ঐন্দ্রিলার নিমিত্তে সব্যসাচী।। নভেম্বর-২৪/১১/২০২২।।

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
আমাদের কলকাতায় বিগত এক মাস ধরে দুটো নাম নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছিল। তার মধ্যে একজন হল ঐন্দ্রিলা এবং অন্যজন তার বন্ধু সব্যসাচী। আমি টিভি সিরিয়াল খুব বেশি একটা দেখি না। তবে তাদের নামটা সামনে আসার পর, তাদের সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা তৈরি হয়। তাদের ভিতরে যে একটা পবিত্র এবং গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেটাও আমি এই ঘটনার পর থেকে জানতে পারি। এর আগে ঐন্দ্রিলা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু কাল যাবত হসপিটালে ভর্তি ছিল। তখনও ব্যাপারটা ততটা ভাইরাল হয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে যখন সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার জন্য বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে থাকে, তার সুস্থতা কামনা করতে থাকে এবং পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জগতের প্রত্যেকের কাছেই তার জন্য আশীর্বাদ চাইতে থাকে, তখন থেকেই ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস হয়ে যায়। সবাই তাদের ভালবাসার সাধুবাদ জানাই, কারণ এই যুগে এসে এরকম ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।

যাইহোক গত ২০/১১/২০২২ তারিখে ঐন্দ্রিলার মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছিল ক্যানসার কোষ, আর এই মারণ রোগই তার প্রাণ কেড়ে নেয়। এরপর থেকেই সব্যসাচীর মনে বিশেষ একাকীত্ব এবং অসহায় বোধ হতে থাকে। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পরে তার মনের ভিতর কি কথা চলতে পারে, সেই নিয়ে আমি ছোট করে একটু লেখার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

guy-2617866_1280.jpg
সোর্স

হেমন্ত কালে বোধহয় আলো একটু কমে আসে। মনে হয় গাঢ় হলুদের উপর হালকা মন খারাপের প্যাস্টেল কেউ বুলিয়ে দিয়েছে। আমাদের বহুতলের ছাদে চড়াই পাখিরাও খুব বেশি আসছে না। জবা গাছ, টগর গাছ পুষ্পহীন উদাসী চোখে তাকিয়ে রয়েছে সারাদিন। পাড়ার রাস্তায় বসে থাকা স্মৃতি হারিয়ে ফেলা মানুষটিও এক বুক মন খারাপ নিয়ে এই মুহূর্তে ভেবে চলেছে একটি আলোয়ান খুব প্রয়োজন। আমার জানালার বাইরে সরু ডালটায় লেগে থাকা হলুদ পাতাটা যে কোন মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান হতে পারব না কোনদিনই, কিন্তু হেমন্তের গায়ে লেগে থাকা এই বিষাদ দেখতে পাই রোজ। আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়ে একটা বাদামী রঙের আলো। আমি সেই আলো ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। আর ঠিক সেই সময় তোমার হাতটা ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করে খুব। একটা নরম উষ্ণ করতলের মধ্যে গুটিসুটি মেরে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে বাকি জীবন। তোমার গালের গোলাপি রঙ দিয়ে আমার ক্যানভাসে একটা উজ্জ্বল সকাল আঁকতে ইচ্ছে করে। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার পাথরের মূর্তি হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, তোমাকে নিয়ে কোনো খরস্রোতা নদীতে পা ডুবিয়ে বসে থাকি। ইচ্ছে করে হলুদ হ্যালোজেনের আলো আর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে মেখে তোমাকে সাইকেলে চড়িয়ে নিয়ে যাই একটি জনশূন্য রেল স্টেশনের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে।

girl-5801502_1280.jpg
সোর্স

হেমন্তকালে বোধহয় আলো একটু কমে আসে। আকাশের মেঘগুলোকে দেখে ভূগোল বইয়ের কথা মনে পড়ে। তারপর জীবন বিজ্ঞানের হৃদয় তার রক্ত চলাচল ছাড়াও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার হাসিতে ঝরে পড়ে.. সুহানা সফর অর ইয়ে মৌসম হাসিন। তোমার ওই হাসি, ওই চোখ, ওই সমস্ত রাতজাগা কথোপকথন আর যা কিছু না পাওয়ার ইচ্ছে-- এই সবগুলো নিয়ে আমার চলে যেতে ইচ্ছে করে হাজার হাজার বছর আগের কোন এক হলুদ বিকেলে। যেখানে কোন ইটের পাঁজর নেই, কালো রাস্তা নেই, আহ্নিক গতি নেই, বার্ষিক গতি নেই, সূর্য ছাড়া কোন আলো নেই, রাত ছাড়া কোন অন্ধকার নেই, ফুল ছাড়া কোন উপহার নেই... আয়োডিন আর ডেটলের গন্ধ নেই, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ নেই, স্যালাইনের বোতল নেই, হার্টবিট মাপার যন্ত্র নেই, আই সি ইউ বলে কোন রুম নেই..... সব্যসাচী বলে কোন প্রেমিক নেই। একজন নামহীন পুরুষ তোমার হলুদ শরীরে একটা বকুল ফুল রেখে আসবে শুধু।

girl-3421489__480.jpg
সোর্স

হেমন্তকালে আলো একটু কমে আসে বোধহয়। আমার ডট পেনের কালিও ফুরিয়ে এসেছে। শুধু গোধূলির আকাশে একটা তারা জ্বলজ্বল করছে।


যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🕉️ধন্যবাদ সবাইকে🕉️

Sort:  
 2 years ago 

খুব খারাপ লাগে মেয়েটার জন্যে। কিছু কিছু মানুষ ব্যক্তিগত চেনাজানা ছাড়াই অত্যন্ত আপন হয়ে যায়। এই যুগলটাও তেমনই ছিল।

খারাপ আমাদের সবার লেগেছে। আমরা সবাই এটা চিন্তা করে বসেছিলাম যে, হয়তো ইন্দ্রিলা সুস্থ হয়ে আবার বাড়ি ফিরবে।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া ওদের মত জুটি হাজারে একটা দেখা যায় না। বেশ হাসি খুশি চঞ্চল স্বভাবের একটি মেয়ে ছিল ঐন্দ্রিলা। আসলে ওর ভিতরে যে এত বড় একটি মরণব্যাধি রোগ ,এটি আসলেও কাউকে বুঝতে দেয়নি। ভাবতো যে কয়টা দিন বাঁচবো হাসিখুশি ভাবে সুন্দরভাবে সবার সাথে বাঁচবো। ও হয়তো ভাবতো শুধু শুধু নিজের জীবনের জন্য আফসোস করে, আমি আর বাকি আমার জীবনের সময়টুকু কাটাতে চাই না,নষ্ট করতে চাইনা। সব্যসাচীও বেশ ভালোবাসতো ঐন্দ্রিলাকে ।খু খারাপ লাগলো ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর খবর শুনে।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এই করুন পরিণতি হবে সেটা আমরা কেউই চিন্তা করতে পারিনি। আশা করেছিলাম ঐন্দ্রিলা সুস্থ হয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসবে।

 2 years ago 

খুবই খারাপ লাগলো ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর খবর শুনে। ঐন্দ্রিলা আর সব্যসাচীর ভালোবাসা খুবই পবিত্র এবং গভীর ছিল। কিন্তু তাদের ভালবাসা বেশ কিছুদিন টিকে থাকতে পারেনি। ঐন্দ্রিলার সেই মারাত্মক অসুখের কারণে যে আজ এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। অনেকদিন পর্যন্ত হসপিটালে ভর্তি ছিল এই কারণে সেই। তাদের মত এরকম ভালোবাসা এখন তো খুবই কম দেখা যায়। এখন তো মানুষ এর বাঁচার ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে তারা বাঁচতে পারে না এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তারা খুবই অল্প সময়। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে এই গল্পটি লিখেছেন। এরকম গল্প গুলো বেশিরভাগ বাস্তবিক ঘটনার সাথে জড়িত থাকে। যেমন আপনার গল্পটিও একটা বাস্তবিক এবং সত্যি ঘটনার সাথে জড়িত।

ঐন্দ্রিলা যদি আগের মত সুস্থ হয়ে উঠতো, তাহলেও বেশি দিন বাঁচতো না। তবে আমাদের সকলেরই এটাই ইচ্ছা ছিল যে ঐন্দ্রিলা সুস্থ হয়ে উঠুক।

 2 years ago 

ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর কথা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। ঐন্দ্রিলা আর সব্যসাচীর ভালবাসার মত ভালবাসা এখন আর দেখা যায় না।ঐন্দ্রিলা একজন হাসি খুশি মেয়ে ছিল। দূরারোগ্য মরনব্যধি তার শরীরে বাসা বেঁধেছিল, সে কাউকে তা বুঝতে দেয়নি। অনেক খারাপ লাগলো পড়ে। মৃত্যু সবকিছু শেষ করে দিল।এমন ভালবাসা সত্যি আজকাল দেখা যায় না। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।

সত্যিই তাই, এখনকার যুগে এরকম ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমি তো কখনো চিন্তাই করিনি এরকম কোন সংবাদ আমাদের মন ভেঙে দিয়ে চলে যাবে।

 2 years ago 

কল্পনায় আপনি বেশ ভালই লিখেছেন। সত্যি যে চলে যায়,সে তো মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু যে থেকে যায়,তার পক্ষে বেঁচে থাকাটা খুব কষ্টের। কারণ সমস্ত স্মৃতিগুলো তাকে যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। আশা করব সব্যসাচী এই আঘাত থেকে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু শুধু এই সব্যসাচী বা এই ঐন্দ্রিলা নয়। না জানি আরো কত সব্যসাচী, কত ঐন্দ্রিলার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি একবার সে সুস্থ হয়ে তার বাহুডোরে ফিরে আসে। প্রত্যেক সব্যসাচী এবং ঐন্দ্রিলার জন্য অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা।

আমার তো মনে হয় না সব্যসাচী এত সহজে এই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। এখনকার যুগে এরকম ভালবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এই করুন পরিণতি আমি কখনো আশা করিনি।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 63862.88
ETH 2754.56
USDT 1.00
SBD 2.64