স্মৃতির পাতায় সেই মতিঝিল

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

নমস্কার,,

"ইল বাবা মতিঝিল,, পাঁচশ টাকার বান্ডিল 😀"।

লেখাটা পড়ে কারো হাসি পাক বা না পাক আমার বেশ হাসি পায় এখনও। এই কথাটার সাথে অনেক মজার মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার। ঢাকা শহরে প্রথম থাকা শুরু করি আমি ইউনিভার্সিটির কোচিং করতে এসে। আর আমি উদ্ভাসের মতিঝিল শাখায় ভর্তি হই। আমরা বেশ কয়েক জন বন্ধু মিলে এখানে থাকা শুরু করি। আমরা থাকতাম গোপীবাগ। ওখান থেকে দশ মিনিটের হাঁটা পথ ছিল আমাদের কোচিং পর্যন্ত।

মতিঝিলে শাপলা চত্বরের পাশে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়কে টিভিতে অথবা সামনা সামনি দেখেন নি এমন মানুষ কমই আছে বাংলাদেশে। তো আমরা যখন ঐ ব্যাংকের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসতাম এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে গুতো দিয়ে ব্যাংকের দিকে মুখ করিয়ে বলতাম, "ইল বাবা মতিঝিল,, পাঁচশ টাকার বান্ডিল 😀"। সাথে আরো নানান ধরনের কথা বের করে দুষ্টুমি শুরু হয়ে যেত। আহা কি ছিল সেই দিন গুলো !! 🤗

IMG_20221028_163442.jpg
Location

IMG20221028112840.jpg
Location

বলা যায় আজ মোটামুটি পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আবার মতিঝিলের ঐ রাস্তা দিয়ে হাঁটলাম। এর আগেও অনেকবার বাসে করে গিয়েছি এই শাপলা চত্বর দিয়ে কিন্তু পুরোনো স্মৃতি গুলোকে কখনো রোমন্থন করা হয় নি। আজ সকালে আরামবাগে একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েই আমার এক ভাগ্নে কে সাথে নিয়ে চারপাশ টা ঘুরতে শুরু করি।

সত্যি বলতে ঢাকায় অনেক জায়গাতে যাতায়াত থাকলেও মতিঝিল আমার জন্য বিশেষ কিছু। বাবা মায়ের শাসন থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম আমার এখানে ছুটে বেড়ানো। আর বয়স টাও ছিল দুষ্টুমির জন্য সেরা একটা বয়স। তাই এই কলোনী টা আমাকে একটু বেশিই নস্টালজিক করে ফেলে।

IMG20221028114531.jpg
Location

অনেক হেঁটেছি আজ। সচরাচর এত আমি কখনো হাটি না। রিকশাতে ঘোরা যেত হয়তো। কিন্তু একটু পর পর দাড়িয়ে পুরোনো সেই জায়গাগুলোতে হয়তো যাওয়া আর হতো না তাহলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম চিরচেনা ইত্তেফাক মোড়। অ্যাডমিশন টাইমে রোজ আসতাম এখানে। মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খেতাম। তারপর চলে যেতাম রামকৃষ্ণ মিশনে। আজকেও ঠিক ঐ মোড়ে বসে ঐ দোকানে বসে চা খেলাম। আগের সেই মানুষটাকে দেখতে পেলাম না। অচেনা কেউ বসে সেখানে।

IMG20221028114925.jpg
Location

IMG_20221028_224855.jpg
Location

তারপর গেলাম রামকৃষ্ণ মিশনে। প্রণাম করে কিছুটা সময় ভেতরে বসলাম। ভীষণ ভালো লাগছিল। আর ভাবছিলাম আগে রোজ সন্ধায় এখানে আসতাম বন্ধুদের নিয়ে প্রসাদ খাওয়ার লোভে। প্রার্থনায় বসতাম না খুব একটা, কিন্তু যখন প্রসাদ দেওয়া শুরু হতো ঠিক লাইনে দাড়িয়ে যেতাম 😅।

