বাড়ি ফেরার পথে বিড়ম্বনা ও হকারদের ভূমিকা। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। মনে হয় যেন দম ছেড়ে বাঁচলাম। ঢাকা থেকে আমার বাড়ি ফেরার সময় আমাকে প্রধানত দুই ধরনের জার্নি করতে হয়। প্রথমটা হচ্ছে ঢাকায় যে জায়গাটাতে আমরা থাকি সেখান থেকে বাসস্ট্যান্ডে আসতে হয়। দ্বিতীয়টা হচ্ছে বাস স্ট্যান্ড থেকে আমার শহরে ফেরা। এখানে দুটি জার্নি বলার মূল কারন হচ্ছে ঢাকায় আমার থাকার জায়গা থেকে গাবতলী আসতে মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। যদি খুব সকালে রওনা না দিতে পারি। তাহলে গাবতলী আসতে কখনো কখনো দেড় থেকে দু ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায়।

IMG_20211118_101825.jpg

গাবতলী থেকে আমাদের এলাকায় যেতে সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু বিগত অনেক বছর ধরে আমাদের লাগছে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। এই দীর্ঘ সময় লাগার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। প্রথমত হচ্ছে যানজট। গাবতলী থেকে সাভার পর্যন্ত এই রাস্তাটা আসতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়। কিন্তু সাভার পার হওয়ার পর আর খুব একটা বেশি সময় লাগে না। ফেরিঘাটে পৌঁছে সেখানে আবার দ্বিতীয় দফা যানজট।

IMG_20211118_124321.jpg

বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি ঘাটে প্রায় সারা বছরই জ্যাম লেগে থাকে। আমার আজকের পোস্ট এর উদ্দেশ্য রাস্তার অবস্থা বর্ণনা করা নয় বরং অন্য কিছু। এবার যথারীতি যখন গাবতলী বাস স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখনই চিন্তা করছিলাম আজ বাড়ি পৌঁছতে অনেক দেরি হতে পারে। কারণ আগে থেকে শুনছিলাম ফেরি ঘাটে দীর্ঘ যানজট। মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। রাস্তা যতই সমস্যাসংকুল হোক আমাদেরকে তো বাড়ি ফিরতেই হবে। যাই হোক গাবতলী পৌঁছে বাসের টিকিট কেটে বাসে চড়ে বসলাম। নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পরে ছাড়লো।

IMG_20211118_114515.jpg

আমরা যে বাসে এসেছি সেই বাস সাধারণত এ ধরনের কাজ করে না। কিন্তু আজ পনেরো মিনিট দেরি করায় খুবই মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত যখন বাস ছাড়লো তারপর থেকে আর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি ফেরিঘাটে পৌঁছানো পর্যন্ত। কিন্তু ফেরিঘাটে পৌঁছে তো চক্ষু চড়কগাছ। সেখানে দেখি দীর্ঘ যানজট। বুঝতে পারছিলাম যে আমাদেরকে দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকতে হবে। বাসে বসে বসে কি করব তাই চিন্তা করছিলাম। ফেরিঘাটে যখন বাস থেমে থাকে তখন বিভিন্ন রকমের হকাররা নানা রকমের খাবার এবং অন্য পণ্য সামগ্রী নিয়ে বাসের ভিতরে এসে ফেরি করে বিক্রি করে। এদেরকে দেখে হঠাৎ করে আমার মনে হল পরবর্তী পোস্টে এদের ব্যাপারে কিছু লিখব।

IMG_20211118_121842.jpg

এদেরকে দেখে একটা কথা মনে পড়ে গেলো। কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। এটা এই হকারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ যানজটে যাত্রীদের জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তখনই এদের ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়। এই হকাররা আমাদের মত যাত্রীদের খুবই উপকারে আসে। কারণ দীর্ঘ ক্ষণ বাসে বসে থাকায় যাত্রীদের অনেকেরই ক্ষুধা লেগে যায়। এই হকাররা বিভিন্ন রকমের মৌসুমী ফল নিয়ে আসে বিক্রি করার জন্য। যাত্রীরা তাদের কাছ থেকে সেই ফল কিনে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। এছাড়াও আছে ফেরিঘাটের বিখ্যাত মুড়ি মাখা। এই একটা জিনিস আমার খুবই পছন্দের। আমি যখনই ফেরিতে উঠি বা এই ধরনের যানজটে পরি তখন এই হকারদের কাছ থেকে মুড়ি মাখানো খাই। এই মুড়ি মাখানোর স্বাদ সম্পূর্ণ অন্যরকম।

