পিতৃ দিবস উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে লেখা আমার কিছু অভিব্যক্তি ।। ১০% shy-fox এবং ৫% abb-school এর জন্য বরাদ্দ।
বাবাকে নিয়ে আসলেই কি এত অল্প কথায় লেখে শেষ করা যায়..…? আমার তো মনে হয়না সেটা কোনো প্রকারেই সম্ভব। তবে যেহেতু আজ পিতৃ দিবস তাই কিছুটা হলেও লিখব। এতদিন বাবাকে না বলা কিছু কথা হয়তো কিছুটা আপনাদের সামনে তুলে ধরে হালকা হতে পারবো। তবে এর আগে আমি বাবাকে নিয়ে কোথাও কিছু লিখিনি। এই প্রথমবার।
আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় এবং সকলের পছন্দের @shuvo35 ভাই আমাকে লেভেল ওয়ান এর ভাইভাতে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, বডিতে সর্বোচ্চ কত ক্যারেক্টার লেখা যাবে...…? আমি উত্তরে বলেছিলাম বডিতে সর্বোচ্চ ৬৫৫৩৬ ক্যারেক্টার লেখা যায়। তবে বাবাকে নিয়ে কি আসলেই এই স্বল্প পরিসরের ক্যারেক্টার এর মধ্যে লেখা সম্ভব। বাবাকে নিয়ে যদি আমি লেখা শুরু করি তাহলে শুরু করতে করতেই সব ক্যারেক্টার শেষ হয়ে যাবে এবং লেখার শুরু হবে মাত্র তখনও।
ছোটোবেলা থেকেই আমি বাবাকে খুব কম কাছে পেয়েছি। বেশিরভাগ সময়ই মা কাছে থাকতো। তবে যখন ক্লাস ইলেভেন এ উঠেছি, তখন থেকে তো একদমই আর কাছে পাইনি বললেই চলে। বাবা চলে যায় বিদেশ কাজের জন্য। আর আমি মা আর ভাই দেশে। আপনারা জানলে সত্যিই অবাক হবেন বিগত পাঁচ বছর হয়ে গেল বাবার সাথে আমার দেখা হয়না। ওই যা ফোনে কথা হয়, কেমন আছি, খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক মত করে কিনা, পড়াশোনা ঠিকঠাক চলছে কিনা এইসব আর কি।
বাবার তখনও সরকারি চাকরি হয়নি। আমি তখন খুব ছোট, দেখতাম বাবা কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতো। যেহেতু গ্রামে থাকতাম সুতরাং কারেন্টের তেমন কোন সুব্যবস্থা ছিল না। পড়াতে পড়াতে ঘেমে গেছে আমার বাবা তাও থেমে থাকেনি কীকরে টাকা উপার্জন করে আমাদের মুখে হাসি ফোটানো যায়, কি করলে আমরা ভালো থাকবো এটাই ছিল আমার বাবার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তখন।
দুর্গা পুজো আসলে আমাদের সবার মনের মধ্যে এক অন্যরকম উৎফুল্লতা কাজ করতো। নতুন জামা হবে, নতুন প্যান্ট জুতো হবে। কিন্তু আমি দেখেছি বাবার মুখ শুকিয়ে গেছে তখন। কি করে আমাদের এই সব ইচ্ছা পূরণ করবে সে। পূজোর ঠিক দুই দিন আগে আমাদের সব নতুন জামাকাপড় এসে হাজির হতো। তবে মা, বাবার কষ্ট বুঝত, তাই বলতো আমাকে দিতে হবে না কিছু শুধু ছেলেদের দিলেই হবে। কিন্তু বাবা সবার ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দিত যতই কষ্ট হোক না কেন।
আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি পূজোর দিনও ছেঁড়া গেঞ্জির উপরে আগের বছরের পুরনো জামা পরে পূজোয় ঘুরতে দেখেছি আমার বাবাকে আমাদের সাথে। আমি তো তখন তেমন কিছু বুঝিনা। মা বলত অন্তত একটা নতুন গেঞ্জি তো কিনতে পারতে তুমি। কিন্তু বাবা হাসিমুখে বলতো আর কিছুদিন যাক তারপর একটা নতুন জামা নাহয় কিনে নেব। কিন্তু ওই আর কিছুদিন যে কবে হয়েছে তা আমার এখনো মনে পড়ে না। একটা চটিকে আমি কয়েকবার সেলাই করে পরতে দেখেছি আমার বাবাকে।
জল খাওয়া নিয়ে প্রচন্ড বকা দিত আমায় আমার বাবা। কারণ ছোটবেলায় আমি খুব জল কম খেতাম। বাবা বলত জল কম খেলে নাকি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তখন তো আর বুঝতাম না যে কিডনি কি জিনিস। আর পড়ালেখা নিয়েতো সব সময় বকার উপর থাকতাম। কারণ পড়াশুনোর প্রতি আমার ইচ্ছা একেবারেই ছিল না ছোটবেলায়। বাবার ভয় ছিল যদি বড়ো হয়ে ঠিক করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারি, মানুষের মতো মানুষ না হতে পারি।
