একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু (শেষ পর্ব)।
পূর্ববর্তী পর্বের লিংক
আসাদ তখন তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে কি বুদ্ধি? সেই ছেলেটি আসাদকে বুদ্ধি দেয় তুই বাড়িতে গিয়ে তোর রুমের ভেতর ফ্যানের সাথে একটি দড়ি ঝুলাবি। যেভাবে মানুষ গলায় দড়ি দেয় সেভাবে। এটা তোর মা বাবার চোখে পড়লে তারা তোকে খুব তাড়াতাড়ি মোটরসাইকেল কিনে দেবে। তখন আসাদ বাড়ি ফেরার সময় দড়ি সাথে করে নিয়ে ফিরেছে। ঘরের ভিতরে ঢুকে আসাদ কিছুক্ষণ পর দড়িটি তার ফ্যানের সাথে টাঙিয়ে রাখে। যদিও দড়িটির দিকে তাকালে আসাদের নিজেরই ভয় লাগে। কিন্তু সেও জানে তার বাবা-মা তাকে অনেক ভালোবাসে। এই দৃশ্য দেখলে তার বাবা মা খুব তাড়াতাড়ি তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেবে।
দুপুরবেলায় আসাদের মা আসাদের জন্য খাবার নিয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। কিন্তু আসাদ দরজা খোলে না। তারপর যথারীতি আসাদের মা জানালা দিয়ে দেখতে যায় ছেলে কি করছে ঘরের ভেতরে। তখন ঘরের ভিতরে দৃশ্য দেখে তার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। ঘরের ভেতর ফ্যানের সাথে দড়িটি দেখতে পেয়ে আসাদের মা চিৎকার করে সকলকে ডাকতে থাকে। অল্প সময়ের ভেতর আশেপাশের প্রতিবেশীরা হাজির হয়ে যায়। এর ভেতর প্রতিবেশী একজন আসাদের বাবাকে ফোন দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে। আসাদের বাবা অনেক ভয় পেয়ে যায়। সে মনে করে আসাদের মনে হয় কোন কিছু হয়েছে।
আসাদের বাবা দ্রুত আসাদের মাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? তখন আসাদের মা বলে এখনো কিছু হয়নি। তবে ওকে মোটরসাইকেল না কিনে দিলে যে কোন সময় বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসো। আসাদের বাবা বাড়ি থেকে এসে দেখে সবাই মিলে দরজা ভেঙে আসাদকে রুম থেকে বের করেছে। তারপর সবাই মিলে আসাদকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তখন সেখানে উপস্থিত সবার সামনে আসাদের মা আসাদের বাবাকে বলে। তুমি যদি ওকে দুই দিনের ভেতর মোটরসাইকেল না কিনে দাও। তাহলে আমি আর তোমার সংসার করবো না।
তখন আসাদের বাবা বলে ঠিক আছে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করছি। এই কথা শুনে আসাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তারপর প্রতিবেশীরা সবাই চলে গেলে আসাদের বাবা-মা আসাদ কে নিয়ে খেতে বসে। বেশ কিছুদিন পর ছেলেকে সাথে নিয়ে খেতে পেরে আসাদের বাবা-মা দুজনেই বেশ খুশি হয়। পরদিন সকালে আসাদের বাবা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে যায় গ্রামের বাড়িতে জমি বিক্রি করার জন্য। তারপর সারাদিন গ্রামে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে শেষ পর্যন্ত জমির কাস্টমার ঠিক করে আসে। কথা থেকে পরদিন সকালে জমি রেজিস্ট্রি হবে।
পরদিন সকালে আসাদের বাবা আসাদকে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে যায়। সেখানে জমি বিক্রির টাকা হাতে পাওয়ার পর সরাসরি আসাদকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেল শোরুমে যায়। তারপর সেখানে থেকে আসাদকে পছন্দ করে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়। জমি বিক্রি করে আসাদের বাবার সর্বমোট টাকা পেয়েছিল ৪ লক্ষ ২০ হাজার। কিন্তু আসাদ সেখানে গিয়ে প্রথম পছন্দ করেছিল পাঁচ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল। পরে আসাদকে অনেক বুঝিয়ে ৪ লাখ টাকার ভিতর একটি মোটরসাইকেল কিনে নিয়ে আসে তারা।
