাই। যেহেতু আমাদের বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণভাবেই জ্বালানি নির্ভর। তাই আমাদের অনেক আগে থেকেই এই বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত ছিল। যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়বে বা তেলের যোগান কমে যাবে তখন আমাদের বিদ্যুৎ আসবে কোথা থেকে? সারা বিশ্বব্যাপী যারা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান অনেক আগেই করেছেন। তাদের দিকে তাকালে আমরা পরিষ্কার দেখতে পাই। তারা ইতিমধ্যেই তাদের বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা অনেকটাই করে রেখেছে এবং সেটা করার জন্য তারা কিছুটা নির্ভর করেছে সোলার প্ল্যান্টের উপরে।

গত ৮ বছর যাবত সরকার কুইক রেন্টাল নামক কিছু হাতি পুষে আসছে। যারা নাকি আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে সহযোগিতা করছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল এগুলো আসলে শুধুই মানুষকে দেখানোর জন্য। এইসব কুইক রেন্টালের পেছনে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। যে টাকাগুলোর যোগান দিয়েছে দেশের জনগণ। কিন্তু তাতে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। অথচ এই টাকাটা যদি সোলার খাতে ভর্তুকি দেয়া হতো তাহলে আজকে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এতটা নাজুক অবস্থা কিছুতেই হতো না।

সরকার যদি প্রতিটি বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার সোলার প্লান্টের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করে দিতো তাহলে আজকে আমাদের লাইট, ফ্যান, টেলিভিশন এগুলো জ্বালানোর জন্য আর অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। আমার মত একজন সাধারন মানুষ যেটা বুঝতে পারছে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা কেন সেটা বুঝতে পারছে না। এটাই আমি বুঝতে পারছি না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের যে পরিস্থিতি তাতে আমাদের নিজেদের অবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় চলে এসেছে। এখনই যদি আমরা এই সমস্যার সমাধানে মনোযোগ না দেই। তাহলে খুব শীঘ্রই হয়তো আমরা গভীর সমস্যায় পড়বো।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমাদেরকে জানানো হয় দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতাধীন হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতিটা মানুষই জানে এটা কত বড় মিথ্যা। কাগজে-কলমে কিছু দেখালেই যে সেটা বাস্তবে বাস্তবায়িত হবে এমনটা চিন্তা করার কিছু নেই। দেশের শহরাঞ্চল বাদে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে শুধু নামে মাত্র। অথচ নিরচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়া বিশ্বের কোন দেশেই উন্নতি করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি করার থেকে আমাদের দেশের কর্তা ব্যক্তিরা এইখান থেকে লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। যার পরিণতি আজকের এই অবস্থা। এই দেশের বিদ্যুৎ খাত থেকে লুটপাট করে দেশের একটি বড় প্রতিষ্ঠান আজকে সিঙ্গাপুরে বিরাট বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। খোঁজ নিলে এমন আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে।

যাইহোক যেটা হয়ে গিয়েছে সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামিয়ে লাভ নাই। তবে পরবর্তীতে যেন এই ধরনের কিছু আর না হতে পারে সেদিকে দেশের প্রত্যেকটা মানুষকে সচেতন হতে হবে। নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করে নিতে হবে। কারণ এই যে সীমাহীন লুটপাট দুর্নীতি হচ্ছে এই টাকা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে। আমরা যদি মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করতে থাকি তাহলে আমাদের অবস্থাও খুব দ্রুত শ্রীলংকার মত হবে। তাই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার এই সমস্যার সমাধানে দেশের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। সাথে নিজেদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানবনশ্রী

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাতি ব্যবহার করা হয় নতুন শুনলাম।বিদ্যুৎ সমস্যা খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা।আর কিছু মানুষের অপকর্ম ও দুর্নীতির জন্য বিদ্যুতের ঘাটতি আরো বেড়ে চলেছে।প্রত্যেকটি মানুষ এই বিষয়ে সচেতন হলে কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব, ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আমাদেরকে যতটা আশার আলো দেখানো হয় ততটা আশার আলো আমরা আসলে দেখতে পায় না। বর্তমানে পুরো দেশ লোডশেডিং এর আওতায়। অধিক পরিমাণ দুর্নীতি এবং অপকর্মের কারণেই বর্তমানে আমাদের দেশের লোডশেডিং এর এই অবস্থা। আগামী বছর আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে যেটাকে মোকাবেলা করতে হয়তো আমরা হিমশিম খেয়ে যাব। সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.034
BTC 64333.84
ETH 2760.35
USDT 1.00
SBD 2.65