কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন । প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন।সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমিও অনেক অনেক ভালো আছি সুস্থ আছি। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। গতকাল থেকে বন্ধুর বিয়ের নেমন্তন্নের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্লগ তৈরি করা শুরু করেছিলাম এবং আজকে তার দ্বিতীয় পর্ব। আসলে বিয়ে বাড়িতে এত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলাম যে সেটা বলে বুঝানো সম্ভব না। তারপরও চেষ্টা করব যতটুকু সম্ভব তুলে ধরার এবং এই জন্যই প্রত্যেকটা ব্লগকে ভাগ করেছি পার্টিকুলার কিছু টপিক্সের ভিত্তিতে। যাতে বুঝতে সুবিধা এবং পুরোপুরি মজার হয় ব্যাপারটা। যাইহোক কালকে যেখানে গিয়ে শেষ করেছিলাম-

স্টেশন থেকে আমার বন্ধুর বাড়ির দূরত্ব ছিল হেঁটে ৫ মিনিটের রাস্তা। এর আগেও আমি বৈচি গ্রামে, দুইবার গিয়েছিলাম। তবে এইবার বেশ নতুন ব্যাপার মনে হচ্ছিল আমার কাছে। বৃষ্টির জলে চারদিক সবুজে ছেয়ে গেছে এবং পুকুর, বিলে জল থৈ থৈ করছে। যেহেতু গ্রামের মেঠো পথ তাই অনেক কষ্ট করে জল কাঁদা মাড়িয়ে বাড়ি অব্দি পৌঁছে গেলাম। তবে সেখানে গিয়ে আরো বেশি অবাক, পুরো বাড়ি এবং তার আশেপাশে প্রচুর জল জমে আছে এবং অনেক জায়গায় তো হাটু সমান কাদা। যেহেতু বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়িতেই হবে এবং সকল ধরনের প্যান্ডেলিং বাড়ির পাশের খোলা জমিতে হবে সুতরাং সবাই একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল এত কাদার ভিতরে এত আয়োজন এত প্যান্ডেলিং কি করে সম্ভব হবে। মাঝখানের দুইদিন প্রচন্ডরকম বৃষ্টি হওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়েছিল। তবে যেহেতু বিয়ের এখনো মাঝখানে একদিন বাকি আছে সুতরাং যদি একটু রোদের মুখ দেখা যায়, তাহলে হয়তো কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু সে আশায় তো বসে থাকলে চলবে না কিছুতো একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে খুব ভালো একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল এটা যে, দুই জায়গায় অলরেডি ছাউনি দিয়ে হালকা পাতলা প্যান্ডেলিং করা হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেখানে আর কাদা হয়নি। তাই বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে পুরো রাস্তা ইট দিয়ে কাভার করে দেবে। যাতে সবাই ইটের উপর পাড়া দিয়ে প্যান্ডেলে ঢুকতে পারে এবং প্যান্ডেল থেকে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে আসতে পারে। যে কথা সেই কাজ, আমি ঘরে ব্যাগ রেখেই জামা প্যান্ট না পাল্টে, ইট কিনতে চলে গেলাম। সব মিলিয়ে আমরা পাঁচ হাজারের মতো ইট কিনেছিলাম। এরপর কর্মচারীদের দিয়ে আস্তে আস্তে সব জায়গায় ইট বিছিয়ে দিতে লাগলাম। আমি নিজে যদিও এই কাজে কিছু সময় হাত দিয়েছিলাম, তবে এই ভারী কাজগুলো আমি খুব বেশি করতে পারি না এজন্য কিছু সময় পর বন্ধ করে দিলাম। যাইহোক কাজ করতে করতে বাড়ি থেকে ডাক পরল কিছু খেয়ে আসার জন্য। একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিলাম এবং আবার প্যান্ডেলে চলে আসলাম দেখতে, লোকজন কি কাজ করছে।

তা প্রায় বহু বছর পর বিয়ে বাড়ি এমন সাজানো-গোছানোর আয়োজন দেখছি। কারণ একটু বড় হওয়ার পর থেকেই শহরের বিয়ে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু গ্রামের বিয়ের ব্যাপারটাই আসলে আলাদা। বিয়ে শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাড়ির কাজ শুরু হয়ে যায়। এবং সবাই খুব আনন্দের সাথে কাজ করে। যাইহোক প্যান্ডেলে গিয়ে দেখলাম আর এক বিপত্তি। প্যান্ডেলে যারা সাজানো গোছানোর কাজ করবে তারা নাকি এখনো উপস্থিতই হয়নি। এদিকে আগামীকাল বিয়ে। সুতরাং কাজ শেষ করতে হলেও তো অনেক টাইম লাগবে। যাই হোক ফোন করে তাদের আনা হলো এবং বলে অনেকটা জোর করে কাজ শুরু করানো হলো। আসলে বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজগুলো গ্রামের ছেলে পেলেই করছিল সুতরাং তাদের ভিতর একটু অলসতা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। যাইহোক তারপরও কাজ তো শেষ করাতে হবে যে করেই হোক। সব কাজগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল একটিম করবে সমস্ত কারেন্টের কাজ এবং অন্য একটা টিম করবে ফুল সাজানো এবং গেট সাজানোর কাজ।

যাইহোক সব কাজগুলোই খুব সুন্দর চলছিল এবং প্রত্যেকে খুব মনোযোগ সহকারে কাজ করছিল। যেহেতু পাড়ার দিদির বিয়ে, সুতরাং খুব সুন্দর ভাবে কাজ করতে হবে এবং বিয়েটা যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সে দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু ঘটনা এখানে থেমে থাকলেই হত তারপরে ঘটলো এক বড় বিপত্তি। কারেন্টের কাজ করতে গিয়ে একজন খেলো মারাত্মক কারেন্টের শখ। একেতো চারপাশ বৃষ্টির জলে ভেজা অন্যদিকে কারেন্টের শখ। মোটামুটি এতটাই ঝটকা খেয়েছিল যে ছিটকে মাটিতে গিয়ে পড়ে। আমরাও তখন ব্যাপারটা খেয়াল করতে পারিনি কারণ আমরা ছিলাম প্যান্ডেলের রুমে কিন্তু কারেন্টের কাজ হচ্ছিল অন্য প্যান্ডেলে। যাই হোক লোকের চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি একটা বাচ্চা ছেলে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স হবে। কাজ করতে গিয়ে কারেন্টের শখ খেয়ে মাটিতে লুটে পড়ে আছে। যাইহোক তাকে তাড়াহুড়ো করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। তবে তেমন বিশেষ কিছু হয়েছিল না তবে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। যাইহোক প্যান্ডেলের কাজ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত ছিল। তারপর আবার সবাই যখন একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করল তখন আবার কাজ শুরু করে দিয়েছিল।

যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আগামীকাল বিয়ে বাড়ির নতুন একটা টপিকস নিয়ে হাজির হব। ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।