আসাদের বাবা তখন আসাদ কে জিজ্ঞেস করে তুই কি মোটরসাইকেল চালাতে পারিস? সে সাথে সাথে মাথা নেড়ে বলে হ্যা। আমার এক বন্ধুর মোটরসাইকেল আছে। ওর থেকে চালানো শিখেছি। নতুন কেনা মোটরসাইকেলে চলে দুই বাপ বেটা বাড়িতে ফিরে আসে। আসাদ তার বাবাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে চলে যায় বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। সেদিন আসাদ অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরে। এরপরে কয়েকদিন আসাদকে প্রায় বাড়িতে পাওয়াই যায় না। সে সারাদিন প্রায় বাইরে কাটায়। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা এদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সে নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে সারা এলাকা চোষে বেড়ায়।
যাই হোক এভাবে তাদের দিনকাল মোটামুটি ভালোই কেটে যাচ্ছিল। একদিন দুপুর বেলায় আসাদের বাবা অফিসে খেতে বসেছে। হঠাৎ করে তার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের ওপাশ থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি বলে আপনি দ্রুত মেডিকেল কলেজে চলে আসুন। আপনার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে। এই কথা শুনে আসাদের বাবার বুক কেঁপে ওঠে। সে শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন ছেলে অক্ষত থাকে। সে আসাদের মাকে কিছুই জানায় না। সে সরাসরি চলে যায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে যাওয়ার পর যে ব্যক্তি ফোন দিয়েছিল তাকে। তার সাথে দেখা হতেই সেই লোক বলে আপনি আমার সাথে আসুন। এই কথা বলে লোকটি সামনে আগাতে থাকে। আসাদের বাবা তার পিছে পিছে যেতে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তারা হাসপাতালের মর্গের সামনে এসে উপস্থিত হয়। আসাদের বাবার মাথায় তখন কিছুই কাজ করছিল না। লোকটি কেন মর্গের সামনে এসেছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। মর্গের সামনেই শোয়ানো একটি লাশের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে লোকটি বলে। দেখেন তো এটি আপনার ছেলে কিনা? ছেলের রক্তমাখা মুখ দেখার সাথে সাথে আসাদের বাবা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। এভাবেই আসাদের বাবা-মার স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটে। (সমাপ্ত)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসাদকে তার বাবা-মা অনেক ভালোবাসতো বলেই তার অন্যায় আবদার মেনে নিয়েছিল। আসলে এই বয়সে তার হাতে মোটরসাইকেল তুলে দেওয়া সত্যিই ভয়ের বিষয় ছিল। শেষমেশ হয়তো সেটাই সত্যি হলো। দুর্ঘটনা কেড়ে নিল একটি তাজা প্রাণ। সে যদি মোটরসাইকেল কেনার বায়না না ধরতো তাহলে হয়তো এত তাড়াতাড়ি একটি তাজা প্রাণ হারিয়ে যেত না। আর একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হতো না। ভাইয়া আপনার লিখা এই গল্পটি খুবই শিক্ষনীয় ছিল।
বন্ধুর বুদ্ধিতে বাবা মায়ের সাথে মৃত্যুর অভিনয় করতে গেয়ে আসাদতো সবশেষে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে ফেললো। আসলে সমাজে এমন অনেক বাবা মা আছে তারা সন্তানের আবদারের কাছে পরাজিত হয়ে যান। তাই তো কথায় বলে কাঁচায় না নোয়ালে বাশঁ পাকলে করে টুসটাস। তাই আসাদের বাবা মায়ের উচিত ছিল আসাদকে সময় থাকতে শাসন করা উচিত ছিল। সময় থাকতে আসাদ কে শাসন করলে আজ হয়তো আসাদের লাশ দেখতে হতো না।