একজন রিক্সাওয়ালা ও একজন মানবিক মানুষ।
বড় রাস্তায় এসে সেলিম রিক্সার জন্য এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। ভাদ্র মাসের গরমে সে ইতিমধ্যে ঘেমে নেয়ে উঠেছে সে। দুপুরের এই প্রচন্ড গরমে রাস্তাঘাটে রিক্সার সংখ্যাও দেখা যাচ্ছে খুব কম। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেলিম একটি রিক্সা দেখতে পেলো। সে রিক্সাটি দেখতে পেয়েই সেলিম ডাক দিল এই রিক্সা যাবে? রিক্সাওয়ালা কাছে এসে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবেন? তারপর সেলিম গন্তব্য বলে দরদাম করে রিকশায় উঠে বসলো।
কিন্তু কিছুদূর আগানোর পর সেলিমের মনে একটু সন্দেহের উদ্রেগ হলো। কারণ রিক্সাওয়ালা একটু পর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে। সেলিম তাকে জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা আপনার। রিক্সাওয়ালা বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল আপনার কি সমস্যা? রিক্সাওয়ালার কথা শুনে সেলিমের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। প্রথমে সেলিমের মনে হল রিক্সাওয়ালা সম্ভবত নেশা টেশা করে। এই ধরনের নেশাখোরদের সাথে কথাবার্তা বাড়ানো ঠিক হবে না মনে করে সেলিম চুপ করে রইল।
কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর আবার রিক্সাওয়ালা অদৃশ্য কারো সাথে ঝগড়া করতে লাগলো। ব্যাপারটি দেখে সেলিমের মনে ভয় ধরে গেলো। ব্যস্ত রাস্তায় রিক্সাটি চলছিল। আশেপাশ দিয়ে প্রচুর বড় বড় গাড়ি যাতায়াত করছে। এই ধরনের একজন রিকশাচালকের হাতে তার নিজের জীবনটা মোটেও নিরাপদ না। কারণ এই ধরনের মানুষ যে কোন সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। সেলিম কয়েকবার চিন্তা করলো রিক্সা থেকে নেমে যায়। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণে সেলিম নামতে পারছিলো না। তার একবার মনে হচ্ছিল রিকশা থেকে নেমে যায় আবার পরক্ষণে মনে হচ্ছিল এই রিকশাতেই বাসায় চলে যায়। কারণ রিকশাওয়ালা যাই করুক রিক্সা মোটামুটি ঠিকঠাকভাবে চালাচ্ছে।
একটু পরপর রিক্সাওয়ালা মাঝে মাঝেই অদৃশ্য কারো সাথে ঝগড়া করছিল। আশেপাশের অনেকেই দৃশ্যটা দেখে মুচকি হাসছিলো। শেষ পর্যন্ত এভাবে চলতে চলতে সেলিম তার বাসায় পৌঁছে গেলো। রিকশা থেকে নেমে সেলিম রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা বলুন তো আপনার সমস্যাটা কি? রিক্সাওয়ালা বলে কোন সমস্যা নাই স্যার। তখন সেলিম তাকে জিজ্ঞেস করল তাহলে আপনি কার সাথে এতক্ষণ ঝগড়া করছিলেন? কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের তো এমন করার কথা না।
তখন রিক্সাওয়ালা বলল স্যার মাঝে মাঝে আমার মাথাটা একটু গড়বড় হয়ে যায়। তখন এমন করি। সলিম তখন তাকে জিজ্ঞেস করল কি কারণে এমন হয়? রিক্সাওয়ালা তখন বলল অনেকদিন আগে একবার অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলাম। এক্সিডেন্ট করে অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তারপর থেকেই মাথায় সমস্যা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমাকে কেউ রিক্সা দিতে চাইতো না চালানোর জন্য। সবাই মনে করত আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। যার ফলে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে সংসার চালাতে। বেশিরভাগ সময় পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতাম।
শেষ পর্যন্ত একজন ভালো গ্যারেজ মালিক কে পেয়েছি। যে তার রিক্সাটা আমাকে দিয়েছে চালানোর জন্য। কিন্তু আমার এই সমস্যার জন্য যেসব প্যাসেঞ্জার আমাকে চেনে তারা কখনো আমার রিকশায় ওঠেনা। যার ফলে আমি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াই ভাড়া মারার জন্য। সেলিম তখন তাকে জিজ্ঞেস করল তোমার মাথায় এই সমস্যার চিকিৎসা করোনি? রিক্সাওয়ালা তখন উত্তর দিল ভাত খাওয়ার টাকায় জোগাড় করতে পারি না। সেখান থেকে আবার চিকিৎসার টাকা পাব কোথায়?
সেলিম তখন তাকে বলল তুমি কাল সকালে আমার বাসায় আসবে। আমি তোমার রিক্সা করে অফিসে যাব। তারপর সেলিম রিক্সাওয়ালাকে ৫০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা ভাড়া দিলো। টাকাটা পেয়ে রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে সেলিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেলিম বাসায় ফিরে ওর এক ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে কালকে তোমার কাছে একজন রোগী নিয়ে আসবো। সে অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। তুমি যতটুকু পারো তার সাহায্য করার চেষ্টা কোরো। সেলিমের বন্ধু তাকে বললো কোন সমস্যা নেই তুমি রোগীকে নিয়ে আমার কাছে চলে আসো। আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব তা আমি করব।
পরদিন সকালবেলায় রিক্সাওয়ালা যথারীতি সেলিমের বাড়ির সামনে হাজির হয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনে রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে স্যার কোন সমস্যা হয়েছে আপনার? কেউ কি অসুস্থ? সেলিম তাকে বলে সেখানে গেলেই বুঝতে পারবে। অতঃপর সেলিম হাসপাতালে পৌঁছে রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে তার বন্ধুর কাছে হাজির হয়। বন্ধুর কাছে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে বলে এই লোকটাকে সুস্থ করে তুলবে। আমি আমার পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব এই কাজে তোমাকে সহায়তা করব। এই কথা বলে সেলিম তার বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আর রিক্সাওয়ালা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সেলিমের চলে যাওয়া দেখতে থাকে। (শেষ)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
অনেক ভাল লাগল সেলিম ভাইয়ের মানবিকতায়।সবাই যদি এরকম মানবিক হত দেশে এত দুঃখ দুর্দশা থাকত না।ধন্যবাদ দাদা এরকম একজন মানবিক ব্যক্তিকে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।