শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আমার প্রিয় স্থান। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন কিছু স্থান থাকে। যে স্থান গুলি তাকে স্মৃতিকাতর করে দেয়।আমার জীবনে ও এমন একটি স্থান আছে। সেটা হচ্ছে আমার দাদু বাড়ি। দীর্ঘদিন সেখানে যাওয়া হয়না।

IMG_20210905_080107.jpg

IMG_20210904_150351.jpg

এটা আমাদের দাদু বাড়ির পুকুর। অযত্ন-অবহেলায় পুকুরের চারপাশে আগাছায় ভরে গিয়েছে।

হঠাৎ করে একটি দুঃসংবাদ এর কারণে দাদু বাড়িতে যেতে হয়েছিলো। মনটা খুব একটা ভালো ছিল না। তারপরও দাদু বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। দাদু বাড়ির কাছে পৌঁছানোর পর স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলাম। এখনো মনে পড়ে সেই শৈশবে যখন দাদু বাড়িতে যেতাম। তখন যত দাদু বাড়ির যতই কাছে যেতাম ততই মনটা খুশিতে ভরে উঠতো।

IMG_20210904_150619.jpg

IMG_20210904_150413.jpg

IMG_20210905_083608.jpg

বাড়ির ভেতর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের রান্না চলছে।

চাচাতো ভাই বোনদের সাথে কাটানো সেই চমৎকার মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়তো। দাদু বাড়ি যাওয়া মানেই ছিল দুরন্তপনায় মেতে ওঠা। পুকুরে গোসল করা, পুকুর থেকে মাছ ধরা। খোলা বড় মাঠে খেলতে যাওয়া, গাছে ওঠা। আরো কত কি।

IMG_20210904_171208.jpg

একটা সময় আমাদের বাড়িতে প্রচুর মানুষ ছিলো। ভাবতে অবাক লাগে এখন সেই বাড়িতে একজন কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ নেই। পুরো বাড়িটা পরিত্যক্ত বাড়ির মত পড়ে আছে। যে বাড়ীটা একসময় লোকে-লোকারণ্য ছিলো। এলাকার মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিলো। আজ সেই বাড়িটা এতিমের মতো পড়ে আছে।

মানুষের গাছ থেকে চুরি করে ফল পেড়ে খাওয়া। ক্ষেত থেকে আখ নিয়ে খাওয়া। আরো কত রকম দুরন্তপনা করেছি। আর একটা ব্যাপার ছিল অবধারিত। সেটা হচ্ছে দাদু বাড়িতে গেলেই চাচাতো ভাইদের কে সাথে নিয়ে নদীতে গোসল করতে যাওয়া। আগে শহর থেকে মানুষ গেলে তাদের প্রতি গ্রামের মানুষের একটা আলাদা আকর্ষণ থাকতো। যদিও এখন আর সেই ব্যাপারটা নেই। এখন গ্রামের মানুষের ভেতর আগের মতো আর আন্তরিকতা ও নেই। তারপরও আমার কাছে আমার গ্রামটি অনেক ভালো লাগে। দাদু বাড়িতে গেলে আরো একটি ব্যাপার হতো। সেটা হচ্ছে দাদির সঙ্গে খুনসুটি। দাদির পান খাওয়ার সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা। লুকিয়ে রেখে দাদির কাছ থেকে কৌশলে টাকা আদায় করা। আরো কত কিছু।

IMG_20210904_182232.jpg

এখন গ্রামে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা আছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে স্বাস্থ্য সেবার জন্য। পাকা রাস্তা হয়েছে, বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে,ক্যাবল কানেকশন পৌঁছে গিয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রায় সবার হাতে হাতে এখন ইন্টারনেট কানেকশন ওয়ালা স্মার্ট ফোন। আমার কাছে মনে হয় এই বিষয়গুলি আমাদের সহজ-সরল গ্রামবাসীকে গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আজ গ্রামে গেলে আগেকার মতো কষ্ট করতে হয়না। কিন্তু আগেকার মতো আর আনন্দও হয় না। তারপরও নিজের এলাকায় গেলে একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। গ্রামে আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে। গ্রামের মুরুব্বীরা সবাইকে তার বাবার পরিচয় এর মাধ্যমে চেনে।

IMG_20210904_150827.jpg

IMG_20210904_150834.jpg

গ্রামে আর আগেকার মত যাত্রাপালা, কবিগান সহ গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ গুলি আর পাওয়া যায় না। এখন আর গ্রামের নৌকার মাঝি গলা ছেড়ে গান গায় না। সে মোবাইল ফোন থেকে উচ্চস্বরে গান শুনে। ক্যাবল কানেকশন এর কল্যাণে তার কাছে এখন হলিউডের মুভি পৌঁছে গিয়েছে। যার ফলে তারা যাত্রা পালা, জারি গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া এই সমস্ত গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যদিও বিজাতীয় সংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে নিজের শেকড়কে ভুলে যাওয়া মোটেও ভালো কোন বিষয় নয়। তার পরেও কালের বিবর্তনে সেটাই হচ্ছে। এইজন্য গ্রাম তার স্বকীয়তা হারিয়েছে।

