অভিশপ্ত কুয়ো( 💠দ্বিতীয় পর্ব💠)।। নভেম্বর-১৫/১১/২০২২।।

অনেকটাই জার্নি হয়েছিল আজ সারাদিন। তারপর আবার আগামীকাল সকালে আমার অফিসে জয়েনিং আছে, একথা চিন্তা করে রাতে ঠিকঠাক ঘুমও হয়নি। সুতরাং বড্ড ক্লান্ত ভাব নিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। বেশ সুন্দর এবং সাজানো গোছানো একটি চায়ের দোকান।সেখানে বসার জন্য মাত্র দুটি বেঞ্চ এবং ছোট্ট একটা মাটির চুলায় স্টিলের পাত্রে জাল দেয়া হচ্ছে চাপাতি। দোকানদারকে বললাম আদা দিয়ে এক কাপ চা দেওয়ার জন্য। দোকানদার ছাড়াও চায়ের দোকানে আরো দুজন মুরুব্বী বসে ছিল, তবে তারা আমার দিকে খুব বেশি একটা গুরুত্ব না দিয়ে তাদের নিজেদের ভিতরে কথা বলছিল। ধোঁয়া ওঠা গরম চা হাতে পেয়ে এক চুমুক দিয়ে বেশ কিছুটা ক্লান্তি ভাব দূর হলো। গ্রামের মানুষের খুব কমন একটা অভ্যাস রয়েছে সেটা হল শহরের মানুষ গ্রামে গেলেই তারা প্রথমে জিজ্ঞাসা করে কার বাড়িতে এসেছেন, কোথা থেকে এসেছেন, কি কাজে এসেছেন, এই সব আর কি। সেই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য চায়ের দোকানদার আমাকে জিজ্ঞাসা করল এত রাতে আপনি কার বাড়ি এসেছেন। আগে তো এখানে কোনোদিন দেখিনি।

বেশ কয়েকবার মনে হচ্ছিল, চুপ করে এখান থেকে চা খেয়ে বেরিয়ে যাই। আবার মনে হল, আমি তো ঠিকঠাক এড্রেসই জানিনা। সুতরাং সঠিক ইনফরমেশন জানার জন্য তাদের থেকে সাহায্য লাগবে আমার। এজন্য সব কথাই গড়গড় করে বলে দিলাম। আমি আসলে আপনাদের এলাকার পোস্ট অফিসে পোস্টমাস্টার পদে নিয়োগ হয়েছি এবং আমার বন্ধুর অনুরোধে এখানকার রাজবাড়িতে কিছুদিন থাকার জন্য এসেছি আর কি। তারপর নিজের বাড়ি ঠিক হয়ে গেলে সেখানে উঠবো। আপাতত এখানে ওঠার জন্য কোন জায়গা পায়নি জন্য সেখানে যেতে হচ্ছে। এই কথা শুনে যে দুজন মুরুব্বী ওখানে বসে ছিল তারা কথা থামিয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। আর চায়ের দোকানদার তো এমন ভাবে তাকিয়ে রইল যেন সে ভূত দেখেছে। আমি নিজেও এরকম কিছু এক্সপেক্ট করেছিলাম, কারণ স্টেশন থেকে আসার সময়ই দু একটা কথা শুনেছিলাম এই বাড়ি নিয়ে আর এখানে আসলে এরকম এক্সপ্রেশন পাবো এটাই তো স্বাভাবিক।

যাইহোক দোকানে বসে থাকা দুইজন মুরুব্বির ভিতর বেশ জ্ঞানী দেখতে একজন আমাকে বলে উঠলো, আপনি এত জায়গা থাকতে ওখানে কেন যাবেন। জায়গাটা খুব বেশি ভালো না। বিগত ১৫ বছর ধরে সেই বাড়িতে কেউ থাকেনা, শুধুমাত্র একজন কেয়ারটেকার ছাড়া। আর সন্ধ্যা হলে তো ওই বাড়ির আশেপাশে কাউকে দেখাও যায় না। অনেকটা জঙ্গলের ভেতরে জন্য কেউ সাহস করে যায়ও না সেখানে। ভূতের ভয় নাহয় বাদই দিলাম, তবে সেখানে তো বিষাক্ত সাপের ভয়ও থাকতে পারে।