আমার বাবা আমাকে জীবনে খুব বড় একটা শিক্ষা দিয়েছে তা হল বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এবং এই শিক্ষাটা অনেকটাই আমার বাবাকে দেখেই শিখেছি। নিজে খেতে পারছে না,ঘরে খাওয়ার তেমন কিছু নেই, তাও কেউ কিছু চাইতে আসলে কখনো নেই বলতে শুনিনি। সামান্য কিছু থাকলেও দিয়ে দিত। মানুষকে নিয়ে নিন্দা করার ঘোর বিরোধী আমার বাবা।
বাবা শুধু একটি জায়গায় অটল ছিল তা শুধু আমার পড়াশোনা। এই জায়গাটা কখনো বাবা কনসিডার করেনি আমাকে। আমার তখন বাবার উপর রাগ হতো খুব, বাবা সব সময় পড়াশোনা নিয়েই কেন ঝগড়া করত। আমার তখন মনে হতো পৃথিবীতে আমার বাবাই সবচেয়ে খারাপ বাকি সবার বাবা ভালো। কিন্তু এখন বুঝি বাবার ঝগড়া করার পেছনের কারণ।
মা কে আমি অনেকবার বলেছি "খুব ভালোবাসি মা তোমাকে"। কিন্তু জীবন যুদ্ধে সব সময় যে আমাদের পেছনে ছায়ার মত আছে, তাকে কখনো বলা হয়নি ভালোবাসার কথা, কখনো বলা হয়নি বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসি। হয়তো বললেও এটা শুনিয়ে দেবে যে এত আদিখ্যেতা না করে নিজের কাজে মনোযোগ দাও। ভালো করে পড়াশুনা শেষ করে একটা ভালো চাকরির চেষ্টা করো। সত্যিই বাবারা এমনই হয়, মচকে যায় কিন্তু ভাঙে না। তবে আমি আজ গর্বের সাথে আমার বাবাকে ফোনে বলেছি "খুব ভালোবাসি বাবা তোমাকে" কিন্তু ফোনের ওপার থেকে বাবার মুখের রিয়াকশন কি সেটা আমি দেখতে পারিনি। হয়তো খুব খুশি হয়েছে কথাটা শুনে।
আসলে বাবা সম্পর্কে বলতে গেলে কথা বলা শেষ হবে না কখনোই। এরকম করে চলতেই থাকবে। তবে আর বেশি কিছু বলতে চাইনা আমি। আশাকরি কিছুটা হলেও হয়তো আপনাদের সাথে বলতে পেরেছি। নিজেকে একটু হালকা লাগছে এখন। আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। ভাল থাকবেন সবাই।
মধ্যবিত্ত প্রত্যেকটা বাবার গল্প যেন একই রকম । আপনার লেখাটি পড়তে পড়তে কখন যেন চোখের কোনে পানি জমেছে । বাবা নামের এই লোকটা সারা জীবন কষ্ট করে গেছে । কিন্তু কখনো তাকে এভাবে বলা হয়নি । সমস্যা হচ্ছে এখন বলতে ইচ্ছা করলেও সে সুযোগ নেই । কারণ তিনি আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছেন । ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত বাবারা । চমৎকার লিখেছেন ।
আপনার বাবার আত্মার শান্তি কামনা করছি ভাই। তিনি যেখানেই থাকেননা কেন সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে অনেক বেশি ভালো রাখেন। আপনার মন্তব্য সব সময় আমার কাছে ভালো লাগে। তবে আজকের মন্তব্যটা পড়ে অনেকটা ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। শুভকামনা রইল । খুব ভালো থাকবেন আপনি।
বাবা নামের এই মানুষগুলোর কথা কি বলবো এদের যেন কোন দুঃখ কষ্ট নেই এদের কোনো ক্লান্তি নেই এরা শুধু সারাজীবন সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে দেয় আর মধ্যবিত্তদের কথাতো সম্পূর্ণই আলাদা। কষ্টের মাঝেই চলে যায় সারাটা জীবন। আজও মুখ ফুটে বলতে পারিনি বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। খুবই সুন্দর লিখেছেন খুবই ভালো লাগলো। ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা
এটা আমার জন্য সৌভাগ্য যে আপনি আমার লেখাটা পড়েছেন। খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। খুব ভালো থাকবেন আপনি।
আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। প্রথমে আপনাকে বাবা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সকল বাবাদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। এত চমৎকার পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পুরো পোষ্টটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য। আসলে আপনাদের এই মন্তব্য গুলো আমাকে নতুন এবং ভাল কিছু লেখার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন আপনি। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।