IMG_20211118_114228.jpg

শুধু খাদ্যদ্রব্য নয় বিভিন্ন বই ও নিয়ে আসে। যেমন বাচ্চাদের বই, গল্পের বই, ধর্মীয় বই ইত্যাদি। আমি যখন চিন্তা করেছি হকারদের ব্যাপারটাতে পোস্ট লিখব। তখন আমি কিছু হকারের ছবি তুললাম। এখানে নানা ধরনের হকার আসে কেউবা অল্প বয়সী কেউ মাঝবয়সী আবার কেউ বৃদ্ধ। বৃদ্ধ হকারদের দেখলে আসলে খুবই মায়া লাগে। আমি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছি। যখন মানুষ ফেরি ঘাটে জ্যামে বসে থাকে তখন ক্রমাগত এটা ওটা খেতে থাকে। এখন এই খাওয়াটা কি ক্ষুধার জন্য নাকি সময় কাটানোর জন্য সেটা বুঝতে পারিনা।

IMG_20211118_112845.jpg

ফেরি ঘাটে জ্যামে বসে থাকার একটা আলাদা যন্ত্রণা আছে। জ্যামে বসে থাকার সময় গাড়িতে তৃতীয় লিঙ্গের লোকেরা ওঠে। তারপর তারা জোর করে সবার কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এই জিনিসটা আমার কাছে খুবই বিব্রতকর লাগে। কেউ টাকা না দিতে চাইলে তারা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু এই অরাজকতা দেখার কেউ নেই। ফেরিঘাটে যে হকাররা জিনিসপত্র বিক্রি করে সেগুলি তুলনামূলক দাম বেশ কম। কিছু হকার আছে যারা আপনার সঙ্গে বেশ জোরাজুরি করবে জিনিসপত্র কেনার জন্য। আবার কিছু হকার আছে যারা দু-একবার বলেই চলে যাবে।

IMG_20211118_124241.jpg

বাসে বসে হকারদের দেখে আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরছিলো। পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আর মাত্র সাত মাস সময় বাকি আছে। যখন পদ্মা সেতু চালু হয়ে যাবে তখন এই অঞ্চলের হকারদের এবং ব্যবসায়ীদের কি অবস্থা হবে তাই চিন্তা করছিলাম। কারণ তখন এই ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহনের চলাচল অনেক কমে যাবে। এই যানজট যদি না থাকে তখন হকারদের বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে না। এই ফেরিঘাটে অসংখ্য হকার থাকে। তাদের কথা চিন্তা করে বেশ খারাপ লাগছিল।

IMG_20211118_121004.jpg

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে।

সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।



ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রহুয়াই নোভা ২আই
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থান লিংক

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

আসলে আমার কাছে মনে হয় ঢাকা শহরের প্রতিটা মানুষ অসুস্থ।বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আর আসলেই এখানে থাকা বড় কষ্টকর। শহর অঞ্চলের যাতায়াত করতে হলে সবথেকে বিপদের সম্মুখীন হতে হয় যানজট। একবার জ্যাম লাগলে অনেক কষ্ট করে বসে থাকতে হয়।।হ্যাঁ কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ কথাটি ভাল বলছেন কারণ জেনে থাকলে মানুষ অনেক হতাশায় ভোগে আর তখন এদের বেচাকেনা টা ভালো হয় আমার মনে হয়।সত্যি ভাইয়া আপনি খুবই ভালো মনের মানুষ।আপনি সবসময় ভালো চিন্তা করতে ভালোবাসেন। আসলেই মায়া লাগারি কথা কারণ যানজটের কারণে তারা এই সুযোগটা পেয়ে থাকি বেচাকেনার। আসলে পদ্মা সেতু চালু হয়ে যায় তারা এটা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। আসলে এমন এমন মানুষ এ কাজ করে দেখে খুব মায়া লাগে। আপনি দারুন ভাবে আপনার মুহূর্ত তুলে ধরেছেন

