"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা- ২২ | আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি।।
আমি শুধু এতদিন মনে মনে ভেবে এসেছি, প্রথম মোবাইল ব্যাবহার এর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা কেন হচ্ছে না। কারণ আমি মনে করি মোবাইল নিয়ে আমার যত সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে যেটা শুনলে আপনার অবাক হয়ে যাবেন। যাইহোক শেষ অবধি আমার মনের ইচ্ছাটা পূরণ হলো এবং আপনাদের আমার মোবাইল পাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করতে পারব এই ব্যাপারটাই আমার বেশ ভালো লাগছে। যদিও "বৃষ্টির দিনে আমার মজার অভিজ্ঞতা" এটা আমার খুব পছন্দের একটা টপিক্স ছিল। চলেন তাহলে শুরু করা যাক। কারণ অপ্রয়োজনও বেশি কথা বললে আসল টুইস্টের জায়গা গুলোই নষ্ট হয়ে যাবে।
একদিন খুব সকালে দেখলাম মা খুব জোরাজুরি করছে আমার ঘুম ভাঙানোর জন্য। তবে আজতো রবিবার, স্কুল ছুটির দিন তাহলে মা কেন এত রাগারাগি করছে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। বেশ কিছুটা রাগান্বিত হয়ে মাকে বললাম আজকে অন্তত আরেকটু সময় ঘুমাতে দাও। প্রতিদিনই তো স্কুলে যাওয়ার জন্য সকালে ডেকে দাও ঘুম থেকে। এতে করে মা দেখলাম আরো বেশি রেগে গেল এবং সজোরে পিঠের উপর একটি চাপড় দিয়ে বলল তোর বাবার সাথে কথা বলতে হবে, জলদি চল তোর নেহেরু কাকু ডেকেছে। কিছুটা অবাক হলাম, বাবার সাথে কথা বলতে হবে মানেটা কি.. বাবাতো দেশের বাইরে বিগত দুই বছর ধরে। তখন আমার বয়স সাত বছরে পড়েছে। হঠাৎ করে চমকে গেলাম, তাহলে কি বাবা ফিরে এসেছে। সত্যি কথা বলতে এই কথাটা কল্পনা করে আমি যতটা আনন্দ পেয়েছিলাম সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
তাড়াহুড়ো করে চলে গেলাম নেহেরু কাকুর দোকানে। ওখানে বসে লোকজন আড্ডা দেয় আমি ভাবলাম হয়তো বাবা ওখানেই বসে আছে। কিন্তু ওখানে পৌঁছে হতাশ হলাম বাবাকে না দেখতে পেয়ে। তার বদলে দেখলাম নেহেরু কাকু মায়ের হাতে চার কোণা রেডিও এর মত কি একটা ধরিয়ে দিল। মা ওটাকে কানে নিয়ে কি আবোল তাবোল বকছে আর কান্নায় ফেটে পড়ছে। সত্যিই আমি খুব অবাক হলাম মা কার সাথে কথা বলছে আর মায়ের কানে ওটা কি। এতকিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলাম যন্ত্রটা মা আমার কানের কাছে এসে ধরল। হঠাৎ করে বাবার গলার সুর, কি করছি, কেমন আছি এসব জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু বাবা কোথায় আর কথাগুলোই বা কে বলছে। যাই হোক বোকার মত প্রত্যেকটা কথার উত্তর দিয়ে গেলাম বাধ্য ছেলের মত। তবে এর আগে সত্যি কথা বলতে মোবাইল কি জিনিস আমি জানতাম না কোনদিন চোখেও দেখিনি। এটাই আমার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে ধরে দেখা।
