খুব যত্ন করে চিঠিটা লিখেছিল অপু। রঙিন কাগজ, রঙিন খাম ,তার ভিতর লাল গোলাপের পাপড়ি। বৃষ্টি পড়ছে, শিমুল ফুলের গাছটা ভিজছে, হলুদ সাইকেলটা ভিজছে, অপু ভিজছে, অপুর বুক পকেটে রাখা চিঠিটাও একনাগারে ভিজে চলেছে। দুর্গা কি তাহলে ইচ্ছে করেই ওর কাকুর সঙ্গে আজকে এল পড়তে? তাহলে দুর্গার চোখের ভিতর যে অনুভূতির ছোঁয়া-অপু দেখেছিল সে সবই মিথ্যা ছিল? তাকে দেখে মুচকি হাঁসি,বাঁকা চোখে তাকানো সবই কি মিথ্যা ছিল..? মফস্বলের কালো আকাশ আর বৃষ্টি সাক্ষী থাকলো এক প্রেমিক কিশোরের ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের। অপু এটা দেখে স্থির হয়ে গিয়েছিল, বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল না ,বৃষ্টিতে ভিজলে ওর ক্ষতি হবে জেনেও ও চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো।
এভাবে সে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল নিজেরই মনে নেই, বহুক্ষণ বাদে দেখলো একটা লাল ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসছে রাঙা পায়ে আলতা পরা এক সুন্দরী রমণী। যদিও তখনও ছাতির আড়ালে তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়নি। তবে এটা ঠিকই অনুমান করতে পারছিলো অপু যে, ছাতা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে আসতেই তার মুখটা অপুর খুব সুন্দর করে মনে পড়ে গেল। এ হলো তার স্কুল লাইফের বান্ধবী বনলতা। কিন্তু হঠাৎ এতদিন পর তাকে দেখে অপু বেশ কিছুটা অবাক হল।
বনলতা দূর্গার সাথে একসঙ্গে বাংলা পড়ে এটা আপু আজ জানতে পারলো। যদিও আপু ব্যাপারটা দুর্গার কাছে কখনো জানতে চাইনি আর দুর্গাও আগ বাড়িয়ে তেমন কিছু বলেনি। বনলতার সঙ্গে খুব বেশি বন্ধুত্ব না থাকলেও মাঝেমধ্যে কথা হতো, একটু শান্ত স্বভাবের মেয়ে। অপুকে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে বনলতা অপুর সামনে এসে দাঁড়ালো। বনলতা ওকে জিজ্ঞাসা করল,"কিরে এখানে দাঁড়িয়ে পাগলের মত ভিজছিস কেন? তোর ঠান্ডার সমস্যা কিন্তু বেড়ে যাবে!" অপু আশ্চর্য হল ,ওর যে ঠান্ডার সমস্যা আছে সে কথা তো বনলতার জানার কথা না তাহলে সে জানলো কি করে? অনেকটা কৌতুহল হয়ে অপু জিজ্ঞাসা করলো,
"তুই কি করে জানলি আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে?"
অনেকটা হেসেই বনলতা উত্তর দিলো "এগুলো মেয়েদের সিক্রেট, মেয়েরা সব জানে!"এই বলে খিল খিল করে হেসে উঠলো বনলতা।
আয়, আমার ছাতার নিচে আয় তোকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিই।"
"না তার দরকার হবে না, এমনিতেই তো পুরোটা ভিজে গেছি ,আমি নিজেই চলে যাব, বললো অপু।"
"থাক অত আর হিরোগিরি দেখাতে হবে না, এখনই তো চোখগুলো লাল হয়ে গেছে। আয় বলছি।" ভাবল সত্যিই আর বোকার মত দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই এবার বরং বাড়িই ফেরা যাক। বনলতার ছাতার নিচে অপু এসে দাঁড়ালো, তারপর দুজনে হাঁটতে লাগলো বাড়ির দিকে।
দুজন রাস্তা ধরে বৃষ্টিতে ভিজছিল আর স্কুল জীবনের সেই পুরনো দিনের কথাগুলো এক এক করে মনে করছিল আর হাসিতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল বনলতা। কেন জানি না অপুর এই ব্যাপার গুলো খুবই ভালো লাগছিল। অপু দু একবার দুর্গার কথা তাকে বলার চেষ্টা করেও থেমে গেছিল। কিন্তু বনলতা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। তবে সে দিকে গুরুত্ব না দিয়েই দুজন বৃষ্টিতে পা ভেজাতে ভেজাতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। এখন কোথায় থাকে, কারো সাথে প্রেম করে কিনা এইসব বিষয়েই জানতে চাইছিল অপু বনলতার কাছ থেকে। এতে করে বনলতা অবাক না হয়ে বেশ কিছুটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, নারে এখনও প্রেম করে হয়ে ওঠাও হয়নি। আসলে এখন আর কাউকে ভালো লাগেনা। কেমন যেনো ভয় করে। হঠাৎ করে এই কথার মাঝে বনলতা অপুকে জিজ্ঞাসা করল তুই নিশ্চয়ই দুর্গার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি তাই না। অনেকটাই লজ্জায় পড়ে অপু বনলতা কে জিজ্ঞাসা করল, তুই কি করে বুঝলি। তখন সে আবার সেই পুরনো ডায়লগ টা দেয় এগুলো মেয়েদের সিক্রেট। তারপরও অপু বললো, বলনা কি করে বুঝতে পারলি। বনলতা বলল তুই যেভাবে পড়ার ব্যাচের সামনে দুর্গার জন্য দাঁড়িয়ে থাকিস বা যখন দুর্গা পড়তে আসে তখন ওর দিকে যেভাবে হা করে তাকিয়ে থাকিস তাতে যে কেউ বুঝতে পারবে।
সোর্স
অপুর সাদা জামার পকেটটা বৃষ্টিতে ভিজে অনেকটাই সচ্ছ হয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে দুর্গার জন্য লেখা একটা প্রেমপত্র স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। বনলতা সেটা দেখতে পেয়ে অপুকে জিজ্ঞাসা করে দুর্গার জন্য লিখেছিস বুঝি..? দে আমাকে আমি ওর কাছে অব্দি পৌঁছে দেব। অনেকটাই লজ্জার মুখে পড়ে যায় অপু। আরে না তেমন কিছু না, এটা বলে ব্যাপারটাকে অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করে অপু। কিন্তু বনলতা তো নাছোড়বান্দা, সে যে করেই হোক ব্যাপারটা জেনে নেয় এবং বলে আমার কাছে দে চিঠিটা চিন্তা করিস না আমি দুর্গা অব্দি পৌঁছে দেব, তোর দিব্যি। যাইহোক শেষ পর্যন্ত অপু চিঠিটা বনলতার হতে দেয়নি।
এইভাবে কথোপকথন চলতে থাকে এবং রাস্তা ধরে এগিয়ে তারা একটা শিমুল গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ায়। বনলতা বারবার ই অপুকে মনে করিয়ে দিতে থাকে তাদের স্কুলের পাশে ছোট যে পুকুরটা ছিল তার পাশে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো এবং একসাথে টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া। অপু ব্যাপারটাকে খুব সুন্দর করে উপভোগ করার চেষ্টা করছিল এবং তারও ব্যাপারগুলো মনে পড়ে অনেকটাই ভালো লাগছিল। এক পর্যায়ে কথোপকথন চলতে থাকায় তাদের ভিতর চোখাচোখি হয়। একই ছাতা নিচে দুইজন এবং অনর্গল বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে, আর মাঝেমধ্যে মেঘের গর্জন।
সোর্স
পড়া শেষ হওয়ার পর দুর্গা যখন বেরোলো তখনও ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। ছাতাটা খুলে হাঁটতে লাগলো। মনের মধ্যে একটা ক্ষিন আশা, এখনো কি অপু দাঁড়িয়ে আছে গাছের তলায়? এখনো কি সে অপেক্ষা করছে চিঠিটা দেবে বলে? এইসব ভাবতে ভাবতে যখন সে তিন রাস্তার মোড়ের শিমুল গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালো তখন সে দেখতে পেল একটা হলুদ সাইকেল, একটা লাল ছাতা, একটি কিশোরের হাতে একটি কিশোরীর হাত। মফস্বলের মেঘলা আকাশ জানতেও পারল না এই বৃষ্টি দিনে একটি কিশোরীর মনে গভীর অভিমান জমা হয়ে রইল।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের গল্পটা। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।
🕉️ধন্যবাদ সবাইকে🕉️
বনলতা এবং অপুর এই গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। অপু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজ ছিল। বনলতা তার ছাতা দিয়ে অপুকে সাহায্য করেছে। আমি একটা জিনিস বুঝলাম না বনলতা অপুর সব বিষয়গুলো কিভাবে জানতে পারলো। এই বিষয়টি জানার প্রতি আমার একটু বেশি আগ্রহ। বনলতা তো সবকিছু সিক্রেট বলে জানিয়ে দিল। কিন্তু আমার মাথায় এই সম্পর্কে কিছুই ঢুকলো না। এরকম কবিতা গুলো পড়তে খুবই ভালো লাগে। দুর্গা যখন পড়া শেষ হওয়ার পর বের হল তখন সেই ওপর কথা বলল এবং হঠাৎ কিছু একটা দেখতে পেল। সেই কিশোরীর মনে গভীর অভিমান জমা রয়ে গেল। এক কথায় অসাধারণ ছিল আপনার গল্পটি।
