সেলিম মিয়ার জীবন (শেষ পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সেলিম মিয়া আজ সকালে উঠেই বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে তার ছুটির ব্যাপারে জানতে চাইলো। তারা তাকে বলে আপনি ছাড়া তো এই বিল্ডিঙে আর কেউ লোক নেই। আপনাকে ছুটি দিলে কিভাবে চলবে? তখন সেলিম মিয়া তাদেরকে বলল পাশের বিল্ডিঙের গার্ডের সাথে তার কথা হয়েছে। সে কয়েক দিন তার বদলে ডিউটি করবে। কারণ ওই বিল্ডিংয়ে তিনজন গার্ড আছে।

IMG_20220130_211044.jpg

তখন বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের লোক বলল আচ্ছা আমরা চিন্তা করে দেখি। তারপর সেলিম মিয়া গেটের কাছে ফিরে এলো। সেলিম মিয়া যে বিল্ডিংয়ে ডিউটি করে তার উল্টো দিকেই রয়েছে একটি চায়ের দোকান। মাঝে মাঝে সে সেই চায়ের দোকানে চা খেতে আসে। চা খেতে খেতে দোকানদারের সাথে তার সন্তানদের গল্প করছিল। এর ভেতরে হঠাৎ করে বিল্ডিংএর একজন তাকে ডাক দিলো। ডাক দিয়ে তাকে কিছু বাজার এনে দিতে বলল।

সেলিম মিয়া বাজারের লিস্ট এবং টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলো। বাজার করতে খুব একটা দূরে যেতে হয় না। কাছেই একটি সুপার শপ আছে সেখানে সবকিছুই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। অল্প কিছুক্ষণ পরেই সেলিম মিয়া বাজার করে ফিরে এলো। তারপর সেই বাসায় যখন বাজার পৌঁছে দিতে গেল। তখন বাসার লোকজন তাকে বলল দুপুরে তার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেলিম মিয়া বুঝতে পারলো আজকে ভালো-মন্দ কিছু রান্না হবে।

এই একটা সুবিধা সে ভোগ করে। বাজার করার সুবাদে কোন বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে তার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়। এভাবে সেলিম মিয়ার বেশ কয়েকদিন ভালোমন্দ খাওয়া হয়। তবে খাবারগুলো খাওয়ার সময় তার সন্তানদের কথা মনে হয়। তার মনে হয় ইস ছেলেমেয়েগুলোকে সাথে নিয়ে যদি এই খাবারগুলো খেতে পারতাম। তাহলে কতই না ভালো হতো। ছেলেমেয়েগুলো ভালো মন্দ খেতে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু সীমিত অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে তাদের তেমন একটা ভালোমন্দ খাওয়া হয়না।

এবার সেলিম মিয়া ঠিক করে রেখেছে সে বাড়িতে গেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আয়োজন করে একবেলা খাবে। এইজন্য সে বাড়তি কিছু টাকা আলাদা করে রেখেছে। দুপুরের পরে সেলিম মিয়া কাছের একটি মার্কেটে গেলো সেখান থেকে তার ছোট ছেলের জন্য একটি লাল রঙের শার্ট কিনতে। তার ছেলেটি আগেরবার আসার সময় বারবার করে বলে দিয়েছে তার জন্য লাল শার্ট নিতে। সে খুব খুশি মনে সন্তানদের জন্য টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনছে।

ছেলের জন্য শার্ট কেনার পর সে তার কর্মস্থলে ফিরে এলো। হঠাৎ করে বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের লোকজন তাকে ডেকে পাঠাল। সেলিম মিয়া সেখানে গেলে তারা তাকে জানালো তাকে তিন দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে সে যেন অবশ্যই অন্য কাউকে এই তিন দিন কাজ করার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়। সেলিম মিয়া আগে থেকেই সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে। যার ফলে ছুটি পাওয়ার পর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো। সেলিম মিয়া তার রুমে ফিরে এসে সাথে সাথেই গোছগাছ শুরু করলো।

আগামীকাল একদম সকালে সে বাড়ির দিকে রওনা দেবে। আজ অনেক উৎফুল্ল সে। দীর্ঘদিন পর সে তার পরিবারের লোকজনকে দেখতে পাবে এই খুশিতে অস্থির হয়ে আছে। সেলিম মিয়া গেটের কাছে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে সামনের দোকান থেকে এক কাপ চা খেলো। তারপর দোকানদারের সাথে গল্প শুরু করে দিলো। সে দোকানদারকে জানালো যে সে বাড়ি যাওয়ার ছুটি পেয়েছে। আগামীকাল সকালে সে বাড়িতে রওনা দেবে। সে দোকানদারকে অনুরোধ করল যেন সে বাড়ির দিকে একটু খেয়াল রাখে। দোকানদার তাকে আশ্বস্ত করল কোন সমস্যা নেই। আপনি যান আমি খেয়াল রাখব।

তারপর সেলিম মিয়া পাশের বিল্ডিঙের মফিজের সাথে দেখা করল। তারপর মফিজকে গিয়ে বলল আগামীকাল থেকে তিনটা দিন একটু কষ্ট করে আমার ডিউটিটা করে দিস। তারপর আমি বাড়ি থেকে ফিরে এলে তুইও তোর মালিকের কাছে ছুটি চাস। তখন আমি তোর ডিউটি করে দেব। মফিজ সেলিম মিয়া কে জানালো কোন চিন্তা করবেন না আমি আছি। আপনার কাজ ঠিকঠাক করে দেবো। সেলিম মিয়া খুশি হয়ে তার বিল্ডিংয়ে ফিরে এলো। তার সময় আর কাটেনা। তার খালি মনে হচ্ছে কখন আজকের দিনটা শেষ হবে। আর কখন সে বাড়ির দিকে রওনা দিতে পারবে।

এরকম চিন্তা করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত এগারোটার দিকে সেলিম মিয়া অ্যাপার্টমেন্টের গেট বন্ধ করে দেয়। অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন নির্দেশনা সে পেয়েছে। প্রতিদিনকার মত আজও সে গেট বন্ধ করেছিল। এর ভিতর রাস্তা থেকে একটি চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় সে। সে সেদিকে অগ্রসর হয়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় তিনজন ছেলে একটি মহিলার কাছ থেকে ছিনতাই করছে। মহিলা কিছুতেই তার ব্যাগ ছাড়ছিল না। এর ভেতর এক ছিনতাইকারী মহিলাকে ছুরিকাঘাত করে। এই দেখে সেলিম মিয়ার দৌড়ে গিয়ে সেই ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলে। ছিনতাইকারী সেলিমের কাছ থেকে ছোটার জন্য অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুতেই ছুটতে পারে না। এর ভেতরে ছিনতাইকারীর এক সহকারি এসে পিছন থেকে সেলিম মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে। সে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এভাবেই সেলিম মিয়ার জীবনপ্রদীপ হঠাৎ করে নিভে যায়। তার আর পরিবারের লোকজনকে দেখা হয়না। ছেলেমেয়েগুলোর হাসিমুখ দেখার অপূর্ণ ইচ্ছা নিয়েই তাকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। (সমাপ্ত)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাই আমার চোখে পানি চলে এসেছে শরিরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।😭😭😭🥺। কত ইচ্ছে ছিল বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে আনন্দ করবে। ভাই বিশ্বাস করেন চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার। কি ঘটনা লিখলেন আপনি। কত অসহায় মানুষ এর জীবন এর আলো শেষ হয়ে যায়। কতো মানুষ খাবার পায় না। জানেন ভাই সেদিন যখন কেক দিচ্ছিলাম রাস্তায় এক সিকিউরিটি গার্ড আমায় স্যালুট দিয়েছিল। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আজ খুব ফিল হচ্ছে ওই ছেলেটার জন্য। ইচ্ছে করছে সময় টা আবার আসলে উনাকে জড়িয়ে ধরতাম একটা বার।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66560.03
ETH 3447.91
USDT 1.00
SBD 2.64