মুঠোফোন এক জাদুর বাক্স 😊
আধুনিক সমাজে বাজে রিংটোন
হাতে আমার এসে গেল জাদুর একটা বক্স
চিঠির কথা কেড়ে নিল ছোট্ট ইনবক্স
কেউ পাশে নাই বা থাকুক, ফোনটা কিন্তু চাই
সুখে দুঃখে হাতের কাছে বন্ধু তোমায় পাই
ফোনটা এখন ধ্যান জ্ঞান প্রাণের চাইতে প্রিয়
শেষ রাত্রেও তুমিই বন্ধু, ভালোবাসাটা নিও 😍🤪
একটা জাদুর বাক্স। হ্যাঁ, এটা একদম সত্যি কথা জীবনে প্রথম ফোন পাওয়া মানে অনেকটা জাদুর বাক্স হাতে পাওয়ার মত ছিল আমার কাছে। সম্ভবত ২০০৫ সালের কথা হবে হয়তো। একটা ফোন কেনার জন্য কত কান্নাকাটি, কত জেদ। তখন আশে পাশের বাড়ি গুলোতে সবে একটা করে মোবাইল ফোন হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কোন মোবাইল নেই। সেজন্যই বায়না টা এত বেশি ছিল। সে সময় বাইরের দোকান গুলোতে প্রতি মিনিট ৫ টাকা করে কথা বলতাম আত্মীয় স্বজনদের সাথে। অনেক দিন পর পর দুই তিন মিনিটের কথোপকথন । আহা কি যে এক উত্তেজনা কাজ করতো ভেতরে এটা শুধু সেই সময়কার মানুষই অনুভব করতে পারবে।
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাড়িতে একটা নতুন ফোন কেনা হলো। সেটি ছিল নোকিয়া ১১১০ মডেলের একটা ফোন। খুব সম্ভবত ২০০৫ সালেই এই নতুন মডেলটা নোকিয়া বাজারে নিয়ে আসে। দামটা ৫১০০ কিংবা ৫২০০ টাকা পরেছিল, ঠিক মনে নেই।
বেশ ছোট তখন আমি। বাবার সাথে করে যখন ফোনটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম আমার আনন্দ আর দেখে কে। পাগলের মত একাই যেন ফুর্তিতে হেসে চলেছি। আর বাড়ির গলিতে ঢুকতেই মা মা বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ডাকতে শুরু করে দিলাম, " মা এই দেখো আমাদেও ফোন হয়েছে। নতুন ফোন। নোকিয়া নোকিয়া 😅। "
আমার কান্ড দেখে মা আর দিদি খুব হেসেছিল সেইদিন। একদম স্পষ্ট মনে আছে সেই সন্ধ্যার কথা গুলো।
তো দোকান থেকে বলে দিয়েছে ফোন বন্ধ করে চার পাঁচ ঘণ্টা চার্জ দিতে হবে। তার আগে ঘাটাঘাটি করা যাবে না। সন্ধ্যা থেকে চার্জে বসিয়ে দিলাম। আধা ঘন্টা পর পর উকি দিয়ে দেখতে থাকতাম চার্জ টা হলো কিনা। মনের কৌতুহল যেন আর থামছেই না। অবশেষে যখন সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে গেল সাথে সাথে খুলে জনে জনে ফোন করতে শুরু করলাম। কি একটা বিশাল কান্ড যেন ঘটিয়ে ফেলেছি 😀। সবাইকে বড় মুখ করে ফোন দিয়ে বলছি, আমাদেরও নতুন ফোন হল আজ, এটা আমাদের বাড়ির ফোন নম্বর 😅।
এখনও মনে আছে প্রথম ফোন কেনার পর কয়েকদিন ঘুমানোর আগে আমার বালিশের পাশে টাওয়েল দিয়ে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছিলাম শুধু ফোনটা রাখার জন্য। হিহিহিহি। ছোট হলেও আমি একটু একটু চালাতে পারতাম ফোন। মা বাবা তেমন কিছু বুঝতো না। আমি তাদের ধরে ধরে শিখিয়ে দিতাম। ফোন আসলে সবুজ বাটন, আর কেটে দেওয়ার সময় লাল বাটন চাপতে হবে 😉।