আসলে গল্পের কিছু কিছু জায়গায় অপূর্ণতা রাখা হয়েছে, যাতে করে পাঠক নিজে কিছু কল্পনা করতে পারে তার মনের মতো করে। ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ে এত সুন্দর গুছিয়ে একটা মন্তব্য করার জন্য।
এটা কি অনুগল্পই থাকবে? নাকি আরো পর্ব আসবে? মানে আমি উৎসুক রইলাম যে শেষে মিলনটা কার সাথে হবে বনলতা নাকি দুর্গা? আসলে বনলতার কেয়ারিং নেচারের জন্য ওকে কেমন যেনো ভালো লেগে গেলো আমার।
এটাই গল্পের শেষ। হটাৎ করে শুরু হয়ে আবার হটাৎ করেও শেষ হয়ে গেলো। গল্পের মধ্যে কিছুটা অপূর্ণতা রেখেছি, যাতে করে এই বিষয়ের উপর ইন্টারেস্ট থেকে যায়। তবে বনলতার হাত ধরেই যেহেতু বসেছিল সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় শেষ পর্যন্ত বনলতাই তার পছন্দের মানুষ হয়েছিল।
কি ব্যপার এত রোমাঞ্চ কোথা থেকে আসলো।রঙিন খাম, রঙিন চিঠি,লাল গোলাপের পাপড়ি,সবই রঙিন।আবার বৃষ্টির দিন সবই সুন্দর। আচ্ছা অপুটা কি আপনি😂?কি হইলো কাদের হাত দেখতে পেলে দূর্গা? 😂😂।ভালো ছিলো । আরকটা পর্ব রাখতে পারতেন।ধন্যবাদ
আর কোন পর্ব নেই, এখানেই শেষ।
আসলে এই গল্পটা নরমাল ভাবে পড়ে গেলে হবে না। একটুখানি চিন্তা ভাবনা করে পড়তে হবে।🤣 আপনি যত বেশি রোমান্টিক হবেন এই গল্পটা আপনার কাছে তত বেশি ভালো লাগবে।🤭 শেষ পর্যন্ত যে হাত দুটো এক হয়েছিল সেটা একটা অপু এবং অন্যটা বনলতার।
এটা হইলো না,মেঘের গর্জনে দূর্গা কে চিঠি না দিয়ে বনলতার হাত ধরা।দূর, আপনাকে পিঠানো উচিত। এত রোমাঞ্চ হলে চলবে না,চিঠি নিয়ে আসলো দূর্গার জন্য আর হাত ধরলো বনলতা। বুঝচ্ছি দূর্গা তাহলে আপনার😂
আমার কেউ না। আমি একা। তবে চরিত্র বানাতে আমার খুব ভালো লাগে।🤭🤭
গল্পটি অনুকল্প না হয়ে পর্ব ভিত্তিক হলে ভালো হতো। গল্পটির মাঝে অনেক না জানা বিষয় রয়ে গেছে। যেগুলো মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন করে খাচ্ছে। এখানে দুর্গা আর বনলতা দুজনকে আমার ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
আচ্ছা আমি পরবর্তী কোন এক সময় চেষ্টা করব এরকম একটা গল্প নিয়ে ধারাবাহিক পর্ব তৈরি করার জন্য। উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
বনলতা ও অপুর গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগল। রঙিন খাম, রঙিন চিঠি, তার ভিতরে লাল গোলাপের খাম অসাধারণ ছিল। আসলে বনলতা অপুর সম্পর্কে কিভাবে সব জানলো,এটা জানার আগ্রহ ছিল ।বনলতা অপুকে ছাতা নিয়ে সাহায্য করল।কাদেরের হাত দেখতে পেল দৃগা। গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটা গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য।
কিভাবে যে বনলতা সবকিছু আগে থেকেই জানতে পারতো বুঝলাম না। ও যেন মনের কথা পড়তে পারে। তবে হ্যাঁ বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসার ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে যেন সিনেমার কাহিনী। বনলতার কথাগুলো পড়তে পড়তে যেন একেবারে ক্যারেক্টারে ঢুকে পড়লাম। অপু আবার দুর্গার জন্য চিঠিও লিখল। যদিও বনলতার চিঠিটা নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করল কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপু বনলতা কে চিঠিটা দিল না। বনলতা আর আপুর গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।
কিছু কিছু জায়গায় আসলে ব্যাপারটা নিজের মত করে কল্পনা করে নিতে হবে। গল্পটা আসলে ওইভাবেই তৈরি করা। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।