আমাদের সরকারি কর্মযজ্ঞ
নমস্কার,,
আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। শীতের একটা ভাব মনে হয় এসে যাচ্ছে। এটা ঠিক দিনে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। তবে একটু রাত হলেও ঠান্ডার একটা অনুভুতি পাচ্ছি কয় দিন হলো। শেষ রাত হলে তো আর ফ্যান দিয়ে থাকায় যায় না। আমি তো রোজ চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাই।
মায়ের অফিসিয়াল কিছু কাজে আয়কর অফিস থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র দরকার ছিল। আমাকে কয়েকদিন ধরেই বলছিল আয়কর অফিসে গিয়ে কাজটা করে নিয়ে আসার জন্য। তো আজ সকাল সকাল আমাদের উপজেলায় যে আয়কর অফিসটা আছে সেখানে চলে যাই।
যাওয়ার আগে অবশ্য আমি কয়েকজনের কাছে শুনেছিলাম, এমনি এমনি কোন কাজ হবে না কিছু টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে নিতে হবে। আমি ভেবেছিলাম আগে অফিসে যাই তারপর বুঝেশুনে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। যাই হোক অফিসে পৌঁছানোর পর এক ভদ্রলোকের ডেস্ক এ গিয়ে বসি। সত্যি বলতে ওনার ব্যবহারটা ভীষণই আন্তরিক ছিল। আমার বেশ ভালো লাগলো। আমার সব কথা খুলে বললাম তাকে।
তারপর শুরু হলো সেই ভদ্র লোকের আমাকে বোঝানো। ওরে বাবারে বাবা। এটার ফাইন সেটার ফাইন সব কিছু মিলিয়ে আমাকে পাঁচ হাজার টাকার ওপর বিল ধরিয়ে দিলেন। তারপর সবশেষে এসে বললেন আসল কথা,, বলেন যে, "ভাই, এত টাকার হিসেব না করে আমি আছি অল্পের মাঝে কাজ সেরে দিচ্ছি। আমরা তো আছি সে জন্যই। আপনি আমার এলাকার ভাই, তাই বেশি ঝামেলায় যেন না পরেন সেই দিক আমাকে ভাবতে পারেন। আমি স্যার কে ম্যানেজ করে নেব নি। আপনি ১৬০০ টাকা দিয়েন সব মিলিয়ে।" উনি যে এমন কিছু বলবেন এটা আমার জানাই ছিল। আমার পরিচিত একজন ১ হাজার টাকা দিয়ে এই কাজটা করে নিয়েছেন। টাকা ছাড়া করতে গেলে নানান ঝামেলা পোহাতে হবে। আমার আবার দুই বছরের রিটার্ন দেওয়া নেই। তাই অত ঝামেলায় না গিয়ে আমি ৫০০ থেকে ওনাকে অফার করলাম। শেষমেষ ৮০০ টাকা দিয়ে তার সাথে সবকিছু মিটমাট করে আমি আমার কাগজপত্র তাকে জমা দিয়ে বাড়ি এসে নাকে তেল দিয়ে ঘুমালাম।
বিকালের দিকে ভদ্রলোক আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন আমার সমস্ত কাজ হয়ে গেছে। অফিস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে যেতে বললেন। আমিও সাথে সাথে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে আসলাম। সত্যি বলতে আমার এই কাজটার জন্য অর্থ দেয়ার কোন মানেই ছিল না। কিন্তু সেটা না দিলেই নানান ধরনের ভোগান্তির স্বীকার হতে হত। আর আমার কাজটাও জরুরী ছিল । তাই আর দেরি করি নাই। টাকা দিয়েই সেরে নিলাম।
আসলে সরকারি অফিসগুলোর এই ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মকর্তারা যেমন দায়ী, আমরা সাধারণ জনগণও ঠিক ততটাই দায়ী। আমার তো তাই মনে হয়। আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি বলেই এই মানুষগুলো দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বার বার। কিন্তু কি আর করার, জেনে শুনে কেউ ঝামেলায় জড়াতে চায় না। আমরা সাধারণ মানুষ না হয় বাধ্য হয়েই সব মেনে নিচ্ছি। কিন্তু সরকারি এই কর্মকর্তা বৃন্দ চাইলেই তো নিজের বিবেকের কাছে একবার ধরা দিতে পারেন। তাহলেই তো দেশের প্রশাসনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। তবে এই বাঙালি জাতির দ্বারা আদেও কি সেটা সম্ভব এটাই ভাববার বিষয়!