ঐ সময় মোবাইলে সাপ খেলাটা মারাত্মক রকমের জনপ্রিয় ছিল। আমিও বাদ যাই নি এটা থেকে। পাগলের মত নেশা ছিল সাপ খেলার। সাপ যখন গোল গোল বল গুলো খেয়ে নিত তখন ফোস ফোস একটা আওয়াজ হতো। ওটা শুনতে দারুন মজা লাগতো আমার। আমাদের ঐ ফোনে তখন কেরাম খেলাও ছিল। ওটাও বেশ খেলতাম। মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে মারও খেয়েছি অনেক। কি যে দিন ছিল সেগুলো 😀।
সবচেয়ে বেশি মজা লাগতো আমার রিংটোন বাজিয়ে। গান তো আর বাজতো না তাই সারাদিনে কতবার করে রিংটোন বাজিয়ে যে শুনতাম! ওটাই এক আনন্দ। আবার কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে দশ টাকা দিয়ে পছন্দ মত গানের রিংটোন ভরিয়ে নিয়ে আসতাম। তারপর সারা দিন সেটা বাজিয়ে শুনতাম আর মায়ের মাথা পাগল করে দিতাম 😊।
বর্তমান সময়ে কেউ আর মিসড কল দেয় না একদমই। কিন্তু ঐ সময় টাতে মিসড কল দেওয়ার বেশ প্রচলন ছিল। আর আমরা চেনা পরিচিত সবাই মিলে মিসড কল ধরার খেলায় প্রতিযোগিতা করতাম। প্রথম প্রথম তো এত চালু ছিলাম না। মিসড কল দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছি অনেকবার। যথারীতি ব্যালেন্স অনেক কমে যেত। আর তখন কল রেট টাও অনেক বেশি। বাবা ফোনের ব্যালেন্স চেক করে যখন ১৫- ২০ টাকা করে কম পেত, কি বকা টাই না দিত! আর মায়ের তো বকার সাথে মার ফ্রী ছিল 😍।
এরকম কত স্মৃতি যে লুকিয়ে আছে জীবনের প্রথম মোবাইল টাকে ঘিরে! লিখতে নিলে শেষ হবে না সহজে। তবে দুঃখের বিষয় আমার এত সাধের ফোনটা বছর খানেক পরেই চুরি হয়ে যায় জানালা দিয়ে। খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন সত্যি। পরে নতুন ফোন আবার কেনা হলেও প্রথমবারের যে উৎসাহ কাজ করেছিল ভেতরে সেটা আর পাই নি একদমই।
আমার বাংলা ব্লগের প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন চমৎকার আর অভিনব একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আজ লিখতে বসে ফেলে আসা সেই দিন গুলো বড্ড বেশি নাড়া দিয়ে গেল ভেতর টাকে। প্রতিযোগিতার বিচারে হয়তো হাতে গোনা কয়েক জন নানান প্লেস অর্জন করবে। কিন্তু আমার মনে হয় নিজের সোনালী শৈশব স্মৃতিরোমন্থনে সবাই সবার জায়গা থেকে প্রথম 😊।
ঠিক বলেছেন রিংটোন শুনতাম আমার তো বাটন টিপে নাম্বার উঠানো যে আওয়াজ টা হত সেটা বেশি ভালো লাগতো।১ হতে শুরু সিরিয়ালি নাম্বার লিখতাম😜
হিহিহিহি মজার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন একদম 😀। আমিও এই কাজটা করতাম।
আপনার এই ফোনটা আমার প্রথম ফোন ছিল। অবশ্য খুব বেশিদিন চালাই নি। কারণ দুলাভাই ২/৩মাস পরই লন্ডন থেকে আসার সময় একটা স্যামসাং ফোন নিয়ে এসেছিল। ঠিক বলেছেন ওই সময়টায় মিস কল মিস কল খেলার একটা মজাই ছিল অন্যরকম। তাছাড়া সাপ গেমটা কি যে পাগলের মত খেলতাম। আপনার স্মৃতির সাথে আমার বেশ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
ভাই বোনের স্মৃতির বেশ মিল আছে দেখছি 🙏🙌। ফোন টাও মিলে গেছে। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য।