ছোটবেলায় হাঁস চুরির গল্প (চোর যখন আমি নিজেই)।। ফেব্রুয়ারি-১৮/০২/২০২৩

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
এখন আমাকে যতটা ইনোসেন্ট বা ভদ্র দেখা যায় ছোটবেলায় আমি মোটেই এরকম ছিলাম না। ছোটবেলায় ছোটখাটো একটা চোর ছিলাম। তবে আমি কখনো অন্যের বাড়ি বা অন্যের প্রপার্টি চুরি করতাম না। নিজের বাড়িতেই চুরি করতাম। যেমন ধরুন পিকনিকের জন্য চাল চুরি, আমাদের ক্ষেত থেকে কচু বা অন্যান্য জিনিস চুরি করে মামা বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসতাম। আমাদের বাড়ি থেকে আমার মামার বাড়ি খুব বেশি একটা দূরে ছিল না, হেঁটে পাঁচ মিনিটের মত সময় লাগতো। তাছাড়াও বছরের একটা দিন ছিল গাশী। এই দিনে সাধারণত সবাই রাতের বেলা ঘর থেকে বেরিয়ে চুরি করত। তবে চুরি বলতে ওরকম চুরি না, যাতে গৃহস্থের ক্ষতি হয়। ছোটখাটো চুরি করা হতো যেমন হাঁস চুরি, মুরগী চুরি অথবা অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস চুরি করে সবাই পিকনিক করত।


তবে আমার কোনদিনও সাহস হয়নি বন্ধুদের সাথে রাতের বেলা বেরিয়ে এভাবে অন্যের বাড়িতে চুরি করা। ধরা খেলে তো নির্ঘাত মার খেতে হবে। তবে তার থেকে যে বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হল আত্মসম্মান। গ্রামে আমাদের একটা আলাদা respect ছিল তাই কোন কিছু করার আগে আমি ভাবতাম যে এটা করা ঠিক হবে কিনা। আর এই কথা যখন মাথায় ঢুকে যেত তখন কোন ধরনের ভুল কাজ বা চুরি করার সাহস পেতাম না। আজ আপনাদের সামনে একটা চুরির গল্প শেয়ার করব যেটা আমার সাথে ঘটেছে অনেক ছোটবেলায়। তখন আমার বয়স পাঁচ থেকে সাত বছর।

mallard-3747770_1280.jpg
সোর্স

বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন আমার মামা এবং তার বন্ধুরা মিলে পিকনিক করত। আমাকে ছোটবেলায় অনেকবার তাদের পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তবে এত ছোট ছিলাম যে মা আমাকে ছাড়তো না তাদের সাথে। তবে সেই বছর আমাকে ছেড়েছিল মামাদের সাথে পিকনিক করতে। আচ্ছা এবার বলি কেন ছাড়তো না, আসলে মামারা নৌকায় করে চলে যেত বিলের মাঝখানে এবং সেখানে গিয়ে রান্না করে খেত। নৌকার ভিতর মাটি দিয়ে চুলা বানানো হতো এবং কাঠ বা কয়লা নিয়ে যাওয়া হতো জালালী হিসেবে। সেই দিন আমি বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করে সবে ঘরে ঢুকেছি হঠাৎ করেই দেখি যে আমার মামারা নৌকায় করে আসছে এবং তাদের নৌকায় মাইক বাঁজছে। আসলে আমাদের গ্রামের বাড়িটা খালের পাশে ছিল । যাইহোক নৌকা আমাদের ঘাটে ভিড়ানো হল তারপর মামা এসে আমাকে কোলে করে নিয়ে গেল আর মাকে বলল যে আসতে আমাদের অনেক রাত হবে। আমি তো প্রথমবার মামাদের সাথে পিকনিকে যেতে পেরে খুব আনন্দ লাগছিল। কিছু সময়ের ভিতরেই আমাদের ঘাট ছেড়ে নৌকা ছোট খাল বেয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো বিলের উদ্দেশ্যে।