IMG_20210905_102322.jpg

IMG_20210905_102333.jpg

IMG_20210905_102307.jpg

আশা করি আবার আমাদের ভেতর বোধোদয় হবে। নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে আবার আমরা ফিরিয়ে আনবো।যার ফলে আমাদের গ্রামগুলো তার পুরনো রূপ ফিরে পাবে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পরবর্তীতে আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে হয়তো অন্যকোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

Cc- @rme


logo.png


Support @amarbanglablog by delegating STEEM POWER.
100 SP250 SP500 SP1000 SP2000 SP

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  

আপনার দাদু বাড়ির গ্রামটা অনেক সুন্দর।গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমার মনকে আনন্দিত করেছে।ফটোগ্রাফি এবং বর্ণনা সব মিলিয়ে একটি চমৎকার পোস্ট ছিলো এটা।

হঠাৎ করে একটি দুঃসংবাদ এর কারণে দাদু বাড়িতে যেতে হয়েছিলো। মনটা খুব একটা ভালো ছিল না।

কি দুঃসংবাদ ভাই?

 3 years ago 

ভাই আমার চাচা মারা গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

😭😭 ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না লিল্লাহির রাজিউন।

 3 years ago 

আমি সত্যিই আপনার ফটোগ্রাফি পছন্দ করি

 3 years ago 

মানুষ ধীরে ধীরে শহরমুখী, একারণেই একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভেঙে যাচ্ছে। মানুষ ভালো থাকার জন্য Migration করছে। বাধা দেবার মতো গ্রামের কাছে কিছুই নেই।

আমার ঠাকুরমার পানের বাটা লুকিয়ে রাখলে দারুন বকে দিতো। একটাই জিনিস যা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসবার সময় নিয়ে এসেছিলেন

 3 years ago 

আপনার দাদুর বাড়ির গ্রাম টা অনেক সুন্দর। আপনার দাদুর বাড়ির গ্রাম দেখে আমার ও দাদুর বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে গেল। আমি আমার দাদুকে দেখি না ৫ বছর হয়ে গেল।ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 3 years ago 

জি বউদি। আমাদের গ্রামটি আসলেই অনেক সুন্দর। দাদু বাড়ি নানু বাড়ির সঙ্গে আমাদের সকলেরই কমবেশি অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর আমি কখনো আমার দাদুকে দেখিনি। আমার জন্মেরও ছয় বছর আগে আমার দাদু মারা গিয়েছে। আমার দাদী মারা গেছে প্রায় বিশ বছর হলো। ধন্যবাদ বৌদি আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।সকল মানুষের শৈশব কালটা খুব মধুর থাকে।শৈশবে মানুষ কতো আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকে।কিন্তু কালের পরিবর্তনে সে বড় হলে আর তেমন মজা করতে পারে না শৈশবের মতো।সমাজের কাছে সবাই বন্দি হয়ে পরে।

আপনার পোস্টটি পড়ে বুঝতে পাড়লাম। আপনার শৈশবকাল খুবই সুন্দর ছিলো।শৈশবকালটা খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

আপনার দাদুর বাড়ির গ্রামটি খুব সুন্দর।পুকুরের পদ্ম ফুলগুলো দেখে ভারী ভালো লাগলো।আপনজন হারানোর বেদনা অনেক বেশি স্মৃতিকাতর।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।

 3 years ago 

সত্যি ভাই আপনার দাদু বাড়ির গ্রামটা অনেক সুন্দর। এবং বিশেষ করে আমার কাছে পুকুর টা বেশি ভালো লাগছে। এই পুকুরে খুব ভালো এবং পুরাতন মাছ থাকে।

 3 years ago 

মাছ থাকে না ভাই। বাড়িতে লোকজন থাকে না তো। সেজন্য বাইরের লোকেরা এসে মাছ মেরে নিয়ে যায়।

 3 years ago 

হুম। গ্রামে আবার এইগুলো খুব হয় ।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনার গ্রামটা খুব বেশি সুন্দর অবশ্য গ্রাম আমাকে সবসময় ই কেমন একটা আলাদা ভাবে টানে।আসলেই ভাইয়া আমরা নাড়ি ভুলে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। সবশেষে বলবো আপনি খুব ভালো ফটোগ্রাফী করেন।

 3 years ago 

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

অন্যের বাড়ি থেকে ফল পেড়ে খাওয়া এবং গুরুজনদের থেকে সময়ে সময়ে টাকার চেয়ে নেয়া এ বিষয়গুলো আমাদের স্মৃতিতে এখনো অম্লান। শেষকৃত্যের আয়োজন এর ছবিগুলো দেখে খুব কষ্ট লাগছিল হয়তো আমরা মারা যাওয়ার পরেও একদিন এভাবে করে শেষকৃত্যের আয়োজন করা হবে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন ছোটবেলায় ফিরে গেলে ভালো করতাম কারণ দিন গুলো অনেক সুন্দর ছিল তখন। আপনার অনেক স্মৃতি বিজড়িত এসকল মুহূর্তগুলো এবং কিছু অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

 3 years ago 

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57621.01
ETH 3094.14
USDT 1.00
SBD 2.32