সাধারন জনগন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা সকলকেই তাদের মানষিকতার পরিবর্তন করতে হবে। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
ভালো লাগলো আপু আপনার মন্তব্যে পেয়ে। অনেক ভালো থাকবেন।
সত্যি বলতে ভাই এরকম সিচুয়েশনে আমরা সব সময়ই পড়তে হয়, কোন কাজ করতে হলে নিজেকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই অনেক সময় লোককে টাকা দিয়ে করাতে হয়। যদিও তার ডিমান্ড একটু বেশিই থাকে, যাই হোক কিছু টাকা গেলেও কাজটি সম্পন্ন করাটাই মুখ্য। আর নিজে নিজে করতে গেলেতো অনেক পেরেশানি হয়। ধন্যবাদ আপনাকে বাস্তব একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য।
এদের কাছে আমরা অনেকটা যেন অসহায় ভাই। কিছুই করার নেই হাতে। তবু এই অবস্থার উন্নতি হোক এমন টাই চাওয়া।
মানবতা ফিরে না আসলে কখনোই এই অবস্থার উন্নতি হবে না। ভাই ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।
আপনার মায়ের কাজে সাহায্য করার বিষয়টি সত্যি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে প্রত্যয়নপত্র এবং দরখাস্তটি আপনি যে নিয়ে এসেছিলেন সেই বিষয়টি অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আসলে সেখানে যাওয়ার আগে আপনি নাকি শুনেছিলেন এমনিতে কোন কাজ হয় না কিছু টাকা পয়সা লাগে। আমি মনে করি পৃথিবীতে এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে যারা কোন টাকা পয়সা বিনিময়ে কাজ করে না। আপনি ৮০০ টাকার বিনিময়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলেছিলেন এই বিষয়টা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
কি আর বলবো ভাই,, বাধ্য হয়েই করে নিতে হয়েছে কাজটা। না হলে উপায় ছিল না আর। অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।
যারা টাকার বিনিময়ে কাজ করেন তাদের কোন বিবেক আছে বলে আমার মনে হয় না, এগুলো সবসময় হয়ে আসছে আর হতেই থাকবে সাধারণ মানুষ এদের কাছে জিম্মি। কি আর করা তাও অল্পের উপর দিয়েই পার পেয়ে গেছেন ছোড়দা। এটা জেনে ভালো লাগছে যে মাসিমার কাজটা অবশেষে হয়েছে। বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ছোড়দা।
আসলে এমন ভাবে কাজ করাতে ইচ্ছে করে না বড়দি আবার না করিয়েও উপায় নেই। এই ব্যবস্থাপনার কাছে আমরা জিম্মি এক কথায়। অনেক ভালো থাকবেন বড়দি 🙏
ভা্ই সরকারি অফিস গুলোর এইসব কর্মকান্ড শুনতে শুনতে কান পচে গেল। আসলে আমরা কেউই নিজেরা ঝামেলায় পড়তে চাইনা তাই সবসময় টাকা দিয়ে অল্প সময়ে ঝামেলা বিহীন ভাবে কাজ করার জন্য ঘুষের অফারে রাজি হয়ে যাই। আপসোস কবে যে আমাদের দেশের এইসব দূর হবে।
অনেক দিন পর ভাইয়ের দেখা পেয়ে অনেক ভালো লাগলো। আশা করি ভালই আছেন। আর ভাই এই দেশ থেকে আমার মনে হয় না কখনো এসব দূর হবে। আমরা অভ্যস্ত এখন এসবের সাথে ।
হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা। এটা তো দেখছি ঢাকার নিউ মার্কেট এর মত অবস্থা। ১৫০০ টাকা দাম চাওয়াতে আপনি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকায় রাজি হয়েছে। সরকারি অফিসগুলো হলো ঘুষের আখড়াখানা। অবশ্য ঠিকই বলেছেন এর জন্য সাধারণ মানুষ ও দায়ী। কারণ তারা ঝামেলায় যেতে চায় না। টাকা দিয়েই সবকিছু মীমাংসা করতে চায়। এজন্যই এরা প্রশ্রয় পেরে আরো মাথায় উঠে। যাই হোক অবশেষে কাজ খুব সহজেই হয়ে গিয়েছে দেখে ভালো লাগলো।
আর বলেন না আপু, আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। হাসব নাকি কাদব! তবুও বাধ্য হয়ে করে নিতে হয়েছে । তবু যে ঝামেলা ছাড়া কাজটা করে দিয়েছে এতেই খুশি । ভালো থাকবেন আপু।