আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া অন্য কিছু হাতে তুলে দিতে পারব তো ?
নমষ্কার,,
আচ্ছা প্রতিদিন হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় অবসর পেলে আমরা কি ধরনের কাজ করছি? আর যেটাই করছি সেটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কতখানি উৎসাহিত করছে, সেই ব্যাপারটা কি কখনো ভেবে দেখেছি? আমাদের কর্মের দ্বারা পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছি না তো? আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে বা ভাই বোনদের জন্য একটা সুস্থ এবং স্বাভাবিক পৃথিবী কি উপহার দিয়ে যেতে পারবো?
চাইলে এরকম হাজারো প্রশ্ন করা সম্ভব। উত্তরগুলো অনেকের কাছে জানা। আবার কেউ কেউ দোটানায় ভুগছি। অন্যের কর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর থেকে নিজের কথাই না হয় বলি।
সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমরা সাধারনত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম সহ আরো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে তাদেরকেই বেশি চিনি। ২০১১ সালে আমার প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে পরিচয় হয় ফেসবুক দিয়ে। সেই থেকেই শুরু। সারাদিনে নানান কাজের ফাঁকে যখনই সময় পেতাম তখনই ফেসবুকে উঁকি মারতাম। আর রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বিছানায় শুয়ে ফেসবুক না ঘাটলে যেন ঘুম আসতো না। আবার সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ফেইসবুকে না ঢুকলে ঘুম ভাঙত না। মাদকের চাইতেও বেশি মাদকতা তৈরী করে দেয় এই সামাজিক মাধ্যম।
তারপর হাতে পেলাম অ্যান্ড্রয়েড ফোন। তার সাথে ভার্সিটি লাইফের স্বাধীন জীবন। ব্যাস আমাকে আর ধরে কে! অদ্ভুত এক জাদু করে বসলো আমাকে এই সামাজিক মাধ্যমগুলো। একটানা এক মাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কখনো বন্ধ করে থেকেছি কিনা সেটা আজও বলতে পারব না। হ্যাঁ এখন হয়তো আগের মত আর মাতামাতি নেই। নিজেকে অনেকটাই সংযত করে নিয়েছি।
কিন্তু ইদানিং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কথা ভাবলে এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি আসক্তি দেখলে মনের কোণে এক অজানা মেঘ এসে জমা হয়। আমার কেন যেন মনে হয় ছেলে মেয়েদের মাথায় এইসব ভূত ঢোকানোর পেছনে আমরা নিজেরাই দায়ী।
আমার নিজের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও অনেকের পরিবারে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, বাবা অথবা মা অথবা দুজনেই সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে যখন বিছানায় আসছেন, ছেলে মেয়ে কে পাশে শুইয়ে রেখে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরছেন। আবার কখনো কখনো তাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন কই কি করতে হবে। মজার মজার ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে হবে সবার কাছ থেকে ভালো ভালো কমেন্ট পাওয়ার জন্য । সেটাও আমরা ছোট বেলাতেই মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছি। একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ছোট বাচ্চারা এখন মাঠে খেলাধুলা করার চাইতে মোবাইলে সামাজিক মাধ্যম ঘাটাঘাটি করেই বেশি মজা পায়। ছেলে মেয়েরা বাইরে গেলে বিপথে যেতে পারে সেজন্য এখনকার মা-বাবারাও মোবাইল ফোন হাতে দিয়েই বাচ্চাদেরকে শান্ত রাখছে। আর এই সামগ্রিক ব্যপারগুলো একটা শিশুর মনে কতখানি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে সেটা আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি?
কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে নরকবাস। ছোটবেলা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের আমরা যেভাবে শিক্ষা দেব তারা ঠিক সেভাবেই বেড়ে উঠবে। আমরা যদি প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে হাতে একটা গল্পের বই নিয়ে ঘুমাতে যাই, একটা সময় দেখা যাবে আমাদের ছেলেমেয়েরাও হাতে বই নিয়ে ঘুমাতে যাবে। মা বাবাকে দেখেই তো বাচ্চারা শিখবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা কেউ কি এভাবে চিন্তা করি? তবে হ্যাঁ সমাজের সব মানুষ এক রকম নয়। হাজারো মন্দের ভিড়ে অবশ্যই কিছু সচেতন ফ্যামিলি আছে। যারা তাদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের কথা চিন্তা করেন।
প্রতিটা জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দুটি দিক থাকে। সোশ্যাল মিডিয়াও তাই। দুঃখের ব্যাপার আমরা পজিটিভ ব্যাপারগুলোকে গ্রহণ না করে নেগেটিভ দিকেই বেশি এগিয়ে যাই। নিজের অজান্তেই নিজের পায়ে কুড়াল মারছি দিনের পর দিন। সময় থাকতে সচেতন না হলে পরবর্তীতে হাজার আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
তাই আসুন, একটা সুস্থ সুন্দর এবং স্বাভাবিক পৃথিবীকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে যা যা করণীয় নিজের দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ থেকেই সেই কাজগুলো করি এবং মেনে চলি।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া পরবর্তী প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া আর কিছুই তারা হাতে তুলে নিবে না। কারন এখনকার ছেলেমেয়েরা যেভাবে নেট দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হচ্ছে এগুলো ছাড়া তারা অন্য কিছু ভাবেওনা। বাবা-মায়েরা তাদের অবসর সময় এর জন্য ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল। তাদের খেলার জন্য এখন আর বাহিরে যেতে হয়না অনলাইনে মোবাইলে গেমস এর প্রতি তারা আশক্ত। এটার জন্য সকলের একটু সচেতন হওয়া দরকার। বাবা মারা যেমন সচেতন হবে তেমন সচেতন হবে আমাদের সরকার খেলাধুলার জন্য বাচ্চাদের খেলার মাঠ তৈরি করা।
আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ আপু আপনার উপরে। ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগ টি পড়ে এত চমৎকার একটা মন্তব্য করেছেন সেই জন্য। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার সময়োপযোগী একটা মন্তব্যের জন্য। অনেক ভালো থাকবেন আপু।