দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সালাউদ্দিন সাহেব পার্কের বেঞ্চে বসে জীবনের হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছিলো। চিন্তা করছিল সারা জীবন যাদের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে গেলাম। যাদের সুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য জীবনের সমস্ত কিছু বিসর্জন দিলাম। আজ তাদের কাছ থেকে কি পেলাম? এটা কি আমার পাওনা ছিলো? আমি যাদেরকে আপন মনে করেছিলাম তারা মনে হয় কখনোই আমাকে আপন মনে করেনি। যদি কখনো আপন মনে করেই থাকে। তাহলে আজ আমার সঙ্গে এরকম আচরণ কিভাবে তারা করতে পারলো?

Polish_20221020_193952888.jpg

নিজের ছোট ভাই-বোনদের কথায় চিন্তা করছিল সালাউদ্দিন সাহেব। তার বাবা-মা মারা গিয়েছিল ভাই বোন গুলো ছোট থাকতেই। তখন থেকে তিন ভাই এক বোনের দায়িত্ব সালাউদ্দিন সাহেব নিজের কাঁধে উঠিয়ে নিয়েছিল। রাত দিন পরিশ্রম করে ভাই বোন সবগুলোকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। তিনি নিজেও একটা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় সেই স্ত্রী মারা যাওয়ায় পরে আর ভাই বোনের কথা চিন্তা করে বিয়ে করেননি।

তার জীবনের সমস্ত ধ্যান জ্ঞান ছিল কিভাবে ভাই বোন গুলোকে মানুষের মত মানুষ করা যায়। লেখাপড়া শিখে তার সবগুলি ভাই বোন আজ বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে। আজকে তাদের এই অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে সবচাইতে বড় অবদান তাদের বড় ভাই সালাউদ্দিন সাহেবের। অথচ আজ সালাউদ্দিন সাহেবকে পার্কের বেঞ্চে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। আজ তার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। অথচ এক সময় এই ভাই বোন গুলো সালাউদ্দিন সাহেব বলতে অজ্ঞান ছিল।

সালাউদ্দিন সাহেব রাতে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত সবাই না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করত। সালাউদ্দিন সাহেব এই জন্য সবসময় চেষ্টা করত একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফেরার। কারণ সে জানে তার ভাই-বোনেরা না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আজকে সেই ভাই বোন সবাই কেমন পর হয়ে গিয়েছে। কেউ আর সালাউদ্দিন সাহেবের সাথে সম্পর্ক রাখতে রাজি নয়। সালাউদ্দিন সাহেবের নিজের যা সম্পত্তি ছিল সেটা ভাইবোনদের পেছনে সব খরচ করেছে। আজ তার নিজের থাকার কোন জায়গা নেই।

তিনি চিন্তা করেছিলেন ভাই বোন গুলো সব মানুষ হয়েছে। এবার আর তাকে কোন কষ্ট করতে হবে না। এখন তার আরামের সময়। কিন্তু তার এই জীবনটা যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে এটা সে ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। একে একে তিন ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে সে। সেই সাথে একমাত্র বোনটারও বিয়ে দিয়েছে। বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে তার সহায়-সম্পদ সবই বিক্রি করতে হয়েছে। তখন সে চিন্তা করেছিল এই ভাইবোনেরাই তো তার আসল সম্পদ। এই জন্য নিজের সর্বস্ব বিক্রি করতেও তার বাধেনি।

কিন্তু আজ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সালাউদ্দিন সাহেবকে চিন্তা করতে হচ্ছে। ভাই বোনকে অতিরিক্ত ভালোবেসে কি ভুল করলাম? আজ তার চার ভাই বোনের কেউই তার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না। এমনকি সে তাদের বাড়িতে যাক এটাও তারা চায় না। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরে প্রথমে সালাউদ্দিন সাহেব তার এক ভাইয়ের কাছেই ছিলো। কিন্তু ভাই বউয়ের অত্যাচারে অল্প কিছুদিনেই সেখান থেকে অন্য ভাইয়ের বাড়িতে যায়। সেখানেও তার একই পরিস্থিতি হয়। সেখান থেকে চলে যায় তার ছোট ভাইয়ের কাছে। প্রথম কিছুদিন সেখানে ভালো ছিলো। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

