হাঁসের ডিম।। ফেব্রুয়ারি-০৪/০২/২০২৩।।
☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। |
---|
যেহেতু দশ মিনিটের মত বাস চলেছিল তাই অনুমান করতে পারছিলাম না ঠিক কোথায় এসে নামলাম। এদিকে ওই লোক যদি আবার বাথরুম বন্ধ করে বাড়ি চলে যায় তাহলে হয়তো ডিমগুলো আর কখনোই পাওয়া হবে না। তাই বেশ চাপ যাচ্ছিল মাথার উপর দিয়ে। কোন কিছু না ভেবেই গুগল ম্যাপ বের করলাম এবং লোকেশন ফিক্সড করে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর আমার ভাই।
কলকাতার রাস্তাঘাট মোটামুটি চিনলেও ওই দিকটা একেবারেই অচেনা ছিল আমার। তাই প্রথমদিকে তো প্রচুর পরিমাণে কনফিউশন হচ্ছিল। জানিনা ঠিক কোথাকার এক চার রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়েছিল। এবার কোন দিক দিয়ে হাঁটলে যে স্টেশনে যাব এটা বুঝতে পারছিলাম না। কোন উপায় না দেখে সেখানকার একজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে বিস্তারিত জানার জন্য যাই এবং তিনি মোটামুটি একটা ধারণা আমাকে দেয় যে এখান থেকে হাঁটলে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের মতো সময় লাগবে, তবে আপনি চাইলে বাস ধরেও যেতে পারেন। এভাবে খুব সম্ভবত ১৫ থেকে ২০ মিনিট বাসের জন্য অপেক্ষা করার পরও কোন বাস আসলো না। তাই ফোনে নেভিগেশন অন করে রওনা করলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা এমন জায়গা থেকে দেখাচ্ছিল যে সেখানে কোন রাস্তাই নেই। মোটামুটি ১০ মিনিট হাটার পরে একটা পুলিশ চেকপোষ্টের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এবার কথা হচ্ছে যে এই মেইন রোডের উপর আবার পুলিশ চেকপোস্ট কেন। পরে জানতে পারলাম সামনে যে ব্রিজটা রয়েছে তার উপরে শুধু গাড়ি উঠতে পারে, হাঁটার জন্য সেই ব্রীজ না। তাই সেখানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে কেউ হেঁটে ব্রিজে উঠতে না পারে।
প্রথম দিকটাতে তো এই ব্যাপার সম্পর্কে বুঝতে পারিনি তাই কোন কিছু চিন্তা না করে আমি আর আমার ভাই ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দুই মিনিট পরে পিছন থেকে একজন পুলিশ আমাদের ডাক দিল এবং কোথায় যেতে চাই সেটা জিজ্ঞাসা করল। পরবর্তীতে আমি সবকিছু বলার পর আমাকে বলল যে ব্রিজের উপর উঠা নিষেধ আছে। আপনি চাইলে ব্রিজের নিচে দিয়ে একটা রাস্তা আছে সেখান দিয়ে যেতে পারেন তবে জায়গাটা বেশ খারাপ মাঝে মধ্যে সেখানে মার্ডার হয় রাতের বেলা সুতরাং যদি যান তাহলে আপনার নিজের রিক্স নিয়ে যেতে হবে। তখন মোটামুটি বুঝতে পারলাম যে বেশ খানিকটা বিপদে পড়েছি। বাসে উঠে স্টেশনেতে যাওয়াই বেটার অপশন ছিল। আমি মাতব্বরি করে হেঁটে হেঁটে আসতে গিয়ে ঝামেলায় পড়লাম। যাইহোক কি আর করা যাবে অন্য কোন অপশন ছিল না তাই আমি আর ভাই অনেকটা সাহস করে ব্রিজের নিচে দিয়ে আসার ডিসিশন নিলাম। ব্রিজ টা অনেক বড় ছিল এবং তার সাইডে ছিল বড় একটা লেক। যাইহোক ভগবানের নাম নিয়ে নেমে পড়লাম ব্রিজের নিচে। প্রথমে ঢুকেই দেখলাম বেশ ভয়ঙ্কর অবস্থা, চারিদিকে আগাছা দিয়ে ভর্তি এবং তার ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা মাটির রাস্তা চলে গেছে স্টেশন এর উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ এই ব্রিজের নিচ দিয়ে এখন কম পক্ষে আমাকে ১০-১৫ মিনিটের মত হাঁটতে হবে।
