শেষ যাত্রা
নমষ্কার,,
প্রতিদিন রাত করে ঘুমানো টা আমার এক রকমের বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে বলা যায়। সকালে অনেক কষ্টে এ জন্য ঘুম থেকে উঠতে হয়। হঠাৎ করেই গতকাল ভোরে বাবা এসে আমাকে ডাকছে। আমি রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম। ভাবছি এমন মাঝরাতে হলো কি আবার! ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সময় তখন ভোর সাড়ে ছয় টা। বাবা বলল তোর সাধনদার মা মারা গেছে। অর্থাৎ বড়মা মারা গেছে।
সাধনদার মা বা বড়মা যাই বলি না কেন আমার হয়তো রক্তের কেউ নয় এরা। তবে যেভাবে ছোটবেলা থেকে তাদের সাথে থেকেছি এবং এখনো মিশি তাতে রক্তের থেকেও বেশি আপন। আমাদের পুরনো বাড়ির পাশের বাড়িতেই বড়মারা থাকেন। একদম ছোটবেলায় চার বছর বয়সে যখন গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি তখন থেকেই তাদের সাথে আমাদের এই সম্পর্ক। আমার মা চাকরিতে যাওয়ার আগে তাদের বাড়িতে আমাকে রেখে চলে যেতেন। বলা যায় ছোটবেলায় বড়মার হাতেই আমার সারাটা দিন কেটেছে এবং ওখানেই আমার খাওয়া দাওয়া হয়েছে। ওই বাড়ির প্রতিটা মানুষ আমাদের কখনোই বাইরের কেউ ভাবেনা।
বড়মার বয়স হয়েছিল মোটামুটি ভালই। কিছুদিন আগে হার্টের অসুখে হসপিটালে ভর্তি ছিলেন বেশ লম্বা সময় ধরে। সবাই ভেবেছিল তখনই হয়তো বা বাজে কিছু একটা হয়ে যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর শেষ তিন চার সপ্তাহ হলো তো অনেকটাই সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করতেন। আমরা রীতিমতো সবাই বলাবলি করছিলাম এই যাত্রায় হয়তো বেঁচে গেলেন বড়মা।
কিন্তু ঈশ্বরের লীলা খেলা বোঝা বড়ই মুশকিল। হঠাৎ করেই সন্ধ্যার পর বাথরুম থেকে রুমে আসতেই পড়ে যান। আর সাথে সাথেই পরপারে চলে যান। হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ডাক্তার বলেছে হার্ট অ্যাটাক।
তিন বছর হল আগের ওই বাড়িতে আর থাকি না আমরা। একটু ফাঁকেই নতুন বাড়ি করে আমরা উঠেছি সেখানে। তবে বড়মার সাথে দেখা হতো রোজ বিকালে। হঠাৎ করেই বড়মার এই চলে যাওয়াটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত রোজ সকালেই বড়মার কীর্তন শুনে ঘুম ভাঙতো। গতকাল আমি নিজে খোল বাজিয়ে যখন শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছিলাম বড়মাকে সেইসব দিনের কথা খুব মনে পড়ছিল। এইতো কয়েকদিন আগেই পিঠা বানিয়ে আমাকে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।
লেখার মত বা বলার মত আসলে কিছু নেই আজ আমার। ঈশ্বরের কাছে শুধু এটাই প্রার্থনা করি বড়মা যেখানেই থাকুক সব সময় যেন ভালো থাকে এবং সুস্থ থাকে। বড়মার আত্মাটা যেন শান্তি পায়। তার আশীর্বাদের হাতটা সবসময় যেন আমার মাথার উপর থাকে।
আপনার বড়মা চলে যাওয়ার কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো।আসলে একদিন সবাইকে হঠাৎ করেই চলে যেতে হবে।আসলেই অসুস্থ যখন ছিলো তখন কিছু হলো না সুস্থ হয়ে আসার পরই ডাক পরে গেলো চলে যাওয়ার।আসলে কিছু নেই মানুষ রক্তের সম্পর্ক না হলেও অনেক আপন মনে হয়।ভালো থাকুক।
মৃত্যু টাই হয়তো জীবনের প্রকৃত সত্যি আপু। বেচেঁ থাকার সময় টুকু তো নাটকীয়তায় ভরা। দোয়া করবেন আপু।
ভাইয়া আপনার বড়মা চলে যাওয়ায় অনেক খারাপ লাগল। আসলে ভাইয়া জন্ম নিলে মৃত্যু বরণ করতে হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সত্যি ভাইয়া ঈশ্বরের নীলা খেলা বুঝা মুশকিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
প্রকৃতির এই নিয়মগুলো বড্ড কঠিন আর কষ্টকর হয়ে থাকে আপু। মেনে নেওয়াই কষ্টের। দোয়া করবেন আপু।
কিছু কিছু সম্পর্ক রক্তের থেকেও বড় হয় তা বাইরে থেকে দেখলে আসলে বোঝা যায় না। হয়তো আপনার বড়মার সঙ্গে সম্পর্কটা এমনই ছিল। কিছু মানুষের চলে যাওয়া মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও কি আর করার মেনে নিতে হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে সবাই স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে যায়। কিন্তু কোথায় যেন একটা শূন্যতা রয়ে যায়। সেই শূন্যতা কোন কিছুতেই পূরণ হয় না।
একদম মনের কথাগুলোই বলেছেন আপু। কিছু শূন্যতা সারাজীবনের জন্য। হয়তো আমরা সব কিছুর সাথেই মানিয়ে নিতে পারি। তবে সব কিছুর পরেও কোথাও যেন একটা কমতি থেকেই যায় । দোয়া করবেন আপু।