ঘাটশিলা ভ্রমণ (স্পেশাল পর্ব)।। জুন -২৮/০৬/২০২৩।।

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

🦋রাত মোহনা সেতু🦋


সুবর্ণরেখা নদীর উপর অবস্থিত রাত মোহনা সেতুটি ইংরেজ আমলেই ভেঙে গেছিল। তবে তারপর এই ভাঙা সেতু সেখান থেকে আর কখনোই সরানো হয়নি। যদিও পাশে তার থেকে অনেক বড় এবং সুন্দর একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। তবে এই সেতুটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। তবে সেতুটি এমনি এমনি ভেঙে পড়েনি তার পিছনে ছিল বড় একটা কারণ, সেটাও বলব আপনাদের সাথে। আসলে এই পর্বটাকে স্পেশাল পর্ব বলার কারণ হলো এটাই ছিল ঘাটশিলা ভ্রমণের আমাদের সব থেকে শেষ ঘোরার স্পট এবং এরপর আমরা ট্রেন ধরে বাড়ি চলে আসি। তবে জায়গাটা আমার কাছে অন্যান্য জায়গাগুলো তুলনায় অনেক বেশি ভালো এবং ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। আসলে সুবর্ণরেখা নদীর জল প্রচন্ড পরিমাণে ঠান্ডা হওয়ার কারণে এবং পাহাড় থেকে নেমে জল আসার কারণে কেমন জানি প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল জলে পা দেওয়ার কারণে। এখানে আসার পর আমাদের সকল ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

InShot_20230628_162613843.jpg

আচ্ছা এবার রাত মোহনা সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পেছনের যে কারণটা আমি শুনেছিলাম সেটাই এখন আপনাদের সাথে বলতে চাই। ইংরেজ আমলে ওই জায়গায় নাকি কিছু সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ছিল যারা ছিল উগ্রবাদী। উগ্রবাদী বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য তারা সবসময় সংগ্রাম করত তবে এই সাঁওতাল জনগোষ্ঠীগুলো অতি নিম্ন জাতি বলে তাদেরকে যোগ্য সম্মান কখনই দেয়া হয়নি। বরঞ্চ সবসময় তাদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এই সাঁতার জনগোষ্ঠীদের ভেতরেও কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী ছিলেন যারা এই মানুষগুলোর পেছনে থেকে কাজ করতেন কখনো সামনে আসতেন না সংগ্রামের জন্য। কারণ তারা নিজেরাও ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি করতো। যাইহোক এইসব বুদ্ধিজীবী লোকজন গুলো এই আতঙ্কবাদী লোকদের সমস্ত তথ্য দিত এবং তারা সেই মতো কাজ করত। একবার নাকি বলা হয়েছিল যে সুবর্ণ রেখা নদীর উপর অবস্থিত এই রাত মোহন ব্রীজ টা কে ভেঙে দেয়ার জন্য। এতে করে ইংরেজদের যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা বিচ্ছিন্ন হবে। আর এই কথা শুনে সেই সাঁওতাল গোষ্ঠীর কিছু লোক ব্রীজের নিচে টাইম বোম ফিট করে এসেছিল এবং কিছু সময়ের ভিতর সেই ব্রিজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

20230224_151756.jpg

তবে এই সংগ্রাম করেও আসলে তাদের কোন লাভ হয়েছিল না। তারা অর্থাৎ ইংরেজরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে যায় এই সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের উপর। এটাই আসলে ছিল এই ব্রিজ ভাঙার পিছনের গল্প। তবে জায়গাটাতে গিয়ে আমাদের অনেক বেশি ভালো লেগেছিল এবং মনে হচ্ছিল যে আরও কিছু সময় সেখানে বসে থাকি। তবে যেহেতু আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে এসেছিল তাই আমরা খুব বেশি সময় সেখানে বসে থাকতে পারিনি। আপনার একটু ভালো করে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে জলের রং গাঢ় সবুজ রঙের। এর পেছনের যে কারণ ছিল সেটা হল এই জলের নিচে ছিল অসংখ্য অ্যালগি। যেটার কারণে জল অতিরিক্ত মাত্রায় সবুজ দেখাচ্ছিল। তবে আমরা প্রথমদিকে বুঝতে না পারলেও জলের খুব কাছাকাছি গিয়ে ব্যাপারটা খুব সুন্দর করে বুঝেছিলাম। এখানকার জল এতটা স্বচ্ছ এবং ঠান্ডা ছিল যে মনে হচ্ছিল যে নেমে গিয়ে কিছু সময় স্নান করে আসি। তবে সত্যি কথা বলতে সেরকম কোনো অনুকূল পরিস্থিতি আমাদের ছিল না।