সালাউদ্দিন সাহেবের মত এরকম অসংখ্য লোক রয়েছে আমাদের আশেপাশে, যারা প্রতিনিয়ত অবহেলিত হয়ে আছে। যাই হোক এই পর্বটি পড়ে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করছি, পরের পর্ব পড়ার জন্য। আশা করি খুব শীঘ্রই পরের পর্ব আমাদের উপহার দিবেন।

 2 years ago 

সালাউদ্দিন সাহেবের গল্পটা বেশ ভালই শুরু করেছেন। এরকম অসংখ্য সালাউদ্দিন সাহেব আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ আমরা কেউ তা জানতেও পারছি না । আসলে বড় ভাইরা একটু উদার প্রকৃতির হয় , ছোট ভাইবোনদের অনেক ভালোবাসে । কিন্তু নিজেদের স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে পরবর্তীতে সেই ভাইবোনই তাকে ভুলে যায়। ভাই বোনদের ভালোর জন্য নিজের সহায় সম্পত্তিটুকুও বিসর্জন দিয়েছে, কতটা উদার হলে এমনটা করা যায় ? বেশ ভালো লেগেছে গল্প টি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

সালাউদ্দিন সাহেব এমন দুঃখের কাহিনী শুনে অনেক খারাপ লাগলো৷ ঠিক সালাউদ্দিনের মতই আমাদের আশেপাশের চারদিকে এসব ঘটনা বিরল দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে বাবা মা যারা কত কষ্ট যত্নে তাদের সন্তান দিয়ে লালন পালন করে একটা পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে৲ কিন্তু সেই বৃদ্ধ বয়সে সে বাবা-মার কোন খোঁজ নেই তা তাদের বউ বাচ্চা নিয়ে একা থাকতে চায় আসলে এটাই কি শিক্ষা৷

যেমন টা সালাউদ্দিন সাহেব তার নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে ৷ তার ভাই বোনের জন্য সর্বদা কাজ করে গেছিলেন৷ তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করেছে৷ কিন্তু দিনশেষে তারাই চলে গেল৷
ঠিক বুঝি না কেন এসব ঘটনা হচ্ছে৷
তবে ভাইয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক নিয়ে লিখেছেন ৷
ধন্যবাদ

 2 years ago 

বর্তমান সমাজে এমন অনেক সালাউদ্দিন সাহেব আছে যারা শুধুমাত্র পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ শান্তিকে বিসর্জন দিয়েছে। এই মানুষগুলো সব সময় শুধু পরিবারের জন্য কাজ করে গিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে এইসব মানুষগুলো কখনোই ভালো একটা পরিবার পায়নি সবার থেকে অবহেলিত হয়েছে সব সময়, ঠিক যেমনটা আমরা সালাউদ্দিন সাহেবের ক্ষেত্রে দেখলাম। প্রথম পর্বটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারে এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

কঠিন একটা বাস্তবতা নিয়ে লেখা শুরু করেছেন ভাই। বর্তমানে বাস্তব জীবনে এ ধরনের রহ রহ ঘটনা ঘটছে। পৃথিবীতে কেউ আপন নয় ভাই, তাই নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে স্বজনদের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখানো উচিত নয়। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আসলে সমাজে এই ঘটনা গুলো এখন অহরহ ঘটছে সালাউদ্দিনের মত।সমাজে এখন উপকারের প্রতিদান কেউ দেয় না।যে মানুষটা আজীবন নিজের সব টুকু দিয়ে ভাই বোনের করে গেলো,এখন তাদের কাছেই সে বোঝা হয়ে গেলো।এটাই এখন বাস্তবতা। ভালো লাগলো।পরর্বতী পর্বের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65637.68
ETH 2661.86
USDT 1.00
SBD 2.81