ছোটবেলায় দাদুর মুখে শোনা একটা ভূতের গল্প।। জুলাই -১৩/০৭/২০২৩।।

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

আগের পর্ব যেখানে শেষ করেছিলাম -

গ্রামের লোক সিদ্ধান্ত নিল যে দাদুকে আবার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যাবে। কিন্তু দাদু বলল তোমাদের মেয়েকে সামলাও। আমাকে আর এত কষ্ট করে বাড়ি পর্যন্ত দিতে যেতে হবে না, আমি একটা হেরিকেট নিয়েই বাড়ি চলে যাব কোন সমস্যা হবে না। গ্রামের লোকজন এত জোরাজোরি করার পরেও আসলে দাদু একা একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

💠দ্বিতীয় পর্ব💠


আমার দাদু যে গ্রামে গেছিল ওটা আসলে অনেকটাই বিলের মাঝখানে ছিল। অর্থাৎ বর্ষাকালে পুরো গ্রামের চার সাইড জলে ভরে যায় এজন্য নরমাল লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে। আমার দাদু আসলে প্রচন্ড রকম সাহসী লোক ছিল তাই এইসব ভূত প্রেত কোন কিছু ভয় পেত না। আর এমনিতেও দাদু অনেক মন্ত্র জানতো যেগুলোর দ্বারা সবসময় নিজেকে বন্ধ করে রাখত। কিন্তু আগের দিন তো সেটাও ভুলে গেছে। আসলে মানুষ বিপদে পড়লে বা বিপদে পড়ার সময় তার সমস্ত হুঁশ জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলে। যাইহোক গ্রামের দুই একজন লোক বেশ কিছুটা এগিয়ে দিতে আসলেও তারা কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে আবার ফিরে চলে গেল। যেহেতু সেই সময়টাতে ফোনে যোগাযোগ করার মত কোন সিস্টেম ছিল না তাই আমার দাদুর হাতে কোন ফোনও ছিল না যে সমস্যায় পড়লে কাউকে ফোন করে জানাবে। এদিকে দিদিমা বলে রেখে দিয়েছিল যে যত তাড়াতাড়ি পারো তুমি চলে আসবে আমি তোমার জন্য ভাত রান্না করে বসে থাকবো। যাই হোক সেই গ্রামের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটা ছোট খাল সেই খালের পাড় দিয়ে আমার দাদু আস্তে আস্তে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু তিনি যতই সামনেই দিকে এগোচ্ছে না কেন মনে হচ্ছে যে কেউ তার পিছু পিছু আসছে। কিন্তু তিনি যখন পিছনে ঘুরে তাকাচ্ছেন তখন আবার কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।

gothic-1378352_1280.webp
সোর্স

যদিও এই ঘটনাটা প্রথমবার হচ্ছে না এরকম ঘটনা অনেকবারই হয়েছে। যখন কাউকে ঝেড়ে বাড়ি ফিরছে তখন অনেক সময় মনে হতো যে কেউ তার পিছনে নিয়েছে। তাই এটাকে স্বাভাবিক মনে করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। মোটামুটি ১০ মিনিট হাটলেই একটা বড় বটগাছ পড়ে, ওই বট গাছটা ছিল আমার দাদুদের গ্রামের সব থেকে বড় এবং পুরনো বট গাছ। আকারে এত বড় ছিল যে কুড়িজন বা ৩০ জন লোক এ বেড় দিয়েও নাকি ধরতে পারত না। আমার দাদুর আবার এই জায়গাটাতে খুব ভয় করতো। যেহেতু এইখানকার বটগাছটা নিয়ে অনেক বেশি কাহিনী ছিল। এখানে নাকি আগে যুবতী মেয়েরা অকারণে গলায় দড়ি দিত। অনেক রাতে নাকি এখান দিয়ে যদি কেউ যেত তাহলে এমন কিছু দেখত যেটা তারা একেবারেই দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতো না। অনেকে তো নাকি এটাও দেখেছে যে সারারাত ওখানে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তারপর সকালবেলা সেখান থেকে লোক যাওয়ার সময় তাকে তুলে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করেছে। যাই হোক দাদু বট গাছের নিচে আসতেই কেমন একটা গায়ের ভিতর শীতল হাওয়া বয়ে গেল। কিন্তু দাদু তাতেও কোন ভয় পেল না তিনি মাথা নিচু করে বটে গাছের নিচ দিয়ে চলে যেতে গেলেই হঠাৎ করে কে একজন বট গাছের উপর থেকে বিকট জোরে হাসি দিয়ে উঠলো।