IMG_20221028_224934.jpg
Location

IMG20221028115937.jpg
Location

চেনা ঐ রাস্তা টা ধরে এগিয়ে গেলাম গোপীবাগের দিকে। যে বাসায় থাকতাম আমরা এখনও ঠিক আগের মতই আছে। তবে আশে পাশের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওখানে দাঁড়িয়ে মনে পরলো বাড়িওয়ালার সেই মিষ্টি মেয়েটার কথা। আমাদের এক ব্যাচ জুনিয়র ছিল। তিন তলা থেকে যখন নিচে নামতো আমরা বন্ধুরা মিছেমিছি এক কাজের বাহানা দিয়ে নিচে নামতাম দোতলা থেকে 😅। আরো কত যে দুষ্টুমি চলতো সবাই মিলে। কথা গুলো আজ ভাগ্নের সাথে বলছিলাম আর হাসছিলাম।

জীবনে কখন কোথায় কোন শহরে থাকব তার কোন ঠিক নেই। তবে মতিঝিলের এই চত্বর টা জুড়ে আমার যে স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেটা ঠিক আজকের মতই স্বর্ণালী হয়ে থাকবে সারা জীবন।

Sort:  
 3 years ago 

ইল বাবা মতিঝিল,, পাঁচশ টাকার বান্ডিল 😀"।

তারপর কি বাবাই ৫০০ টাকা দিতো?যাই হোক এই হতো তাহলে বন্ধুরা মিলে বাড়িয়ালার মেয়ের সাথে, তাই না।বাঁদর তো কম ছিলেন না।পোস্ট কিছু স্ক্রীনশট দিয়ে রাখলাম, পরে এগুলা বউ কে দেখাবো🤪।ঠ্যালা সামলিয়েন পরে।

 3 years ago 

ওরে বাবা এখানে যে পারিবারিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করছে এ কথা তো আমার মনেই ছিল না 😅,, নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেলাম মনে হচ্ছে 🤪

 3 years ago 

কেন ইল বাবার মতিঝিলে গেলে কি ৫০০ টাকা করে দিত? পুরোনো জায়গায় গেলে আসলেই নস্টালজিক হতে হয়। গতবার আমিও ফরিদপুর গিয়ে আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম অনেক বছর পর। চেনা জায়গা গুলো যতই পরিবর্তন হোক পুরোনো অনুভূতি গুলো ঠিকই থাকে। চাকরির ইন্টারভিউ কেমন হল? মিস্টি নিয়ে বাসায় আসতে পারবেন তো? দোয়া রইলো। বাড়িওয়ালার মেয়েটির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে😉?

 3 years ago 

আপু প্রতিমাসে ওই টাকাটা আমার বাবা দিত 😀। এই পুরাতন জায়গার স্মৃতিগুলো সব সময় আমাদের নস্টালজিক করে দেয়। আর আপু এটা তো সরকারি চাকরির পরীক্ষা ছিল , প্রিলি রিটেন ইন্টারভিউ বহুত নাটক,, তত দিনে আমি আউট 😉।
বাড়িওয়ালার মেয়েটির কথা আর মনে করতে চাই না আপু। ওখান থেকে চলে আসার তিন বছর পর খবর পেয়েছিলাম বিয়ে হয়ে গেছে ☹️☹️☹️।

 3 years ago 

আহা!কি মধুর স্মৃতির কথা, মনে হয়েছিল সেই শৈশবে ফিরে গেছি।শাপলা চত্বর বেশ সুন্দর কখনো দেখিনি। কোন একদিন হয়ত দেখবো,টিভি তে দেখেছি।যদিও ঢাকা তে কাজে গেছিলাম,যাওয়া-আসার মধ্যে ঘুরা হয়নি।আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখার সুযোগ হলো।

 3 years ago 

মাঝেমধ্যে ঢাকাতে এসে সময় করে সবদিকে ঘুরে বেড়াবেন আপু, অনেক ভালো লাগবে। খুব ভালো লাগলো আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে। অনেক ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

