আমাদের গল্প (১)
নমস্কার,,
"বিশ্বাস করো দাদা আমি বেশি সময় নেব না, ১০০ টা মাত্র নৈবিত্তিক প্রশ্ন আসবে, আমি ১৫ মিনিটের মাঝেই গোল্লা পূরণ করে ফেলব। আর সাথে সাথে আমার উত্তর পত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে যাব পরীক্ষার হল থেকে। তারপর আমরা দুই ভাই মিলে বাণিজ্য মেলায় যাব। তুমি প্লিজ আমার ফোন টা নিয়ে বাইরে একটু সময় অপেক্ষা করো। "
পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে অনেক কষ্টে এসব বলে তপু ওর বড় দাদাকে ম্যানেজ করলো বাইরে অপেক্ষা করার জন্য। তপুর ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা ছিল সেদিন। প্রিপারেশন খুব একটা ভালো ছিল না। তাই কোন রকমে পরীক্ষার হলে হাজিরা দিয়ে দুই ভাই মিলে আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা ঘুরতে যাবে। এমন টাই ওদের প্ল্যান।
যথারীতি তপু পরীক্ষার হলে ঢুকে গেল। আর বাইরে ওর বড় দাদা অপেক্ষা করতে লাগলো। তপুর সামনের সিট টা ফাঁকা। ঘন্টা পড়ে গেলে ক্লাসের শিক্ষ্ক পরীক্ষার জন্য উত্তর পত্র দিলেন। প্রশ্ন উত্তর পত্র দেখে তপুর রীতিমত মাথায় হাত। কারণ পুরো টাই লিখিত পরীক্ষা, সেখানে কোন নৈবিত্তিক অংশ নেই। আবার পরীক্ষার সময় টাও দুই ঘণ্টা। যেখানে তপু ভেবেছিল এক ঘণ্টার মধ্যেই সব খতম হয়ে যাবে। সচারচর অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় যেমন হয়। আশায় জল ঢেলে দিল পুরো। প্রশ্ন পড়ছে আর ভাবছে, "আজ তো দাদা অপেক্ষা করতে করতে মরবে, পরে আমাকেও মারবে। কোন দুঃখে যে আসলাম পরীক্ষার হলে!!!"
তপু আপন মনে দুই এক লাইন উত্তর লেখা শুরু করে দিল। থিওরি তে তপু বরাবরই বেশ ভালো গুছিয়ে লিখতে পারে। দশ মিনিট চলে গেছে ইতিমধ্যেই। হঠাৎ করেই তাড়াহুড়ো করে রুমে একটা মেয়ে ঢুকলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখলো তপুর সামনের ফাঁকা সিট টাই তার। তাড়াতাড়ি সেখানে এসে বসবে, এমন সময় তপুকে অনেকটা অবাক হয়ে বলছে,
" কি ব্যাপার তপু তুমি!!! !"
"হ্যাঁ আমি, কেন কি হয়েছে?"
"অ্যাডমিট পেলে কি করে?"
"নেট থেকে ডাউনলোড করেছি"
আর কথা না বাড়িয়ে মেয়েটা পরীক্ষা দিতে বসে গেল। তপুর মাথা কিছুতেই কাজ করছে না, মেয়েটা কি করে তাকে চেনে! এর আগে তো কখনো তার সাথে দেখা হয় নি। বেচারা তপু পরীক্ষা আর দেবে কি, মাথাতে মেয়ের ঐ দুটো বাক্য বনবন করে ঘুরছে।
একটু পর আবার মুখ টা ফিরিয়ে...
"তপু, তোমার কাছে জলের বোতল আছে কোন? তাড়াহুড়োতে হাপিয়ে গেছি।"
"না, নেই তো"
" কিছুই রাখো না দেখি সাথে, ধুরো। দাও তুমি পরীক্ষাই দাও।"
আবারো তপু বোকা সেজে গেল যেন। বারবার ভাবছে, এই মেয়েটা কি করে আমাকে এতো চিনে!
