শূন্য থেকে শিখরে (দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ফরিদ মিয়ার সব সময় তাদের আগেকার সচ্ছল অবস্থার কথা মনে পড়তো। তাই তার মনের ভেতর একটি জিদ কাজ করতো। তার সবসময় মনে হতো যেভাবেই হোক তাকে আবার তাদের আগেকার সচ্ছল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সে জানে এটা করতে হলে তাকে অবশ্যই শহরে যেতে হবে। কারণ গ্রামে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। তাই ফরিদ মিয়া তার মা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর শহরে চলে গেলো। কিন্তু শহর ছিল ফরিদ মিয়ার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। হঠাৎ করে অপরিচিত একটি জায়গায় এসে ফরিদ মিয়া বেশ বিপদে পড়ল।

Polish_20221005_225306135.jpg

অনেক চেষ্টা করার পর সে একটি কাজ জোগাড় করতে পারল। কিন্তু কোন কাজেই তার মন বসে না। সে একের পর এক কাজ ধরতে লাগলো আর ছাড়তে লাগলো। এভাবে বেশ কয়েক বছর পার হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সে একটি গাড়ির গ্যারেজে কিছুটা থিতু হলো। ফরিদ মিয়া টানা ৪-৫ বছর কাজ করলো সেখানে। যখন সে কিছুটা কাজ শিখে গিয়েছে। তখন সে চিন্তা করছিল যদি কোন ভাবে একটি গাড়ির গ্যারেজ দেয়া যায়। তাহলে অনেক টাকা ইনকাম করা যাবে। কারণ সে খেয়াল করে দেখেছে এই গ্যারেজের মালিকের প্রচুর ইনকাম হয়। তাদেরকে তো শুধু নামমাত্র মূল্যে কর্মচারী হিসেবে রাখা হয়েছে।

ফরিদ মিয়া গত কয়েক বছর ধরেই তার টাকা জমিয়েছে। কিন্তু সে জানে গ্যারেজ দেয়া একার পক্ষে সম্ভব না। তার সাথে আরও কিছু লোক লাগবে। তাই সে পাশের গ্যারেজের একজনের সাথে কথা বললো। দুজনে মিলে শালা পরামর্শ করল যে দুজন মিলে একটি গ্যারেজ দেবে। তবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্যারেজ দেবে এখান থেকে কিছুটা দূরে। কারণ এখনকার গ্যারেজ মালিক যদি দেখতে পারে যে তারই কর্মচারী তার গ্যারেজের কাছাকাছি গ্যারেজ দিয়েছে। তাহলে তাদের সমস্যা হতে পারে। এই জন্য তারা দুজন মিলে মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াতো গ্যারেজের জায়গা দেখার জন্য।

কয়েক দিনের ভেতরেই তারা একটি জায়গা পছন্দ করে ফেলল। তারপর ফরিদ মিয়া আগের গ্যারেজের কাজ ছেড়ে নিজের গ্যারেজের কাজ শুরু করলো। তার কিছু কাস্টমারও সে জোগাড় করে ফেলেছে। এতদিন ফরিদ মিয়া যাদের গাড়ির কাজ করতো তাদের সাথে কথাবার্তা বলে তার গ্যারেজের ঠিকানা দিয়েছে। সে তাদেরকে বলেছে এখানে তারা যে টাকা দিয়ে গাড়ি রিপেয়ার করে। তার গ্যারেজে সে এর থেকে কম টাকায় তাদের গাড়ি রিপেয়ার করে দেবে। এই কথা শুনে কাস্টমারেরও অনেক খুশি হয়েছে। যার ফলে কিছুদিনের ভিতরেই তার কাছে বেশ কিছু কাস্টমার জুটে গেলো।

সে বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে তার গ্যারেজের গাড়ি সারানোর মূল্য কম রাখতে শুরু করলো। কারণ সে জানে নতুন ব্যবসা চালু করতে গেলে প্রথমে গ্রাহকদেরকে কিছু সুবিধা দিতে হয়। তার এই বুদ্ধির প্রয়োগের ফলে অল্প কিছুদিনে তার গ্যারেজে গাড়ির সংখ্যা বাড়তে লাগলো। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ফরিদ মিয়া তার গ্যারেজটি আরো বড় করে ফেললো। আগে যেখানে সে অন্যের গ্যারেজে কাজ করতো। সেখানে এখন সে নিজেই একটি গ্যারেজের মালিক হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন অভাব অনটনের কাটানোর পর ফরিদ মিয়ার কাছে এখন প্রচুর টাকা আসতে শুরু করেছে।