ducklings-1853178_1280.jpg
সোর্স

নৌকায় উঠার পর দেখলাম যে যাবতীয় হাঁড়ি পাতিল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে রান্না করার জন্য তবে মাংস বা মাছ কোনটাই নেই। তখন মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে মামা মাংস কোথায়। তখন দেখলাম মামার বন্ধুরা হাসাহাসি করছিল। তখন মামা বলল যে সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে তুই শুধু চুপচাপ নৌকার ভিতর বসে থাক। যাইহোক কি আর করা যাবে আমি নৌকার ভিতর বসে গান শুনতে লাগলাম। এদিকে নৌকা প্রায় দুই ঘণ্টার মতো বেয়ে বিলের ভিতর এসে পৌঁছালো। তখন দেখলাম যে বিলের ভেতর যে ভেশাল বা মাছ ধরার জিনিস ছিল সেগুলোর ভিতর থেকে কিছু মাছ নৌকার ভিতর উঠালো। তার মানে অন্যের মাছ চুরি করলো আর কি। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে তাই তো তাড়াতাড়ি সমস্ত মাছগুলো কেটেকুটে পরিষ্কার করে ফেলল সবাই মিলে। সত্যি কথা বলতে নৌকার ভিতর এভাবে বসে থাকতে এবং ফাঁকা বিলের ভিতর কিছুটা ভয় লাগছিল। তবে মামা পাশে থাকার কারণে সেই ভয়টা আবার আনন্দে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল। ছোটবেলায় আমি মাংস খেতে খুব পছন্দ করতাম তাই মামাকে বললাম যে, মামা মাংস কোথায়...? তখন মামা বলল যে চুপচাপ থাক, সবকিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

birds-4230463_1280.jpg
সোর্স

এর ভিতরেই দেখলাম যে মামার বন্ধু বান্ধবের ভিতরে কথোপকথন হচ্ছে যে কখন যাওয়া যেতে পারে। যদিও তখন আমি বুঝতে পারেনি তবে পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা গ্রামের ভেতরে কোন এক বাড়ি থেকে হাঁস চুরি করার পরিকল্পনা করছে। যেহেতু গ্রামের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে তাই মোটামুটি রাত আটটা নটার ভেতর গেলেই হবে। এটুকু সময়ের ভিতর তারা যাবতীয় কাজ করে ফেলল এবং ঠিক রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মাইক বন্ধ করে সেই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল, যেখান থেকে তারা হাঁস চুরি করবে। আসলে গ্রামটা অনেক ছোট ছিল এবং বিলের মাঝখানে ছিল তাই তেমন লোকের আনাগোনা ছিল না। চুরির কথা শুনে আমি তো বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে মামা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল যে কোন সমস্যা হবে না, তুই শুধু চুপচাপ থাক।

👉চলবে.....🏃

যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🕉️ধন্যবাদ সবাইকে🕉️

Sort:  
 2 years ago 
আসলে শৈশবে এ ধরনের স্মৃতি কম বেশি অনেকেই আছে। তবে বেশিরভাগই যারা গ্রামে বড় হয়েছেন।অবশ্য নিজেদের বাড়ির মুরগী,গাছের ডাব,বন্ধুদের গাছের আম চুরির রেকর্ড অনেক আছে দাদা।তবে হাঁস চুরি করিনি দাদা।খুবই ভালো লাগলো দাদা আপনার শৈশবের হাঁস চুরির ঘটনাটি পড়ে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

চোর যখন নিজে হাঁস চুরি করে আবার নিজেই গল্প লেখে তখন একটু অবাক লাগে😁 আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ১৫-১৬ বছরে চুরি করতে বের হয়েছেন। এখন তো দেখি ৫-৬ বছরে চুরি করতে গেলেন। এটা ঠিক যে ছোটবেলায় গ্রামের দিকে মানুষ এমন ভাবে ছোটখাটো চুরি করে পিকনিক করত। কিন্তু আপনার মামা তো খুবই দুরন্ত লোক মনে হচ্ছে। আমরা ও নিজের ঘর থেকে ছোটখাটো চুরি করতাম আগে এরকম ভাবে পিকনিক করার জন্য। কিন্তু বাহিরে কখনো যাওয়া হয়নি। আপনার পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

আসলে ওই সময় আমি ভালো করে বুঝতামও না যে চুরি কি জিনিস। সত্যিই বেশ ভালো লাগছে আপনি আমার পোষ্টটি পড়ে এত সুন্দর একটা মন্তব্য করেছেন।

 2 years ago 

হাহাহা চুরি করে অবশেষে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন পোষ্টের মাধ্যমে। আসলে ছোটবেলার গল্প গুলো অনেক মধুময় অনেক আনন্দের হয়।। ছোটবেলা সবাই দুষ্টু প্রকৃতির থাকে আপনার মত আমিও খুব একঘেয়েমি আর দুষ্ট ছিলাম।। আপনি তো নিজের বাড়ি থেকে হাঁস মুরগি চুরি করতেন আমরা নিজের বাড়ির পাশাপাশি অন্যের বাড়ি থেকেও মাঝে মাঝে খেয়েছি।। ভালো লাগছে ভাই আপনার গল্পগুলা পরবর্তী পর্ব দেখার আশায় থাকলাম।।