forest-3737107_1280.jpg
সোর্স

তিনি যখন উপরের দিকে তাকালেন এটা দেখার জন্য তখন উনি কিছুই দেখতে পারিনি। তবে বট গাছের একটা বড় কুঠোর এর ভিতরে গুমোট বাধা অন্ধকার কেমন যেন দাদুর দিকে তাকিয়ে ছিল এরকম মনে হচ্ছিল। আসলে বটগাছটা এত এত বড় ছিল এবং বিস্তৃত ছিল যে সেটা পার করতেও রীতিমত বেশ কিছু সময় লাগে। তাই দাদু যত দ্রুত সম্ভব সেটা পার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু কেমন যেন দাদুর শরীর প্রচন্ড রকম ভার হয়ে যাচ্ছিল। সামনের দিকে যতই দাদু এগোনোর চেষ্টা করছিল কেমন যেন এগোতে পারছিল না। এইবার দাদু বেশ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এবং তার মনে রাখা মন্ত্র গুলো একের পর এক মনে করার চেষ্টা করে। তবে এমন একটা ব্যাপার ঘটে গেছিল যে ওই সময়টাতে দাদু কোন কিছুই ঠিকঠাক করে মনে করছে পারছিল না। কেমন যেন সব কিছু উল্টাপাল্টা গেছিল। তারপর কোন কিছু উপায় না দেখে ভগবানের নাম নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। বটগাছটা কোন প্রকারে পার করার পরে দাদু আর তেমন কোন কিছুর অনুভব করতে পারিনি। এরপর কিছু দূর হাটার পরেই একটা লোকালয় চলে আসলো। তবে তাতেও বিপদ কাটছে না কারণ এই লোকালয় পার হওয়ার পরে আরো একটা বড় বটগাছ এবং তারপর ছোট একটা জঙ্গল রয়েছে সেটা পার করে তারপর দাদুর গ্রামে যেতে হবে।

background-914404_1280.webp
সোর্স

আসলে দূরত্বটা বেশি ছিল না তবে এই আধা ঘন্টার রাস্তা দাদুর কাছে কেমন যেন অনেক বেশি দূরত্ব মনে হচ্ছিল। যাইহোক দাদু অনেক সাহস সঞ্চয় করে যত দ্রুত সম্ভব সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। লোকালয়ে ঢুকার পরে আসলে দাদুরা তেমন কোন ভয় লাগেনি। কারণ ওখানে গিয়ে সব কিছু নরমাল ছিল। তবে সামনের দিকে এগোতেই আরেকটা বীভৎস সমস্যার সম্মুখীন হলো দাদু। হঠাৎ করেই দাদুর মনে হচ্ছিল যে খালের ভিতরে মাছ সব দাপাদাপি শুরু করে দিয়েছে অর্থাৎ এতো মাছ একসাথে লাফালাফি করছে যেটা এর আগে কখনো কেউ দেখেনি। মনে হচ্ছিল কেউ তাদের জলের নিচ থেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। এইবার দাদু অনেক কষ্টে একটা মন্ত্র উচ্চারণ করল যেটার কারণে সবকিছু পুনরায় আগের মত হয়ে গেল। তারপরও তিনি দেখতে পারছিল যে অনেক দূরে বিলের ভিতর কি একটা আবছা আবছা দাদুর সাথে সাথে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে আর বলছে যে আজকে যে করেই হোক তোকে মেরে ফেলে দেবো আমি। কিন্তু দাদু কোন কিছুতেই ভয় পেল না কারণ সেই খারাপ আত্মাটা দাদুর কাছে আসতে সাহস পাচ্ছিল না মন্ত্র উচ্চারণ করার জন্য। এই জন্য দাদু অনেকটাই মনে বল পেয়েছিল।

চলবে....👻


শ্রেণীভূতের গল্প।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Sort:  
 last year 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।সত্যি গল্পটা পড়ে বটগাছের কথা শোনে ভয় পাওয়ার মতো কথা। আসলে আপনার গল্পটা পড়ে আমি নিজেই ভয় পেয়েছিলাম। যাইহোক আপনার দাদুতো সব কাটিয়ে এসেছে নরমাল ভাবে। তবে আপনার দাদুর কাছে খারাপ আত্মা আসার সাহাস পায়নি। পরবর্তীর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

গল্পের পরের অংশ গুলো আরো বেশি ভয়ংকর হতে চলেছে আপু। আশা করি পরবর্তী পর্বগুলোও পড়ার চেষ্টা করবেন।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য

 last year 

আপনার দাদুর মুখের ভূতের গল্পটা পড়ে আমার কাছে খুবই ভয় লেগেছে। এই ধরনের গল্প গুলো কারো মুখে শুনতে বেশ ভালই লাগে। আপনার দাদুর মুখের মন্ত্র পড়ায় খারাপ আত্মা ওনার কোন ক্ষতি করতে পারে নি । যাইহোক আপনার দাদুর সব কাটিয়ে ভালোভাবে ফিরেছেন এটা জেনে খুবই ভালো লেগেছে। এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

এখনো তো বিপদ শেষ হয়নি আপু, গল্পের মধ্যে আরো একটা জায়গা রয়েছে যেখানে অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল দাদু। আশা করি পরবর্তী পর্বে সেই ব্যাপারটা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56949.15
ETH 2401.26
USDT 1.00
SBD 2.33