মাত্র বছর চারেকের ভিতরে ফরিদ মিয়া ঢাকায় একটি জায়গা কিনে সেখানে বাড়ি করে ফেলেছে। একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িও নিয়েছে সে। তার গ্যারেজের সংখ্যাও এখন বেড়েছে। ইতিমধ্যে তার তিনটি গ্যারেজ হয়েছে। ফরিদ মিয়া একটি ব্যাপারে সবসময় খেয়াল রাখে। সেটি হচ্ছে তার গ্রাহকদের স্যাটিসফেকশন। তার গ্যারেজ গুলোতে যে গাড়ি আসুক। গাড়িটা যখন মালিক নিয়ে যায় তখন যেন সে খুশিমনে যেতে পারে। এই ব্যাপারটাতে সে সবসময় খেয়াল রাখে। যার ফলে অল্প সময়ে তার প্রচুর গ্রাহক বেড়েছে।

কিছুদিন যাবত ফরিদ মিয়ার শুধু তার গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়ছিলো। দীর্ঘদিন যাবত সেখানে সে যায় না। সেই যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে আর কখনো গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়নি সে। কিছুদিন থেকেই তার শুধু নিজের গ্রামে যেতে ইচ্ছা করছে। বাবা-মার কবর দেখতে ইচ্ছা করছে। আর শৈশবে দেখা মানুষগুলো এখন কেমন আছে সেই খোঁজ নিতে ইচ্ছা করছে। এতগুলো গ্যারেজের দায়িত্ব সামলে সময় বের করা খুবই মুশকিল। তারপরেও ফরিদ মিয়া চিন্তা করছে খুব দ্রুতই একদিন সে তার গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে। গাড়ি নিয়ে যেতে তার খুব বেশি সময় লাগবে না। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

বাহ ফরিদ মিয়া আর কঠিন পরিশ্রম আর বুদ্ধি দিয়ে এত উপরে উঠতে পেরেছে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। বিশেষ করে তার একটা বুদ্ধি একদম ঠিক ছিল যে অন্য গ্যারেজ থেকে কম টাকায় সে গাড়ি ছাড়িয়ে দিবে। আসলেই এরকম হলে কাস্টমার ধরা খুবই সহজ হয়ে যায়। এর মধ্যে চার বছরে জায়গা কিনে একটা বাড়িও করে ফেলেছে। আবার একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িও। তারপর দেখলাম একটা গ্যারেজের জায়গায় তিনটা গ্যারেজ দিয়েছে। সত্যিই একটু একটু করে অনেক উপরে উঠেছে। কিন্তু তার একটা বিষয় বেশ ভালো লেগেছে যে সে প্রতিটা কাস্টমারকে খুশি মনে বিদায় দিত। এখন তার অনেক কিছুই হয়েছে আর গ্রামের কথাও মনে পড়ছে। গ্রামে যাব আর সিদ্ধান্ত নিল। এরপর কি হবে তা অবশ্যই জানার আগ্রহ রইলো।

 2 years ago 

সফলতা বা উন্নতি যাই বলুন মনের ইচ্ছা শক্তিটা প্রবল হলেই যথেষ্ট। ফরিদ মিয়া একজন দৃঢ় প্রত্যয়ের মানুষ। ফরিদ মিয়ার উচ্চ শিখরে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। যাইহোক ফরিদ বিয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সেই সাথে আগামী পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম ভাই। আপনার জন্য সুস্বাস্থ্য কামনা রইল।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার গল্পগুলো পড়তে ভালো লাগে।এর আগের পর্বটা আমি পড়েছি।এর আগেও একটা গল্প পড়েছিলাম নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না,এমন গ্রাম থেকে এসে ছোটখাট ব্যবসা করে আস্তে আস্তে বড়লোক হয়ছিলো।যাই হোক পরর্বতী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59117.70
ETH 2597.31
USDT 1.00
SBD 2.43