এরপর থেকেই মোবাইলের প্রতি আমার এক প্রকার তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়। ১৯৯৯ সালের আগে একটা মোবাইলের দাম কতটা ছিল সেটা হয়তো আপনার অনেকেই জানেন। তাই কান্নাকাটি করলে এ জিনিস পাওয়া যাবে না সেটা আমি ধরেই নিয়েছিলাম। সুতরাং কিছু কাল আমাকে প্লাস্টিকের ফোন দিয়ে সখ মেটাতে হয়। বছরখানেক পরেই বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসে এবং নিয়ে আসে দুটি নোকেয়ার ফোন। এখনকার সময় আমরা সাধারণত যেগুলোকে আমপাড়া ফোন বলে থাকি। এবং এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম নিজের ফোন। যদিও নিজের ফোন বললে ভুল হবে, বাবার ফোন।
ফোন হাতে পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় আমার ফোন সম্পর্কে কৌতুহল দূর করার মিশন। সারাদিন আমার কাজ ছিল ফোনের ভিতর সাপের গেম খেলা এবং ফোনের মধ্যে যতগুলো রিংটোন আছে তা বারবার শোনা। পড়াশোনা কে করে, শুধু গেম খেলি আর রিংটোন শুনি এটাই ছিল আমার কাজ। এবং সব থেকে মজার যে বিষয়টা ছিল তা হচ্ছে একটি ফোন থেকে কল দিয়ে আরেকটি ফোন কানে নিয়ে কথা বলতাম এবং বাকি ফোন টা অন্য কানে নিয়ে উত্তর দিতাম। প্রচুর টাকা কাটতো প্রতি মিনিট কথা বলাতে কিন্তু আমি তো এসব কিছু বুঝতাম না তখন শুধু বাবার হাতে মার খেতাম চোখ বুজে। এইভাবে কিছুদিন চলার পর আমার হাত থেকে পুরোপুরি ফোন নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটি ফোন আমার পিসিমণিকে দিয়ে দেয় বাবা। এবং অন্য ফোনটি বাবা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। তারপর কিছু বছর কেটে যায় আমি ক্লাস নাইনে উঠি। যেহেতু হোস্টেলে চলে যেতে হয়েছিল তাই বাবা বাধ্য হয়ে samsung এর একটা ফোন আমাকে কিনে দিয়েছিল তবে মডেলের নাম ঠিক মনে করতে পারছিনা। তবে জীবনে প্রথমবার ওই বাটন ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতার কাছে আমার নিজের ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহারটা অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই ফোনটা আমার কাছে এতটাই অবাক করা বিষয় ছিল যে জীবনে প্রথমবার কেউ এলিয়েন দেখলেও হয়তো এতটা অবাক হতো না।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।
ভালো লেখা। প্রথম মোবাইল ফোনের অভিজ্ঞতা আমারও অনেকটা এরকম। ভালো লাগলো পড়ে বেশ। সাথে রইল শুভেচ্ছা!
অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য। আশাকরি আগামী দিন গুলোতে পাশে পাবো।
আমরাও নোকিয়া ফোনকে আমপাড়া ফোন বলে থাকে। বেশ শক্তপোক্ত নোকিয়া ফোনটা। আপনার প্রথম ফোনের ঘটনা টা বেশ দারুণ লাগল। বলতেই হয় আপনি অনেক আগে ফোন হাতে পেয়েছেন। রেডিও এর মতো মায়ের হাতে কী যেন এটা ঐসময়ে যে প্রথমবার দেখবে সেই অবাক হয়ে এই কথায় বলত হি হি।।
খুব ভালো লাগলো আপনি আমার পোষ্টটি পড়েছেন। আসলে আপনারা পোস্ট পড়লেই সেটা আমার সার্থকতা। ভালো থাকবেন আপনি।
প্লাস্টিকের ফোন গুলো কি আর নেই? ওই গুলোই তো আসল সম্পদ। খিক খিক
তুমি প্লাস্টিকের ফোনের কথা বলছ আমি তো মাটি দিয়েও ফোন বানাতাম। তারপর ওইগুলো আগুনে পুড়িয়ে লাল করে ফেলে দিতাম। পোষ্টের মধ্যে তো এই কথা উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। হ্যাঁ প্লাস্টিকের ফোন গুলো এখনো আছে তবে আগের মত অত ভালো কোয়ালিটি নেই কম দামের ভেতরে।