অতীতের সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করতে বেশ মজা লাগে। যেমন স্কুল ও কলেজ জীবনের স্মৃতি মানুষ কখনও ভুলে না ।অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

ইল বাবা কে দিয়ে পোস্ট শুরু করেছেন😆😆। পুরোনো জায়গায় গেলে আসলেই নস্টালজিক হতে হয়। এসব জায়গা বুন্ধদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো অনেক বেশি মনে করিয়ে দেয়। আপনি খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন। দেখে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

ঐ মুহুর্ত গুলো আসলে জীবনের সেরা মুহূর্ত। দিনগুলো মনে হলে স্বপ্নের মত লাগে একদম। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।

 3 years ago 

চেনা শহর চেনা পথ হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি সবমিলিয়ে দারুণ ভাই। কথাটা আমি প্রথম শুনলাম। বেশ মজার ছিল আমি হেসেছি। এই রকম স্মৃতি গুলো কখনোই ভুলে যাবার না ভাই। বলা যায় মতিঝিল আপনার প্রথম স্বাধীনতার শহর হা হা। সুন্দর ছিল।।

 3 years ago 

হ্যাঁ এটা একদম মনের কথা বলেছেন ভাই। আমার প্রথম স্বাধীনতার শহর হলো মতিঝিল 😊। তাই তো এত আবেগ জড়িয়ে আছে।

 3 years ago 

ইল বাবা মতিঝিল,, পাঁচশ টাকার বান্ডিল 😀"।

দাঁড়ান একটু হেসে নেই, কথাটি শুনে একটি গানের কথা মনে পরে গেল। যাই হোক অনেক চমৎকার একটি সময় কাটিয়েছেন। ঠিক বলেছেন যখন মা বাবার শাসন থেকে বেরিয়ে আসি তখন কিছু কিছু স্মৃতি আমাদের মাঝে জড়িয়ে থাকে। যেমন আমার পান্থপথ এলাকাটিতে আমি প্রথম মা-বাবা শাসন থেকে বেরিয়ে সেখানেই ছিলাম এবং সেখানে প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত করেছি। মাঝে মাঝে সেখানে গেলে অতিতের কথা মনে পরে যায়।

 3 years ago 

ঐ কথাটা এখনও বন্ধুদের সাথে বলি আর মজা করি। প্রথম স্বাধীনতার শহর বলা যায়। এই স্মৃতি গুলো সবসময় স্বর্ণালী হয়ে থাকবে সবার জীবনেই।

 3 years ago 

ইল বাবার মতিঝিল পাঁচশ টাকার বান্ডিল কথাটা যে শুনবে শুধু হাসবে। সত্যি পুরানো জায়গায় অনেক বছর পরে গেলেও অনুভূতিটি আসে। কারণ চেনা পরিবেশ অনেক ভালো লাগে। সেনা পরিবেশে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেল কিন্তু বাসা মালিকের মেয়ের কথাতো একটু ভুলেন নাই। আপনার এক ব্যাচ জুনিয়র মেয়েটির কি বিয়ে হয়ে গেছেনি। সত্যি অনেক সুন্দর করে আমাদের মাঝে অনুভূতিটি শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য।

 3 years ago 

হ্যাঁ আপু, বিয়ে নাকি হয়ে গেছে এমনটাই তো শুনেছিলাম কয়েক বছর আগে 😉। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। অনেক ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

 3 years ago 

ঠাকুর এবং স্বামীজী আমআর জীবনের আদর্শ।বাংলাদেশে ঠাকুরের এত বড় আশ্রম আছে দেখে আপ্লুত হলাম।ঠাকুরের আশ্রমে গেলে যে কোন উশৃঙ্খল মনও শান্ত হতে বাধ্য।কোন এক মায়াবী যআদু আছে সেখানে।আপনার পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন হয়েছে দেখে এবং পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন। একটা আধ্যাতিক ব্যাপার যেন কাজ করে এই পবিত্র জায়গা গুলোতে। সুন্দর মন্তব্য করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.34
JST 0.032
BTC 113074.91
ETH 4209.26
USDT 1.00
SBD 0.85