20230224_151832.jpg

সিদ্ধেশ্বর পাহাড় থেকে ঘুরে আমাদের এই জায়গায় আসতে মোটামুটি কুড়ি মিনিটের মতো সময় লেগেছিল গাড়িতে তবে পাহার আর জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গাটা পাড়ি দিয়ে আসতে আমাদের যথেষ্ট ভালো লাগছিল। আপনারা প্রত্যেকেই জানেন যে আমি ঘোরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। তাই এই সব জায়গা ঘুরতে একেবারেই মিস করি না, সে যতই টাকা খরচ হোক না কেন। মোটামুটি এই জায়গায় আমরা ঘন্টাখানেক সময় ধরে ছিলাম। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন এই জায়গাটাতে প্রচুর লোক স্নান করছিল এবং এত আনন্দের সাথে স্নান করছিল সেটা আমি খুব ভালো করে অনুধাবন করতে পারছিলাম। আসলে এই নদীর জল এতটাই ঠান্ডা ছিল যে আমি প্রায় আধা ঘন্টা ধরে জলে পা ভিজিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। এর ফলে আমার বিগত দুই দিনের ক্লান্তি এই সময়ের ভিতর নিমিষেই শেষ হয়ে গেছিল। যাইহোক এরই মধ্য দিয়ে আমার ঘাটশিলা ভ্রমণের সমস্ত পর্ব শেষ হয়ে গেল। তবে আরও একটা পর্ব শেয়ার করব সেটা অন্যভাবে তাই ওটাকে আর লিস্ট এর ভিতর রাখলাম না। যারা এতদিন আমার সাথে এই জার্নিতে ছিলেন, তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

20230224_151847.jpg

20230224_151952.jpg

20230224_151956.jpg

20230224_152005.jpg

20230224_151851.jpg

যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট।
ডিভাইসSamsung Galaxy M31s
ফটোগ্রাফার@rupaie22
লোকেশনঘাটশিলা, ঝাড়খণ্ড।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য খুব চমৎকারভাবে উপভোগ করেছেন আপনি। এমন পরিবেশে সময় কাটাতে পারলে খুবই ভালো লাগে। লেকে স্নান করার অনুভূতি সত্যিই বেশ দুর্দান্ত। প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি খুবই দুর্দান্ত ছিলো। এত চমৎকার মুহূর্ত অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Congratulations...!!! Your Post Selected Got Upvote %
By: Urdu Community cruated by @yousafharoonkhan


Join our steemit Facebook page steemit community to promote the steemit all over the world, and keep continue your quality writing content on steemit


image.png

Subscribe URDU COMMUNITY

Quick Delegation Links

50SP100SP150SP200SP500SP1000SP1500SP2000SP

Our mission to promote Steemit in Urdu Community to all over the world
Stay together
Join the Urdu Community with more confidence.
Steem On

Join our steemit Facebook page steemit community

 last year 

সত্যি ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ লাগছে। এত সুন্দর একটি পরিবেশে গিয়ে তোমাদের আসতে না চাওয়ারই কথা ,আমারই তাই মনে হচ্ছে ছবির মধ্যে ঢুকে গিয়ে ওইখানে বসে থাকি। নদীর জলটা অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। এখান থেকে পরিষ্কার স্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে অ্যালগি গুলো দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর লাগছিল। তবে রাত মোহনা সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পেছনে ঘটনাটি শুনে বেশ খারাপ লাগলো ,সুন্দর একটি সেতু বোমা ফিট করে ভেঙে দেওয়া হল।

 last year 

আসলে এমন জায়গায় ঘুরতে গেলে মন এমনিতেই সতেজ হয়ে যায়। এমন পরিষ্কার পানি দেখলেই তো পানিতে নেমে ইচ্ছেমতো গোসল করতে ইচ্ছে করে। ব্রিজ ভাঙ্গার গল্পটি আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম। এতো সুন্দর জায়গা দেখে ট্যুরে যেতে ইচ্ছে করছে ভাই।যাইহোক এমন চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62255.52
ETH 2449.42
USDT 1.00
SBD 2.63