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

💗💗💗💗

 3 years ago 

আসলেই ভাইয়া ঢাকা থেকে ফেরার পথে বিশেষ করে ফেরিঘাটে যানজট টা খুবই অসহ্যকর লাগে। ঘন্টার পর ঘন্টা বাস সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে ফেরিতে ওঠার জন্য। ফেরিঘাটে আসলেই বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে দেখা মিলবে। হকার থেকে শুরু করে ফেরিওয়ালা সবাই বাসের ভিতরে এসে বিভিন্ন জিনিস কিনতে বলে। অনেক ছোট ছোট ছেলেরা বাসের ভেতরে এসে ডিম বিক্রি করে বিষয়টা দেখে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে এই বয়সে তার সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে ।

 3 years ago 

আসোলেই রুপক ভাই ।জার্নি সবারি ভালো লাগে মোটামোটি ।কিন্তু সেই জার্নিটা যদি এরার
তা দেরা হয় তখনি জীবন দূর্বিসহো হয়ে উঠে ।যেটা আমাদের বাংলাদেশের রাস্তা ঘাটে হয় ।এজন্য গরীব হকারদের সুবিধা হয় তাদের পেট চলে ।কিন্তু জানজটের কারনে জনজীবন ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে দিনে দিনে ।ধন্যবাদ ভাই আপনার জার্নির মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য ।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 
এদেরকে দেখে একটা কথা মনে পড়ে গেলো। কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। এটা এই হকারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আসলেই ভাইয়া ঠিক কথা বলেছেন, এই হকার আর ৩য় লিঙ্গের অত্যাচারের কারনে সুন্দর যাত্রা গুলো অনেক সময় খারাপ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়।

তবে আপনার মত আমিও একটুখানি অবাক হয়ে যাই কিভাবে এত বৃদ্ধ মানুষ আর ছোট বাচ্চাগুলো হকারি কাজ করে।

যখন দেখি এদের কেউ কোন খাওয়ার কিছু বিক্রি করতেছে তখন আমি তাদের কাছ থেকে অবশ্যই কিনে খাই।

হকারদের নিয়ে আপনার পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।

 3 years ago 

এখন শীতের সময় ঘন কুয়াশার জন্য যানজট লেগেই থাকবে। এবং এই যানজটে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। এই হকাররা একদিকে যেমন আমাদের উপকারে লাগে অন্য দিকে মাঝে মাঝে বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এদের কথা চিন্তা করতে হবে। এবং পদ্মা সেতু হলে হকারদের মত অনেকেই বেকার হয়ে থাকবে। এটা সত্যি ভাবনার বিষয়। সব মিলে পোস্টটা খুব ভালো লিখেছেন ভাই।ধন্যবাদ

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

সলে যখন এই যানজট থাকবে তখন হয়তো যাত্রীরা বেশ খুশি মনেই বাড়ি ফিরবে।কারণ সময়ের কাজ সময়ে হয়ে গেলে স্বাভাবিক সবাই খুশিই হবে।তবে ওদের কথা ভেবে কষ্ট লাগলো।ওদের তো এতেই পেট চলে।

 3 years ago 

এটা আসলে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

হকাররা যখন বেকার হয়ে যাবে তখন তাদের জন্য কিছু করতে পারলে ভাল লাগতো।

 3 years ago 

ভাল বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

সত্যি কথা , নিজের বাড়ির মতো শান্তি আর কোথাও নেই বললেই চলে তবে গাড়িতে বসে আপনার কাছে অনেক ভালো লাগে সেটা অনেক ভালো , আমি গাড়িতে টোটালি বেশিক্ষন থাকতে পারিনা , সারাক্ষন গান কানের মধ্যে বাজায় রাখা লাগে , তবে এই বিষয়টা অনেক খারাপ লাগে আমার , যারা দিন আনে দিন খায় তাদের দিন দিন কষ্ট বেড়ে চলেছে , কথা গুলো অনেক বেশি ভালো লাগলো।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 56934.21
ETH 3091.02
USDT 1.00
SBD 2.38