আসলে চুরি করার ফলে একটা পাপ বোধ কাজ করছিল নিজের ভিতর। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিলাম আর কি। যাতে করে একটু হালকা হতে পারি। 🤣

 2 years ago 

আসলে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো সবার কাছেই শুভ করা লাগে এগুলো মনে পড়লে সকলেরই আনন্দ অনুভব হয়। আর এ দুষ্টুমি ধরনের কাজ যেগুলো জীবনে যেগুলো একবারই করা হয়েছে সেগুলোর কথা তো না বলাই বাহুল্য। সকলের সাথে এগুলো শেয়ার করতেও নিজের কাছে বেশ আনন্দদায়ক লাগে। আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছে নিজের ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ছিল।

একটা অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টটি পড়ার জন্য এবংএত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

ভাই আপনি তো দেখছি ভদ্র সমাজের চোর নিজের চুরি করেন আবার নিজের চোরের গল্প অন্যের কাছে শোনান 😄😄।আপনার এই গল্পটি পড়ে ভাই আমার ছোটকালে কথা মনে হয়ে গেল। আমরা অনেক এই ধরনের কাজগুলো করেছি বন্ধুদের সাথে করে। কত মানুষের মুরগি হাস ডিম চুরি করে আমরা পেয়ে বোন ভাজান করেছি তা ঠিক নেই। তবে এইগুলো মামার সাথে করেছেন এটা জেনে খুব ভালো লাগলো মামা ভাগ্নে তো অনেক মিল রয়েছে দেখছি। কথায় আছে না মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নাই সেখানে। অনেক ভালো লাগলো ভাই পরের এপিসোডের জন্য অপেক্ষার থাকলাম।

আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য। পরবর্তী পর্ব হয়তো আগামীকাল দিয়ে দেবো ভাই।

 2 years ago 

আপনি চুরি করতেও জানেন,আপনি আর কি কি জানেন বলেন দেখি😜😜।ছোট বেলা থেকেই মামার সাথে চুরি কি সাংঘাতিক রে বাবা।যাই হোক আপনার মামাদের পিকনিকের কাহিনি আমার কাছে বেশ মজা লেগেছে। নৌকায় মাছ চুরি করে সেখানেই কেটেকুটে নিয়েছে।এবার হাঁসে কিভাবে চুরি করলো তা জানার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

আপনি আর কি কি জানেন বলেন দেখি😜

সব রকম চুরি করতে পারি। তবে মন চুরি করার টেকনিকটা এখনো ভালো করে শিখতে পারিনি।

হাঁস চুরির কাহিনী শুনলে তো আপনি হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাবেন। ওই পর্ব সম্ভবত আগামীকাল দিয়ে দেব।

 2 years ago 

মন চুরি করার টেকনিকটা তাহলে ভালো করে শিখে নেন। 🤣🤣
শেষ অব্দি কি আমাকে পাগল করে ছাড়বেন নাকি ?

যদি হতে চান তাহলে অবশ্যই বানাবো।🤭 তাহলে দায়িত্ব নিয়ে পোস্টটা পড়ে ফেলবেন।

 2 years ago 

বাপরে,তুমি ছোটবেলায় হাস ও চুরি করেছো।সেটাও আবার নিজের বাড়ির,প্যাক প্যাক করে ডাকলেই ধরা।তাছাড়া গাশী কি?আমি প্রথম শুনলাম!তাহলে তোমার মামা এতে সামিল ছিল, হি হি।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, ধন্যবাদ দাদা।

তাছাড়া গাশী কি?
হ্যাঁ... জানো তো তুমি।

অন্যের বাড়িতে কখনো চুরি করিনি, তবে নিজের বাড়িতে চুরি করতাম। এমনও হয়েছে যে গাছের আম বস্তা ভর্তি করে রেখে দিয়েছে পাকানোর জন্য। সেই আম চুরি করে গ্রামের বন্ধুদের বিলিয়ে দিয়েছি।

 2 years ago 

😊😊এইরকম বিলানো টা আমাদের ও হতো।তবে কাঁচা আম চুরি করতাম বেশি নিজেদের গাছ থেকে, বন্ধুরা মিলে খাওয়ার জন্য।

ছোট বেলায় সবাই কম বেশি চোর ছিল।🤣🤣