এইবার আমি কিছুটা ভয় পেলাম, কারন ভূতের ভয় না হয় বাদই দিলাম, কারণ আমি বিশ্বাস করি না ভূতে। কিন্তু সাপের ভয় তো রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলাম সেখানে গিয়ে যদি আমার জায়গা পছন্দ না হয় তাহলে ওই রাতেই আবার ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরব। পরের দিন না হয় সকালে এখান থেকে গিয়ে অফিস ধরবো, তারপর দেখা যাবে কি করা যায়। মোটামুটি অনেকটা কথার তোয়াক্কা করে চায়ের দোকানে বসে থাকা মুরুব্বীদের থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। আসলে জঙ্গল বললে ভুল হবে অনেকটাই ঝোপ ঝাড় এবং আগাছা দিয়ে ভর্তি। এদিকে হাতে কোনো টর্চ লাইট নেই তাই মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিকে।

আমাকে বলা হয়েছিল সোজা রাস্তা ধরে ১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই তারপর একটা পরিত্যক্ত পুকুর এবং সেই পুকুরের পাড় ঘেঁষে দক্ষিণ দিকে আরো দশ মিনিট হাঁটলে তারপর একটা রাজ ফটোক দেখা যাবে। মোটামুটি ৫-৭ মিনিট হাঁটার পরে গায়ের ভিতর কেমন জানি কাটা দিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল অন্ধকার জঙ্গলের ভিতরেও কে আমাকে ফলো করছে এবং একনাগারে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি বুঝতেই পারছিলাম এটা আমার মনের ভুল তারপরও এত রাতে এই জঙ্গলে একা একা এরকম অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরেও অনেকটা সাহস নিয়ে মিনিট ১৫ পরে পুকুর পাড়ে এসে হাজির হলাম। ঘাট বাঁধানো একটি পুকুর। খুব সম্ভবত রাজবাড়ীর পুকুর হবে কারণ পুরো পুকুরটাই ছিল বাধানো এবং বেশ বড় তবে এখন সেটা পরিত্যক্ত। যতই ভেতর দিকে যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল জঙ্গল আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। তারপরও মনে অনেকটাই সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে যেতে লাগলাম পুকুরের দক্ষিণ দিক ঘেঁষে।

আরও মিনিট দশেক কাটার পরেই একটা ধ্বংসপ্রায় রাজবাড়ীর ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালাম।তবে ওরা যতটা খারাপ বলেছিল বাড়ি দেখে আমার ততটা খারাপ মনে হলো না। বেশ বড় এবং বাড়ির একটা সাইট খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো গোছানো। যাইহোক বাড়ির গেট ঠেলা দিতেই অনেকটা ক্যাচ ক্যাচ করে খুলে গেল গেট। এরপর জোরে জোরে চিৎকার করে করতে লাগলাম, বাড়িতে কেউ আছেন। দুই তিনবার জোরে জোরে চিৎকার করার পরও কারো সাড়া পেলাম না। তখন বুঝতে পারলাম বাড়ির কেয়ারটেকার হয়তো ঘুমিয়ে গেছে, কারণ রাত তো একেবারে কম হয়নি। ফলে আরো কয়েকবার জোরে জোরে চিৎকার করলাম। এইবার মনে হল ভেতর থেকে কেউ একজন সাড়া দিয়েছে এবং বলছে আসছি বাবু একটু দাঁড়ান। মিনিট পাঁচেক পর হারিকেন হাতে একজন লোক আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। দেহ প্রায় হাড্ডি সার অর্থাৎ লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে কঙ্কালের উপর কে যেন মানুষের চামড়া লাগিয়ে দিয়েছে এবং তার চোখগুলো কোঠরের ভিতর ঢোকানো। আমাকে দেখেই লোকটি একটু অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলল, বাবু আপনার এত দেরি হল যে... আমি তো আপনার জন্য সেই বিকাল থেকে অপেক্ষা করে বসে আছি। আপনার আপনার বন্ধু আমাকে ফোন করে আপনার কথা সব বলেছে। আপনার জন্য সব বন্দোবস্ত করে রেখেছি আপনি ভেতরে চলে আসুন।

যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।