যাই হোক, চোখের পলকে দুই ঘণ্টা সময় শেষ। মোটামুটি সবগুলো প্রশ্ন তেই উত্তর করেছে তপু। খাতা টা ইচ্ছে করেই দেরি করে জমা দিচ্ছে। কারণ সামনের সেই মেয়েটা তখনও তাড়াহুড়ো করে লিখেই যাচ্ছে। হঠাৎ স্যার এসে দুজনের খাতাই টেনে নিয়ে চলে গেল। ধীরে ধীরে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তপুও গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে। ভাবছে মেয়েটাকে কি একবার ডেকে কথা বলবে কিনা। আসলে তপু মেয়েদের সাথে নিজে থেকে খুব মেশে না। তাই আগ বাড়িয়ে একবারও কথা বলতে যাচ্ছে না। তবে মনে মনে খুব করে চাইছে মেয়েটা যেন একবার তাকে পিছু ডাক দেয়। ভাবতে না ভাবতেই যেন তীরটা জায়গা মত লেগে গেল। পিছন থেকে আচমকা মিষ্টি করে ডেকে বলছে,
"কেমন হলো এক্সাম, তপু? পেরেছিলে সব?"
"আর এক্সাম! আমি তো আসলে ঘুরতে এসেছি, বাণিজ্য মেলায় যাব। বাইরে দাদা দাড়িয়ে আছে। আমি জানতামই না যে দুই ঘণ্টার পরীক্ষা। অনেকটা দেরি হয়ে গেল আমাদের।"
"কি পাগল পাগল পাগল উত্তর দিচ্ছ!" কথাটা বলতেই মিষ্টি করে হেসে ফেলল মেয়েটা।
তপু অনেকটা লজ্জার মাথা খেয়েই তাকিয়ে থাকলো এক পলকে।
"আচ্ছা তোমার নাম টা কি?"
"আমি সাথী"
"এখন আগে বলো তো, আমাকে চিনলে টা কি করে? আমি তো তোমাকে আগে কখনো দেখি নি। আমাদের পরিচয় টাও তো নেই।"
"অবাক হয়েছো বুঝি?"
"অবাক না হয়ে উপায় আছে! ধুম করে একটা সুন্দরী মেয়ে এসে আমাকে নাম ধরে ডাকছে, আবার জল খেতে চাইছে। মনে হলো পরীক্ষার হলে নেই আমি, স্বপ্নে পরীর দেশে ঘুরতে গিয়েছি।"
তপুর কথা শুনছে, আর প্রাণ খুল হেসেই চলেছে সাথী। এক সময় দুজনেই সিড়ির কাছে পৌঁছে গেল। ওদের পাঁচ তলার একটা রুমে সিট পড়েছিল। ধীরে ধীরে এক পা, দু পা ফেলছে আর নিচের দিকে নামছে। সাথে আছে তপুর কৌতূহলী সব প্রশ্ন, আর হরেক রকম কথার ফুলঝুড়ি।
চলবে ........................................
আমি তো ভেবেছিলাম যে তপুর কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর শেষের দিকে দিয়ে দেবেন আপনি। পরে দেখলাম যে আরো অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। যাইহোক একে তো এমনিও প্রশ্ন ঠিকঠাক কমন পড়েনি, তার উপর আবার নৈব্যক্তিক ভেবে রিটেন পরীক্ষা দিতে হল। তার থেকে বড় কথা এরকম একটা সুন্দরী মেয়ে তার সামনে এসে বসেছে, যে তাকে চেনে কিন্তু সে আবার তাকে চেনে না। এই পরিস্থিতি তে পরীক্ষা ভালো হলো কি করে সেটাই চিন্তা করছি আমি।
ভাই,, সত্যি বলতে যা যা লিখেছি তার ৯৮% সত্য ঘটনা একদম। এটা গল্প হলেও বাস্তব। হয়তো একদম শেষের দিকে গিয়ে গল্পের মত একটা নাটকীয়তা অ্যাড করব। তাছাড়া অনেক কিছুই কাকতালীয় ভাবে সত্য ঘটে গেছে এখানে।
সেটাই ,হঠাৎ করে এক অচেনা সুন্দরী মেয়ে এসে যদি এমন করে কথা বলে, তাহলে কি আর কারো মাথা ঠিক থাকে? হা হা হা। এমনিতেই প্রিপারেশন ভালো ছিল না। তার ওপর আবার সুন্দরী মেয়ে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ,তপুর পরীক্ষা কেমন হয়েছিল কে জানে !পরবর্তী পোস্টগুলোতে হয়তো জানতে পারবো আর তপু তো নিশ্চয়ই সাথীকে দেখে, তার বড় দাদার কথা ভুলেই গেছিল, হি হি হি।
হাহাহা,,, তবে ম্যাডাম এখন অবধি যা যা লিখেছি তার প্রায় পুরো টাই সত্যি। একদম বাস্তব কথা এবং ডায়লগ সব লিখেছি। হয়তো গল্পের শেষের দিকে অন্য রকম একটা মোড় নেবে।
অপেক্ষায় থাকলাম গল্পের শেষের দিকের অন্যরকম মোড়টার।