বেশ খানিক দূর হাঁটার পরে হঠাৎ করে দেখলাম আমার পেছনে একজন লোক সাইকেল নিয়ে আসছে। এতে করে বেশ কয়েকটা সাহস পেলাম এবং ওনার কাছে জিজ্ঞাসা করায় উনি স্টেশনের রাস্তা দেখিয়ে দিল। তবে একটা জিনিস বেশ খারাপ লাগছিল ব্রিজের নিচে নামার পর থেকেই কেমন একটা বিচ্ছিরি গন্ধ। প্রথমত ভেবেছিলাম মনে হয় কুকুর মরে পড়ে আছে। কারণ এটা এমন একটা জায়গা যেখানে নোংরা ফেলার জন্য উত্তম। কারণ কেউ দেখতে পাবে না, আপনি যা ইচ্ছা এখানে ফেলে দিতে পারেন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে সেখানে লোকজন মার্ডার হয়। এইজন্য ভয়টা বেশি পাচ্ছিলাম। যাই হোক পরে ভুল ভাঙলো। খুব সম্ভবত একটা কুকুর মরে পড়েছিল আর সেই জন্যই বিচ্ছিরি গন্ধ বেরোচ্ছিল। একদম ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে বেশ খানিকটা ভয় পেলাম। সেখানে বসেছিল তিনজন লোক খুব সম্ভবত গাঁজা খাচ্ছিল। আমি পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ঘেন্না করি গাঁজাখোরদের। আমাদের দেখে বেশ খানিক সময় নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো। জানিনা কেন আমাদের দেখি পরে তারা ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে গেল। প্রথমে তো আমরা ভয় পেয়েছিলাম তাদের দেখে, যদি ছিনতাই করে নেয় সবকিছু। টাকা পয়সা নিলে কোন সমস্যা নেই তবে ফোন যদি নিয়ে যায় তাহলে আমার অনেক কিছু হারিয়ে যাবে। আমার ব্যাংকের সবকিছু ফোনের সাথে লিংক করা ছিল এবং যাবতীয় আমার সব কাজ ফোনে সেটা নিয়েই বিশেষ ভয় পাচ্ছিলাম।
যাইহোক পরবর্তীতে আর কোন সমস্যা হয়নি। তারপর মোটামুটি পাঁচ মিনিট হাঁটার পরে স্টেশন দেখতে পেলাম এবং লোকজনের সমাগম ছিল সেখানে তাই ভয় পুরোটাই কেটে গেল। এরপর সেই বাথরুমের কাছে গেলে দেখলাম যে, আগে যে লোকটা ছিল সেই লোকটা নেই। সে নাকি বাড়ি খেতে গেছে তার বদলে অন্য একটা লোক সেখানে বসেছিল। পরবর্তীতে তাকে সেই ডিমের কথা বলায় সে বলল যে উনি যাওয়ার সময় বলে গেছে যে যদি কেউ এই ডিম চায় তাহলে যেন আমি তাকে দিয়ে দি। যাইহোক সেখান থেকে ডিম শেষ পর্যন্ত পেলাম। তারপর স্টেশন থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এর মাঝে ঘটল আরেক ঘটনা শিয়ালদা স্টেশনে নামার আগেই আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ চুরি হয়ে গেল। যে ঘটনা আমি এর আগের একটা পর্বে আপনাদের বলেছিলাম। যাইহোক এইসব বিপদ সামলে ঘরে এসে দেখি পাঁচটা ছয়টা ডিম বাদে বাকি সবগুলো ভেঙে গেছে। এটা দেখার পর নিজেকে যে কতটা বোকা মনে হচ্ছিল সেটা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না।
পড়লাম অবশেষে আপনার ডিমের গল্প। এত কষ্ট করার পর তাও পেলেন ডিম। এর মধ্যে আবার ভেঙে ও গেছে। আসলে ডিম এভাবে নিতে হয় না। ডিমের প্লেটে নিবেন নয়ত যে বক্সে ডিম নিবেন তার ভেতর অনেক খানি কাপড় দিয়ে তার মধ্য ডিম নিবেন। অনেক ধন্যবাদ ডিমের গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে আরো একবার ধন্যবাদ আপু, পুরো পোস্টটাই কমপ্লিটলি পড়ার জন্য।